স্বেচ্ছামৃত্যু অথবা নির্বাসন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
স্বেচ্ছামৃত্যু অথবা নির্বাসন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সিরিজ কবিতা : স্বেচ্ছামৃত্যু অথবা নির্বাসন : অভিজিৎ মণ্ডল


 

উৎসর্গঃ 'নির্জনতা, আরও নিবিড় হয়ে ওঠো... '

 

গানের ভিতর নেমে একজন সমানে খুঁজে চলেছে ভৈরব, অন্যজন পূরবী। একজন রাগ, অন্যজন রাগিণী। অদূরে দিগন্ত জুড়ে ঘন মেঘের ঘনঘটা, হয়ত বৃষ্টি আসবে খানিক পরেই, ভিজিয়ে দিয়ে যাবে মেয়েটির শিউলি গন্ধ মাখা করতল আর ছেলেটির ক্ষয়িষ্ণু ফুসফুস। ফাঁকা মাঠ, ধু-ধু। তারও কিছুক্ষণ পর হয়ত মেয়েটি নিজেই বৃষ্টি হয়ে উঠবে, ছেলেটি গাছ। তারা জানে, তার বেশি কাছাকাছি এলে কোনও গানই আর গান হয়ে উঠবে না। ঠিক যেভাবে কোনও কোনও দিন ছেলেটি কাঙাল হলে, মেয়েটি কুহক হয়ে ওঠে। সেতারে সন্ধ্যে বাজে, একা একা...

 

 ****


ফুলের বাগান ভেবে সরে সরে, যে গেছে

খাদের কিনারে—সবুজ দৃশ্য ভরা চোখে তার

ঝরনা উপচে পড়ে, পাহাড়ের নিস্তব্ধতা...

 

এমন প্রমত্ত দিনে সেও কি নিজেকে 

প্রজাপতি ভাবে, ভাবে নিরুদ্দেশ কুয়াশার ভিতর

কোনও উন্মাদ যুবকের ভেসে ওঠা মুখ?

 

একা, সে কিশোরী—

রোদের নরম ডানায় রঙ ছিঁড়ে ছিঁড়ে

গুপ্ত ছোরায় লিখে রাখে ঋতুদোষ।

 

*****

 

হয়ত তোমারই মতন দেখায়

লেগে থাকে, আমার চোখ—

ঠিক যেভাবে অনন্ত শূন্যের দিকে 

বাঁক নেয়—পাহাড়ী খাদ—

                       খাদের পাশে দৃশ্যময় চাঁদ

              অপেক্ষার মতো স্থির।

 

হা-মুখ গালের ভিতর ঢুকে পড়ে 

সন্ধ্যের আবছায়া গলি

সেইসব অচেনা পেরিয়ে—

তবু তো রোজ তোমার কাছে ফিরি 

 

আসলে একা একা, নির্জন, অন্ধকারে

আরও স্পষ্ট হয়ে উঠি আমি—

 

নিজেকে কেমন প্রেমিক প্রেমিক মনে হয় তখন!

 

*****

 

তুমি আমার পাশে পাশে হাঁটো

আমি তোমার পাশাপাশি—

 

কে কাকে অনুসরণ করে, কে কার 

সঙ্গে থাকে—সেসব প্রশ্ন সরিয়ে রেখে

অতল জলের নীচে, নিবিড়

 

বুদবুদে ভেসে ওঠে ছায়ার শরীর... 

 

কে কাকে ছেড়ে গেছে, কে কার মুক্তি 

এসব ভাবলে এখন—শিকড়ে টান পড়ে

ঝুলন্ত হ্যাঙারে দোলে বিষণ্ণ পৃথিবী!

