চলতি বছরে উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নামে প্রস্তাবিত আইন পুষ্কর সিং ধামির সরকারকে অনেক ব্যক্তিগত বিষয় সমাধানে বাধ্য করবে। এই বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, লিভ-ইন সম্পর্ক ও উত্তরাধিকার ইত্যাদি। ধর্ম নির্বিশেষে এই বিষয়গুলির দেখভাল করতে হবে।
এই বিল উত্তরাখণ্ড সরকারের অধীন প্রশাসনকে বিবাহ সংক্রান্ত বিষয় বাধ্যতামূলক ভাবে নথিভুক্ত করতে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, প্রথম বারের মতো লিভ-ইন সম্পর্ককে আইনি বৈধতা দিচ্ছে এই বিল এবং এই ধরনের সম্পর্ককে নথিভুক্ত করা যেতে পারে। এমনকি বিচ্ছেদ হলেও তা প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী নিবন্ধনযোগ্য। মজার বিষয় হল, নথিভুক্ত না করে এক মাসের বেশি লিভ-ইন সম্পর্কে থাকলে এই বিল তাকে অপরাধ বলে গণ্য করে। এর ফলে তিন মাস পর্যন্ত জেলও হতে পারে।
প্রস্তাবিত এই আইন অনুযায়ী বহুগামীতা ও বিবাহ করা গেলেও বিভিন্ন ধরনের তালাকের মাধ্যমে বিবাহ-বিচ্ছেদ চাইলে তা দণ্ডযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে এবং এর ফলে তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
১৯২ পৃষ্ঠার এই বিলে বিভিন্ন ধরনের নতুন নিয়মের উল্লেখ করা রয়েছে যা ধর্ম নির্বিশেষে এই রাজ্যের সকল বাসিন্দাদের উপর উত্তরাখণ্ড সরকার প্রয়োগ করতে সক্ষম। উত্তরাখণ্ড কীভাবে পার্সোনাল ল’কে লাগাম পরালো এবং সাংবিধানি বৈধতার প্রশ্নে এই বিল কতখানি দাঁড়াতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। এই আইনকে কি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা উচিত? বেশ কয়েকটি রাজ্য একই ধরনের আইন লাগু করার ইঙ্গিত ইতোমধ্যেই দিয়েছে বলে বিষয়টি নিয়ে চর্চার অবকাশ রয়েছে।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ও সংবিধান
ইউনিফর্ম সিভিল কোডের অর্থ হল, একগুচ্ছ সাধারণ আইন যা ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষ মেনে চলতে বাধ্য। ব্যক্তিগত বিষয় যেমন বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, দত্তক, উত্তরাধিকার সম্পত্তি ইত্যাদির মতো ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য।
বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় পার্সোনাল ল’ দ্বারা শাসিত ও পরিচালিত হয় যা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আইনের নানা নিয়ম মেনে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। এই ধরনের কয়েকটি আইন হল—হিন্দু বিবাহ আইন, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ভারতীয় খ্রিস্টানদের বিবাহ আইন, ভারতীয় ডিভোর্স আইন, পার্সি বিবাহ ও ডিভোর্স আইন ইত্যাদি। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বিধিবদ্ধ করা হয়নি এবং এই আইন তাদের ধর্মীয়গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। যদিও এই আইনের বিশেষ কয়েকটি দিক স্বীকৃতি পেয়েছে যেমন শরিয়া প্রয়োগ আইন, মুসলিম বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন।
ভারতীয় সংবিধানের ৪৪ ধারা রাজ্যের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যতম নির্দেশক প্রিন্সিপাল। এই ধারায় বলা হয়েছে, সমগ্র ভারতে নাগরিকদের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আরোপ করার অধিকার রয়েছে দেশের। ৩৭ ধারায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, নির্দেশক প্রিন্সিপালকে কোনও আদালত বলপ্রয়োগ করে চাপিয়ে দিতে পারে না, বরং এতদসত্ত্বেও এটি দেশের শাসনের মৌলিক জায়গা এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে এই প্রিন্সিপালকে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আরোপ করা।
১৯৮০ সালের মিনার্ভা মামলায় বিচার বিভাগের এক কমিটি জানিয়েছিল যে, মৌলিক অধিকার ও রাজ্য নীতি নির্দেশক প্রিন্সিপালের মধ্যে ভারসাম্য ও সামঞ্জস্য বিধান করাই সংবিধানের প্রাথমিক কাঠামোর জরুরি বৈশিষ্ট্য। একই ভাবে, ১৯৯৬ সালে ডালমিয়া সিমেন্ট মামলায় সর্বোচ্চ আদালত জানায় যে, সংবিধানের প্রস্তাবনা, মৌলিক অধিকার ও নির্দেশক প্রিন্সিপাল—এই ত্রয়ী হল ভারতীয় সংবিধানের অন্তরাত্মা ও বিবেক। এই ধরনের বেশ কয়েকটি রায় থেকে জানা যায়, দেশের শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নির্দেশক প্রিন্সিপাল মৌলিক জায়গা এবং এখানে নির্দেশিত বিধিনিষেধ মেনে চলবে রাষ্ট্র।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউসিসি নিয়ে উত্তরাখণ্ড ৪৪ ধারার প্রসঙ্গ টেনে বলেছে, সাংবিধানি নিয়মতন্ত্রের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এই বিধি বানানো হয়েছে এবং এই রাজ্যের বাসিন্দাদের একগুচ্ছ সাধারণ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
উত্তরাখণ্ডের ইউসিসি অনুযায়ী বিবাহ ও ডিভোর্স
প্রস্তাবিত এই আইনে বিবাহের ক্ষেত্রে একটি অভিন্ন আইনি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে ১৮ বছর বয়সী মেয়ে ও ২১ বছর বয়সী ছেলেরা বিয়ে করতে পারবে। হিন্দু বিবাহ আইন, বিশেষ বিবাহ আইন, খ্রিস্টান বিবাহ আইন বা পার্সি বিবাহ ও ডিভোর্স আইনেও এই কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, মুসলিম পার্সোনাল ল’তে মেয়েরা সাবালিকা বা ১৫ বছর বয়সে পদার্পণ করলে বিয়ের যোগ্য, এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এই নিয়মকে শুধু নিষিদ্ধই করে না, সেই সঙ্গে ৩২ ধারা অনুযায়ী, এই কাজে যুক্ত যুগলকে ছয় মাস পর্যন্ত জেলের নিদানও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জরিমানাও দিতে হবে। নিষিদ্ধ সম্পর্কে বিবাহের ক্ষেত্রেও একই শাস্তি প্রযোজ্য। এই ধরনের ৩৭টি সম্পর্কের তালিকা দেওয়া হয়েছে এই বিলে। বর ও কনের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক থাকলে তা নিষিদ্ধ বিবাহ বলে গণ্য করা হবে।
এই বিলে দ্বিতীয় বিবাহকে এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ধর্ম নির্বিশেষে বহুবিবাহ বা বহুগামীতাকে খতম করাই উদ্দেশ্য। হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও পার্সিদের পার্সোনাল ল’তে বহুবিবাহকে অবৈধ ঘোষণা করা হলেও ১৯৩৭ সালে শরিয়া আইন অনুযায়ী মুসলিমরা চারটি স্ত্রী রাখতে পারে।
ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার মেনে বিবাহ সম্পন্ন হলেও উত্তরাখণ্ডে তা নথিভুক্ত বা নিবন্ধন করতে হবে, যদি বিবাহের কোনও পক্ষ এই রাজ্যের বাসিন্দা হয় তাহলে এই আইন প্রযোজ্য। ২০১০ সাল থেকে বিবাহের নিবন্ধনকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে উত্তরাখণ্ড। পুরনো আইন অনুযায়ী যে যুগল বা দম্পতিরা ইতোমধ্যেই নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের পূর্বের নিবন্ধনের বিষয়ে ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ‘বাসিন্দা’ বলতে তাদেরকেই বুঝিয়েছে যারা এই রাজ্যে অন্তত এক বছর বাস করছে বা এই রাজ্যের সরকারের অধীনে কোনও প্রকল্পের সুবিধাভোগী বা এখানকার স্থায়ী কর্মচারী।
