বাংলাদেশি কবিতা : দ্বিতীয় প্রস্থ : পাঠ-প্রতিক্রিয়া

সমান্তরাল নয়, মুখ্য স্বর
শ্মশানে নদীর চিতা, চন্দ্রচূর্ণ
.......................................................................................
ভিড়-প্রবাহের ধারে তিরতিরে একটি মগ্ন স্রোত —এভাবেই সাইফুল ভুঁইয়ার কবিতাকে 'ব্যাখ্যা' করতে চাইব। বাংলাদেশি কবিতার যে ফেনায়িত দীর্ঘ আলুলায়িত, কিঞ্চিৎ আবেগের নিয়ন্ত্রণ-উদাসী প্রবণতার বাইরে একটি অপর বাংলাদেশ।

কবিতা কারো কারো কাছে একটা খেয়াল। এই খেয়ালি কবিমহল সরগরম করে রাখে আবৃত্তিতালিকা, পুরষ্কারমঞ্চ, শোভা যাত্রা। এ ভারি অশোভন কেননা আপনি কখনই সেই শিক্ষকের উপর নিজের সন্তানের শিক্ষা-জীবনের ভার দেবেন না যাঁর কাছে শিক্ষকতা নেহাতই একটা প্রফেশন।

কেউ বলতে পারবেন এমতাবস্থায়, কবি কেবলই রূপ তৈরি করে দিয়ে তার ইহলৌকিক দায় সারবেন। তাঁকে না হতে হবে সমাজচিন্তক, না হতে হবে দার্শনিক, না হতে হবে 'মানুষ'। তিনি হবেন পানীয়জীবী ও পরজীবী। এমন উদ্বায়ী না হলে কবিতা 'আসবে' কোন পথে? শব্দসন্ধানী হওয়াই কবির ইহজাগতিক ভবিতব্য। শব্দের সংস্থান ও শব্দের বন্ধন —এই হল 'শিল্প' —আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি —দুই অর্থে। সাইফুল ভুঁইয়া কিছু বলতে চান। তাঁর মতো করে। তাঁর কবিতা কেবল কানের জন্য নয়। বাংলাভাষী তা দ্রুত বুঝে উঠতে পারলে মঙ্গল কেননা কবিকে শুধুই 'একজন ডার্মাটোলজিস্ট যে কিনা কাব্যচর্চাও করে থাকেন' —এই সূত্রে দেখবার চল আছে।

সেই পুরনো কথাটি এখন 'পাড়তে' ই হয় —কবিতা কতখানি বুদ্ধির আর কতখানি আবেগের।  মধ্যপন্থীরা বলবেন, দুটোর বাড়-অবস্থান - বৃদ্ধির হার সমানুপাতিক। সুষম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু প্রশ্ন হল মাত্রার। কত পরিমাণ ঈষদুষ্ণ জলে কত ফোটা হোমিওপ্যাথ —এই পদ্ধতি এখানে খাটবে না। তবে, আমাদের বিশ্বাস, এই 'পোস্ট ট্রুথ' পর্বে, কবিতায় মেধা কয়েক আউন্স বেশি থাকবে আর আবেগ তাকে সৌন্দর্য এনে দেবে। মেধা যদি রুটি-চাপাটি হয়, তাহলে আবেগ হবে নকশাদার প্লেটটি। কিন্তু পাত্রখানিই হল লাওপালার আর তাতে পরিবেশিত হল অ-কু-খাদ্য —আপনি কী করবেন ভদ্রে? সাইফুল ভুঁইয়া প্লেটটি দেশজ আর পরিবেশিত খাদ্যে লবণের আধিক্য নেই। তবে কোথাও কোথাও যে একেবারেই নেই তা বলা অন্ধত্ব হবে।

শ্মশানে নদীর চিতা, চন্দ্রচূর্ণ —বাংলাদেশি কবিতার ইতিহাসে দুটি ঘটনা। এ কথা প্রায়জনমান্য, দূরত্বই কবিতাকে পুনর্জীবন দেয় —যখন কবি থাকেন না কাছেপিঠে, দূরে, কোথাও —তখন তাঁর কবিতা নয়া জন্ম নেয়, পুনরায় ভূমিষ্ঠ হয়, যেভাবে জীবনানন্দ দাশের কবিতা হয়েছে। তবে এ ও অসত্য নয় যে, চির-অদর্শনের ভাবনা পাঠককে গ্রহিষ্ণু করে। সব দৃষ্টিই তখন ক্ষমাসুন্দর।

বাঙালি সমালোচকরা জীবিতদের চিনতে পারেন না।

জিয়া হক 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share. Comment. Subscribe