বিশ শতক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বিশ শতক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

জয়দীপ রাউতের চারটি কবিতা


নিশি

দিনগুলি রক্তে ভেসে যায়।

যন্ত্রণায়
দীর্ঘ রাত্রি একা জাগি

আর এক ভীষণ রাক্ষসী মাগি
আঙুল কামড়ে দাঁতে

অঘোরে ঘুমায়


বৈশাখী

এই তো একটু আগে ঝড় বৃষ্টি হয়ে গেছে
এখনো কাঁপছে রুগ্ন মাধবীলতা

আমিও সাহায্য নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আজ
যেই হাতে ব্যথা আর সহনশীলতা


নৈবেদ্য

তাঁকে দেব ব'লে
সাজিয়ে রেখেছি এই
মাংসের ছিন্নভিন্ন
রক্ত পুঁজ ঘাম

আসলে আরোগ্য এক
অতি ধীর

দেবতার ডাকনাম


নখ

চিৎকার কখনো করিনি
আমি শুধু বুঝে নিতে
চেয়েছি আমার
যন্ত্রণার
প্রকৃত স্বরূপ

সে সময় এক অপরূপ
চাঁদ উঠেছিল আকাশের কোণে

এসব দেখেছি আমি আঘাত লাগার পর—
খসে যাওয়া নখদর্পণে



শোভন ভট্টাচার্যের দুইটি কবিতা


আণবিক পৃথিবীর অতিবাস্তবতা

পৃথিবীতে আছে যত মানুষ, মনুষ্যেতর, একেকটা পৃথিবী;
পৃথিবীতে আছে যত উদ্ভিদ, পতঙ্গ, পশু, একেকটা পৃথিবী;

সকলেই ঘোরে তার অদৃষ্টপ্রবণ মায়াময় কক্ষপথে;
কোনো পৃথিবীর সাথে কোনো কোনো পৃথিবীর নাক্ষত্রিক যোগ দেখা যায়।

অরণ্য-পৃথিবী টানে কোনো কোনো বিবাগীহৃদয় পৃথিবীকে;
বাজার-পৃথিবী তানে কৌশলী কর্মঠ কর্তাভজা কৃতীটিকে…

কোনো কোনো দুঃখে যার প্রাণ কাঁদে, সে আবার কোনো দুঃখ পাশকাটিয়ে যায়;
কোনো কোনো সুখে যার হর্ষ হয়, সে আবার কোনো সুখ দেখেও দ্যাখে না।

বস্তুর আদিতে পাক খায় যত লক্ষকোটি অণু-পরমাণু
সেরকমই পাশাপাশি, ঘেঁষাঘেঁষি পাক খায় বিন্দুবিন্দু অজস্র জীবন।

একেকটা পৃথিবী তার নিয়তি নক্ষত্রালোকে নিজস্ব গোকুল খুঁজে পায়;
একেকটা পৃথিবী ঘোরে বহু পৃথিবীর পাশে, বড়জোর হয় মুখচেনা।

একেকটা পৃথিবী মানে প্রাণ কিংবা পাষাণের একেকটি একক;
বাঁচে-মরে ব্যক্তিগত প্রারব্ধ বা কর্মফলে, ভোগ আর ভোগান্তিলেখায়। 


মায়া প্রপঞ্চ

যতই তুমি করো না-শোনার ভান
যতই তুমি ঘুরিয়ে নাও চোখ
আমি কিন্তু বুঝেছি সম্যক
মর্মভেদী বাজে একটা গান

গহীন গান, ধারালো এক ছোরা
নিঝুম গান, রাতের ঝুমঝুমি
যতই অন্যমনস্ক হও তুমি
ঢেউ দিয়ে যায় নিহিত তান-তোড়া

যতই অন্য কারুর গান গাও
যতই মুখে বলো অন্যের কথা
মনের কথার হয় না অন্যথা
শুনতে তুমি চাও বা না-ই চাও

একটা সুর ধনুক-টানা মিড়
একটা প্রেম এমনই পরপুরুষ
কুল-মান যায়, ফেরে না তাও হুঁশ
এমনই মায়া প্রপঞ্চ প্রকৃতির