'যদি মরে যাইফুল হয়ে যেন ঝরে যাই'বিরাট পর্দার সামনে এই লাইনগুলো আমার কানে বাজছিল বার বার। রুটিনমাফিক সাজিয়ে দিতে পারি এইভাবে যে গল্পটা অমন ছিল, ক্যামেরা ছিল ব্যাপক, সাংঘাতিক এডিটিং আর অভিনয়টাও বেশ ভালো। সকলের দেখা উচিত। খেল খতম পয়সা হজম। ব্লা ব্লা ব্লা!কিন্তু আবেশকে তো ওভাবে বলা যায় না। ভালোবাসা বিধৃত হয়না এত সরলে। বাবার মৃত্যু পিকুকে যেখানে ছেড়ে গিয়েছিল শিউলি হয়তো সেখান থেকে শুরু করে। ঘাসের ভেজা সবুজে আনমনা পড়ে থাকা বাংলার শিউলিগুচ্ছ আলতো হাতে তুলে নেয় শিউলি নামেরই আয়তচোখের এক মেয়ে; তার মুখে তখন নরম রোদ আর চারপাশে হোটেল ম্যানেজমেন্টের ইনটার্নশিপ আর নিয়ম না-মানা,একটি শুভ ছেলে ড্যান। ছাদ থেকে হাত পিছলে পড়ে যাওয়ার আগে তার শেষ বাক্যটাও ছিল ওই ড্যানকে নিয়েই। 'হোয়ারিস ড্যান?' এরপর থেকে কাহিনি আর শিউলির থাকে না, পুরোটাই হয়ে ওঠে ড্যানের। শুধু কাহিনি নয়, শিউলির মা, শিউলির ভাই-বোন, শিউলির হসপিটালের বিছানা, নার্স, কেয়ার টেকার, একটা বর্ষাকাল, ডাক্তার, ওষুধ, তর্ক, আশাবাদ এমনকি শিউলির চোখ মেলাটাও ড্যানেরই হয়ে ওঠে। নিয়ম না-মানা, পথের উল্টো পানে হাঁটতে থাকা ড্যান যেন এতদিন এমনকিছুরই অপেক্ষায় ছিল। একটা খাঁটি উদ্দেশ্য যার জন্যে রাতের পর রাত জাগা যায়, কাজে পাহাড় প্রমান ফাঁকি দেওয়া যায়, মিথ্যে বলা যায়, বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা যায় হিসেবহীন টাকা তবু আশা ছাড়া যায় না যে হসপিটাল বেডে এতগুলো মাস প্রায় ভেজিটেবল হয়ে থাকা শিউলি একদিন জাগবে না। প্রকৃত পুরুষ তো এরকমই। তার শুশ্রুষা লাগে না, ভালোবাসা লাগে না, একটা চুমুও লাগে না। তার লাগে একটা ছোট্ট উদ্দেশ্য যাতে সে প্রাণপাত করলেও করতে পারে। আমরা ওই পুরুষটার কথা ভুলে যাই যে শুধু হসপিটাল আর হোটেলে তার জীবন থামিয়ে রাখতে পারে। নিজের মায়ের কথাও তার মনে পড়ে না। অভীক মুখোপাধ্যায়ের ক্যামেরা (একটি সিঙ্গেল শটও বোধহয় রিপিট হয়নি এত অনাবিল সুন্দর, নির্ভার সেই ক্যামেরা) আর শান্তনু মৈত্রের সুর-করুণা সেই বিপ্রতীপে ড্যানের সাথে আমাদেরও কনস্ট্যান্ট দাঁড় করিয়ে রাখে। তবে অপেক্ষাতেই শেষ নয়, ড্যান কোনো এক শিউলি-সম্ভাবনার সাথে শেষাবধি নিশ্চয়ই থেকে যায়। সব ড্যানদের পক্ষেই তা সম্ভব শুধু আমরা বোধহয় তাদের সেই উদ্দেশ্যটা দিতে পারি না যা রাত্রি শেষে তাদের একেকজনকে এক অজানা সুগন্ধে রূপান্তরিত করতে পারে।ছবি সমাপ্তিতে হলের সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় ছাড়ছিল না, পায়ে পায়ে জড়িয়ে নামছিল বাকি লাইনগুলো,'যে ফুলের নেই কোনো ফলযে ফুলের গন্ধই সম্বলযে গন্ধের আয়ু একদিনউতরোল রাত্রে বিলীনযে রাত্রি তোমার দখলেআমার সর্বস্ব নিয়ে জ্বলেআপন সত্তাকে করে ছাইফুল হয়ে যেন ঝরে যাই।'...সুজিত সরকার এরকমই।💖
October : a story of every season : a film review ****
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Share. Comment. Subscribe