new delhi লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
new delhi লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে কেন বিক্ষোভ কৃষকদের? হরবীর সিং

 


কৃষকরা শস্যপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপির নিশ্চয়তার দাবিতে পুনরায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। আমাদের এখন দেখা প্রয়োজন, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দিল্লি সীমান্তে চলা কৃষকদের আগের বিক্ষোভ থেকে এবারের বিক্ষোভ কোথায় ও কতখানি আলাদা। আগের আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল, কেন্দ্র সরকারের প্রস্তাবিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। শস্যপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা ছিল ঐচ্ছিক দাবি।

পঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা মনে করেছিলেন, উক্ত আইনের নিয়মাবলি যেমন সরকার কর্তৃক শস্য সংগ্রহ, কৃষিপণ্য বাজার কমিটি (এপিএমসি) আইনের অধীন মান্ডি ব্যবস্থা ও চুক্তিভিত্তিক চাষ তাঁদের প্রভাবিত করবে। তাই, সেই সময়, ওইসব রাজ্যের কৃষকরা মূল ইস্যু নিয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন কারণ মান্ডি ও শস্যসংগ্রহ ব্যবস্থার সুবিধা ভোগ করছিলেন তাঁরা।

বিহার যেখানে এপিএমসি মান্ডি নেই এবং মধ্য ও পূর্ব উত্তরপ্রদেশ যেখানে এপিএমসি মান্ডির তেমন সুবিধা পাওয়া যায় না, সেখানকার কৃষকরা কৃষি আইনের সঙ্গে সেভাবে সংযুক্ত বা সম্পৃক্ত হননি। তবে সকল কৃষকই তাঁদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য চান এবং এ জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি জরুরি। এই বিশ্বাসই এমএসপির আবেদনকে সর্বজনীন করে তুলেছে। এই কারণে ২০২৪ সালের কৃষক আন্দোলনের গোটা দেশে সাড়া ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত বছর পাঁচ রাজ্যের প্রায় ৬০০ জন কৃষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমি এমনই একটা ইঙ্গিত পেয়েছিলাম। শস্যের স্বল্প মূল্য ও গ্রামীণ পরিবারগুলির ক্রমবর্ধমান সমস্যাই ছিল তাদের সাধারণ উদ্বেগ ও যন্ত্রণার বিষয়। রাজস্থানের যোধপুর, উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগর, ওড়িশার ভুবনেশ্বর, মেঘালয়ের শিলং ও তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরের কৃষক ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম। ছয় মাস ধরে আমরা তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিলাম। দিল্লি সীমান্তে কৃষক আন্দোলনের প্রায় দেড় বছর পর।

একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাঁরা তাঁদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ভাল মূল্য প্রাপ্তিকেই সমস্যার সমাধান হিসেবে বিবেচনা করেন। দেশের সমস্ত প্রান্তের কৃষকরা কৃষিজাত পণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যই শুধু চান না, সেই সঙ্গে এমএসপির নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টিও চান। প্রায় তিন মাস পরে দিল্লির উদ্দেশে মিছিল শুরু হয়েছিল পুনরায়। পঞ্জাবের দুটি স্বল্প পরিচিত কৃষক সংগঠন এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাঁদের দাবি দেশের সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে যখন কৃষক সংগঠনগুলি দিল্লি সীমান্ত থেকে ফিরে গিয়েছিল, সম্যুক্ত কিষাণ মোর্চাকে (এসকেএম) লেখা এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় কৃষিসচিব সঞ্জয় আগারওয়াল বলেছিলেন, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সংক্রান্ত ইস্যুর সমাধান বের করতে সরকার একটি কমিটি গঠন করবে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে আগারওয়ালের নেতৃত্বে প্রায় ৪০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তবে, এমএসপির পাশাপাশি তাদের আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে কৃষির ব্যয় ও পণ্যের মূল্য বিষয়ে কমিশনের কর্মকাণ্ড, প্রাকৃতিক ও জৈব কৃষি ইত্যাদি। এসকেএম-এর তিন প্রতিনিধিকে এই কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এসকেএম তা গ্রহণ করেনি এবং ওই কমিটিতে যোগ দেয়নি। সেই কমিটির রিপোর্ট এখনও আসেনি। এর ফলে যে কৃষকরা বলেছিলেন এই কমিটি গঠন আসলে একটা আনুষ্ঠানিক ব্যাপার তাঁদের কথাই সত্যি হয়েছে। সরকার সম্ভবত উপলব্ধি করেনি, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ইস্যুটি এত সহজে যাওয়ার নয়।

গোটা দেশে কৃষকদের আয় হয় খুব কম, নয়ত হ্রাসের দিকে। যে সব রাজ্যে ফসলের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে, সেখানকার উৎপাদনশীলতা পড়তির দিকে এবং কৃষির ব্যয় হু হু করে বাড়ছে। আমরা বলতে পারি, কৃষকরা যে পরিমাণ অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে তার সামান্যই তাঁরা ফিরে পান। গত চার দশকে জমির মালিকানার ক্ষেত্রে বিভাজন তৈরি হওয়ায় কৃষকদের উপার্জন হ্রাস পেয়েছে এবং এর ফলে তাঁদের জীবন যাপনের মানের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক ব্যবধান ব্যাপক হয়েছে। এদিকে, তথ্যের বিস্ফোরণের ফলে গ্রামীণ পরিবারগুলির উচ্চাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার যা কিছুই দাবি করতে পারে, কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির খরচ অনেক গুণ বেড়েছে, অথচ এই সব ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে। মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাবে কৃষিক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে কৃষক পরিবারের সন্তানদের কাজের সুযোগ কমে এসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের একটা সর্বজনীন আবেদন রয়েছে কারণ এটি কৃষকদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। কৃষকরা ফসলের উৎপাদন ও মূল্য নিয়ে বর্ধিত অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেতে চান। গম, ধান, আখ, আলু, পেঁয়াজ বা নারকেল—যা-ই চাষ  করুন না কেন, কৃষকরা তাঁদের শস্যপণ্যের ভাল ও স্থায়ী মূল্য চান। আমাদের দৃষ্টিকোণ বদলানো উচিত এবং চিন্তা করা উচিত যে, ভারত ১৪০ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশ নিউজিল্যান্ড বা চিলির মতো নয় যেখানে কৃষিকে ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং বিদেশী মুদ্রা অর্জনের উপায় হিসেবে ভাবা হয়।

বিপুল সংখ্যক খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হয় আমাদের এবং আমরা কেবলমাত্র আমদানিকৃত পণ্যের উপর নির্ভর করতে পারি না। কৃষি উৎপাদনকে আমাদের কৌশলী ক্ষেত্র হিসেবে দেখা উচিত এবং একে খাদ্য নিরাপত্তার দিক দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। দেশে প্রায় ১৪ কোটি জমি-মালিকানা রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষদের কল্যাণই আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কাছ থেকে আমাদের বুঝে নিতে হবে, তারা দেশের ২০ লক্ষ কৃষকের উন্নতির জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে কারণ তারা শুধুমাত্র খাদ্য আমদানির উপর নির্ভর করে বসে থাকতে চায় না। আমাদের উপভোক্তাদের মানসিকতাও বদলানো জরুরি। তাদের ভাবতে হবে, কৃষকরা তাদের পেট ভরান এবং সে জন্য তাঁদের ভাল মূল্য পাওয়া উচিত। উপভোক্তাদের সঙ্গে কৃষকদের দ্বন্দ্ব তৈরি করার পরিবর্তে যখন আমরা ১২ টাকায় এক কিলোগ্রাম আলু ও ১৫ টাকায় এক কিলোগ্রাম পেঁয়াজ কিনি তখনই এই সমস্যা নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন।