আমার কেবলই সিনেমা দেখতে ইচ্ছে হয় আজকাল। শুধু ঘটনাক্রমের দিকে জান্তব তাকিয়ে থাকা। চলমান চিত্র দেখতে দেখতে কিছুই ভাবি না। না ভেবে ভেবে দিন ডুবে যাচ্ছে। কষ্ট হয়। নিজের সঙ্গে কথাটুকু বলা হয় না। আমি যেন একজোড়া চোখ ছাড়া আর কিছু নয়। অক্ষর গুলিয়ে যায়। ভেদ করতে পারি না স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণে। বইগুলোও স্থিরচিত্র ছাড়া আর কিছু নয় বলে মনে হয়। বহুদিন ডাক্তারের কাছে যাই না। তাঁর সোনামুখ মনে পড়ে। তাঁর ব্যবস্থাপত্র আমার কাছে মহাগ্রন্থের ছিন্ন পাতা মনে হয়েছে কখনও কখনও। এই এখন ট্রেনে বসে আছি, বাড়ি ফিরছি, গৃহস্থ হব, শয্যাশায়ী হব, তাঁর কথা এই নাতিশীতল রাতে কাচ ঢাকা ট্রেনের জানালার পাশে অজ্ঞাত পরিচয় লোকের পাশে বসে ভাবছি। আমাদের ছোটগল্পগুলো স্থানের বর্ণনায় বড় বেশি স্থানিক হয়ে আছে। সমাজ আমার বিবাহ নিয়ে চিন্তিত। খেয়াল করে দেখেছি, বিয়ে নয়, আমি সমাজ নিয়ে দুশ্চিন্তিত। বিবাহ করা মানে আরও একটা আস্ত সমাজকে আমূল বাড়ির মধ্যে প্রবেশাধিকার দেওয়া। আমার রাতের গন্তব্য আইনি বাঁধনে পাওয়া কোনও স্ত্রীলোক নয়, আমার গন্তব্য আমি।
তকদির
...................
আমি শুয়েই ছিলাম। যে শুয়ে থাকে, তার ভাগ্যও শুয়ে থাকে, শুনেছিলাম এক মৌলবীর মুখে, ছোটবেলায়। তখন কত আর বয়স হবে আমার? এগারো কি বারো। আমার পাশে বালাপোষ গায়ে দিয়ে আমারই ভাগ্য শুয়ে আছে, ভাবতেই অদ্ভুত লাগে। ভাগ্যের এত অলস হওয়া মানায় না। উচিতও নয়। সে বসবে ঘোড়ার পিঠে আর সেই ঘোড়া দৌড়বে সেই মহল্লার মধ্যিখানের রাস্তা দিয়ে যেখানে প্রচুর ঘরবাড়ি, সুন্দরী রমণী, লোকের অরণ্য, সবার দৃষ্টি প্রবল তাই চশমা পরে না, মানুষকে মাপার ফিতে হাতে দাঁড়িয়ে থাকা গৃহকর্ত্রী, যেখানে সবাই সবাইকে 'আপনি' বলে সম্ভাষণ করে, দিশি কুত্তাবিহীন এক অঞ্চল। অথচ আমার ভাগ্য শুয়েই রইল, মশারিটাও আমাকেই টাঙিয়ে দিতে হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সূর্য উঠেছে, ভুলে যাই যে, সূর্য উঠেছে বলেই সকাল হয়েছে আর সকাল হয়েছে বলে আমি জেগে উঠেছি। মুর্খদের সঙ্গে বাস করা কঠিন। কিন্তু নিজেকে ছেড়ে যাব কোথায়? কোথাও যাওয়ার না পেয়ে টিউশন পড়াতে বসি। প্রথম টিউশন শুরু করি ২০১১ সালে। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর শুরুতেই আমি পড়াতে শুরু করি একটি শিশুকন্যাকে। তার নাম জানতে চাইবেন না। কারণ তাকে আপনারা চিনতে পারবেন না কিন্তু সে যদি দুর্ভাগ্যবশত এই লেখাটি পড়ে তাহলে সে আমাকে চিনতে পারবে। কেন তার অনুমতি ছাড়াই তার নাম ব্যবহার করেছি তা নিয়ে সে প্রশ্ন তুলতে পারে। ভয় আছে। আমি সাধারণত যে ধরনের প্রশ্ন শুনতে চাই তা হল :
১. কবিতা কীভাবে লেখা হয়?
২. রাজনীতিকরা কি সাইকোটিক?
৩. মানুষ পাগল হয়ে যায় কীভাবে?
৪. সত্য মানে ট্রুথ কী?
৫. ঈশ্বর আছে?
এই ধরনের প্রশ্ন শুনতে চাই কারণ এদের কোনও সদুত্তর নেই। আর সদুত্তর নেই বলেই যা-কিছু চিন্তা করা যায়। মাথা সচল থাকে। কিন্তু মুশকিল হল, আমার তৎকালীন ছাত্রীর বয়স ছিল ৬ বা ৭ বছর। সে রঙিন সব জামাকাপড় পরে আমার সামনের চেয়ারে এসে বসত। দুজনের মাঝখানে একটা পেল্লায় টেবিল। ওর মা 'এরকম-সচরাচর-পাওয়া-যায়-না' স্বাদের অপরূপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকতেন। পুত্রসন্তান নেই বলে তাঁর বড় আক্ষেপ ছিল। কীভাবে বুঝলাম? একদিন তিনি নিজেই প্রকাশ করে ফেলেছিলেন। তারপর যেভাবে সামাল দিতে হয়, সেভাবে সামালও দিয়েছিলেন। তাঁর দুই কন্যা। আমার ছাত্রীটি ছোট। ছোট হলে কী হবে, সে একদিন এক আশ্চর্য কথা শোনালো। বলল, জানো স্যার, আজ আমাদের স্কুলে একটা ছেলে আমার সামনে এসে বলছে 'তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত'। বলেই সে কি হাসি। আমি ভাবছিলাম, যে ছেলেটি বলেছে ধরে নিচ্ছি এই বয়সেই সে সব বোঝে, কিন্তু এ এত হাসে কেন? বুঝলাম, এও কম বোঝে না। যখন এই বোঝা ও পড়া চলছিল তখন আমার ভাবোদয় হল যে, আমি এই কন্যাকে কিছুই শেখাতে পারছি না, বরং রোজ আমিই শিখে বাড়ি আসছি আর তার বদলে বেতন নিচ্ছি। এভাবে তো চলে না। তাছাড়া, অভিভাবকরা তো বছরের শেষে নম্বর দেখবেন। অর্থের ব্যয় অনুপাতে নম্বরের আয় কত হল? আমিই অকৃতকার্য হব। একদিন ছাত্রীর বাবাকে ডেকে বললাম, ওর জন্য শিক্ষক নয়, নার্স প্রয়োজন, যে ওকে নারিশ করবে। আমি ওর কোনও উপকারেই লাগছি না, আমাকে বিদায় করুন। শিক্ষক বিনীত হলে অভিভাবক তাঁকে আরও মহান শিক্ষক ভাবতে শুরু করেন। তিনি আমাকে ছাড়তে নারাজ আর আমিও নাছোড় যে ছাড়বই। তারপর একটা রফা হল : ও আরেকটু বড় হলে আমি আবার পড়াতে আসব। তা-ই সই। কিন্তু এখন যে আমি টিউশন পড়াতে ছাদের ঘরে এলাম, এটা আপাতত আমার জীবিকা সংগ্রহের বিবিধ উপায়ের একটি। যে শুধুমাত্র জীবিকার জন্য পড়াতে বসে, পড়ানোটা যার জীবন নয়, সে শিক্ষকই নয়। তার অন্য কাজ দেখা উচিত। অন্তত আলুবিক্রেতা হতে পারে। আমার পুঁজি নেই আর সকলেই জানে টিউশন একটা বিনাপুঁজির ব্যবসা। আমি ফলত শিক্ষক নই, একজন ব্যবসায়ী। ছাত্র-ছাত্রীরা আলাদা করে ভক্তিশ্রদ্ধা দেখালে তাই আমার লজ্জা লাগে। আমি তাদের হাতগুলো আমার পা থেকে ক্রমাগত সরিয়ে দিই। এই পায়ে পাঁচ পাঁচ দশটা আঙুল ছাড়া আর কিছু নেই, তদুপরি রয়েছে ময়লাজমা নখ। পড়িয়ে নিচে নেমে প্রথমে বারান্দায় যাই না, আব্বামায়ের সামনে যাই না, যাই আমার বিছানার পাশে যেখানে তখনও আমারই ভাগ্যখানি গভীর নিদ্রায় মগ্ন। ভাগ্য নিজে কি স্বপ্ন দেখে? সে তো স্বপ্ন দেখায় আর এক সুন্দরী সকালে সত্যে রূপান্তরিত হয়ে মথ থেকে প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায়। উড়ে গিয়ে সে মেঘ হয়, মেঘ মানে প্রথমত ছায়া, তারপর জল। সব তাপ কেটে যায়, সবকিছু নাতিশীতোষ্ণ হয়ে ওঠে। দীর্ঘ জীবনের লোভ জন্ম নেয় এই মেঘের গর্ভে। অথচ আমার ভাগ্য এমন নিষ্পাপীর মতো ঘুমোচ্ছে যে তাকে জাগাতে আমার মায়া হল। কে কাকে জাগাবে? আমি তাকে নাকি সে আমাকে?
আমাকে অফিসে যেতে হবে। বলা উচিত কাজে যেতে হবে। আসলে সবাই 'অফিস' যেতে চায়। আমার পরিচিত একজনের স্ত্রী তার স্বামী কোথায় গেছে জিজ্ঞেস করলে বলত, অফিসে গেছে। তার মেয়েকেও সেভাবে শেখানো হয়েছে। সেও বলে, বাপি অফিসে গেছে। লোকটা ছিল প্লাম্বার।
আমিও যেমন একজন অনুবাদক ছাড়া আর কিছু নই। একটা পত্রিকার দফতরের এক কোণায় বসে হরেক মাল অনুবাদ করি। ভুঁইফোঁড় কোম্পানির ত্রৈমাসিক বা অর্ধবর্ষের অনিরীক্ষিত আর্থিক ফলাফল, ব্যাঙ্কের দখল বিজ্ঞপ্তি, দাবি বিজ্ঞপ্তি, সরকারি টেন্ডার নোটিশ, সম্পত্তি নিলাম ও বিক্রয়ের বিজ্ঞপ্তি—এর শেষ নেই। আমি রাতে বাড়ি ফিরে খলিল জিবরান অনুবাদ করব কিনা ভাবি, ভাবতে গিয়ে দেখি কবিতাগুলি বিজ্ঞপ্তি হয়ে যাচ্ছে, মাথা কাজ করছে না, পরিভাষা ছাড়া অন্য শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। কবির কাজ পরিভাষার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা, আমি রোজ তারই দাসত্ব করি, আমি কি আর কখনও-ই জিবরান অনুবাদ করতে পারব না?
