সাহিত্য কী?
................
জনৈক জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক আমাকে প্রশ্ন করলেন, সাহিত্য কী?
বললাম, জানি না স্যার।
আমার সামনেই বসে ছিলেন এক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি বললেন, সে কি, সাহিত্যে এম এ করেও সাহিত্য কী জানো না? সাহিত্য হল সমাজের দর্পণ।
আমি বললাম, একটা নতুন বিষয় জানলাম স্যার। অনেক ধন্যবাদ।
এরপর থেকে কেউ সাহিত্যের সংজ্ঞা জানতে চাইলে বলি, সাহিত্য হল সমাজের দর্পণ।
................
জনৈক জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক আমাকে প্রশ্ন করলেন, সাহিত্য কী?
বললাম, জানি না স্যার।
আমার সামনেই বসে ছিলেন এক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি বললেন, সে কি, সাহিত্যে এম এ করেও সাহিত্য কী জানো না? সাহিত্য হল সমাজের দর্পণ।
আমি বললাম, একটা নতুন বিষয় জানলাম স্যার। অনেক ধন্যবাদ।
এরপর থেকে কেউ সাহিত্যের সংজ্ঞা জানতে চাইলে বলি, সাহিত্য হল সমাজের দর্পণ।
কালবৈশাখী সবে শান্ত হয়েছে। বাতাবরণ ঠান্ডা। এক কবিবান্ধব জিজ্ঞেস করল একই প্রশ্ন, সাহিত্য কী?
কেন, সাহিত্য হল সমাজের দর্পণ।
দর্পণ মানে?
দর্পণ মানে তো আয়না, তাই না?
সাহিত্য কি আয়না হয়ে সমাজকে তার শরীর দেখিয়ে দেয়?
দেয় না?
তাহলে খবরের কাগজ সাহিত্য?
উত্তর দিতে না পেরে বললাম প্রধান শিক্ষকের থেকে জেনে এসে বলব।
প্রধান শিক্ষক মহাশয় প্রশ্নটি শুনে বললেন, খবরের কাগজ কোনদিন সাহিত্য হতে পারে? ও তো রিপোর্ট। সাহিত্যে মনের প্রতিফলন হয়।
আমি জেনে এসে কবিবান্ধবকে বললাম। সে বলল, তাহলে চিকিৎসা শাস্ত্রের সাইকায়াট্রি বিভাগের বইগুলো সাহিত্য?
আমি প্রধান শিক্ষককে বললাম এ কথা। তিনি বললেন, মন সাধারণত দুই প্রকার। এক হল ব্যক্তিমন, দুই হল সমাজমন। সাহিত্য হল ওই সমাজমনের দর্পণ।
এই শুনে কবিবান্ধব বলল, সমাজ-মনস্তত্ত্বের বইগুলো তাহলে সাহিত্য, তাই তো?
এইবার প্রধান শিক্ষক বললেন, সাহিত্য মানে সহিতত্ত্ব, মানে মিলন, মানে মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলনই হল সাহিত্য।
কবিবন্ধু এই শুনে বলল, তাহলে তো বিয়ের চেয়ে বড় সাহিত্য আর কিছু নেই। সেখানে তো সাহিত্য আবার গর্ভবতী হয়ে কচি কচি সাহিত্যের জন্ম দিচ্ছে, তাই না?
আমি পড়লাম আতান্তরে। সাহিত্যের সংজ্ঞা জানতে চাইলে আমি শুধু বলি, জানি না তবে আলোচনা চলছে। মীমাংসা হলে জানাব।
কয়েক মাস পর একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে প্লুটো গ্রহকে নিয়ে একটি ছোটগল্প প্রকাশিত হল। আমি গল্পটি নিয়ে সেদিন সকালেই প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলাম। বললাম, স্যার, এই গল্পটিকে কি সাহিত্য বলা যাবে, এখানে তো প্লুটোর কথা বলা হয়েছে, পৃথিবীর কথা, সমাজের কথা নেই?
তিনি বললেন, কিন্তু বেরিয়েছে তো পার্থিব মস্তিষ্ক থেকে। অতএব এ সাহিত্যই। তাছাড়া প্রথম শ্রেণীর দৈনিক ছেপেছে, তা কি সাহিত্য না হয়ে পারে?
সন্ধ্যায় কবিবান্ধব সে-কথা শুনে বলল, অর্থাৎ পার্থিব মগজ থেকে যা বেরবে তা-ই সাহিত্য? মানে খুনের কৌশলও সাহিত্য, তাই তো? আর প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে যা ছাপা হয় তাই সাহিত্য? ওটা কি সাহিত্য-মিটার?
প্রধান শিক্ষক মহাশয় বললেন, তোমার বন্ধুটিকে একবার এনো তো।
কবিবন্ধু বলল, তোমার প্রধান শিক্ষককে একবার দেখতে চাই।
দুজনকেই আমার বাড়িতে এক রবিবার নিমন্ত্রণ করলাম। কথা হল, দুপুরে আমার বাড়িতে তাঁরা খাবেন আলাপ, আলোচনা হবে।
যথারীতি পরের রবিবার যতটুকু সামর্থ্য সুখাদ্যের আয়োজন করলাম। ওঁরা আসবেন। মা কে বললাম, নতুন শাড়ি পরো। আব্বাকে বললাম, নতুন পাঞ্জাবি গায়ে দাও।
সাড়ে বারোটা বেজে গেল, কারও দেখা নেই। মা বলল, একবার ফোন করে দেখ না।
প্রথমে প্রধান শিক্ষককে ফোন করলাম। বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ। তাঁর ফোনের সুইচ অফ।
তারপর কবিবন্ধুকে কল দিলাম। তার ফোনও বন্ধ।
কেন, সাহিত্য হল সমাজের দর্পণ।
দর্পণ মানে?
দর্পণ মানে তো আয়না, তাই না?
সাহিত্য কি আয়না হয়ে সমাজকে তার শরীর দেখিয়ে দেয়?
দেয় না?
তাহলে খবরের কাগজ সাহিত্য?
উত্তর দিতে না পেরে বললাম প্রধান শিক্ষকের থেকে জেনে এসে বলব।
প্রধান শিক্ষক মহাশয় প্রশ্নটি শুনে বললেন, খবরের কাগজ কোনদিন সাহিত্য হতে পারে? ও তো রিপোর্ট। সাহিত্যে মনের প্রতিফলন হয়।
আমি জেনে এসে কবিবান্ধবকে বললাম। সে বলল, তাহলে চিকিৎসা শাস্ত্রের সাইকায়াট্রি বিভাগের বইগুলো সাহিত্য?
আমি প্রধান শিক্ষককে বললাম এ কথা। তিনি বললেন, মন সাধারণত দুই প্রকার। এক হল ব্যক্তিমন, দুই হল সমাজমন। সাহিত্য হল ওই সমাজমনের দর্পণ।
এই শুনে কবিবান্ধব বলল, সমাজ-মনস্তত্ত্বের বইগুলো তাহলে সাহিত্য, তাই তো?
এইবার প্রধান শিক্ষক বললেন, সাহিত্য মানে সহিতত্ত্ব, মানে মিলন, মানে মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলনই হল সাহিত্য।
কবিবন্ধু এই শুনে বলল, তাহলে তো বিয়ের চেয়ে বড় সাহিত্য আর কিছু নেই। সেখানে তো সাহিত্য আবার গর্ভবতী হয়ে কচি কচি সাহিত্যের জন্ম দিচ্ছে, তাই না?
আমি পড়লাম আতান্তরে। সাহিত্যের সংজ্ঞা জানতে চাইলে আমি শুধু বলি, জানি না তবে আলোচনা চলছে। মীমাংসা হলে জানাব।
কয়েক মাস পর একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে প্লুটো গ্রহকে নিয়ে একটি ছোটগল্প প্রকাশিত হল। আমি গল্পটি নিয়ে সেদিন সকালেই প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলাম। বললাম, স্যার, এই গল্পটিকে কি সাহিত্য বলা যাবে, এখানে তো প্লুটোর কথা বলা হয়েছে, পৃথিবীর কথা, সমাজের কথা নেই?
তিনি বললেন, কিন্তু বেরিয়েছে তো পার্থিব মস্তিষ্ক থেকে। অতএব এ সাহিত্যই। তাছাড়া প্রথম শ্রেণীর দৈনিক ছেপেছে, তা কি সাহিত্য না হয়ে পারে?
সন্ধ্যায় কবিবান্ধব সে-কথা শুনে বলল, অর্থাৎ পার্থিব মগজ থেকে যা বেরবে তা-ই সাহিত্য? মানে খুনের কৌশলও সাহিত্য, তাই তো? আর প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে যা ছাপা হয় তাই সাহিত্য? ওটা কি সাহিত্য-মিটার?
প্রধান শিক্ষক মহাশয় বললেন, তোমার বন্ধুটিকে একবার এনো তো।
কবিবন্ধু বলল, তোমার প্রধান শিক্ষককে একবার দেখতে চাই।
দুজনকেই আমার বাড়িতে এক রবিবার নিমন্ত্রণ করলাম। কথা হল, দুপুরে আমার বাড়িতে তাঁরা খাবেন আলাপ, আলোচনা হবে।
যথারীতি পরের রবিবার যতটুকু সামর্থ্য সুখাদ্যের আয়োজন করলাম। ওঁরা আসবেন। মা কে বললাম, নতুন শাড়ি পরো। আব্বাকে বললাম, নতুন পাঞ্জাবি গায়ে দাও।
সাড়ে বারোটা বেজে গেল, কারও দেখা নেই। মা বলল, একবার ফোন করে দেখ না।
প্রথমে প্রধান শিক্ষককে ফোন করলাম। বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ। তাঁর ফোনের সুইচ অফ।
তারপর কবিবন্ধুকে কল দিলাম। তার ফোনও বন্ধ।
এরপর থেকে কেউ আমাকে সাহিত্য কী জানতে চাইলে বলি,
সাহিত্য মানে 'আপনি যে নম্বরে কল করেছেন, সেই নম্বরটি বর্তমানে সুইচ অফ আছে। ধন্যবাদ।'
সাহিত্য মানে 'আপনি যে নম্বরে কল করেছেন, সেই নম্বরটি বর্তমানে সুইচ অফ আছে। ধন্যবাদ।'
জিয়া হক
অসাধারণ
উত্তরমুছুন