 

*****

 

আমাকে আততায়ী ধরে এগোতে এগোতে

 

যেভাবে আড়াল শিখে নিচ্ছে কান্না 

ভুলে যাচ্ছো কেন—গোপন হত্যারও 

সুপারিকিলার থাকে, ফেলে আসা রাতের কথা

মনে করাচ্ছে—এইসব অন্তর্বর্তী অনুযোগ—

 

যদিও, সব তদন্তই প্রমাণ সাপেক্ষ...

 

তবু কোনও কোনও সুন্দরের চোখে চোখ রেখে

নিজের প্রকৃত খুনিকে চিনে নেওয়া যায়!

 

*****

 

মুণ্ডুহীন দেহ শুধু শুয়ে আছে যোনির ভিতর

আমি তার কান্না শুনি, রক্ত-দ্বেষ-ঘৃণাময়

জীবনের পাশে জেগে থাকেন—একা—

                               নির্বিকার জননী—

তাঁর ভ্রাম্যমাণ ডানায় ওড়ে বোধের চেতনা। 

 

প্রলুব্ধ জিভের ডগায় বসে থাকেন

তিনি মা অন্নপূর্ণা, আরাধ্যা দেবী আমার 

ধান্যদুগ্ধে ধুয়ে দেন ধরিত্রীর বুক

আমি তাঁকে পূজা দিই মাংসের থালায়

 

এভাবে অন্ধকার মুছে মুছে ক্রমশ

আলোর দিকে যাই—

পাপ কুষ্ঠে খসে পড়ে তৃতীয় আঙুল।

 

*****

 

আমি নিজের দেহে বৈষ্ণব হয়ে ঘুরে বেড়াই

স্রোতের মুখে নৌকা বাঁধি, সরে সরে 

যায় মাটি; সরে যায় ছায়া

রঙিন স্বপ্নে পড়ে থাকে সবুজ বীজতলা 

 

অদূরে নদীর ঘাটে কে যেন বাজায় বাঁশি—

ভিক্ষা শেষে ফিরে আসি নিজের শরীরে।

 

যেভাবে শূন্যতা সাঁতরে আসে ব্যাধ ও শিকার

লক্ষ-কোটি চোখ এসে গিঁথে থাকে জন্মের দাগে—

তারা কেউ আমার চেনা বন্ধু নয়, শত্রু নয় কেউ

 

অনর্থক শরীরে বাজে তীরের ঝঙ্কার! 

 

 *****

 

গোধূলি ডুবছে ওই দূরে, শ্যামলা পুকুরে 

 

ফড়িংয়ের ডানা ঘেঁষে চিকন হাসির মতো

ঝিলমিল লেগে থাকে লাজুক মেয়েটির চোখে—

অন্ন ও অবস্থান পাশাপাশি বসে

চাল ধোয়া হাতে যেন আলপনা আঁকে

                                  আকাশের গা'য়

 

নির্জনতা, আরও নিবিড় হয়ে ওঠে...

 

সন্ধ্যের মলিনতা মুছে—

বাড়ন্ত সংসারে উপচে পড়ে চাঁদ।

 

*****


সারাটা শরীর এখন স্তব্ধ দিঘি মনে হয় 

আর তুমি ঘাই মেরে চলে যাও, খাবি খাও দূরে

হিঞ্চে কলমি শাপলা শালুকের দাম ঘিরে

গোল হয়ে শুয়ে থাকে—

                ব্যর্থ দিনগুলি রাতগুলি।

 

ঘাট নেই বলে কেউ আর 

নাইতে নামে না জলে, একা একা

আমাদের ফেলে আসা পুনর্জন্মের মতো 

নিবিড় আলোয় ফেরে ছদ্মডাকনামগুলো

 

ছোট ছোট স্রোত ভেঙে ভেসে আসে—

মরা-পচা ঘাসপাতা ঘেঁড়ি গুগলি; জানালা 

                                     আঁকা চোখ— 

 

অগত্যা উদাসীন ডানায় ওড়ে মেঘের পালক।



ফেসবুকে কবিকে পেতে : https://www.facebook.com/avijit.mondal.5836