এই দফতরে নানা কিসিমের লোকের সঙ্গে এই অল্প কয়দিনে আলাপ হল। একদিন সৃজিত মুখার্জির মতো সিনেমা বানাবে—এই স্বপ্ন নিয়ে এক তরুণ উত্তর ২৪ পরগনা থেকে রোজ বিকেলে এসে রাজনৈতিক খবর লেখে। সে অনেক বিদেশি সিনেমার নাম বলল। সব সে দেখেছে। কিন্তু সে বক্স অফিস চায়। তাহলে ওই বিদেশি ছবিগুলি দেখে সে কী শিখেছে? 'সিনেমাকে ভালবাসতে শিখেছি', 'লাভ-চাইল্ড'-এর মুখের গড়ন কেমন হবে? শ্রী মুখার্জির মতো। বানাক না, সে যা চায়, যেমনটা চায়, বানাক। আমরা বড় বেশি দাগ টেনে দিই। আমি বরং সেই তরুণের গল্প বলি যে ডিটিপি অপারেট করে আর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পশুচিকিৎসকদের হেল্পারের কাজ করে। সে ফরেন কুকুরের নামগুলি সংক্ষেপে বলে। সে যে একজন ভেটারেন ভেট তা বোঝাতে চেষ্টা করে। আনন্দ পাই। চোখ বড় বড় করে একদিন বলল, একটা ল্যাবের তিনটে বাচ্চা হয়েছে, একটা মরা, এইটুকু মাথা। আঙুল গোল গোল করে দেখালো। আর একদিন বলল, 'আজ দুটো কুকুরের ইউট্রাস অপারেশন হল।' আমি বললাম, ইউটেরাস? সে এক মুখ লজ্জাবন্ধ হাসি নিয়ে বলল, ওই হল দাদা, আমাদের লাইনে সব চলে।
তার আঙুল চলছে কী-বোর্ডে আর মনিটরে নানান মুদ্রায় ফুটে উঠছে অক্ষর। ওর কি এত অর্থের প্রয়োজন? নাকি ভাগ্য ওর সহায়?
আরেকজনের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে। এই দফতরে সবাই পেশাগতভাবে দ্বৈত পরিচিতি নিয়ে বেঁচে আছে। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি মরে যাচ্ছি।
দফতর থেকে বাড়ি ফিরে আব্বামার সঙ্গে কথা বলা হয় না। ভালো থাকে না মেজাজ। আয়নায় নিজেকে দেখলে যেমন করুণা জাগে, তেমনই তাদের দেখলেই যেন রাগ হয়, তারা কি একবারও বলতে পারে না যে করতে হবে না এমন চাকরি যা তোকে আরও বিমর্ষ আর বিষন্ন করে তুলছে দিন দিন? তারা বিশ্বাস করে, যুবকদের ব্যস্ত থাকা ভালো। উচিত। আমি এই বিধিবদ্ধ ঔচিত্যে আটকে থাকতে থাকতে তাদের থেকে ক্রমশ দূরবর্তী হয়ে পড়ছি, তা তারা বোঝে না। আমি ভুলে যাই কী দিয়ে কথা শুরু করব তাদের সঙ্গে। মনে করতে পারি না আমাদের পারিবারিক সংলাপের পরম্পরা কোন অবধি এসে থমকে আছে। বাড়িটা প্রতিদিন একটু একটু করে হোটেল হয়ে উঠছে। আমি হোটেলে থাকতে চাইনি কখনও। চাই না।
দফতর থেকে বাড়িতে সোজাসুজি না ফিরে চলে এলাম গঙ্গার কাছে। পাপ এতে ডোবে কি না জানি না তবে জীবন ডুবে যায়।
লাফ দিলাম গঙ্গায়। জোয়ার তখন। একটি উপন্যাস শেষ হয়ে যাবে ছোটগল্প হয়ে, লাফ দেওয়ার আগে এই সব ভাবছিলাম। আমি নেই মানে আমার ভাগ্যও নেই? তার নিষ্পাপ ঘুমন্ত মুখখানা মনে পড়ছিল। সে যদিও এখনও বিছানায় আর আমি একা একা পালিয়ে যাচ্ছি জীবনাঞ্চল থেকে। সে আমার সঙ্গে থেকেছে আজীবন কিন্তু সখ্য হয়নি। চললাম সঙ্গী, তুমিই এবার আমার সওয়ার হও। অথচ বিপরীতটা হতে পারত আর হলে তুমিও দীর্ঘায়ু হতে। যাইহোক।
চোখ খুলে দেখি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভাগ্য, আমি একটি নৌকোর পাটাতনে শুয়ে আছি। বেঁচে আছি তাহলে? কীভাবে সম্ভব? কে বাঁচালো? একে কি কৃপা বলা যাবে? যদি যায়, তাহলে কার এই কৃপা?
'আমার', ভাগ্য বলল বেশ উদাসীনভাবে, 'আমার সম্পর্কে তোমার যা ধারনা আর আমি যা, আমার কাছে রোজ তুমি যা চাও আর রোজ আমি তোমাকে যা দিই, যাকগে, বাড়ি চলো, আমাদের আব্বামা অপেক্ষা করে আছে। তারা এখনও খায়নি।'
জিয়া হক
আমি তো বেশ ভাবতে পারি মনে
..............................................
কী পুছহ, জিজ্ঞাসিত বুঝিতে না পারি
বর্ণ যেন শব্দে এসে
গড়ে তোলে বদহজমী
বাক্যের তরকারি
কী পুছহ, কী প্রশ্ন খুকি
দরজায় মেহগনি
তদুপরি দ্বাররক্ষী
কোন জ্ঞানে ঢুকি?
দেখনি, কী উত্তেজক জল!
হারাম হালাল করে
ডাকে ওই মূত্রদ্বারে
যেখানেই তির্পল
পাতা ছিল শয্যা হবে তাই
প্রশ্নপত্র যথাযথ
বানানও বিধিবদ্ধ
শয্যাশায়ী শিশুছাত্র নাই
জিয়া হক
প্রতি প্রতিষ্ঠান
...................................
কী আলো তোমাদের কথায় বাসা বেঁধে আছে
কুক্কুট মাংস ইহাতেই প্রসিদ্ধ হয়ে যেতে পারে
যে শোনে, সে শ্রোতা, যেভাবে আমি ও কুকুর
তার ধর্মভাব বেশি তাই কলহ করে না
যে বক্তার অঙ্গভঙ্গি নেই, সে কতখানি বক্তা হল শেষে
যে-দেবতা আরাধ্য, তাকে নগরের পথে
আমি হারিয়ে ফেলেছি
সে-দেবতা কি আমাকে আমারই মতো খুঁজিতেছে—
ভিড়ে, আস্তাকুড়়ে?
প্রচলিত গান শুনে বুঝি বিপ্লবীরা গুপ্তভাবে সভা করে কেন
হে জনের মাধ্যম, হে ছাপার বাক্যবর্ণযতি
থাক, বৃথা এই 'হে' বলে ডাকা, পাখা ডাকি, ক্লান্ত হয়েছো
মরুভূমিকে তুমি, তুমিই সমুদ্র বলে ব্যাখ্যা করতে পারো যেহেতু
সংস্থা আর বালিও খেয়েছো অঞ্জলিভরে, পাদপদ্মে বসে
জিয়া হক
দ্বিজাতীয়
........................
কন্যা কি চলে যায় ভিজে
উঠে আসে তোমাদের
আমাদের
মাংসের দহলিজে?
বালক কি চলে যায় একা
উঠে পড়ে পল্লি ট্রেনে
দক্ষিণের
নদীর অদেখা—
কোনো গ্রামে?
দুজনের প্রতি দেখো
দেবতার
ইবলিশের
কথামালা নামে
'মিলে যাও,
ঢুকে যাও দেহে
তুমি ঠিক ছোট নও
আমি ঠিক বড় নই
শংসাপত্রী
দৈবশাস্ত্র চেয়ে'
ফলবতী নিম ছিল দূরে
ডুবে গেছে পৃষ্ঠা যার
সুমিষ্ট ভক্তি আর
ষান্মাসিক নিহত রোদ্দুরে
সান্ধ্যকালে সূর্য ধরে গান
নামকরণ ভুল নয়?
গোত্রে তারা একপ্রকার?
সুচিন্তিত মেলে ধরে
লোক-অভিধান
অতঃপর বৈধ পেঁচা বলে
মিলে গেলে কেমন কৌশলে
এই দেশে?
জিয়া হক
চিত্র : ভ্যান গখ
আমাদের যা নয়
......................
আমাদের বাক্য হল ছোট, আমাদের 'আমি'ই গেল ডুবে
আমাদের অন্ত্যমিলের বাজার
পড়ে গেল হাজার একটা কূপে
আমাদের খাদ্য মাটি মাটি, আমাদের পেটের মধ্যে ধান
আমাদের যন্ত্রে কান্না বাজে
ফুলে ওঠে চোখের বাসস্থান
আমাদের কোমলমতি চারা, আমাদের মৃত্যুশয্যা ঘিরে
আমাদের পেলাস্টিকের গৃহে
খেলা করে উদ্বাহু আর স্থিরে
জিয়া হক
আমাদের বাক্য হল ছোট, আমাদের 'আমি'ই গেল ডুবে
আমাদের অন্ত্যমিলের বাজার
পড়ে গেল হাজার একটা কূপে
আমাদের খাদ্য মাটি মাটি, আমাদের পেটের মধ্যে ধান
আমাদের যন্ত্রে কান্না বাজে
ফুলে ওঠে চোখের বাসস্থান
আমাদের কোমলমতি চারা, আমাদের মৃত্যুশয্যা ঘিরে
আমাদের পেলাস্টিকের গৃহে
খেলা করে উদ্বাহু আর স্থিরে
জিয়া হক
বলদ চলেছে গাভীটির পাশে
প্রকাণ্ড দেহে যারা বাস করে প্রায়শ মানুষ
দাবি করে বলে চা দেয় সুবেশা রানিমা
বলদেরা ধান খায়, বলদেরা ধান চাষ করে
তাঁদের বেতন নেই, খোরপোষ বিধিবদ্ধভাবে
নক্ষত্রখচিত ওই ভাষা : তাঁরা কথা বলে, মান্য শ্রম দেয়
নগরের প্রতিটি সিন্দুক আরও এক মুনাফাবন্ধনে
শোভিতই করে রাখে তাঁদের আলোকচিত্রে, অমৃতচরণে
উহাদের শয্যা নয় ; স্বপ্নেই ঢেলে দিন মূত্র-প্রসাধন
ও মানুষ —প্রায়শ বলদ
দাবি করে বলে চা দেয় সুবেশা রানিমা
বলদেরা ধান খায়, বলদেরা ধান চাষ করে
তাঁদের বেতন নেই, খোরপোষ বিধিবদ্ধভাবে
নক্ষত্রখচিত ওই ভাষা : তাঁরা কথা বলে, মান্য শ্রম দেয়
নগরের প্রতিটি সিন্দুক আরও এক মুনাফাবন্ধনে
শোভিতই করে রাখে তাঁদের আলোকচিত্রে, অমৃতচরণে
উহাদের শয্যা নয় ; স্বপ্নেই ঢেলে দিন মূত্র-প্রসাধন
ও মানুষ —প্রায়শ বলদ
দুধের পাহাড়ে একদিন
অন্তর্হিত হলাম এই লোকমান্য পেয়ারা বাগানে
যেখানে পোকা ও মাকড় থাকে, অন্তর্ভুক্ত হলাম সেখানে
দয়ার প্রাসাদ আর দয়াময় ধানের মণ্ডপে
আসন্ন শীতের প্রাক্কালে
কাকে যেন দেব আমি সুগৃহিণী,—নাচের পুতুল
নাচের পুতুল যাবে প্রসূতিসদনে
জন্ম দেবে প্রতিটি বাড়ির মতে আরও এক চাঁদ
ইঁদুর এসেছে কিছু, বৃষ্টি হল খুব
যেভাবে শাস্ত্রসম্মতভাবে দস্যু আসে দেশে
শিক্ষক যেভাবে আসে মল-মন্ত্র মুখে
তাকে একটি উপগ্রহ কর দিতে হবে
যে-লোক বাড়িতে নেই, যে-লোক সভাবিমুখীন,
গৃহিণীকে বাৎসল্যে দেখে বলে সন্তান চায়নি
তাকে আমি সানুনয়ে অনুরোধ করি—
যেখানে হারিয়ে গেল সবাই, অন্তর্হিত হল
সন্ধ্যা পতনের আগে সেখানেই অন্তর্গত হয় যেন সে
যেখানে পোকা ও মাকড় থাকে, অন্তর্ভুক্ত হলাম সেখানে
দয়ার প্রাসাদ আর দয়াময় ধানের মণ্ডপে
আসন্ন শীতের প্রাক্কালে
কাকে যেন দেব আমি সুগৃহিণী,—নাচের পুতুল
নাচের পুতুল যাবে প্রসূতিসদনে
জন্ম দেবে প্রতিটি বাড়ির মতে আরও এক চাঁদ
ইঁদুর এসেছে কিছু, বৃষ্টি হল খুব
যেভাবে শাস্ত্রসম্মতভাবে দস্যু আসে দেশে
শিক্ষক যেভাবে আসে মল-মন্ত্র মুখে
তাকে একটি উপগ্রহ কর দিতে হবে
যে-লোক বাড়িতে নেই, যে-লোক সভাবিমুখীন,
গৃহিণীকে বাৎসল্যে দেখে বলে সন্তান চায়নি
তাকে আমি সানুনয়ে অনুরোধ করি—
যেখানে হারিয়ে গেল সবাই, অন্তর্হিত হল
সন্ধ্যা পতনের আগে সেখানেই অন্তর্গত হয় যেন সে
আমিও চৌকিদার : একটি গল্প
........................
—ইন্টারনেট আমাকে অসুস্থ করে তুলছে। আমি একজন মিলেনিয়াল। দুধে কি কেশর দেওয়া আছে? খেতে খুব সুন্দর হয়েছে। হ্যাঁ, আমি একজন মিলেনিয়াল, ইন্টারনেটের উঠে আসা আর আমাদের বেড়ে ওঠা তো প্রায় একই সময়ে, আলফা প্রজন্ম এসে গেছে, সে যাকগে, কিন্তু মূল কথা হল, ইন্টারনেট আমাকে বড় কষ্ট দিচ্ছে।
—তুমি কি ভীষণভাবে অ্যাডিক্টেড?
—কোকেনের চেয়ে বেশি। ইদানীং তো দিন-রাতের হিসেব গুলিয়ে যায়। সূর্য ডোবা যে কতদিন দেখি না! চোখের বড় অপব্যবহার করছি। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, সারাদিন ইন্টারনেটে কী যে দেখি তার কোনও সদুত্তর দিতে পারব না। তাহলে আমি কী দেখি? আদৌ কি কিছু দেখছি?
—ইন্টারনেট প্যাকেজ রিচার্জ করা বন্ধ করে দাও তাহলে, এছাড়া আর উপায় কী?
—একবার করে যে দেখিনি তা নয় কিন্তু উইথড্রল সিনড্রোম দেখা দিতে শুরু করে। সে যে কী ভয়ানক ফিলিং!
—কেমন হত?
—সেটা আমি বলে বোঝাতে পারব না, তবে পাগল-পাগল অবস্থা। ড্রাগ নেওয়া বন্ধ করলে যেমনটা হয় আর কি। বিস্কুটের উপর চিনি ছড়ানো দেখে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আরেকটা দে তো।
আমাদের কথা শুরু হলেই রাত্রি গভীর হয়ে যায়। এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র, বুঝতে পারি, যদিও কুচক্রীদের হাতেনাতে ধরতে পারি না। খেয়াল করে দেখেছি, যখন থেকে আমি তর্ক করা ছেড়ে দিয়েছি, তখন থেকে আমার সঙ্গীসংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি লোকগীতি শুনেছিলাম বহুদিন আগে, সেখানে গায়ক বলছেন যে কান, চোখ দুটো করে আছে কিন্তু মুখ মাত্র একটা তাই দেখবে আর শুনবে, কথা কম বলবে। শব্দভান্ডার নিপাত যাক। দাদা দুঃখবোধ নিয়ে বাড়ি চলে গেল।
আমার বন্ধু আফরোজের সঙ্গে এই দাদার কখনও সম্ভব হলে আলাপ করিয়ে দেব। আফরোজ শ্রীনগরে থাকে। ওর সঙ্গে যোগাযোগ নেই প্রায় দু-মাস। কয়েক মাস আগেও আমাদের প্রতি সপ্তাহে কথা হয়েছে। ১১ই জানুয়ারি ওর জন্মদিন। মূল কথা হল, কাশ্মীরে এখন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। এ বছর জন্মদিনে ওকে শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি। আফরোজ আমার এই দাদাটির মতো খানিকটা—ইন্টারনেট অ্যাডিক্ট। ওর কি এখন উইথড্রল সিনড্রোম দেখা দিয়েছে? আজ আমাদের বাসায় কাটা পোনা রান্না হয়েছে।
এলাকায় চোরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তরুন সংঘ ক্লাবের ছেলেরা রাতে পাহারা দিতে শুরু করেছে। পাড়ার প্রতিটা বাড়ি থেকে একজন করে লোক এই দলে যোগ দেয়। দলটা বেশ বড় হয় কেননা ঘর তো কম নেই। রাত আড়াইটে অবধি এই পাহারা চলে রোজ। বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে প্রতিটি বাড়ির যুবকদের যুদ্ধে যোগ দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। আমাদের পাড়ায় এখন যুদ্ধ-পরিস্থিতি। চোরদের সমস্যা হল, তাদের কোনো কৃপাকারী দেবতা বা অপদেবতা নেই। এককালে দস্যুদের কালিকা ছিল, বলিটলি দিয়ে রক্ততিলক কপালে টেনে পল্লীজয়ে বের হতো তারা। দেবী বা দেবতা একজন দরকার, অন্তত আমাদের মতো দেশে। আজ গাছে বিন্দুমাত্র বাতাস নেই।
রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ গিয়ে ভিড়লাম পাহারার দলে। তরুন সংঘ ক্লাব। কয়েকজন গঞ্জিকা সেবন করছে। গাঁজার গন্ধেই একটা নেশা থাকে। খানিকটা দূর থেকে সেই গন্ধ নাকে এসে লাগছে। মাথাটা তাতেই ঝিমঝিম করে উঠল। একটা ছড়া ছোটবেলায় শুনেছিলাম —
আপেলে ধরেছে পোকা
দুধে দেয় জল
গাঁজায় বুদ্ধি বাড়ে
পানে বাড়ে মল।
আমাদের দলটা যখন মন্ডলপাড়া স্কুল পেরিয়ে হাজার ফুট কলের ধারে এসে দাঁড়াল তখন শিবেন্দু বলল, "তপন মাস্টারদের পেঁপে গাছগুলো দারুণ হয়েছে, তাই না?"
শিবেন্দু আমাদের দলের শিক্ষিততম ছেলে। ডবল এম এ আছে, তবে কোন কোন বিষয়ে তা জানি না। তাত্ত্বিক নেতা, সুবক্তা, নানা রকম ম্যানিফেস্টো পড়া ছেলে। চাকরি নেই তাই চাকরি পায়নি। সেই কারণে সুকন্যার সঙ্গে সম্পর্কটা টিকল না। টিউশন পড়িয়ে সে একপ্রকার টিকে রয়েছে।
জগন্নাথ বলল, ওদের পেয়ারা গাছগুলো কি খারাপ? তাকিয়ে দেখ একবার।
দুটো কুকুর আমাদের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাতে তাকাতে আজাদনগরের গলির দিকে ঢুকে গেল। ইলেকট্রিক পোস্টের তীব্র আলো রাতকে নিশুতি হতে দিচ্ছে না। অন্ধকারকে আপ্রাণ ঠেকিয়ে রেখেছে।
শিবেন্দু বলল, জগা, তোর কি ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বিষয়ে কোনো জ্ঞান আছে?
জগন্নাথ বলল, একটু একটু।
শিবেন্দু এবার তাকে প্রশ্ন করল, আচ্ছা বল তো, ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন আসলে লাইফ সায়েন্স না হোম সায়েন্স?
এত গভীর ও সূক্ষ্ম প্রশ্ন জগন্নাথ প্রত্যাশা করেনি। সে মাথা চুলকোতে লাগল। জগন্নাথ খর্বকায়, চুল কোঁকড়ানো, টাইমেক্সের ঘড়ি পরে, পায়ে কোলাপুরি ধরনের চামড়ার জুতো।
গগনদা বয়েসে একটু বড়। সে বলল, তোরা এ সব রাখ। আজ চুরি হতে পারে, আমার কাছে খবর রয়েছে। একটু এই দিকে মন দে, চল—পিন্টুদার দোকানের ওদিকটায় যাই একবার, হকির স্টিক দুটো এনেছিস তো?
শিবেন্দু তখনও তপন মাস্টারদের ফলের গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে। অস্ফুটে সে বলল, পুরো হলুদ হয়ে গেছে, গাছেপাকা জিনিস বাজারে এখন আর পাওয়াই যায় না।
ঘন্টাখানেক টহল দেওয়ার পর আমরা ক্লাবের গুমটি ঘরে ফিরে এলাম। নিপুনভাবে চৌকি দিয়েছি আমরা। পাড়া আমাদের হাতে সম্পূর্ণ নিরাপদ। বেশ সুন্দর, আলোয় আলোয় ভরা। শিবেন্দু, জগন্নাথ, গগনদা আর সবাই ক্লাবের লাল মেঝেতে আলতো করে নামিয়ে রেখেছে ৪টে হলুদ পেঁপে আর গোটা পনেরো পেয়ারা।
গগনদা সিগারেট ধরিয়েছে, কেউ একজন টিভি চালু করল, ছুরি দিয়ে ফল কাটতে বসে গেল দুজন।
না, সে-রাতে আমাদের পাড়ায় কোনো চোর আসেনি।
জিয়া হক
শিক্ষক দিবস
.................. .....................................................
নির্মলতা এনে দাও বাসনে, বিদ্যালয়ে, জঞ্জালে ও স্তূপে
শিশুরা রয়েছে, আছে আদি মাতা, গোত্রের সুন্দরী
বিদূষক, কবিরাজ আছে, আছে কীর্তনগায়ক
মাজারের পির আর মৌলানা হুজুর,—আছে
ও আকাশদেবতা, ও জলজ সান্নিধ্যের দেবী ও মায়েরা
দাও নির্মলতা,
আমাদের বর্জন করো যদি বর্জ্যদ্রব্য হয়ে আমরাই কি
জঞ্জাল হব না?
আমরা যেখানে যাই সন্তান প্রসব হতে থাকে
ইস্কুল বানাই, শিক্ষা দিই আমরাই প্রথম আর স্বর্গ আমাদের
যে যত উপহার পায়, সে তত প্রধান শিক্ষক
জিয়া হক
ব-দ্বীপবাসীর সুসমাচার : জিয়া হক
......................................... ..............................................
দিনকে দরিদ্র মনে হয় কেন? তার তো আছে রাত্রির সম্পদ
তার তো আছে সৌর মৌলিকতা, —
কর্মকাজ, দৃশ্যতই স্পষ্ট কৃষিক্ষেত্রজমি
তবে তার বেদনা কোথায়, কোথায় দুঃখ রপ্তানি?
আমি তো মীমাংসক নই, নই পীর কেবলা হুজুর
বুদ্ধের মতো অথচ বলতেও পারি না, 'আমি তো জানি না'
নীরবতা শেখার নৈশ বিদ্যালয়ে যাইনি কখনও
গুরুরা বশীভূত করতে চায়, চায় মৌখিক বিস্তার
চেয়েছে সব ফুল ফোটে যেন তারই বাগানে,
যদিও পিপীলিকা ঘৃণা করে তারা, পিঁপড়ার অধিকার
ধরো তুমি এই দিন, ধরো তোমাকেই করুণা করে কেউ
চাকুরিরতা, সুবক্তা স্বামী যা কার্যত প্রভু, ডালিম
পাতার মতো শিশুতে সাজানো তোমাদের সোফা ও বিছানা
নাগরিকপঞ্জি সুসমাচার আনে, ধর্মগৃহে যাতায়াত আছে
তবু কেউ যদি দরিদ্র বলে, করুণাই করে, কী করবে তুমি?
ফিরিয়ে কি দিয়ে দেবে পুনরুক্তি করে? পূর্বোক্ত কথা
আত্মীয় মনে করে, এ সবেরই লক্ষ্যবস্তু তারা
তারা কি জানে না পৃষ্ঠপোষনা কুক্কুরও চায়?
পশুদের মন, সর্বোপরি তার মনে হওয়া!
চিত্র : mi wallpaper
ভাস্করকে লেখা চিঠি
প্রিয় ভাস্কর,
সম্বোধন করার রীতি মেনে 'প্রিয়' লিখতে হল, অথচ তুমি তো জানই এ কত সামান্য নৈকট্য বয়ে আনে।
আজ রবিবার।
এখন সকাল উত্তীর্ণ হয়ে যেতে বসেছে আর আমি বসেছি তোমাকে একখানি পত্র লিখিবার খোয়াইশ নিয়ে।
অনেক ভেবেছি, কেন আর কেউ চিঠি লেখে না কারণে-অকারণে, দুর্দিন-সুদিনে, ভিড়-একাকীত্বে?
হয়ত বিরক্তিই উৎপাদন করছি,
এ সকল প্রগলভতা, বাগাড়ম্বর মনে হতে পারে কেননা এখানে কাজের কথা, 'কেজো' কথা নেই, যা আছে তা হল সংযোগাযোগের শ্রীময়ী ইচ্ছা। গতকাল যাদবপুর গিয়েছিলাম।
মহারাজ এসেছিলেন।
অনেক কথার পর বুঝলাম, আমরা ভারতাত্মা নিয়ে চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
তোমাকে কেবলই মনে পড়ে গেল।
যাদের বিবেক কলুষমুক্ত তাদের বিবেচনা শুনতে হয়, যেভাবে তোমার ভাবনা জানতে চাই নানা বিষয়ে, যদিও আমরা কোনও আন্দোলন তৈরি করতে পারি না, তবু আশা জাগে একদিন আমাদের দ্বৈত কথোপকথন ছড়াবে ধান্যশস্যের মতো, সবুজ হবে অনুর্বর শাসকের হৃদয়, মগজ।
প্রীতি জেনো
জিয়া হক
চিত্রকলাঃ ভ্যান গখ
যে ওড়ে ওড়ার যন্ত্রণায়
দুর্গের মাথার চুলের হাওয়ায় আর কাউকে মনে পড়ে না
এখানে বড়ো গ্রীষ্মকাল, রঙিন বক ওড়ে
আমাদের পালকের ঘরবাড়ি ইতস্তত
শান্তি আসে? শান্তি আসে ধীর পদক্ষেপে?
যে যুবকের বুক থেকে চটি খুলে গেছে, তার দিকে চাও
যে জঙ্গলে কোনো গাছ গুঞ্জন করে না সারা বর্ষব্যাপী
উপহারে বাঘ কেন তাকে দিতে চাও?
সমস্ত জলই ঘোলা আর মাছও স্বাদমুক্ত, টক
দুর্গের মাথায় তাই চুল নেই, ঘাসের ভেতরে মৃত বক
জিয়া হক
এখানে বড়ো গ্রীষ্মকাল, রঙিন বক ওড়ে
আমাদের পালকের ঘরবাড়ি ইতস্তত
শান্তি আসে? শান্তি আসে ধীর পদক্ষেপে?
যে যুবকের বুক থেকে চটি খুলে গেছে, তার দিকে চাও
যে জঙ্গলে কোনো গাছ গুঞ্জন করে না সারা বর্ষব্যাপী
উপহারে বাঘ কেন তাকে দিতে চাও?
সমস্ত জলই ঘোলা আর মাছও স্বাদমুক্ত, টক
দুর্গের মাথায় তাই চুল নেই, ঘাসের ভেতরে মৃত বক
জিয়া হক
হাত একটি প্রতিষ্ঠান
এই হাতে মলিনতা বাসা বেঁধে আছে, এই হাত ধরো
স্বর্গ থেকে দূর, তবে যাত্রাপথ ভালো
সোনালি অক্ষরে নাম চায় যারা কিছু গড়ে
গড় রক্ষা করে
ওই হাত অমলিন, ওই হাতে নেই কোনো সংক্রামক ব্যাধি
স্বর্গ থেকে ওই হাত এক হাত দূরে
স্নান করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে যেতে আঙুলেই বসো
অনেক আঙুর, পিত্তলমূর্তি, মাংস ও প্রজাপতি ছুঁয়েছে ওই হাত
উহাকেই প্রতিষ্ঠা, ধরো, অবলম্বন করো
জিয়া হক
চিত্রী: অনুরিতা দাস
দিন বুঝি শেষ
আমার এই নাট্যালয়, যতটুকু কাব্যরঙ্গ আমি, শেষ হল বুঝি?
গন্তব্য দেখা যায় বুঝি?
অতিপক্ব ফল থেকে দানার ধারনাগুলি ঝরে এলো বুঝি?
জানালা, শার্সি সব একে একে নিভে গেল বুঝি?
কান্নার পর্যাপ্ত কয়লা অবশিষ্ট রইল না বুঝি?
কিছুই বুঝি না
লেজকাটা, পা-হীন কুকুরটি হাঁটিতেছে শুধু
আমার এই পুঁটলি ও না-বোঝার পাশে
আমাদের ছায়া মিলে যায়
আত্মীয়তাবোধ
........................................
নিঝুম গাছ, পাতা থেকে সবুজ সরিয়ে রাখে পাশে
লোক আসে, তার কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নেই, পাপী
যেহেতু দুপুর, আলো পড়ে অনেক উপর থেকে নিচে
ভেঙে যায়,
সংরক্ষা করে রাখে কেউ, পরিপাকা হয়ে ওঠে ফল
এই সুবিন্যস্ত মাঠে নেই গরু কিংবা কৃষকের মেয়ে
এত গাছ
তবু যেন
গাছগুলি
একা
পাতা সব করে রব, তবু যেন
আত্মীয়তা তাহাদের নাই
নদীদের প্রিয় খাদ্য গ্রাম, তারপরও
লোককথা তাদের অজানা
প্রসূন মজুমদার-এর তিনটি কবিতা
এই অসময়
এখন স্তিমিত সব সুর। ঝর্ণাধারা। নিরীহ
যাপন।
বন ও
বন্ধন থেকে রক্ত ঝরে। কাদামাখা মাথা
লাফ দিয়ে
শিকারি সিংহের দ্রুততায়
দিগন্তে
মিলায়। শুধু দুটো একটা ম্লান, প্রবীণ ভিখারি
তুখোড়
স্পর্ধায় একা গোটা একটা দেশ হয়ে রাস্তায় দাঁড়াল।
এরও পরে
সামান্য বাতির মতো আলো, ঝরে থাকে
সজিনার
ডালে ও পাতায়, আলো নয় শুঁয়োপোকা
ধীরে ধীরে
ছালের ভিতরে সরে যায়।
প্রজাপতি
হবে ভেবে অপেক্ষায়, অলস প্রহর
দেখে
নিম্নে শৃগালেরা অন্ধকারে সন্দিগ্ধ আঁচড়
রেখে চলে
গেছে জাহান্নমে, বাকি যা, রুধির
মাটির
সোঁদায় মিশে, অতিকায় ভবিতব্য, ঘ্রাণঘর্মে মিশে যাচ্ছে, ধীর।
পলাতক
কোথাও
যাওয়ার নেই তাই যে তোমার ছায়ায় রয়েছে
অন্য কোন
ছায়া পেলে মুহূর্তেই মিলাবে ছায়ায়।
বাস্তবতা
সে যেমন অনুপুঙ্খ জানে, তুমিও তেমনই।
আমি শুধু
ছায়ার ওপারে কবন্ধ - কৌতুক খুঁড়ে, সরে সরে যাই।
ছায়াবাজি
দেখি, হাসি , ধীরে ধীরে ভারকেন্দ্রহীন মৃত নক্ষত্রে হারাই।
অন্ধকার অথবা নির্জন
এক সূর্য
অন্ধকার, নদীর আড়ালে ভেসে যায়।
ভাঁটার
বিবর্ণ স্রোত। দুটো একটা মৃতদেহ।
পাখির বা
গাছের অথবা অসুখী কোন বিষণ্ণ পাতার।
এই দৃশ্য
বাস্তবিক, কল্প মনে হয়।
সূর্য -
এর আড়ালে নদী বয়ে ভেসে যাওয়ার সময়
রুপোলি
আগুন জ্বলে, কিছুটা চিতার মতো, কিছু বিপ্লবের।
শব্দের
ভিতরে যত নির্জনতা, আলস্য ভাঙার ঢং-এ
দিগন্তে
ছড়ায়।
গৃহদাহের দিনে : জিয়া হক
চেয়েছি রাত্রি, রাত্রির কাছে সমতার সাদা পদ্য
ফুটেছিল চাঁদ, আকাশের গায়ে, ডুবে গেল ইহা সদ্য
শিশু ও কুকুর, খুকুর কান্না বনজঙ্গলে বাজে
পরিবার নিয়ে পারিবারিকতার যাবতীয় হীন কাজে—
ব্যস্ত ছিলাম, এই কথা বলে জলে ডুব দিল তারা
ভাসতে ভাসতে বাড়িগৃহডোর বদলে ফেলেছি পাড়া
কুশপুতুলের আগুনে আমার মুখ পুড়ে যায় দেখি
সহজ লোকের দিন ফুরোবার সূর্য ডুবল সখী?
ফুটেছিল চাঁদ, আকাশের গায়ে, ডুবে গেল ইহা সদ্য
শিশু ও কুকুর, খুকুর কান্না বনজঙ্গলে বাজে
পরিবার নিয়ে পারিবারিকতার যাবতীয় হীন কাজে—
ব্যস্ত ছিলাম, এই কথা বলে জলে ডুব দিল তারা
ভাসতে ভাসতে বাড়িগৃহডোর বদলে ফেলেছি পাড়া
কুশপুতুলের আগুনে আমার মুখ পুড়ে যায় দেখি
সহজ লোকের দিন ফুরোবার সূর্য ডুবল সখী?
ভুল লোক
কাহিনিতে মজে গিয়েছি। যে-কোনও গল্পই এখন আকর্ষণ করছে। এই গল্পগুলো কিন্তু আমি যে পাঠ করছি, এমনটা নয়। মূলত শুনছি। আন্তর্জাল বিস্তর সুবিধা প্রদান করেছে। তার নির্মিত কারাকক্ষে কার্যত বন্দি। এই অবস্থানটাই একটা ঘেমো দুঃস্বপ্ন। অথচ এই ঘুমের মশারি কেটে বেরিয়ে আসতেও পারছি না। কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার। কী সংশোধন হল আমার, বুঝতে পারি না। বরং এক শোধন অযোগ্য কূপের বাসিন্দা হয়ে পড়ছি ক্রমাগত। ভেবেছিলাম, কাহিনির জন্মস্থান হবে আমার মন ও মানস। বাস্তবতা ভাবনার সহযোগী নয়, বলা বাহুল্য। নিজেই একটা মুখরোচক কাহিনি হয়ে উঠছি। কারও সান্ধ্যবাসরে দুঃখ-উদযাপনের বিষয় হতে পেরে ভেঙে পড়ছি। দুঃখের আলোচনাবিহীন আসর বরফশূন্য মেরুপ্রদেশের মতোই অপূর্ণ। চাই না গলে যাক তুষারপর্বত, কিন্তু আমাদের কর্মপরিকল্পনা আমাদের চিন্তার সত্যতার সাক্ষ্য দেয় না। কাঠের পালঙ্কে বসে বৃক্ষছেদনের বিরোধিতা করা এই মানুষ চোখের জল ফেলাকে আনুষ্ঠানিক করে তুলেছে। ধ্যান আত্মার জন্য নয়, চিত্রগ্রাহক যন্ত্রের জন্যে। প্রসাধন-প্রীতিই প্রমাণ করে আমরা নিজেদের স্বাভাবিকতাকে কতটা ঘেন্না করি। বাক্যেরও প্রসাধন হয়। তাই ভুল লোককে নির্বাচন করে ফেলি।
ভগন্দরের দেশ : জিয়া হক
আমার মনকে একটু করে সরল বাক্যে ভরিয়া দিন
ও পরিপন্থাবিহীন
মনোরোগী সুন্দর, —বলে না কেউ, যাদেরকে চিনি
গবাদিপশুসম প্রাণী
ভাবে এই লোকালয়, লোকেদের সুশীল বন্দর
মুখ যার কবেকার জীর্ণ ভগন্দর
জামা ওড়ে পাল তোলা গাড়ির মতোই
এ লুডো সাপের দেশ,
বিরল নারীর মতো বিরল দড়িগাছা, মই
উঠে সব যেতে চায়, —দূরদেশে, অন্তত বাস
টার্মিনাসের পাশে
ঘাসেরা কাব্যে থাকে, পিচ ঢাকা দিয়ে যায় ঘাসে
ও পরিপন্থাবিহীন
মনোরোগী সুন্দর, —বলে না কেউ, যাদেরকে চিনি
গবাদিপশুসম প্রাণী
ভাবে এই লোকালয়, লোকেদের সুশীল বন্দর
মুখ যার কবেকার জীর্ণ ভগন্দর
জামা ওড়ে পাল তোলা গাড়ির মতোই
এ লুডো সাপের দেশ,
বিরল নারীর মতো বিরল দড়িগাছা, মই
উঠে সব যেতে চায়, —দূরদেশে, অন্তত বাস
টার্মিনাসের পাশে
ঘাসেরা কাব্যে থাকে, পিচ ঢাকা দিয়ে যায় ঘাসে
Under twelve : Zia Haque
Oh dear God
Open the secret window of mind
Mind that seeks answers to many questions
Kept as mystery
We want our caged birds to sing the way we sing
We confine the winged creature and
Talk about our freedom
Sing like trees who are perplexed but still
Draw the shadows around her
So that we can befool the birds
একটি কবিতা : জিয়া হক
খুকুর দেশ
...............
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গান
পার হয় দেবতারা, —
ভক্তি ও শিষ্যের সন্ধান
কখন সন্ধ্যা হবে, লম্ফ কখন যাবে ভেসে
জেগে উঠবে পড়শিবাড়ি, —
শাস্ত্রের প্রাচীনা সন্ত্রাসে
ভোর হল, দোর খোলো, খুকু,—খুকুমনি
তোমাকে আদর করবে
আপেল বাগানের অভুক্ত সেনানী
এসেছে শকুন আর নক্ষত্রখচিত সেনাপতি
সে চায় দেশপ্রেম,
এক-শয্যা জাতিসেবা —রতি
যেমন লেখাও তেমন লিখি
আমার ছলনা যাত্রা কোন পথে হারালো এখন
বন্য প্রাণী দেখে বুঝি এমন অরণ্য আমি চাই
বহুদিন ধরে
গাভী শুধু নয়, রাখালের গর্ধভেরও পরিচর্যা হবে
সকল পশুই ওই কচি ঘাস সুপ্রভাতে চায়
ঘাসে হোক সুবিচার,
রাজা কি নামাজপাঠে গেছে?
দেশের প্রয়াণ যদি আসন্ন হয়, তবে
তুমি কি সেনানী হবে? ভ্রমণে পাকিস্তান যাবে?
সব দেশ বাদ রেখে এই যে পাকিস্তানই উল্লিখিত হল,
প্রিয় দেশ এভাবে বলেছে,
আমি তা অতিক্রম করে দেশদ্রোহী হবো?
আমার মায়ের রান্না করা মাংসের প্রশংসা করো আর
আমার মাংসও তুমি সমিতিতে চাও, আমি জানি
দেখো, লিখতে চাই তো কিছু প্রেম, কিছু প্রাকৃতিক কথা
রাষ্ট্র আমাকে দিয়ে কী সব লেখায়, দেখো তুমি
সহিংস তপোবন কারিগর গড়ে,—রাজধানী, প্রত্যন্ত অঞ্চলে
এসো সখী, মন খারাপ, চুমু দাও, ভালোবাসা নাও,
হে আমার পাখি, দুলে ওঠো দ্বৈত পুষ্প —
এইসব লিখতে পারি না।
এও জানা গেছে, ভালোবাসা কুমড়োর দানার মতো
ছড়িয়ে দিতে হবে, এতে শান্তি, গণহত্যা চুপ হয়ে যাবে
কৃষিকাজই করি যদি সুসময়ে বৃষ্টি এসে যেতো
জিয়া হক
প্রতিটি মানুষ আলো দেয় : জিয়া হক
আহা, আজ, আহা, সেই পাখিটা কোনো পেয়ারা গাছের মরণোন্মুখ ডাল থেকে ডাকছে।
তিনি নিকটেই আছেন।
ওই পাখি আমার সব স্মৃতি নিয়ে ফিরে এসেছে।
তিনিও এসেছেন। আরোগ্য এসেছে।
ছাদ আমাকে নক্ষত্র দেখতে বাধা দেয়, তবু আমি
একটা ছাদ চেয়েছি, চেয়েছি ছাদের তলায় সব জীব।
সূর্য নয় শুধু, প্রতিটি মানুষ আলো দেয়।
প্রতিটি লোকের চারপাশে প্রত্যেকে ক্রমান্বয়ে ঘোরে।
গ্রহাণুপুঞ্জের কথা জানি?
নবদ্বীপ থেকে ধরো এই আমার ঘর,—
এর মধ্যে কত লোক, লোকান্তর, মৃত্যুজন্মবিয়ে
এসবই ছায়াপথ, আমার বিশ্বাস
তিনি নিকটেই আছেন।
ওই পাখি আমার সব স্মৃতি নিয়ে ফিরে এসেছে।
তিনিও এসেছেন। আরোগ্য এসেছে।
ছাদ আমাকে নক্ষত্র দেখতে বাধা দেয়, তবু আমি
একটা ছাদ চেয়েছি, চেয়েছি ছাদের তলায় সব জীব।
সূর্য নয় শুধু, প্রতিটি মানুষ আলো দেয়।
প্রতিটি লোকের চারপাশে প্রত্যেকে ক্রমান্বয়ে ঘোরে।
গ্রহাণুপুঞ্জের কথা জানি?