বিয়ের ৬০ দিনের মধ্যে দম্পতিকে যুগ্ম ভাবে একটি স্মারকলিপি স্বাক্ষর করতে হবে এবং সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে হবে। এমনটাই বলা আছে প্রস্তাবিত আইনে। পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রার বিয়ের শংসাপত্র ইস্যু করবেন বা নিবন্ধন বাতিলের কারণ জানাবেন দম্পতিকে। বিবাহ বাতিল করলে তা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চ্যালেঞ্জ করা যাবে কেননা তিনি এই রাজ্যের সচিব-স্তরের কর্মকর্তা। কোনও দম্পতি যদি বিচ্ছেদ চান তাহলেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। বিয়ের নিবন্ধন বা ডিভোর্স চাওয়ার সময় মিথ্যা বিবৃতি দিলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি অনুযায়ী তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এর জন্য তিন মাস পর্যন্ত জেল হবে। এই বিলে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, বিয়ের নিবন্ধন না করা হলে বিয়ে বাতিল বা অবৈধ হয়ে যাবে না, তবে বিবাহের সাব-রেজিস্ট্রার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর জরিমানা চাপাবে ও অন্যান্য পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আরও জানিয়েছে, কোনও বিবাহ কেবলমাত্র আদালতের নির্দেশেই বাতিল হতে পারে। এর ফলে মুসলিম পার্সোনাল ল’তে অনুমোদিত তালাক প্রথাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সকল প্রকার বিচার বিভাগ বহির্ভুত ডিভোর্সকে (তালাক-এ-হাসান, তালাক-এ-আশান, তালাক-এ-তাফইজ ও খুলা) অবৈধ বলে চিহ্নিত করেছে এই বিল। অথচ বিভিন্ন ধরনের তালাক মুসলিম পার্সোনাল ল’তে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইউসিসি বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ৩২ ধারায় বলা আছে, আদালতের নির্দেশনামা ছাড়া ডিভোর্স করা হলে তিন বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হবে।
ইউসিসি নিয়ে এ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান
১৯৮৫ সালে শাহ বানু মামলার মীমাংসা করার পর থেকে সুপ্রিম কোর্ট তাদের অসংখ্য রায়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। সংবিধানের ৪৪ ধারার স্পিরিটে সর্বোচ্চ আদালত লাগাতার অভিন্নতার জন্য সওয়াল করেছে, তবে তারা কোনও নির্দেশ দেয়নি এই মর্মে। তারা জানিয়েছে, আইন প্রণয়ন হল সংসদের একচেটিয়া ও একান্ত অধিকার।
শাহ বানু মামলায় আদালত দুঃখপ্রকাশ করেছিল যে, সংবিধানের ৪৪ ধারার শব্দ-বাক্যগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। জাতীয় অখণ্ডতার প্রশ্নে সাধারণ দেওয়ানি বিধি সহায়তা করতে পারে। আইনে পরস্পরবিরোধী মতাদর্শ রয়েছে এবং এর প্রতি অন্ধ আনুগত্যকে পরিহার করা দরকার। ১৯৯৫ সালে সরলা মুদগল মামলায় দ্বিপত্নী ও বিবাহ সংক্রান্ত পার্সোনাল ল’য়ের বৈপরিত্য নিয়ে সওয়াল-জবাবের সময় আদালত জোর দিয়ে বলেছি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা। তাদের বয়ানে, যতদিন না পর্যন্ত সাধারণ দেওয়ানি বিধি লাগু হচ্ছে ততদিন নানা রকম ছিদ্র থাকবে কারণ বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন বিশ্বাস রয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে তারা সংবিধানের ৪৪ ধারার দিকে নতুন করে নজর দেওয়ার অনুরোধ করেছিল এবং নাগরিকদের উপর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আরোপ করার পরামর্শ দিয়েছিল।
যাইহোক, ১৯৯৭ সালে আহমেদাবাদ উইমেন অ্যাকশন গ্রুপ মামলা ও ২০০০ সালে লিলি টমাস মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দেয় যে, সরলা মুদগল মামলায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আরোপ করতে সরকারকে কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি।
২০১৫ সালে দেখা গেল, এই বিষয় নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত দ্বিধাবিভক্ত। ওই বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সুপ্রিম কোর্ট যখন কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করে তারা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনতে ইচ্ছুক কিনা তখনই এই সাধারণ বা অভিন্ন আইন নিয়ে আবার পুরনো বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। বিভিন্ন ধর্মে বিবাহ, ডিভোর্স, দত্তক, দেখভাল ও উত্তরাধিকার নিয়ে নানা রকম মত থাকায় এই বিষয়টি তাদের ভাষায় “পুরোপুরি গোলমেলে।” তবে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের আরেক বেঞ্চ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত একটি পিটিশনকে খারিজ করে দেয় এবং বলে যে, সাধারণ বা অভিন্ন আইন আরোপ করা হবে কিনা তা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত কেবলমাত্র “আশা ও প্রত্যাশা” করতে পারে, কিন্তু সরকারকে তারা নির্দেশ দিতে পারে না।
২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় অন্তত পাঁচটি পিটিশনের কথা উল্লেখ করে সর্বোচ্চ আদালতের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। এই পিটিশনগুলি তিনি দায়ের করেছিলেন সকল ধর্মের পার্সোনাল ল’য়ের পরিবর্তে আইনে অভিন্নতা আনার দাবিতে। এই পিটিশনগুলিতে পৃথক ভাবে বিয়ের আইনি বয়স, ডিভোর্স, খোরপোষ, দত্তক, অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার ও পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ আইনের দাবিও জানানো হয়েছিল। শীর্ষ আদালতে সেই পিটিশনগুলি এখনও ঝুলছে।
২০১৬ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রয়োগ সংক্রান্ত সকল বিষয় পরীক্ষা করে দেখার জন্য ভারতের ল’ কমিশনকে দায়িত্ব দেন। তবে, এই বিষয়ে আইন কমিশন চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়নি, উল্টে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে “পরিবার আইনের সংস্কার” নিয়ে তারা একটি ‘কনসালটেশনপত্র’ হাজির করে। এই পত্রে বলা হয়েছিল, “এই পর্যায়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির না আছে প্রয়োজন আর না তা কাম্য।” তারা সুপারিশ করেছিল, বিভিন্ন ধর্মে পরিবার সংক্রান্ত যে আইনগুলি রয়েছে তার সংশোধন জরুরি এবং পার্সোনাল আইনে পক্ষপাতদুষ্টতা ও অসাম্যকে মোকাবেলা করার জন্য এগুলি বিধিবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ল’ কমিশন ২০২৩ সালের জুন মাসে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সম্ভব কিনা তা নতুন ভাবে খতিয়ে দেখতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন স্বীকৃত ধর্মীয় সংগঠন ও সাধারণ মানুষের মতামত নিতে শুরু করে।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আরোপ বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ হয়ে উঠেছে। তারা প্রায়শই গোয়ার উদাহরণ টেনে আনে কারণ এখানে গোয়া দেওয়ানি বিধি নামে একটি সাধারণ আইন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে সমর্থন জানিয়েছেন। ২০২৩ সালের জুন মাসে ভুপালে বিজেপির কর্মীদের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী মোদি আবার ইউসিসি লাগু করা নিয়ে জোরালো বার্তা দেন। তাঁর কথায়, একটা দেশ দুই রকম আইন দিয়ে কীভাবে চলতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, মুসলিম সম্প্রদায়কে ভুল পথে চালিত করতে ও উস্কানি দিতে বিরোধীরা ইউসিসিকে হাতিয়ার করছে।
উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আরোপ করার মাধ্যমে একটা পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ইউসিসির মূল উদ্দেশ্য কতখানি চরিতার্থ হয় তা শুধু দেখা হচ্ছে না, সেই সঙ্গে একগুচ্ছ নিয়মের সাংবিধানিকতার দিকটিকেও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ধর্মবিশ্বাস ও আচারের স্বাধীনতা, প্রিভেসির অধিকার ও ব্যক্তিগত বিষয়ে স্বনিয়ন্ত্রণের অধিকার কতখানি সুরক্ষিত থাকে তা নিরীক্ষা করে দেখার বিনিময়ে উত্তরাখণ্ড এই ‘জুয়াখেলা’য় নেমেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Share. Comment. Subscribe