রাইনার মারিয়া রিলকে লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
রাইনার মারিয়া রিলকে লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রাইনার মারিয়া রিলকের চারটি কবিতা : অনুবাদ সাইফুল ভূঁইয়া




অস্তিত্বের অন্ধকার সময়

ভালোবাসি জীবনের অন্ধকার
যেখানে প্রোথিত সমস্ত অনুভূতি।
যেনো পুরাতন চিঠি, খুঁজে পাই
যাপিত দিন, আর আঁকড়ে রাখি
প্রতীত আর কিংবদন্তির মতো
তারপর জেগে উঠে দর্শন:
খুলে দিতে পারি, উন্মুক্ত আর
শূন্য-কালের নতুন জীবন
তাই কখনো আমি বৃক্ষের মতো
ফিস্ ফিস্ করি সমাধির বুকে
আর সত্যি করি সেই সব স্বপ্ন
জড়িয়ে রাখে তার জীবন্ত শিকড়:
একদা হারিয়ে গেছে এক স্বপ্ন
বেদনা আর সঙ্গীতে

যেতে থাকবো...
 
চোখ বন্ধ করে তোমাকে দেখতে থাকবো।
কান বন্ধ করে শুনতে থাকবো।
আর পা ছাড়া তোমার দিকে চলতে থাকবো।
মুখ বন্ধ করে তোমার নামে কসম করবো।
আমার হাত ভেঙে দিয়ে হাতের মতো
হৃদয় দিয়ে তোমাকে ধরে থাকবো।
আমার হৃৎপিণ্ড বন্ধ করে দিবো
আর স্পন্দিত হতে শুরু করবে মস্তিষ্ক।
আর যদি আমার মস্তিষ্ক আগুনে পুড়াও
আমার প্রতিটি রক্তকণায় দগ্ধ হবে তুমি


পুবে কোথাও এক গির্জা আছে

মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়ে একজন
টেবিলে পড়ে থাকে রাতের খাবার
হাঁটতে থাকে, হাঁটতে থাকে
পুবে কোথাও এক গির্জা আছে
তাঁর নামে শিশুদের প্রার্থনা যেনো মরে গেছে সে
অন্য একজন মানুষ আমৃত্যু
বসে থাকে ঘরে জল-খাবার নিয়ে
যেন শিশুসন্তান বেরিয়ে গেছে
পুবে হারিয়ে ফেলা গির্জার খোঁজে


রাত

তুমি, সেই অন্ধকার
যার থেকে জন্ম আমার-
ভালোবাসি, আলো থেকে বেশী
যে শৃঙ্খলিত করে রাখে
তার উজ্জলতার দেয়ালে
আর দূরে রাখে তাবৎ পৃথিবী
কিন্তু তোমার কালো হাতে
আগলে রাখে সবকিছু:
ছায়া আর আকার, সমস্ত জীব আর আমাকে
মানুষ আর সমস্ত জাতি- যে যেমন।
যেনো, দারুণ কিছু করে যায় মন্থণ
রাতেই রেখেছি আমার বিশ্বাস


রাইনার মারিয়া রিলকে :
রেনে কার্ল ভিহেম জোহান জোসেফ মারিয়া রিলকেরেনে মারিয়া রিলকে নামে পরিচিত ছিলেন ১৮৭৫ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রাগ শহরে জন্ম গ্রহন করেন। জার্মান-ভাষি অবসরপ্রাপ্ত অস্ট্রিয়ান সৈনিক জোসেফ রিলকের একমাত্র সন্তান রাইনার মারিয়া রিলকে ছিলেন বিংশ শতাব্দির জার্মান ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। অনেক বিখ্যাত কবির মতো তাঁর শৈশব ছিলো বিষন্নতাপূর্ণ; মাত্র নয় বছর বয়সে তাঁর পিতামাতার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এগারো বছর বয়সে রিলকে একটি সামরিক আবাসিক স্কুলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-জীবন শুরু করেন কিন্তু ১৮৯১ সালে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কারণে স্কুল ছাড়তে হয়। পরবর্তীতে প্রাগমিউনিখ এবং বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ১৮৯৪ সালেই তাঁর প্রথম কাব্য প্রকাশিত হয়১৮৯৫-৯৬ সালে দ্বিতীয় এবং ১৮৯৬ সালে তৃতীয় গ্রন্থ প্রকাশ হয়। ১৮৯৭ সালে তিনি রাশিয়া ভ্রমণ করেনযা তাঁর জীবনে দারুণ প্রভাব রাখে। সেখানে তিনি তলস্তয়ের সাথে দেখা পান। তাঁর প্রথম মহান কীর্তি দ্য বুক অব আওয়ার্স ১৯০৫ সালে ছাপা হয় তারপর ১৯০৭ সালে নিউ পোয়েমস এবং দ্য নোটবুকস অব মাঁতে ল্যদে ব্রিজ। পরবর্তীতে ইতালি, স্পেন, মিশর এবং ইউরোপের অনেক দেশ ভ্রমণ করেন; কিন্তু প্যারিসই তাঁর কাব্য চর্চায় প্রভাব বিস্তার করে। এখানে তিনি গীতি কবিতার এক নতুন ধারা সূচনা করেন। রিলকে তাঁর সময়ে জার্মান ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকবি ছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁকে পেরিস ত্যাগ করে মিউনিখে অবস্থান করতে হয়। তারপর ১৯১৯ সালে সুইজারল্যান্ডে চলে যান, সেখানে জীবনের শেষ দুটো গ্রন্থ রচনা করেন। লিউকিমিয়া নামক ব্লাডকেন্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯২৬ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন।