আমরা যারা ছাদে উঠতে ভালোবাসি


আমি ছাদে উঠতে ভালোবাসি।
 ছাদে উঠলে নিজেকে দূর্গ রক্ষক মনে হয়।
কিন্তু ছাদ বানিয়ে দেয় আব্বা।
আমার তৈরি করা কোনো ছাদ নেই বলে বৃষ্টিতে
যেখানেই দাঁড়াই মনে হয় ভিজে যাচ্ছি।
আব্বা যখন ছোট ছিল তখন তালপাতার ঘরে
দুই ভাই এক বোন বর্ষাকালে ভিজত। সারারাত।
শুধু তারা নয়, সারা পাড়া জেগে বসে থাকত উবু হয়ে।
একে তারা কোনোমতে একটা ফিল্মি খেলা মনে
করতে পারত না। পাখি বলতে পেঁচা। তারই ডাক
শোনা যেত। বাদাম গাছে সে বসে থাকত।
বাদাম গাছ দেখলে তাই ভয় করত। তবে ভোরে
খালের জলে বাদাম ভাসত। যেন অপুষ্ট ভ্রূণ।
কঞ্চির ডগা দিয়ে পাড়ে তুলে আনা হত। বাদামের
ভেতরে ছোট বাদামের সাদা আত্মা। সুস্বাদু।
এখানে অগ্রজদের কবর। কবরের উপর বাঁশের বাগান।
এই বাগানে জুতো পরে যাওয়া নিষেধ। এটুকুই শ্রদ্ধা।
কেউ কখনও ভাবেনি আমার আব্বা সারাজীবনে
ছয়তলা বাড়ি বানাবে। ঘর বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবে।
পরামর্শদাতা হবে। জলের প্রতিপক্ষ হবে।
আমি মাইলোভুট্টার উপকথা শুনেছি, কখনও দেখিনি।
ভাত কোথায় সবদিন। দুধ কোথায়। ছিল বার্লি আর
মাইলোভুট্টার ছাতু। এগুলো গল্প হয়ে গেছে কাটাপোনা
আর ব্রকোলির পাশে।
এ আমারই গল্প, অথচ এ আমার একার গল্প নয়।
আমাকে কেউ নক্ষত্র দেখাতে বসেনি। কুমার শানু শুনেছি।
মনে হয়েছে, কুমার শানুর চেয়ে বড় নক্ষত্র আর কে আছে?
আব্বা বলত, পড়াশোনাই তোমাদের ব্যবসা।
পুঁজি বলতে বর্ণপরিচয়, আদর্শলিপি, বিদ্যাসাগর।
কেউ জানে না দুপুরে কোথায় চলে যেতাম।
খুব হাওয়া হত দক্ষিণ দিক থেকে, পতঙ্গ উড়ত।
জেট বিমান বছরে একবার অন্তত যেত আমাদের
মাথার উপর দিয়ে, তার সাদা ধোঁয়ায় পথ পড়ত আকাশে।
আমি টের পেতাম, আমার মতো হুবহু কেউ কোনো
রাজার বাড়ি বড়ো হচ্ছে, হয়ত দ্বিতীয় আমি রাজার বাড়ির
আস্তাবলে শুয়ে ঘাসের বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ঘোড়াদের
বিনোদন করে আর তাকে ঘিরে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে
নগরগর্দভ থেকে শিশুপ্রজা —সবাই।
বোম্বে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সে রোজ ঘুমিয়ে পড়ে।
আমি পার্শ্বচরিত্রই হতে চেয়েছি তাই আমার কাহিনিতে
নায়কের মুখ ঢাকা থাকত কালো কাপড়ে।
সবাই বলে, নেতৃত্ব দাও, সব গুণ তোমার রয়েছে,
হিংসা ও ক্ষমা, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় —তুমি সবই পারো
তারা তো জানে না, আমি ঘুমোতে ভালবাসি আর
পক্ষ নিয়ে ফেলি, শত্রুভাবাপন্ন নই, জিতে গেলে
আমি দুঃখিত হই, হতাশা আসে, কান্না কান্না পায়
অযথা প্রস্তাবও তাই আমি বিবেচনা করে দেখি।
আমার মুখ মায়ের মতো, আমি ঠাকুরদার নকল,
নিজস্বতা আমার কিছু নেই, এইভাবে
বেঁচে থাকা সহজ কাজ নয়, কে বুঝবে?
রিহার্সাল ছাড়াই আমি মঞ্চে এসে পড়েছি ;
দর্শক মহোদয়গণ এই নটকে ক্ষমা করুন যেভাবে
কাকের আওয়াজ মেনেই নিয়েছেন, সেই ভাবে।
ছাদে যেতে এখন আমার নিজেকেই করুণা।
ওই নক্ষত্রভরা ছাদ আমি পেরিয়ে চলে যেতে চাই,
চাই সেখানে যেন দিঘার সমুদ্রের মতো কিছু থাকে
চাহিদা যার নেই সে গাছে ওঠে না, কুড়িয়ে নিয়ে আসে

জিয়া হক 

কৌরবদের কেউ ভালোবাসে না,


কৌরবদের কেউ ভালোবাসে না, যেমন আমাকে
বিকেলের দিকে যাদের নিঃসঙ্গ বোধ হয়
আমি তাদেরই একজন, কৃষ্ণ সবার থাকে না
জুলাইয়ের পর পর ইংরেজি মাসগুলো আসে
বৃষ্টির পর পর এসে যায় অন্য ঋতুগুলি
ঋতুমতী হয় গাছপালা, সহোদরা, গ্রাম্য বাজার
জবা আরও লাল আর কখনও হয় না, যেমন
কেউ বোঝে না কৌরবদের, আমাকে, দিল্লির ভাষা
ওষুধও এর নেই, সুতির ন্যাপকিন, দুই ভাঁজ, বেশি রক্ষণশীল
আক্রমণ করো, কাছে টানো, অপভাষা দাও —বুঝি
শরীরই খারাপ হয়ে থাকে, দোষারোপ করি না সেহেতু
ক্ষমাপত্র লিখে রাখি, বিতরণ হবে অবর্তমানে
দেখি লক্ষ্যভ্রষ্ট ছুরি কথা বলে ভদ্রলোক ও অর্জুনের সাথে
আমার সাইকেল খেয়ে নেয় মাটি,
সময় এগিয়ে আসে হত্যা করবে বলে, বলে রাখি
ধৃতরাষ্ট্র আমার কেউ নয়, প্রতিবন্ধী বলে তাকে মনেও হয়নি

জিয়া হক 

Gulzar on Kolkata, কেমন তাঁর কলকাতা?


অবহেলিত পদগুচ্ছ
গুলজার
.............................................................................................
কলকাতা

দেখেছো কখনও বহুতলে, কোনও সিড়ির নিচে যেখানে
বিদ্যুতের হিসাবরক্ষক মিটার বসানো—প্রাচীন জং ধরা-করা
পান খাওয়া ময়লা দাঁতের মতো এক খোলা কৌটোর নিচে
রাখা আছে কিছু ধাতব ফিউজ প্লেট, পুরনো বল্টুনাট, খুচরো পেরেক
এক কোণে আছে—কখনও খোলা হয়েছিল
অসংখ্য রঙের তারে জোড়া সিড়ির নিচে পোঁতা লোহার শলাকা
সুতো আর সুতোয় বাঁধা হোল্ডার থেকে ঝুলে আছে বাল্ব যে
হাসে হায়াহীন বদদুষ্ট বালকের মতো

প্রায়শই কেটে পড়ে তার, ফিউজও নিভে যেতে থাকে, অথচ
এ আলো চিরকেলে, অনন্ত উজ্জ্বল
কলকাতা এই, এই হল সংজ্ঞা কলকাতার
যেখানেই যাই হোক না কেন, জীবিত এ


জিয়া হক

জেনারেল ডায়েরি


রাত্রির ভাগ পরিমাণে বেশি হয়ে গেলে
এই পথে আর নয়, এই রেলপথে পদব্রজে
সাট্টাখোর, গুটখাপ্রেমিক, তরমুজ ব্যবসায়ী
বলে, —চোপ্, পকেট বানাও অকারণে?
ভিড় যে থাকে না তা নয়, তারা
দায় নিয়ে ঠেলাঠেলি করে
এই হল মানবসম্পদ, ভিখিরির গান শোনে,
উষ্মা জানায়, গরম করে তোলে গলার বাতাস —
অপভাষা দেয়
নিজেকে খুঁজেও পায় না এরা রাত্রি বেশি হলে
বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের যে ভাঙা পথ অটোতে উঠেছে
নিরাপদ, টুনি বাল্ব জ্বলে, পান সাজা হয়
খেয়াল করো না, এই ভিড় নিরস্ত্র নয় আর
তোমাকেও পেতে চায় একা

জিয়া হক

হেনস্থার পর, পরিচয় পর্ব


বাগানরক্ষক সেই খোকা
          বাগানেই মানা তার ঢোকা
ফুল তাকে টানে এরপরও
মালিক বলেছে, 'তুমি মরো'
যেইদিন চাঁদ যায়
     রাত্রি কালা ঘোর
বাগানের রক্ষাকারী খোকা
সম্ভবত বনে যায় চোর

বালক ভাবেনি কোনওভাবে
ফুলের মালিকই চাপকাবে
  কর্তৃপক্ষ ঘুমিয়েও জাগে
বালক জানেনি এর আগে

খোকাদের জ্ঞানের তালিকা
এত ছোট — হেসে ফেলে
    পর্দাবতী ছাত্রী, বালিকা

ফুলচোর আর অন্ধকার
  সবাই ঘুমিয়ে পড়ে,
            নেই কেউ মুখে বসিবার


জিয়া হক 

যাই তবে, এই মরে যাই, রাষ্ট্র বলে


মরে যাও, তুমি বলো, ট্রেন চলে যায় প্রবাসে, যাদবপুরে
কী ঘন ঘন ঘটা করে হতাশা চমকায়, পূব আকাশ পূর্বের মতো —কালো, খুনে, ঝমঝমপ্রবণ
সন্ধ্যাতারা কোনদিকে ওঠে, ভুলে গেছি, তাকিয়ে আছি
চিত্র-তারকারাজির দিকে, হতাশ ও হতভম্ব হয়ে
মরে যাও —শুনেছি তো, তবু ফের ফের বলো?
যারা সুখাদ্যের গল্প শোনে শুধু, রেডিও বাজায়, নিজে থেকে বাজে,
যারা এই আসছি বলে আসে না কখনও, মাছ ধরে ছেড়ে দেয় বাৎসল্যরসে, কেঁচোদের চলাফেরা শিল্পীর মতো করে দেখে,
 তারা কি প্রজনন জানে?
টিপে টিপে দেখে নাও বিবাহযোগ্য কারা, কারা মৃত, সাদা চোখ, গজদাঁত আছে
যদি আমি সোফা হয়ে যাই, শয্যা হিসেবে, খুশি হবে?
হবে, কেননা আমাকে কাটলে বড় ঘর্ঘর ঘর্ঘর হয়,
পোড়ানো সুন্দর, ছাই দিয়ে দাঁত মাজা যাবে, এককালে যেত

জিয়া হক

এই সব উল্টোপাল্টা শাহরুখ কিং খান


যার বিশেষায়িত জ্ঞাপন নেই, তার বাজারি অস্তিত্ব নেই। এই সরলমতি বাক্যবন্ধকেই নিয়তি ধরে বহুজাতিক সংস্থাগুলি বানাচ্ছে বিজ্ঞাপন-প্রকল্প। এটা কি ভিন্ন অর্থে 'পুশ সেলিং' নয়? কিন্তু বিপণন আধিকারিক এইভাবে বেচা-বাটার মধ্যে কোনও অনৈতিকতা দেখেন না। তাঁরও থাকে এক কর্তাপক্ষ। তিনিও কার্যত বিক্রিত। বিকৃত?  বিকারের প্রসঙ্গ এসে যায় কেন না এই জ্ঞাপন-প্রক্রিয়ায় 'অ-সত্য' বা তথ্য গোপনের মতো বিষয়গুলি থাকেই। ব্যাঙ্কের ঋণ সংক্রান্ত বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ বা বীমার বিজ্ঞাপনক্ষেত্রগুলিতে সবচেয়ে জরুরি তথ্য সবচেয়ে দ্রুত পাঠ করা হয় কিংবা ছোটতম লিপিতে লেখা হয়ে থাকে। সংস্থাগুলি 'পোলিটিকালি ঠিক', তারা অবধ্য —অন্তত আইনি কুরুক্ষেত্রে। ভোক্তারাই ভোগে। আমাদের অনক্ষরতা, আমাদের অশিক্ষা এদের মূলধনের কিয়দংশ।
ছেলে ভুলানো ছড়ার মতো জনমন গলানো বিজ্ঞাপন যে আসলে একটি বড়তর চক্রের উপরিতল মাত্র —তা কারও অজ্ঞাত নয়। উষ্মা সেখানেই যখন একজন সাংস্কৃতিক তারকা তাঁর ভক্তকুলকে প্রতারিত করতে বিসর্গমাত্র ভাবেন না। ধরা যাক চিত্রতারকা শ্রী খান একটি ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনে সুটোল হাসিতে জানাচ্ছেন, তাঁর 'বিশ্রী' থেকে 'শ্রীযুক্ত' এবং তাঁর সফলতায় ওই শ্রী-এর ইস্তেমাল কীভাবে তাঁকে আজ 'মহান' করে তুলেছে। এই কথাগুলো বলছেন কাদের? যারা তাঁকে ভালবেসেছে, শ্রদ্ধা করেছে, গ্রহণ করেছে, মান্যতা দিয়েছে। শ্রী খান কি জানেন না কী বিষয়ে কী কথা তিনি বলছেন বিপণন কর্মী চরিত্রে? চলচ্চিত্রে আমরা তাঁর খলনায়কোচিত রূপকে স্বীকার করে তাঁকে হিরোত্বে বরণ করে নিয়েছি। কিন্তু বিজ্ঞাপনে তো তিনি ব্যক্তিগতকে, সতত সততাকে বেচছেন । শ্রী খান, শ্রী কপুর, শ্রী সিং, শ্রী চট্টোপাধ্যায় —সবাই কি একই ক্ষমতার ভাষায় কথা বলছেন না? তাঁরা কি কার্যত দেশজোড়া অশিক্ষাকেই উপহাস করছেন না? লগ্নি / 'এনক্যাশ' করছেন না?  কাল্পনিকতা দিয়ে নিজেকে বৈধতা দিতে পারবেন কি বিজ্ঞাপনচিত্রে? প্রসঙ্গত কয়েকটি প্রশ্ন উপস্থিত হয়। শ্রম, অধ্যবসায়, মেধা নয় —সফলতা বহিরাঙ্গিক রূপ-নির্ভর। একটি শ্রীবর্ধক ক্রিমের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, রূপ-বৃদ্ধি পুরুষটিকে হারেমের মালিক করে তুলেছে। নারীরা তার গুণমুগ্ধ কেন না তার ত্বক পূর্ববৎ 'নেটিভতা' হারিয়ে এখন উজ্জ্বল। জাতীয়তাবাদকে বিক্রি করছে কোনও সংস্থা। রাষ্ট্রপ্রীতিও পণ্য। এই পণ্যায়ন বিশেষ রাজনৈতিক দলের ম্যানিফেস্টো-সম্মত। বেড়ালই এখানে ঘন্টা উৎপাদনের বিনিয়োগকারী। কে বাঁধে কী? কাকে?
চিন্তা অন্যত্র। এই কর্পোরেট বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলিতে যারা কর্মরত, যারা ভেবে চলেছে গণমন ভোলানোর করণ-কৌশল, ফিকির-ফন্দি —তারা কারা? মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবীরা। এই মেধা তো আত্মহন্তারক। অবক্ষয়ী। এই মেধা যে এক্সপ্লয়টেড মেধা তা এই মেধাবীরাও জানে। তাহলে? কী তাদের বিবেককে সংহত, সংযত রাখে? এর সঙ্গে কী বিধি-বদ্ধ আছে কোনও প্রতারণাময় অতীত যা তার প্রতারক সত্তাকে সেফ-গার্ড করে? নাকি কেবলই জীবনযুদ্ধ, মুদ্রারাক্ষস আর অস্তিত্বের সংকটের কাহানি? সমস্যা কি নিহিত আছে আমাদের শিক্ষাতন্ত্রে? শিক্ষাক্রম - শিক্ষক - শিক্ষণ : এই ত্রিবিধের যে বিজ্ঞাপন শিক্ষার্থী আশৈশব পেয়ে থাকে, 'ভূত' কি সেখানে? আমাদের শ্রেয়বোধ যত হ্রাস পাচ্ছে এই ভূতও কিন্তু তত মান্যতা পেয়ে যাচ্ছে।
কবি শঙ্খ ঘোষ খেদোক্তি করেছিলেন, বিজ্ঞাপনে ঢেকে যাচ্ছে মুখটাই। একুশ শতকের প্রথম দশকে মানুষ নিজেই হয়ে উঠেছে বিজ্ঞাপনের বর্ধিত অংশ। সে বিজ্ঞাপনের ভাষায় কথা বলে, বিজ্ঞাপিত স্বপ্নই এখন তার স্বপ্ন। বিজ্ঞাপনের অ-সত্য বা আধা-সত্যকে সে অনুমোদন দিয়েছে যেহেতু তার জীবনেও কম 'মিথ্যা' নেই।

জিয়া হক

একটি ফেক ভ্রমণ কাহিনি ও ইসলামোফোবিয়া


রাত্রি গভীর। হ্যাঁ, প্রায় সাড়ে ৭ ঘটিকা। ঘুরঘুটিল অন্ধকার। একটি মিষ্টি চাঁদ উঠেছে মেঘের দেউড়িতে। পুকুরের জলে ছায়া পড়েছে বটগাছের। ঠিক, এমন পুকুর দেখা যায় না বললেই চলে কেননা এই পুকুরপাড় ন্যাড়া। বাতাস আছে। দোপাটির পাতাগুলি দুলছে। আশ্চর্য এই পাড়া —কোথাও দোপাটি নেই! শুধু ইনকা গাঁদা আর বাজ ভেরেন্ডা। আমি চলেছি। একটি মৃত পশুখামারে যেতে চাই। দেখতে চাই কোথায় যায় সব মৃতেরা। চিড়িয়াখানায়? চিড়িয়াখানা ঘুরে কোথায় যায়? পচাই পান করা জাতি, শুঁটকি খাদ্য যাদের, তারা এখন যাহা পচনশীল তাহা নিয়েই সন্দিগ্ধ। টর্চে হ্যাজাকের আলো। সমস্যা হল, বহুদিন ব্যাটারি দিতে পারিনি টর্চটায়। পথে ধুলো নেই। মেটে রাস্তা। এমন চাঁদ, এমন চাঁদু, সঙ্গিনী থাকা বাঞ্ছনীয়। মেলে কই? বেসুরকার যে আপনি, তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার গান্ধর্বী কই? এ পথ কার্যত শূন্য, যেমন ও যেভাবে এ পথিক। শূন্যতার কয়েকটি সুবিধা হল এই —
১. আপনি আপাতত আকাশ। সমার্থক। ফলত আপনি তারকাখচিত। উপভোগ করুন।
২. কেন এই শূন্যতা? ভাবতে বসলেন। এবার আপনি হলেন ভাবুক, চিন্তক, মায় দার্শনিক। এ কম কথা?
৩. আমি শূন্য, হ্যাঁ, আমিই শূন্য। এই বোধ আপনাকে পরিপূর্ণ রাখবে। 'আত্ম'-এর প্রতি প্রেম নিবেদন করতে অনুরোধ করবে। এটাই কি আংশিকভাবে সীমার মাঝে অসীমকে খুঁজে পাওয়া?
৪. যেহেতু আপনি শূন্য, সেহেতু ধরে নিতে হবে আপনি দুর্বল। দৌর্বল্য কি বিনীত করে? যদি করে —আপনাকে শুভেচ্ছা, ভাগ্য আপনার সহায়ক।


