আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু মর্যাদা সংক্রান্ত মামলা ও তারপর। বিশেষ প্রতিবেদন

 

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএমইউ) সংখ্যালঘু মর্যাদা সংক্রান্ত মামলার রায় স্থগিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। তালিকা ১-এর এন্ট্রি ৬৩ অনুযায়ী আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠান দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম যাকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আরেকটি এমন মর্যাদা পাওয়া প্রতিষ্ঠান হল বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়। এএমইউ আইনের অধীন এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২০ সালে স্থাপিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানের স্থাপনার ইতিহাসকে তিনটি পর্বে দেখা যেতে পারে—১) ১৮৭০-১৮৭৭ সালে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চিন্তা অনেকের মাথায় আসে এবং মুহাম্মদিন অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল (এমএও) কলেজ স্থাপন করা হয়েছিল। ২) ১৮৭৭-১৯১০ সালে মুহাম্মদিন ওরিয়েন্টাল কলেজ বা এমএও-কে রূপান্তরিত করার জন্য মিছিল করে মুসলিম সম্প্রদায় এবং চাপের মুখে সরকার এই এই কলেজকে পরিবর্তিত রূপ দিতে রাজি হয়। ৩) ১৯১০-১৯২০ সালে মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতারা সক্রিয় ভাবে এই কাজে মনোনিবেশ করেন এবং কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ দিতে সফল হন এবং সেদিনে মুহাম্মদিন ওরিয়েন্টাল কলেজ বর্তনামের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ নেয়।

সংবিধানের ৩০ ধারা মোতাবেক আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সংখ্যালঘু মর্যাদা’ দেওয়ার বিষয়টি বেশ জটিল। সংখ্যালঘু মর্যাদা কী? ভারতীয় সংবিধানের ৩০ ধারা ভারতের ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘুদের নির্দিষ্ট কিছু অধিকার দান করে। এই ধারা নির্দিষ্ট ভাবে সংখ্যালঘুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনা ও পরিচালনার অধিকার দিয়েছে। মৌলিক অধিকার অনুযায়ী, এই ধরনের সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের কল্যাণ ও উন্নতির জন্য ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালায় সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে পারে।

প্রতিষ্ঠানের সংখ্যালঘু চরিত্র রক্ষা করার নিশ্চয়তা দেয় এই ধারা। এই আইনের লক্ষ্য হল, সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত স্বায়ত্বশাসন, পাশাপাশি শিক্ষার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের যুক্তিগ্রাহ্য বিধিনিয়মকে মান্যতা দেওয়া। আজিজ বাশা বনাম ভারত সরকারের মামলায় (১৯৬৭ সালে জেনেসিস অফ দ্য কনানড্রাম) ৭ বিচারপতির একটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তোলে, ১৯৫১ ও ১৯৬৫ সালে সংশোধনী আইনের মাধ্যমে প্রকৃত এএমইউ আইন বদল করা হয়েছিল কেন? সেই সঙ্গে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে অ-সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হল কেন?

তৎকালীন সিজিআই কে এন ওয়ানচু, বিচারপতি আর এস বাচাওয়াত, বিচারপতি ভি রামাস্বামী, বিচারপতি জি কে মিত্র ও বিচারপতি কে এস হেগড়ের বেঞ্চ এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের দিকে নজর দেয় এবং জানানো হয়, এএমইউ-এর প্রতিষ্ঠাতারা মুসলিম ছিলেন বলে এটা বলা যেতে পারে না যে, এএমইউ ৩০ ধারা অনুযায়ী সংখ্যালঘুদের দ্বারা স্থাপিত ও পরিচালিত হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে আসার কারণ ছিল, বিশেষ করে জোর দেওয়া হয়েছিল যে, এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে প্রাক-সাংবিধানিক পন্থায়। এই পন্থায় এটি স্থাপিত হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দ্বারা নয়। ১৯২০ সালের এএমইউ আইন চতুর্থবারের মতো ১৯৮১ সালে সংশোধিত হয়। তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছিল—প্রথমত, ১৯৮১ সালের আইনের ২(১) ধারা “বিশ্ববিদ্যালয়” শব্দটিকে নতুন ভাবে সংজ্ঞায়িত করে বলে এটি “ভারতের মুসলিমদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত”। দ্বিতীয়ত, সংশোধনী আইনের ৫ ধারাকে সংস্কার করে ভারতের মুসলিমদের শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তৃতীয়ত, ১৯২০ সালের আইনের প্রস্তাবনা থেকে “প্রতিষ্ঠিত” শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। এই বদলগুলি করা হয়েছিল বেগ কমিটি ও ভারতের সংখ্যালঘু কমিশনের সুপারিশ মেনে। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে সংখ্যালঘু মর্যাদা দেওয়ার পিছনে এই বদলগুলির প্রভাব ছিল।

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় বনাম মলয় শুক্লা মামলায় ২০০৬ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মুসলিম প্রার্থীদের সংরক্ষণ নীতি নিয়ে আইনি লড়াইয়ের দিকে জোর দেয়। এএমইউয়ের নীতিতে বলা হয়েছিল, স্নাতকোত্তর কোর্সের ৫০ শতাংশ আসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত হবে যা আসলে পাশ করা এমবিবিএস ডাক্তারদের জন্য ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তি দিয়েছিল, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধনী আইন ১৯৮১) বাশা মামলার রায়ের ফলে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। তবে, একক বেঞ্চ শেষ পর্যন্ত জানিয়েছিল, এই বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচ্য নয়। একক বেঞ্চের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ স্থির করে যে, সংখ্যালঘু ব্যক্তির দ্বারা স্থাপিত হলেও সেই ভাবে একে সংখ্যালঘু দ্বারা পরিচালনা বা পরিচালনার দাবি ওঠেনি, তাই এটি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে না। হাইকোর্ট রায় দেয়—ক) বাশা মামলার রেশিওর দিকে তাকিয়ে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় একটি অ-সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান হিসেবে বহাল থাকবে এবং ৩০ ধারা মোতাবেক একে দাবি করা যাবে না। খ) ১৯৮১ সালের আইনের এস ২(১) ও ৫(২)(সি)-কে বাতিল বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। গ) ১৯২০ সালের আইনের প্রস্তাবনা থেকে ১৯৮১ সালের আইন দ্বারা “প্রতিষ্ঠিত এবং” শব্দগুলি সরানো অবৈধ এবং এই শব্দগুলি প্রস্তাবনায় থাকবে। ঘ) পিজিসির জন্য ৫০ শতাংশ মুসলিম কোটার দাবি অসাংবিধানিক এবং ভবিষ্যতে এই নীতি মানা যাবে না। ঙ) ২০০৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্র আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত সংখ্যালঘু মর্যাদাকে পরীক্ষা করে দেখতে বলে এবং মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের বিষয়টিকে খারিজ করা হয়। ২০১৯ সালে দেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন ৩ বিচারপতির বেঞ্চের দেওয়া এক রায়ের অনুষঙ্গে ৭ জন বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করা হয়েছিল। এলাহাবাদ হাইকোর্টের ২০০৬ সালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানির সময় সেই প্রসঙ্গ ফিরে এসেছিল।