নিয়তিবাদীরা চুপ। খানিক কোণঠাসা। যুক্তিবাদ ও পরা-যুক্তিবাদীদের সুরমরমার পর্ব এ। যুক্তিবাদের মৌলধর্ম হল ব্যক্তিগত বোধগম্যতা ও তার সূক্ষ্মতা —জোর। যার 'বোধ' নেই —নির্বোধ —বা অবোধ —তার কোনো 'যুক্তি' নেই। ফলত নেই আত্মকে প্রতিষ্ঠার পীড়া। নিজেকে বা নিজের চিন্তাকে 'জাস্টিফাই' করা লজিকের অনেকের বিশেষত্বের একটি।
নিয়তি অব্যাখ্যেয়, এমনই ধারণা। নিয়তি একটি 'ব্লক'। যুক্তিবাদ তাই নিয়তিকে অ-নিরাপদ দূরত্বে রেখে সংশয়-সন্দেহের তর্কে দেখে নিয়মিত। গ্রিক নাটককার সোফোক্লিসও যুক্তিবাদ দিয়ে ঈদিপাসের নিয়তিকে বিখন্ডিত করতে পারেননি। বলা ভালো, করেননি। যদিও তিনিই ছিলেন গ্রিক নাটকে যুক্তিবাদ ও ব্যক্তিত্ববাদের পুরোধা। ইসকাইলাসকে মনে রেখেও তা বলা যায়।
নিয়তিবাদের সর্বোচ্চ পাহারাদার স্বয়ং মৃত্যুই। যুক্তিবাদীতা মৃত্যুর কাছে এসে নত-তর্ক হয়। এখন প্রশ্ন হল, প্রকৃতিই কি নিয়তিবাদের সংগঠক? পৃষ্ঠপোষক? তাহলে বলতে হবে, প্রকৃতি নিজেই নিয়তির সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তিতে যেতে পারেনি। সেও নিয়তি-নির্দিষ্ট, বলিপ্রদত্ত।
পৃথিবীর সব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই প্রায় এই অসহ নিয়তিকে মানুষ প্রজাতির সখ্যে উঠিয়ে আনতে সদাচেষ্ট। ধর্ম যেহেতু নিয়তির উপরে ঈশ্বরকে স্থাপনা দিয়েছে, নিয়তিরও নিয়তি হল ঈশ্বর, তাই নিয়তি কার্যত ধর্মের একটি নিয়ন্ত্রক 'টুল' বৈ আর কিছু নয়। ধর্ম কি নিজেকে নিয়তির নীতি-নির্ধারক হিসেবে প্রচার করেনি? তবে একটা শুভবোধ আছে। রয়েছে সহৃদয়তা — সমতাবিধানের অভিপ্রায়। 'কর্মফল' - এর প্রসঙ্গ আনা হয়। বলা হয়, এক্ষেত্রে মানুষই হতে পারে 'নিয়তি' নামক খেয়ালি ঘোড়ার নিয়ামক ; চালক। কেননা ধর্মগ্রন্থ যখনই বলে সৎ কর্মশীলদের মৃত্যুর যন্ত্রণা লাঘব হবে বা প্রায় শূন্য এবং সততা ও কর্মশীলতা যেহেতু মানুষের ইচ্ছাধীন সেহেতু প্রকারান্তরে নিয়তির উঠে যাবার সম্ভাব্য পথনির্দেশনা ও ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয় মানুষকেই।
ধর্ম নাকি ভয় দেখায় ; ধর্মের ভিত্তিপাথর নাকি সন্ত্রাস! আসলে কথাগুলি খাটবে ধর্মট্রেডারদের সম্বন্ধে যেহেতু তারা ধর্মের ডিলারশিপ নিয়ে বসে আছে ও টেন্ডার ডেকে ধর্মকে বিক্রি করতে চায়। মৌল ধর্মে তাহলে কেন নরকের উল্লেখ? সেটা কি ভয়ের উপমা নয়? স্বাভাবিক প্রশ্ন। তবে, এক্ষেত্রে স্বীকার্য, নরক-যাত্রার যাবতীয় শর্তাবলীর সঙ্গে সম্বন্ধ ইহজাগতিক জীবন ও যাপনের ভালো-মন্দের। অর্থাৎ এই জাহান্নম কার্যত ইহজাগতিক সব অশুভ-এর প্রসারিত অংশ এবং ঐহিক ভারসমতার রক্ষাকবচ।
তাই কি? জানি না। তবে, রাষ্ট্রীয় আইন ও পেনাল কোড কি ভয় দেখায় না? তাহলে আমরাই তাকে নিজেদের ওপর অর্পণ করেছি কেন?
ভালো।ভাবনাটা আরো বড়ো করে লেখো।
উত্তরমুছুন