আমার কম্পন হইতে থাকে। জিয়া হক
আমার কম্পন হইতে থাকে, কারণ বুঝি না। ভয় নানা প্রকার। ভয়ের কাঁপন! চারিদিকে শুধু মানুষের ছায়া। ভয়ের প্রতিচ্ছবি পড়ে না। নিজের মুখ কল্পনা করতে পারি না। আয়না দেখলে নিজেকে দেখতে পাই। ওষুধ আর কত সহায়তা করতে পারে! তবু খেতে হয়। আমার কম্পনে লোক হাসে। তারা আমার ক্ষয় দেখতে পায় না, সম্ভবও নয় হয়ত। হাসির পাত্র হয়ে আমার নিভৃত কান্নাগুলো আমি আতর মাখিয়ে তুলে রাখি। ভেবেছিলাম, আমার কোনও পিছুটান নেই। তাহলে কোথাও যেতে গেলে পা ভারী হয়ে আসে কেন! আমি একটা অচলায়তন। বান্ধব বাতাসের অপেক্ষারত এক অচলাবস্থা। আমাকে লোক অযোগ্য বললে আমি নিশ্চিন্ত হই। যার কোনও অর্জন নেই, পেশার নিরাপত্তা নেই, উপার্জনের নিশ্চয়তা নেই, সে কীভাবে যোগ্য হতে পারে! যোগ্য হলে তার প্রমাণ দিতে হয়, অযোগ্যের প্রমাণ দেবার দায় নেই। তারপরও উত্তেজনা আসে, ফসকে যায় মুখ, ভাষায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না, রাগ হয় নিজের উপর, সিদ্ধান্ত নিই যে, চুপ হয়ে যাব। প্রতিক্রিয়া, প্রত্যুত্তর থাকবে না, পাথরজীবন ঠেলে ঠেলে তুলব মরণোত্তর পাহাড়ের মাথায়। বিষণ্ণ লাগে, বিমর্ষ লাগে, আব্বা-মা ছাড়া কেউ নিজের নয়। রক্তাক্ত হলে আমাকেই রক্তপাতের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অথচ বুঝতে পারি, এই আব্বা-মা শেষ পর্যন্ত আমার কথিত পিছুটান। তাদের নিঃশর্ত স্নেহ-ভালবাসা আমার শৃঙ্খল। দূরে যেতে দেয় না। এক আবাসিক বিদ্যালয় থেকে চলে এসেছিলাম তাদের মুখ দেখব বলে, তাদের ছায়ায় রয়ে যাব বলে। মধ্যপ্রাচ্যে থাকা দাদার মুখ মনে পড়ে। দাদা ছিল, আজও আছে আমার সার্বিক আত্মপরিচয় ও আত্মপ্রকাশের অংশ হয়ে। দূরত্ব হয়ত তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমি গৃহবন্দি। এই বন্দিনিবাসে জানালা আছে উত্তর দিকে। সেদিক থেকে হু হু করে শীতল বাতাস বয়ে আসে আর আমার কম্পন হইতে থাকে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Share. Comment. Subscribe