জিয়া হক

দেবতারা আশ্রয় তবে অনিশ্চিত ছাদ


এ গোরস্থান আমার প্রিয় নয়। এ দূরদেশী। অজ্ঞাত ঘাসের টিলা
দেবতারা এক অনিশ্চয় আশ্রয়। কেউ ভালোবাসে।
যেভাবে লোক যায় বাজারে, বিদ্যালয়ে, ঘোড়ার দৌড়ে
জানো কি বলে তারা তোমার সম্পর্কে — থাক, কিছু অপূর্ণতা
ছেড়ে দাও —হাল, সপত্নী, পরস্ত্রী, অনামা বালিকা
প্রস্রাব চেপে রাখা এখানেও সমীচীন নয়, জানো।
বলে ফেলো কে তোমাকে দীর্ঘতম বাঁশে স্থাপন করেছে
যা কিছু চমকপ্রদ বলে ভেবে বসে আছো, যা তোমাকে
নিয়ে যাবে পুরস্কারে, মগডালে, পানীয় টেবিলে, ভাবো
নির্বাচন করো, কোথায়, কোনখানে, পোঁতা হবে এই দেহ

জিয়া হক 

সর্বনামগুলো কুৎসিত আর প্রেমে অনিচ্ছুক


'আমি' — এই বিষয়ে বলবার কিছু নেই।
'তুমি'— এই বিষয়ে শোনবার কিছু আছে?
'তারা'— যতদূর জানি যুদ্ধে গিয়েছে —গৃহযুদ্ধে ঠিকই
'আমরা'— বুঝতে পারি না ভালোবাসব কাকে!
'তিনি'— সংগঠক, ঘন ঘন ঘর বদলান
'সে'— 'তিনি'কেই নমস্কার করে
                      জল তোলে, ঘর মুছে দেয়

জিয়া হক 

যিনি উন্মাদ তিনি অজ?


.......................
লবণের ঘোলা জলে
সারাটাদিন অহিংসারা চলে
সরিষা ক্ষেতের ভূত
যেন পলাতক বেঁটে রোগা দেবদূত
আমাদের কল্যাণে
সামাজিক সব তত্ত্ব বইয়ের সহায়িকা আর মানে
রেখেছেন লিখে ধীরে
এই সব কথা আলোচিত হয় দোকানের দুই তীরে
কেউ কি খেয়াল রাখে
বাবা ছাড়া আর কতজন তার ভালোবাসে প্রিয় মাকে
দরকার নেই, থাক
জলজিরা দিয়ে বরফ পুদিনা হবে আজ পরিপাক
খাবে?
বিদ্রোহ না করে রয়ে যাও তবে আমাদের সদ্ভাবে

জিয়া হক 

ফিরায়ো না রমণী বড়ো বা লাভ জিহাদ


.................................
এসেছো খোলাচুলে, এসেছো খোলাহাতে
এসেছো খাপ খোলা সালওয়ারে
আসেনি বিদ্যুৎ, আসেনি মাছডাল
আসেনি জ্ঞানট্যান মওলারে

নামাজি সন্ধ্যা, সূর্য সিজদায়
তোমাকে গ্রহণের নাপাক কাল
আমি কি মূর্খ, অল্প মুরতাদ
বিপ্রবর্ণীয় গো চণ্ডাল?

ঘরে তো উঠবে, তবুও মসজিদ
প্রশ্ন করবেই ফারিশতা
আমি কি জান্নাতি, পরহেজ বান্দা
ফলত তকলিফ এ রিস্তার

গুনাহে সম্মতি দিয়েছি কখনও কি
কেন এ মশিবত, এই বালা
নিরীহ তাবলিগ কর্মী কেন পায়
প্রেমের মসনদে কারবালা

তবুও লড়কি এসেছো ভিনদেশে
পেয়ালা উপচানো আমাকে নাও
আমরা পালাবো, পালাবো ওই জলে
যেখানে ভাসছে নূহের নাও

জিয়া হক

শূকর শূকরীকে চেনে কি এখনও?


বসিয়ে রাখো, আমাকে বসায়ে রাখো ও অনুকম্পায়ী বিল
আমাদের বধ্যভূমি, লাল রঙা ঝিল
সামনে দেখা যায়

দেহের শক্তি শুধু নিভে গেল কোষেদের অকাল পতনে
শূকর আমাকে চেনে যেহেতু রতনে
প্রেম করে, ভালোবাসে প্রায়

নিজেকে চিনিনি বলে দুধ খেতে গেছি বাঘিনীরও
'পান করো, পুষ্ট হও, পরিশিষ্টে হাড়খানি দিও '
বলে প্রাণী

এভাবেই ছোট হয়, মাল হয় এক হাজারি জীবনসম্পদ
নদীদের জুটে যায় পেশিযুক্ত এক লাখি নদ
সেরকম জানি

জিয়া হক

স্বজনের ভাষা বা কানাভাঙা পদ


আমি দূর সংযোগ করি যেভাবে প্রাকৃতিক বায়ু আসে
মনকে বলি, ভাষা শিক্ষা করো, পড়তে যেও না কারো মন
কথ্য বর্ণনাই সে বোঝে
শব্দভান্ডার তার মুখাপেক্ষী নয় অভিধানের
কারখানা এ, এ কল
আঙুল হেলানোই তার যথেষ্ট প্রাঞ্জল

রাত হয় রাত্রিকানার এই দেশে, আর
বলা যায় সন্ধ্যা শুভ হোক? কেননা
বক্তা কি আদৌ চেয়েছে এই জ্ঞান, যা
সৌজন্যে রয়েছে শুধু মুখে?

রহো একবার, থাকো, তিষ্ঠ এ বুকের বিপ্লব
অপদার্থ গন্ধগুলি তবু এ যে ঢপ
আমি জানি
পানীয় পেট্রোল বুঝি গতিশীল প্রাণী
আমাকে একবার
এনে দাও স্বজনের গালির সম্ভার
আমি দেখি
পরিবেশ কবিদের কতখানি করেছে একাকী



জিয়া হক 

বিপ্লবীর


তার কাজ নেই, স্বমেহন করবে কি?
ছাদের ওপর থেকে পৃথিবী দেখে সে বুঝেছে,
মাথার ওপরে নয়, পায়ের তলায় চায় অনেকেই ছাদ
অংশত বাদ —
এই রাম জন্মভূমি
সে, তারা, ওই, এই, আমি আর তুমি
ভালোবাসি রাম
যেভাবে শহরবাসী কফিশপে গ্রাম —
ভালোবাসে
সুপবন বয় আজ বাতাসে বাতাসে
ছাদ থেকে আমি দেখি রোজ
নবম শ্রেণির মেয়ে হয়েছে নিখোঁজ
নামতে পারি না, নেই সিঁড়ি
ঝাঁপ দেব —এমন বিচ্ছিরি
নাই শক্তি ভায়া
আমি কি বাঙালি নই? নই আমি আগাছা বেহায়া?
মেলা দেখি আমি আর বই পড়ে ছাদ
পরিশিষ্টে থাকে যারা সম্মেলনে বাদ —
এমনই হয়েছে

ছাই হতে তিন মিনিট, —আসুক দমকল
স্বমেহন আপাতত তোমার সম্বল

জিয়া হক 

স্নায়ুপতনের শব্দ


আমি কি লেখার কৌশলকানুন ভুলে যাচ্ছি? যদি তা না হবে তাহলে একটা অনুচ্ছেদও লিখতে পারছি না কেন? আমি কি সময় দিচ্ছি না, যতটা সময় দাবি করে লেখাজোখা? আমার কী হল? এ কি রোগ? এ রোগ কি না জানি না, তবে এ যন্ত্রণা। কিছু রোগের ওষুধ রয়েছে। কিছু কেন, এখন তো অধিকাংশ রোগ প্রতিহতযোগ্য। কিন্তু এমন যন্ত্রণার কি দাওয়া রয়েছে যা ঠিক রোগের নয়, যার প্রতিকারযোগ্যতা অ-প্রমাণিত। চিকিৎসার জন্য রোগ-নির্ণয় প্রয়োজন। কিন্তু এমন স্টেথোস্কোপ কোথায়, এমন প্যাথলজিকাল গবেষণাগার কোথায় যে লিখিত বা মৌখিক বিবৃতি দেবে রোগের বিষয়ে। আমি হতাশ হয়ে পড়ব? কিন্তু এও তো সত্যি, হতাশা মানেই তো সেখানে আশা নিহত হয়েছে। একটি নিহত ব্যাপারকে জাগানো কি সম্ভব? আমরা তো এখন ঈশ্বরের নয়, বিজ্ঞানের মুখাপেক্ষী। সে যা বলে তা-ই ধ্রুব। তা-ই সত্য। সে যা অস্বীকার করে তা বে-ঠিক। বিজ্ঞানকে পরীক্ষা করার বিজ্ঞান এখনও তো নেই। যদিও বিজ্ঞান এমন এক ক্লিনিকাল ল্যাব যা প্রমান-নিরপেক্ষ ভাবে বলে দেয় তিনি নেই। তিনিও নেমে আসেন না, নেমে এসে বলেন না—এই দেখো, ও হদ্দ বোকারা, আমি আছি আর তুমুল ভাবে আছি। আমাকে মেনে নাও নতুবা ওই দেখো লাভা স্রোত, আগুনের কুণ্ড। দেখো, তোমাদের পূর্বপ্রজন্মের মরণোত্তর দিনকাল। ওই সুদৃশ্য নহরের সুরামিশ্রিত মধু পান করছেন যিনি তিনি কি তোমার প্রপিতামহের প্রপিতামহ নন? দেখো, দুজন হুর আর রম্ভা কাকে সেবা করছে। তিনি নির্বিকার। তাঁর স্ব-প্রমানের গরজ নেই। তিনি সেই উদাসীন পেন্টার যিনি নিভৃতে বসে এঁকে রেখে গেছেন তাঁর জীবনের শ্রেষ্ট শিল্পকলা এবং উদ্ভাবনের ও প্রকাশের কোনো তাড়া নেই বলে সংরক্ষণ না করেই সেই শিল্প শিশুর খেলনার মতো আমাদের হাতে তুলে দিয়ে চলে গেছেন আর কখনও পেছন ফিরে তাকাননি কেননা তাঁর সৃজনীসত্তা সৃষ্টির বিনিময়ে পন্টিয়াক গাড়ি চড়তে চায় না। শিশুরাই খেলনা বিগড়ে দেয়, যেভাবে আমরা খুলে ফেলছি পৃথিবীর সব সৌন্দর্যকে আর তাকে নাম দিয়েছি ‘আবিষ্কার’ আর আরও বিগড়ে দিতে দিতে চলেছি এই যাবতীয় মেকানিজমকে। তবে কি শিশুর কৌতূহলকে অশ্রদ্ধা করা হচ্ছে এখানে? প্রশ্নকারীকে ডিমোরালাইজ করা হচ্ছে এখানে? আমার এক ছাত্রী ছিলেন। তিনি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তেন তখন। তাঁর প্রশ্নগুলি ছিল খুব জরুরি। উত্তরগুলিও আমার কিঞ্চিৎ জানা ছিল। কিন্তু সমস্যা হল, সেই উত্তরগুলো বোঝার জন্য তিনি বড় ছোট। তাঁকে তা বোঝানো যেত না। হয়ত তিনি বুঝেছিলেন একদিন। ‘আ’-এর উচ্চারণ ‘আ’-এর মতো কেন? ‘ক্রিয়া’কে আমরা ক্রিয়া বলি কেন? অসম্ভব সুন্দর সব প্রশ্ন। কিন্তু এর উত্তর আমি যতবার দেওয়ার চেষ্টা করতে গেছি তিনি হাই তুলেছেন। আমার মনে হয়, প্রত্যেকের একটা মানসিক পরিণতির জায়গা থাকে। সব যেমন ব্যাখ্যেয় নয়, সব তেমনই বোধগম্য নাও হতে পারে। একটি মনুষ্যেতর প্রাণী, যেমন রুই মাছ, কি বুঝতে পারে মানুষের শ্রেণিগত বৈষম্য। এখন বলা যাবে যে, সে যে বোঝে না তার কি কোনও প্রমাণ মানুষের আছে? এ কথা কি বলা যাবে যে সে যদি বোঝে তার প্রমাণ তার আচরণে তা কখনও ধরা পড়েনি কেন? হয়ত বলা হবে, সেই প্রমাণের দায় তার নেই। এই দায় কি বিজ্ঞানের দায়? পৃথিবীর যেখানে যা আচম্বিতে পড়ে আছে তাকে উদ্ধার করে করে তাকে বিশ্লেষণ করে দেখা? আচম্বিতে কি কিছু পড়ে থাকে? ইগো এমন এক বস্তু সে অগম্যে পৌঁছতে চায়। অসম্ভবকে স্বীকার করতে তার ভারি লজ্জা। তার আহত হওয়ার ভয় ও সতর্কতা সব চাইতে বেশি। ইগোয়িস্টকে বলতেই পারবেন না যে, ‘আপনি এই বিষয়টি জানেন না।’ নিজের সামান্য অর্থক্ষয় সে মেনে নেবে কিন্তু জনসমক্ষে তার ‘অজ্ঞানী’ ইমেজটাকে সে কখনও মানতে পারবে না। অন্তত উপসংহারে সে বলবে, ‘বিষয়টা নিয়ে আমি গভীরভাবে ভাবছি। সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলে জানাবো।’ হয়ত কেউ ভাবে, হয়ত কেউ ওই কথাকে সাময়িক পলায়নের ঢাল বানিয়ে তোলে। আমরা সব কিছুর উত্তরে যেতে চাই। শুধুমাত্র নিজের বোধ ও বুদ্ধির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ভুলে যাই। মানুষ রেগে যায় কেন? ইগো আক্রান্ত হলেই তার রাগ হয়। অহং বড় বিষম আর ছ্যাঁচড়া বস্তু। আবার এই অহং-ই মানুষকে আলাদা করেছে মনুষ্যেতরদের থেকে। যুক্তিবাদী হওয়ার চাইতে বড় লোভ খুব কমই আছে। অথচ যুক্তিবাদে পৌঁছনোর জন্য যে মানসিক কসরত তা করতে অনীহাও বড় কম নয়। তার ফলে আমরা এমন এক যৌক্তিক স্তরে হাজির হই যা দেখতে লাগে যুক্তির মতো, কিন্তু তা কার্যত অহং-সেবা। একে কি শিবসেবা বলা যাবে? জানি না। বিজ্ঞান তো শিবকে অস্বীকার করে। যেমন সে অস্বীকার করে নন্দী-ভৃঙ্গিকে। কৈলাস, রৌরবকে। আলমে বরজখ, আলমে আরওয়া, জাকুম বৃক্ষকে। মেটাফিজিক্স তাই খানিক একঘরে, ব্রাত্য। যেভাবে গড়ে উঠেছে দুই স্বতন্ত্র দল—ঈশ্বরবাদী বিজ্ঞানী ও নিরিশ্বরবাদী বিজ্ঞানী। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এখানেও জনতা নিজের বোধ-অনুভূতি নয়, একজন বিজ্ঞানীর নিদানের দিকে তাকিয়ে থাকে। স্টিফেন হকিং যখন বলে দেন যে, নাহ, আফটার লাইফ বলে কিছু নেই। তখন এক শ্রেণি সান্ত্বনা পায়। যদিও হকিংবাবু তাঁর অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মতো এই নিরীশ্বরবাদী তত্ত্বকে গানিতিকভাবে প্রমাণ করেননি। কিন্তু ওই--তিনি মহান বিজ্ঞানী। তিনি জনপ্রিয় বিজ্ঞানী। কেউ ভেবেও দেখল না, শেষাবধি একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীকে তাঁরা জ্যোতিষী বানিয়ে তুললেন।

নর-নারীবাদ


ওড়নার নিচে তুমি বড় হয়ে গেলে, পর্দাপ্রথার নিচে নিচে
এসব অশ্লীল আর ইমেজের অনুকূল নয়
মূর্তিপুজো নামাজিও করে, যেহেতু এ ভাবমূর্তি
তাই স্বর্গ দূর নেই —এমত ধারণা
ধারণাই বনজ সম্পদ যা আনে সাপ ও ময়ূর
নিয়ে আসে হস্তশেক, মাঝের অঙ্গুলি
সম্পদ বললেই কেন মাথা নীচু করো? বক্ষসৌন্দর্য্য ছাড়া
কিছুই ভাবার আর ইহলোকে নেই?
বিক্রেতাই ঢেকে রাখে, প্রদর্শন করে—
বানিজ্যিক তুমিও কি কম, ‌ও লজ্জা, লাজুকশাস্ত্রী
                         পুং-মাংস নারী?

জিয়া হক 

ব্যবহার করো আমাকে


ওয়েদার বড় নিঝ্ঝুম আর বাতাসার মতো ঠান্ডা
আজকে সবাই ব্যস্ত তাই বীর্য পতন হয়নি
ভালোবাসা আর প্রস্তাব তবে
পাশাপাশি ছিল হোটেলেই

সবেবরাতের রাত্রি —সব বাতি বসিয়েছে কবরে
আর সন্তান যার পীড়িত তারা
হাত পেতে আছে মাদুরে

ঘন ঘন এই সন্ধ্যায় ডাকে কবুতর আর নেতৃ
ভালবাসা ওঠে বেলচায় তবে
বেলচা রুপোর তৈরি

যতবার তাকে প্রয়োজন তুমি প্রেম দাও তাকে ততবার
তবে পাঠকেরা সব ফ্রয়েডের
এক একজন দূর শিষ্য

বুরখা ওঠাও আজকে দেব প্রস্তাব তিন সন্ধির
লজ্জাবনত অস্থি যদিও
গানের জন্য প্রস্তুত?

কীভাবে তুমি যে উঠবে ওই পতিদেওতার বৃক্ষে
ধাতু ঝরে যায় চিন্তায় আর
চিন্তা বিছিয়ে ঘুম দিই

সেবাহীন যত বৃক্ষের ফল টক হয়ে যেতে বাধ্য
আর ট্রেন চেপে যারা বাড়ি যায়
টোকো আঙ্গুর কেনে না

জিমখানা জুড়ে উড়ছে আজ পরাজিত কিছু কাব্য
শিক্ষক খালি দেখে নেয় তার
ঘড়ি চলছে কি ঠিকঠাক?

ভালবাসা লাল সিম্বল, যত ছাত্রীরা পায় প্রায়শই
ব্যাখ্যাকারীর হজমিগুলি
শেষ হয়ে যায় সন্ধ্যায়

আমাকে একটি গানের মতো করতেই পারো ব্যবহার
পোকা ধরে গেলে মনটায়
অন করে দিয়ে রাখলে

জিয়া হক