ভূত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ভূত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

প্রাচ্যবিদ্যা


ভূত, ভূত, ভূত!
কোথায়?
ওই তো খাটের তলায়।
কই, খাটের তলায় তো কিছু নেই?
না না, দরজার ওপাশে।
দরজার পাশে তো মাদুর দাঁড়িয়ে।
ওই তো, আলমিরার পিছনে।
আরে, আলমিরার পেছনও তো ফাঁকা, কেউ নেই।
তাহলে জানালা দিয়ে পালিয়েছে।
তুই কি মস্করা করছিস? এই এলো আর এই জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল? এতগুলো লোক তাকে দেখবার জন্য অপেক্ষা করছে আর সে ব্যাটা পিঠ টান মারল?
ভূত কি আর আমার কথা শুনে চলে নাকি?
কিন্তু তুই তো বললি এখানেই সে আছে।
ভূত এক জায়গায় বেশি ক্ষণ স্থির থাকতে পারে না।
তুই কি ভূতের স্পোক পার্সন? সে নিজে এসেই বলুক না সে কী পারে আর কী পারে না। আমরা কি তাকে অসম্মান করি?
এখানেই তো সমস্যা?
এতে আবার কী সমস্যা?
ভূতেরা আমাদের কাছে সম্মান চায় না, তারা আমাদের কাছে ভয় চায়।
আমরা না হয় ভয়ও করব, সে যদি একান্ত চায়। আমরা কি এতটাই নিষ্ঠুর?
আবার ভুল করলে।
আবার কী ভুল করলাম?
নিষ্ঠুর হবে ভূতেরা, আমাদের হতে হবে মিনমিনে, ভীতুর ডিম।
মিনমিনে মানে কী বলতে চাইছিস? বড় বাবু যেমন তার বৌয়ের সামনে করেন, সেই রকম মিনমিন?
মিনমিনে মানে উঠতে বসতে ভয় পাওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া, হাত পা কাঁপা, ফিট হয়ে যাওয়া, চোখ কপালে তুলে মেঝেতে শুয়ে পড়া—এই সব আর কি।
এ কী বললি তুই?
কেন?
যাকে দেখলামই না তাকে না দেখেই চোখ কপালে উঠবে কী করে? এ অন্যায় দাবী নয়?
এখানেই তো আসল মজা। সে তো সবাইকে দেখা দেবে না। ভগবান কি সবাই কে দেখা দেয়?
ভূত আর ভগবানকে এক করলি?
এই জন্য তোমরা তাকে দেখতে পাওনা। যা ভূত তাই ভগবান। এই সত্যিটা বুঝতে হবে।
ভগবানের পুজো করা হয়, ভূতের কেউ পুজো করে?
আজ সে এসে এই কারণে চলে গেল। তাকে শুধু ভয় করলে হবে না, ভক্তিও করতে হবে। তোমাদের তার প্রতি কোনো ভক্তি নেই। তাই তোমাদের ভূত-লাভ হল না।
তোর কি ভূতের প্রতি ভক্তি আছে?
ওরে বাবা, বলে কী! ভূতের সঙ্গে আমার অন্য চুক্তি।
চুক্তি?
সে তোমরা বুঝবে না। ভূতেরা সবার সঙ্গে চুক্তি করবে না।
তোর সঙ্গে তার চুক্তি হল কীভাবে?
আরে আমি তো ভূতের ফ্যাঞ্চাইজি নিয়েছি।
ভূতের ফ্যাঞ্চাইজি?
হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগছে তো?
না মানে, হ্যাঁ। কিন্তু ভূতের ফ্যাঞ্চাইজি নিয়ে তুই করবি কী?
আমার কাজ হল ভূতকে প্রমোট করা।
ভূতের আবার প্রমোশন লাগে?
লাগে বৈকি। কার প্রমোশন লাগে না বলো তো?
কিন্তু তাতে তাদের লাভ কী?
যে কোনো প্রোডাক্ট বাঁচিয়ে রাখতে গেলে তার প্রমোশন জরুরি। টিভিতে অ্যাড দেখো না?
তোরা টিভিতে ভূতের অ্যাড দেওয়ার কথাও ভাবছিস নাকি?
না, এখন টিভির চেয়ে ইন্টারনেট বেশি কাজের।
আমার কথাটা এখনও তুই বুঝতে পারছিস না। এসব করে ভূতেদের লাভটা কী?
তুমি যদি এসব বুঝতে তাহলে আর কেরানি হয়ে জীবন কাটাতে না।
একটু বুঝিয়ে বল না।
ভয়ের বিজনেস। এর চেয়ে লাভজনক ব্যবসা আর নেই।
কিন্তু ওরা তো আর কোনো দেশ শাসন করছে না। ভয়ের ব্যবসা করে তারা পাবে কী?
এই তো গোল করলে। কে বলেছে তারা দেশ শাসন করে না! আমাদের দেশ যারা শাসন করে তারা অধিকাংশই ভূত। এরা মানুষের মধ্যে এমন ভাবে মিশে থাকে যে সহজে চেনা যায় না কে ভূত আর কে মানুষ।
তুই বলতে চাস আমাদের চারধারে যে সিপাই-সান্ত্রী, মন্ত্রী-পারিষদ তাদের মধ্যে ভূতেরা মিশে আছে? তাদের অনেকেই ভূত?
বলতে চাইছি না, নয়। এটাই বলছি আর এটাই সত্যি।
কিন্তু আমরা বুঝব কী করে? না বুঝতে পারলে বিশ্বাস করব কী করে?
তোমরা যে অবিশ্বাস করো, তাই নিয়ে ভূতেরা খুব মস্করা করে।
কিন্তু তুই বুঝতে পারছিস না, আমরা বিশ্বাস না করলে তাদের অস্তিত্বই যে টিকে থাকে না।
এই একটা অবৈজ্ঞানিক কথা বলে ফেললে তো!
ভূতের আবার বিজ্ঞান?
পূর্ণিমার রাতে তুমি যদি চোখ বন্ধ করে রাখো তাহলে কী চাঁদের অস্তিত্ব শূন্য হয়ে যাবে?
কিন্তু আমরা তো ভূত দেখতেই চাই, চোখ কোথায় বন্ধ করে আছি? তাদের দেখা দিতে সমস্যা কোথায়?
 এই একটা অর্থহীন প্রশ্ন করলে। আচ্ছা, যারা সিনেমার হিরো হিরোইন হয়, তারা আমাদের বাড়ি এসে দেখা করে না কেন? দেখা করলে কি তাদের নিয়ে ক্রেজটা আর থাকবে? কে আর টিকিট কেটে ঘরের লোককে দেখতে যাবে বলো?
কিন্তু তারা তো আর অদৃশ্য নয়, কোথাও না কোথাও তাদের তো আমরা দেখতে পাই।
ভূতেরা কি বলিউডের নায়ক নায়িকাদের মতো আচরণ করবে বলে তোমার মনে হয়? কেন তারা ওদের নকল করবে কেন? ওদের কোনো মৌলিকতা নেই? ওদের ইন্ডিভিজুয়ালিটি নেই? তারা ভূত বলে আমাদের নকলনবিশি করে বেড়াবে নাকি?
সবই তো বূঝলাম কিন্তু তোকে ওরা পেল কী করে?
পেল মানে?
মানে তুই ওদের পেলি কী করে?
সব কিছুকে খুব সহজ মনে করো, না? আমাকে রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হয়েছে? অনেক ক্যান্ডিডেট ছিল।
পরীক্ষা? অনেক ক্যান্ডিডেট?
ভূতটা আবার এসেছে। ওই তো সে।
কই, কোথায়?
ওই তো, খাটের তলায়।
খাটের তলায়?
না, এখন দরজার পাশে।
কই, দরজার পাশে তো নেই। দরজার পাশে তো মাদুর।
এখন সে আলমিরার পেছনে।
কই?
এই জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল। যাহ!


জিয়া হক
চিত্র ঋণ : রেহান ইসলাম রিদা