এখন সর্বত্র অতিকথন। অতিরিক্ত কথা এবং অতি মাত্রায় কথা। শব্দ আয়ত্ত আছে বলেই কিছু কইতে হবে?
-তাহলে কি নীরবতাই শ্রেয়?
-যেখানে কথা বলা আবশ্যক, সেখানে নীরবতা অপরাধ।
-কোথায় আবশ্যক?
মুশকিল হল, এই বোধটাই নেই। কোথায়, কতটা মুখ খুলতে হয়, তার অজ্ঞানতাই আমাদের বাধা। মুখ এক ধরনের খাপ, কথা এক ধরনের তলওয়ার। আমরা ফলত আহত করে ফেলি, আক্রান্তও যে হই না, তা নয়। কেননা প্রত্যেকেই এই অর্থে সশস্ত্র। ধর্মে ততদূর অবধিই বাক-স্বাধীনতা স্বীকৃত যতদূর তা অহৈতুকী ও সহিংস না হয়ে যায়। ধর্মের রেজিমেন্টেশন নিয়ে প্রায় সকলেরই উষ্মা। আমাদের মনে হয়েছে, এই পরিখাপদ্ধতি ও নিয়ন্ত্রণেচ্ছার মৌল অভিপ্রায় থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি বলেই, তা জেলখানা ঠেকে। মানুষের মনের মৌলিক কাঠামোয় হিংসার একটি প্রকট জায়গা রয়েছে। সামাজিকতা যেহেতু একটি বানিয়ে তোলা ব্যবস্থা এবং সমাজ নিজেই ব্যক্তিহিংসা-নিরপেক্ষ নয়, তাই সমাজ-সত্য ও সমাজ-চোখ, সমাজ-মন একে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ। এখানে ধর্ম যে কাজটি করে তা হল শুদ্ধির জায়গা। একটি মানুষ নিয়ে তার আগ্রহ। কেননা একজন করে বদলে গেলে সমষ্টিই বদলে যাবে। মানুষ-নিরপেক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম হয়?
তাহলে এই যে ধর্মীয় হিংসা? তাহলে কি হিংসার বীজ নেই ধর্মের কোথাও? এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, ধর্মের রাজনৈতিক সত্তাটি বেশ ভোঁতা। ধর্মকে নিয়ে রাজনীতির জায়গাটি তীক্ষ্ণ। প্রসঙ্গত, ধর্ম যে একেবারে রাজনীতি বিবর্জিত, তা নয়। তবে ধর্ম-প্রদত্ত নেতার যে আদর্শ, তা কি সুলভ? ইসলাম ধর্মে যে চার খলিফা—আবু বকর, ওমর ফারুক, উসমান গনি, হযরত আলী—সকলেই তো সুফি সাধকদের মতো জীবনযাপন করেছেন। ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে পরলোকে গিয়েছেন। খালিফা বা রাজার ব্যক্তিগত ঋণ? কল্পনাতীত। সমকালিক ধারণায়, শাসকের ঋণ মানে রাষ্ট্রীয় ঋণ, দলীয় ঋণ। জনগণের ঋণ। সদ্যজাত শিশুও সেই ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য, অন্তত তাত্ত্বিকভাবে।
আমি চাই মানবোন্নয়ন। কেবল নগরোন্নয়ন বা গ্রামোন্নয়ন নয়। এই বিভাজনগুলি কার্যত মানুষ নামের জৈব প্রতিষ্ঠানকে খন্ডিত করে। ভেদবুদ্ধির উৎস এগুলিই। রাষ্ট্র কল্পতরু নয়, তবে তার কল্পতরুর ভান করার প্রশ্নটাও এখানে আলোচ্য। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক দিকটিই হওয়া দরকার ছিল সহায়কের, তার বদলে তা হয়েছে অনাক্রমণ চুক্তিভিত্তিক শোষকের। তাই উঠে আসে আঞ্চলিকতাবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদের মতো অ-সংসদীয়, অ-সাংবিধানিক বিষয়গুলি। এর কারণই হল, রাষ্ট্র নিজেই তার সাংবিধানিক শুদ্ধতাকে রোজ হত্যা করে। ‘ব্যবহার’ করে। প্রয়োজনে সংবিধানকে মুষড়ে ফেলার চেষ্টা করে যায়। জুডিসিয়ারি সিস্টেম যতই নিরঙ্কুশ ও স্বতন্ত্র হোক না কেন, তা যে রাষ্ট্রের অঙ্গুলি হেলনকে একেবারে অস্বীকার করে এগিয়ে চলেছে তা বলা যায় না। কোনও কিছুই প্রভাবমুক্ত নয়। তাই বলা যায়, বিচারব্যবস্থা একটি কলহান্তরিতার মতো আর রাষ্ট্রও অসূর্যম্পশ্যা নয়।
জিয়া হক
ভালো লেখা।আরও একটু যোগ করে বলতে চাই 'উন্নয়ন ' সংক্রান্ত প্রচলিত ধারণাটাই ভুল।
উত্তরমুছুনঠিক
মুছুন