নবদ্বীপ থেকে ধরো এই আমার ঘর,—
এর মধ্যে কত লোক, লোকান্তর, মৃত্যুজন্মবিয়ে
এসবই ছায়াপথ, আমার বিশ্বাস
ভিজিয়ে দেয়, স্পর্শ করে না
এই বৃষ্টি আমাকে স্পর্শ করছে না।
শুধু ভাবছি, আমি কী হতে চাই।
কী হতে চাই, চেয়েছিলাম
পুরনো হাতে আমি মুখ রাখি
নিজের আশ্রয় আমি নিজে হব, ভাবি
শ্রোতা হয়ে জীবন কাটাবো, ভাবিনি কখনও
অপরাধী আমার কাছে তথ্য রাখে, অপরাধ —
সেও কিছু রেখে যায় তথ্যসদৃশ
রটে গেছে আমি ভালো লোহার সিন্দুক
নীরবতা পালনেই আমি ভালো অভ্যস্ত আছি
বাদামের, মুড়ির, চায়ের বিনিময়ে আমি
অশ্রাব্য গানও শুনে যেতে পারি
কেননা আমি ভুলে গেছি, কী হতে চাই,—
কথা ছিল কী কী হওয়ার
বৃষ্টি তাই ঝরে পড়া তীরবেগে জল
ভিজিয়ে দেয়, স্পর্শ করে না
শেখো : আফগান কবিতা : আবদুল্লাহ
পাপিয়ার মতো সুরারোপিত বাক্য বলতে শেখো,
ফুল ও পাপিয়ার নীরব আলাপ কীভাবে ঘটে, শেখো
মাথা ঢেকে ফুলের অরণ্য থেকে বের হও,
শিখে নাও হাওয়ার ভেতরে বাতাসের চলাচল।
কতদিন বাঁচবে পাখির মতো, পাখি হয়ে?
ওড়া শেখো মুক্ত ঈগলের মতো।
গতি বাড়াও, যাত্রীদল যাতে গতিপ্রাপ্ত হয় সে ব্যবস্থা করো,
গন্তব্য কাছেই।
শেখো ঘন্টাধ্বনি কীভাবে নিজেকে বিস্তার করে।
ও ফুর্তিবাজ আফগান! আরাম ছাড়ো, কষ্টকে নাও,
যে দেশ তোমার তার ব্যথা ও শোকে কান্নাকাটি শেখো।
আবদুল্লাহ
৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৮
মফস্বলের গীতি
এই রাতে কি গান বাজবে বালিশের তীরে?
ঢেউ এসে লাগবে গতরে? এখন বসন্ত।
গাছে গাছে পাখি আর মাঠে মাঠে মানুষ।
এই মফস্বলেও দূর থেকে গ্রামীণ গাজনগান আসে।
গায়ক চিনি না, সুরে বড় ব্যথা।
এ তবে গাজন নয়, অন্য কোনো গান।
শুনি আর ভাবি যে মানুষ অনুভূতি দেশ থেকে আলো আর পায় না এখন, সে এক বিপুল অপচয়।
এমন রাত্রে পাহারাদার পথিক কুকুরের পায়ের আওয়াজও কী সঙ্গীতময়! পোকা ডাকছে।
এই সুর রবীন্দ্রসঙ্গীতের চেয়ে আপাতত প্রিয়।
ডাকে আমার চিঠি পাঠাও —দাবি করো কেন?
যদি তুমি ঠিক ঠিক দাও, আমি তবে ঠিক ঠিক পাব।
এত রাতে ডাক বিভাগ খোলা?
পিওনের বিবাহ হয়নি?
তাকে কিছু লিখতে দাও বিছানা, বালিশে
শিশুরা লেখে মঙ্গলকাব্য আর
ছায়া ছায়া রৌদ্র জুড়ে আমি বাছুর ও মানুষের খেলা দেখেছি।
কেউই হারে না রৌদ্রে, সবাই পুরস্কৃত, ধাতব সম্মান—
নেই, সংগঠক, বাচিকেরা নেই
থেকে যায় সূর্য, ঘাস, মানুষ, বাছুর
তেরো কিংবা একুশ সাল এভাবেই অভিনীত হয়
নায়কেরা, নায়কের মাংসপেশী কম, চোখদুটো ভালো
দুধ দোয় নায়িকারা আর দুগ্ধ দেয়
মঙ্গলকাব্য লেখেন শিশুরা,
আকাশ সাদা, বিদেশী বা স্বদেশীর বিমানেরা নেই
গ্রামীণ ভিক্ষু গায় পাকস্থলী, মুদ্রার গান
কবিতা নয়, —জীবন এমত
জীবন পেরিয়ে গেল চিত্রশিল্পকলা
লেখক পেরিয়ে যায় জৈবনিক টিলা ও নাটক
পান নাই এমন পানীয়?
গাভী নাম্নী বালিকারা দেশে প্রার্থনীয়
গাছেরাই ছায়া ফেলে, ছায়া তার পায় কি কখনও?
ভোরের ভ্রম : একটি মনোলগ
শব্দ ছিল আশ্রয়। এখন আশ্রয়হীনতায় ভুগছি।
কেউ পাশে নেই, এমনকি শব্দও। জানি না কীভাবে তাকে ফিরে পাব। আতিথেয়তায় আমি ত্রুটি রাখতে চাইনি কিন্তু কোথাও বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। অজ্ঞাতসারে। নাকি জ্ঞানত?
বাক্য নির্মাণ করার চেয়ে তাজমহল নির্মাণ করা সহজ যেন এখন। অথচ শোক পালনের জন্য কারও মৃত্যু কামনা করিনি কখনও। সৌধ গড়ার রাজকীয় গর্ব রাখিনি, এ তো অসত্য নয়। সত্য কী, তা এখন ব্যাখ্যা করতে অক্ষম। যা বিশ্বাসযোগ্য, তা-ই? বিজ্ঞান যা বলে, তা? জনসমক্ষে যা প্রমাণিত, তা কি? জানি না। ভীতি অমূলক বলে রাস্তায় ফেলে দেব তাও ভাবতে পারি না, পথিকের কথা চিন্তা হয়।
কবিতার ঈশ্বর একে কীভাবে গ্রহণ করবে তার পারিষদ জানে।
শ্রী মজুমদারের কবিতা : আবহমান বাংলা কবিতার ছায়া
রাত্রিচর বুনোচাঁদ বইয়ে আপনি কোন কোন বাঙালি কবিকে পেতে পারেন :
১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. জীবনানন্দ দাশ
৩. সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
৪. শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৫. বিনয় মজুমদার
৬. জয় গোস্বামী
তাহলে কবি কোথায় রইলেন? তাঁর নিজস্বতা, স্বর —কোথায়? এ তবে কি একটি প্রভাবলিপ্ত বই? তা নয়। গ্রন্থটি 'ইউনিক' কেননা কবি সবাইকে আত্মস্থ করেছেন, সবার কাছে আত্মসমর্পণ করেননি সর্বৈব। পূর্বজরা অনুষঙ্গ হয়ে উপস্থিত হয়েছেন, কবিকে স্থানান্তরিত করে দিয়ে নয়। মহাজনদের খোঁজ যেখানে শেষ হয়েছিল, এ বই সেখান থেকে শুরু। এই যে অনুষঙ্গ, তাও খুবই বাইরের। এর কারণ কবির নিজস্ব একটি কাব্যদর্শন আছে এবং দর্শন আছে। পাঠককে অতৃপ্ত করে রাখবে। ভাবাবে। এখানেই কবি সফল।
বিস্তারিত ক্রমশ প্রকাশ্য...
১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. জীবনানন্দ দাশ
৩. সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
৪. শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৫. বিনয় মজুমদার
৬. জয় গোস্বামী
তাহলে কবি কোথায় রইলেন? তাঁর নিজস্বতা, স্বর —কোথায়? এ তবে কি একটি প্রভাবলিপ্ত বই? তা নয়। গ্রন্থটি 'ইউনিক' কেননা কবি সবাইকে আত্মস্থ করেছেন, সবার কাছে আত্মসমর্পণ করেননি সর্বৈব। পূর্বজরা অনুষঙ্গ হয়ে উপস্থিত হয়েছেন, কবিকে স্থানান্তরিত করে দিয়ে নয়। মহাজনদের খোঁজ যেখানে শেষ হয়েছিল, এ বই সেখান থেকে শুরু। এই যে অনুষঙ্গ, তাও খুবই বাইরের। এর কারণ কবির নিজস্ব একটি কাব্যদর্শন আছে এবং দর্শন আছে। পাঠককে অতৃপ্ত করে রাখবে। ভাবাবে। এখানেই কবি সফল।
বিস্তারিত ক্রমশ প্রকাশ্য...
বক্তব্য নেই অথচ বক্তা
কোনো বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই কেন?
আমি যে একেবারে অজ্ঞ, তা নয়।
আমার যে মত প্রকাশের ইচ্ছা নেই, তা নয়।
তাহলে কি চিন্তা করতেই আমার সমস্যা?
গুছিয়ে ভাবতে অক্ষম কি আমি?
এমনটা কি অনেক মানুষের হয়ে থাকে?
বলতে চেয়েও বলতে না পারা —এ ভারি দুঃখের।
আমাকে প্রতি মুহূর্তে জ্ঞানীর ভান করে যেতে হয়।
ডিগ্রি আছে মানে লোকে ভাবে আমার জ্ঞানও আছে।
এ ভাবনা অমূলক নয়, কিন্তু আমি যে এর ব্যতিক্রম তা বোঝাতে না পেরে অভিনয়কেই পন্থা হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছে।
এ ভীষণ যন্ত্রণার। সবাই বুঝবে না।
ফলত সমব্যথীর সংখ্যা হতাশাজনকভাবে কম।
সমব্যথী পেলে ব্যথার উপশম হয়।
ব্যথার নিষ্ক্রমন ঘটে, অন্যথায় তা জমে পাহাড় তৈরি হয় আর সেই পাহাড়ের পাদদেশে নিয়মিত পাথরের ধাক্কা খায় ব্যথিত মানুষটি।
আমি যে একেবারে অজ্ঞ, তা নয়।
আমার যে মত প্রকাশের ইচ্ছা নেই, তা নয়।
তাহলে কি চিন্তা করতেই আমার সমস্যা?
গুছিয়ে ভাবতে অক্ষম কি আমি?
এমনটা কি অনেক মানুষের হয়ে থাকে?
বলতে চেয়েও বলতে না পারা —এ ভারি দুঃখের।
আমাকে প্রতি মুহূর্তে জ্ঞানীর ভান করে যেতে হয়।
ডিগ্রি আছে মানে লোকে ভাবে আমার জ্ঞানও আছে।
এ ভাবনা অমূলক নয়, কিন্তু আমি যে এর ব্যতিক্রম তা বোঝাতে না পেরে অভিনয়কেই পন্থা হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছে।
এ ভীষণ যন্ত্রণার। সবাই বুঝবে না।
ফলত সমব্যথীর সংখ্যা হতাশাজনকভাবে কম।
সমব্যথী পেলে ব্যথার উপশম হয়।
ব্যথার নিষ্ক্রমন ঘটে, অন্যথায় তা জমে পাহাড় তৈরি হয় আর সেই পাহাড়ের পাদদেশে নিয়মিত পাথরের ধাক্কা খায় ব্যথিত মানুষটি।
যুদ্ধখেলার নিয়ম
ভারতীয় বঙ্গবাসী গোলপুকুরী আমি
চলেছি দূর, যুদ্ধ হবে, যেখানে রাজধানী
রাজার বাড়ি প্রায় দেখি না এমনও উৎসবে
তোমার সঙ্গে আমার নাকি ভীষণ যুদ্ধ হবে
কবর খোঁড়ার লোক এসেছে,
উপরতলার লোক
মায়ের মতো নরম গলা, মাতৃসম চোখ
কফিন থেকে ধূপের গন্ধ, আমার জন্য আসে
উপরতলার লোক এসেছে, স্বনামধন্য হাসে
আকাশপথে রাত্রি নামে আত্মীয়তার মতো
বাড়ির বাইরে যুদ্ধ হাঁটে, রাতের ইতস্তত
মনের ভেতর জল জমেছে, আজকে লড়াই থাক
আমি এমন অলস এবং এমনই বুড়বাক —
কাকতাড়ুয়া ভাবতে ভাবতে কাকতালীয় দিনে
নিজের সঙ্গে যোদ্ধা নামাই, নিজেকে না চিনে
চলেছি দূর, যুদ্ধ হবে, যেখানে রাজধানী
রাজার বাড়ি প্রায় দেখি না এমনও উৎসবে
তোমার সঙ্গে আমার নাকি ভীষণ যুদ্ধ হবে
কবর খোঁড়ার লোক এসেছে,
উপরতলার লোক
মায়ের মতো নরম গলা, মাতৃসম চোখ
কফিন থেকে ধূপের গন্ধ, আমার জন্য আসে
উপরতলার লোক এসেছে, স্বনামধন্য হাসে
আকাশপথে রাত্রি নামে আত্মীয়তার মতো
বাড়ির বাইরে যুদ্ধ হাঁটে, রাতের ইতস্তত
মনের ভেতর জল জমেছে, আজকে লড়াই থাক
আমি এমন অলস এবং এমনই বুড়বাক —
কাকতাড়ুয়া ভাবতে ভাবতে কাকতালীয় দিনে
নিজের সঙ্গে যোদ্ধা নামাই, নিজেকে না চিনে
বাবা ও রাজা
রাজার পাট ও পোশাক আমাকে দিও না
হরিণ শিকারে মায়া হয়,
মায়া হলে রানি নয়, বাবাকে মনে পড়ে
বাবা সমুদ্রে একা যেতে নিষেধ করেছে
সমুদ্র অতিকায় জীব,
আকাশও এখানে ভেঙে পড়ে
নতুন জামার মতো নতুন রাজা চাই এবার পুজোয়
রাজস্ব যে নেবে, আর রাজস্ব যে নিজেও খানিক দেবে
দুইখানি শাল ছাড়া যার আর কিছুই থাকবে না
তিনি এক অতিকায় জীব —দানাশস্য মজুত রাখে না
ঘুম না এলে কী করবেন : ৫টি মজার টিপস
ঘুম একটা সাধনা। আর আমরা কেউই তেমন সাধক নই। ধ্বংসকামী আমরা কেননা আমরাই ঘুমকে নানাভাবে নষ্টের আয়োজন করি । কী করবেন এই নির্ঘুম রাতে?
১. উঠোনে যান। উঠোন না থাকলে রাস্তায় চলে যান। কুকুরদের সঙ্গে গল্প করুন। তারা ভালো শ্রোতা।
২. বাথরুমে গিয়ে বসুন। একা এই ঘরে কী করবেন সিদ্ধান্ত নিন।
৩. সিগারেট খাবেন না। পান চিবোন। গোপাল ৬০ ও সুরভি জর্দা ব্যবহার করতে পারেন। গায়ে সুগন্ধী মেখে পান খেতে বসবেন তাতে নিদ্রাদেবী আকৃষ্ট হন।
৪. জোকস পাঠ করুন যেভাবে লোক ধর্মগ্রন্থ পড়ে থাকে। গান ধরবেন না, গানের দেবীর সঙ্গে ঘুমের দেবীর সম্পর্ক ভালো না।
৫. চিৎ হয়ে থাকুন। উপুড় হবেন না। চুলে ৩ বার হাত বুলোন। শুধু মাথার চুলেই কিন্তু।
বসন্তে জানালা কেন বন্ধ রাখবেন? ৫টি মজার টিপস
১. আপনি কি রূপমুগ্ধ? যে-কোনও সৌন্দর্য আপনাকে ডুবিয়ে চুবিয়ে ধরে? শামসুর রাহমানের চেয়ে আল মাহমুদ ভালো লাগে? তাহলে সাবধান।
২. ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনেন টেলর সুইফটের বদলে? আলো জ্বালিয়ে ঘুমান? পিশাচে ভয়? বসন্ত, সরি টু সে, আপনার জন্য নয়।
৩. বিছানায় বই রাখেন? সস্তার চপ্পল পরেন? মশারি ঘেন্না করেন? মুসুর ডাল ভালোবাসেন? বসন্তে তাহলে জানালা বন্ধ রাখুন।
৪. বসন্তকে জানালা নয়, বারান্দা থেকে দেখুন। দোতলার ছাদ না থাকলে গাছের তলায় গিয়ে দুপুরে বসুন।
৫. কবিতা হুট করে ঢুকে পড়তে পারে জানালা দিয়ে। নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব আপনারই। কবিতা আপনাকে লোভ দেখিয়ে খ্যাতির কিনারে নিয়ে যাবে। ফিরতে পারবেন না, পথ নেই।
বসন্ত এসে গেছে : আফগান কবিতা : রিশাদ
......................
বসন্ত এসেছে, এসো, শোকগুলো ভাঙো ;
দেখতে দাও শক্তির প্রতি পদক্ষেপ।
সুন্দর আর কলা ছাড়া এ আর কি ;
বিবিধ আকারে সে আসে।
কতদিন শুয়ে থাকবে অশক্ত শরীরে, কতদিন আর?
বেচারা জাহিদ! চোখ খোলো।
বেরিয়ে পড়ো, এখানে নতুন উৎসব ;
কুঁড়ির কলার ছিঁড়ে ফেলার কথা।
চোখের পাতায় সুন্দর তার সতর্ক পা রাখে ;
শিশিরের দোলনা ছেড়ে যায় ফুলপুষ্পদল।
সাকি! পানপাত্রে কিছু জল ঢেলে দাও
যাতে অচেতন হয়ে পড়ি একটি পলকে।
শুঁয়োপোকা! সুসংবাদ তোমার জন্য, বাগানে এসো
দুর্ভাগা রূপও বেঁচেবর্তে গেছে।
রিশাদ! গতি কি থাকে সূক্ষ্মতার?
ফুলের চিবুক চুম্বন করে মৃদুমন্দ হাওয়া।
ভাবানুবাদ
জিয়া হক
প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে কী করবে? ৭টি পরামর্শ
পরীক্ষা কক্ষে প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শুধু নার্ভাসই বোধ করে না, তারা খানিকটা হতভম্ব হয়ে পড়ে। এটা অস্বাভাবিক নয়। মানসিক চাপ এর মুখ্য কারণ। প্রস্তুতি ভালো থাকার পরও এমনটা হতে পারে। কীভাবে শুরু বা শেষ করা যেতে পারে তা নিম্নে বলা হল :
১. প্রথমে উত্তরপত্রে মার্জিনের কাজ সেরে রাখতে হবে। এই শুরুর কাজটি যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলা উচিত। এবং মার্জিন টানতে টানতে মনকে প্রস্তুত করে ফেলতে হবে।
২. এটা ভাবতে হবে যে প্রশ্ন যেমনই হোক, সবটা শেষ করতে হবে। কোনও প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না।
৩. সব উত্তর সম মানের হয় না। তাই এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই।
৪. প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার আগে আকাশপাতাল ভাবার অবকাশ নেই। শুধু মনে রাখতে হবে, তুমি যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি রাখো নির্দিষ্ট বিষয়ে।
৫. মনকে যতটা সম্ভব শান্ত ও দৃঢ় রাখা দরকার। অযথা দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
৬. সব প্রশ্নই যে জানা থাকবে তা না ও হতে পারে। তবে যেগুলো সবচেয়ে ভালো ভাবে তৈরি সেগুলো আগে লিখতে হবে।
৭. নিজেকে বলো — তুমিই সেরা। তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ক্ষতি করতে পারে। সেদিকে খেয়াল রেখো।
শুভেচ্ছা
হিমালয় বসু
এম. এ, বি. এড (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)
পরীক্ষার্থী বন্ধুদের সাফল্য কামনা করলে তাদের সঙ্গে শেয়ার করে নাও।
সাফল্য কামনা করি।
পরীক্ষার আগে কীভাবে প্রস্তুতি নেবে : ১১টি পরামর্শ
সামনে যখন 'বড়ো' পরীক্ষা তখন নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করা দরকার তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বেশ আতান্তরে পড়ে। কী পড়া হবে, কতটা পড়া হবে, কতক্ষণ পড়া হবে —এগুলি ভাবনার। পরীক্ষার সময় জীবনযাপনই বা কেমন হবে, সে বিষয়ে সঠিক ধারণার বিশেষ অভাব দেখা যায়। নিম্নে কয়েকটি শেষ মুহূর্তের পরামর্শ দেওয়া হল :
১. দিনের মধ্যে খেলাধুলোর জন্য একটা সময় বা একটু সময় বরাদ্দ রাখতেই হবে।
২. খুব সকালে যে ঘুম থেকে উঠতে হবে তার কোনও মানে নেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে পড়ায় পর্যাপ্ত ও যথেষ্ট, যথাযথ সময় দেওয়া হচ্ছে কি না।
৩. যা পড়া হয়ে গেল তা যেন ভেবে দেখা হয়। অর্থাৎ যা পড়া হল সেটা স্মরণ করার চেষ্টা করাটা ভীষণ জরুরি।
৪. বন্ধুদের সঙ্গে যা পড়লে তা আলোচনা করতে পারলে খুব ভালো হয়।
৫. অতিরিক্ত সাজেশন করা অনুচিত। সাজেশন হল বাজি ধরার মতো। যারা সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনা করে তারা রীতিমতো ভয়-শঙ্কিত থাকে, যেটা পরোক্ষে ক্ষতি করে।
৬. পড়ার সঙ্গে লেখাটাও সমান জরুরি। লিখতে গেলেই বোঝা যাবে পড়ায় কতখানি ফাঁক রয়ে গেছে। লিখলে মূল পরীক্ষার একটা রিহার্সাল বা মহড়া হয়ে যায়। উত্তরপত্র কীভাবে সুন্দর করে তোলা যেতে পারে সে বিষয়ে নানা 'আইডিয়া' আসে।
৭. সহায়িকা বই পড়লেও মূল পুস্তক নিখুঁত ভাবে পড়ে রাখা দরকার।
৮. সাহিত্যের ক্ষেত্রে কবিতা অংশের সারাংশ বা সারমর্ম যেন স্পষ্ট ভাবে জানা থাকে।
৯. অযথা দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। তাতে প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
১০. জীবনযাপনে বিনোদনের জন্য ডিজিটাল মিডিয়ামের ব্যবহার কমিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো বেশ কার্যকর।
১১. খেয়াল রাখবে, এটা শেষ অবধি একটি পরীক্ষাই। জীবন মরণের প্রশ্ন নয়। নিজেকে সহজ ও সাবলীল রাখতে পারলে আখেরে তোমারই লাভ।
শুভেচ্ছা নাও
হিমালয় বসু
এম. এ, বি. এড (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)
পরীক্ষার্থী বন্ধুদের সাফল্য কামনা করলে তাদেরকেও লিঙ্কটি শেয়ার করে পড়ার সুযোগ করে দাও।
ধন্যবাদ
Saraswati : oh girl!
ঘটনাচক্রে ছাত্রী যারা, নীচে বসে টিভি দেখে।
জানি, তারা পাঠে নয়, দর্শনে মনোযোগী, তথ্য তাই বলে।
বিজ্ঞাপন, কার্টুন, সিরিয়াল সিরিজে তাদের
হাসি ছড়িয়ে পড়ে উঠে আসছে এত দূর উপরে।
এক বকধার্মিকের গান শোনা গেল,
শোনা গেল ছাত্রীজীবনের খলখল হাসি।
ব্যাকরণ বোঝে না তারা, আসনপিঁড়ি দিয়ে বসতে শিখেছে।
মনে পড়ে, যখন ছাত্র ছিলাম
শীতের এমন দিনে হাওয়া দিত খুব আর
মাছি বসত ব্যাকরণে এসে। সন্ধিচুক্তি ছাড়া।
জানি, তারা পাঠে নয়, দর্শনে মনোযোগী, তথ্য তাই বলে।
বিজ্ঞাপন, কার্টুন, সিরিয়াল সিরিজে তাদের
হাসি ছড়িয়ে পড়ে উঠে আসছে এত দূর উপরে।
এক বকধার্মিকের গান শোনা গেল,
শোনা গেল ছাত্রীজীবনের খলখল হাসি।
ব্যাকরণ বোঝে না তারা, আসনপিঁড়ি দিয়ে বসতে শিখেছে।
মনে পড়ে, যখন ছাত্র ছিলাম
শীতের এমন দিনে হাওয়া দিত খুব আর
মাছি বসত ব্যাকরণে এসে। সন্ধিচুক্তি ছাড়া।
Epiphany : drooping soul
আমার এখন একজন সঙ্গী দরকার।
তার লিঙ্গ-পরিচয় নিয়ে চিন্তিত নই।
মানুষ হলেই হবে।
কথা বলতে চাই।
কী কথা, জানি না, তবে কথা।
শব্দ, বাক্য, কথা।
বিমানের আওয়াজ শুনতে পাই আর মনে হয় কত লোক উড়ে গেল।
পোকাদের চিৎকার আসে, ভাবি কবরস্থান বেশি দূরে নয়। মশারির মধ্যে কোনও শত্রু নেই।
পক্ষপাতদুষ্ট নই।
বিছানার চাদরে যে ফুলের বাগিচা আমি তাতে কতকাল আগে হারিয়ে গিয়েছি।
এখানে খননকারী আসে না।
আমাকে খুঁজে পেতো।
এত রাতে আলো জ্বলে কেন?
বিদ্যুৎ কত মূল্যবান জানো?
মূল্য যাকে দিতে হয় সে অন্ধকারে হায়নাতাড়িত গৃহপালিত পাখিশাবকের মতো বসে থাকে।
দেখেছি, নিজেকে প্রকাশ করতে গিয়ে মধ্যযুগ বরাবর কবিদের মুখ মনে পড়ে।
ছবি নেই, তবু মনে পড়ে।
প্রকাশ্যে যাবার আগে ধুতিখানি ধুয়ে নিতে হয়।
মুর্খের মতো কথা বলি, সমস্ত সভায় মুর্খের স্বর্গে বাস করি, গড়ি। ওই যে আদি গঙ্গা বয়ে যেতে চেয়েও পারে না,
তার উপত্যকা ধরে শোকপ্রকাশ করবার মতো সঙ্গী আমি চাই এত রাতে।
চাকুরিরত, তুমি চাও প্রতিদিন রবিবার হবে।
রবিবার আমাকে সোম বা শুক্রবারের অনুভূতি দেয়।
প্রতিটি দিন আমার পাথর,
প্রতিটি পাথর আমার আয়না,
প্রতিটি আয়নায় হাত কেটে যায়,
সময় কাটে না।
সময় কাটার মতো বিদ্যুৎ আমার নেই আর বিদ্যুৎ খুব দামি। ছাদের মাথায় বুদ্ধি থাকে না বলে সেখানে দাঁড়াই, বলি, সূর্য আর কত দূর?
১টা ৪০ তো বাজে।
বলি, সূর্যাস্ত, আর কত দূরে?
সময় উল্লেখ করেছি।
স্থাননাম নেই এমন কোথাও নিয়ে চলো।
দারোগারা আসে,
মানুষ আসে না।
তার লিঙ্গ-পরিচয় নিয়ে চিন্তিত নই।
মানুষ হলেই হবে।
কথা বলতে চাই।
কী কথা, জানি না, তবে কথা।
শব্দ, বাক্য, কথা।
বিমানের আওয়াজ শুনতে পাই আর মনে হয় কত লোক উড়ে গেল।
পোকাদের চিৎকার আসে, ভাবি কবরস্থান বেশি দূরে নয়। মশারির মধ্যে কোনও শত্রু নেই।
পক্ষপাতদুষ্ট নই।
বিছানার চাদরে যে ফুলের বাগিচা আমি তাতে কতকাল আগে হারিয়ে গিয়েছি।
এখানে খননকারী আসে না।
আমাকে খুঁজে পেতো।
এত রাতে আলো জ্বলে কেন?
বিদ্যুৎ কত মূল্যবান জানো?
মূল্য যাকে দিতে হয় সে অন্ধকারে হায়নাতাড়িত গৃহপালিত পাখিশাবকের মতো বসে থাকে।
দেখেছি, নিজেকে প্রকাশ করতে গিয়ে মধ্যযুগ বরাবর কবিদের মুখ মনে পড়ে।
ছবি নেই, তবু মনে পড়ে।
প্রকাশ্যে যাবার আগে ধুতিখানি ধুয়ে নিতে হয়।
মুর্খের মতো কথা বলি, সমস্ত সভায় মুর্খের স্বর্গে বাস করি, গড়ি। ওই যে আদি গঙ্গা বয়ে যেতে চেয়েও পারে না,
তার উপত্যকা ধরে শোকপ্রকাশ করবার মতো সঙ্গী আমি চাই এত রাতে।
চাকুরিরত, তুমি চাও প্রতিদিন রবিবার হবে।
রবিবার আমাকে সোম বা শুক্রবারের অনুভূতি দেয়।
প্রতিটি দিন আমার পাথর,
প্রতিটি পাথর আমার আয়না,
প্রতিটি আয়নায় হাত কেটে যায়,
সময় কাটে না।
সময় কাটার মতো বিদ্যুৎ আমার নেই আর বিদ্যুৎ খুব দামি। ছাদের মাথায় বুদ্ধি থাকে না বলে সেখানে দাঁড়াই, বলি, সূর্য আর কত দূর?
১টা ৪০ তো বাজে।
বলি, সূর্যাস্ত, আর কত দূরে?
সময় উল্লেখ করেছি।
স্থাননাম নেই এমন কোথাও নিয়ে চলো।
দারোগারা আসে,
মানুষ আসে না।
বঙ্গ ১৯ : ছোটগল্প : জিয়া হক
...............................................................................
কুকুরটা আমার পিছনে এসে বসল।
বললাম, বিস্কুট খাবেন?
সে অলসভাবে তাকালো একবার।
আপনি আমার পোষ্য হবেন?
আমি কিন্তু স্বদেশি, আপত্তি নেই তো?
আপনার দেশ-পরিচয় নিয়ে আমার চিন্তা নেই।
একটা মাছি উড়ছিল কুকুরটার কানের পাশে।
কুকুরটা বলল, মাছিদের আমি পছন্দ করি না। আপনার বাড়ি মাছিমুক্ত তো?
মাছি যে নেই তা নয়, তবে উপদ্রব নেই।
একজন চানাচুর বিক্রেতা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, দাদা, এখন কটা বাজে?
১১টা ৭।
ডিজিটাল ঘড়ির এই সুবিধা। সেকেন্ডের হিসেবও বলে দেওয়া যায়।
সে বলল, চানাচুর খাবেন?
বললাম, পয়সা নেই।
আপনাকে এমনিতেই আমি খাওয়াতে চাই।
কিন্তু কেন?
আপনার মুখে একটা মায়া আছে। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।
আপনার মন ভালো হয়ে গেছে তাহলে?
আজ আমার মন এমনিতেই ভালো।
তাহলে ব্যবসায় ক্ষতি করছেন কেন?
আমি সকাল ১১টায় রাসমাঠের এক কোণে ভাঙা জমিদার বাড়ির পোড়ো পিলারের উপর বসে আছি। দূরে মেন রোড। অটো, বাস, ভ্যান, রিক্সা যাচ্ছে। ট্যাক্সি কম। মফস্বল শহর তো। সব লোক কাজে বেরিয়ে পড়েছে। আকাশে মেঘ। আজ সোমবার।
চানাচুরওয়ালা এক ঠোঙা চানাচুর দিয়ে চলে যেতে আমি পিছনে শুয়ে থাকা কুকুরটাকে জিজ্ঞেস করলাম, চানাচুর খাবেন?
চোখ বুজেই সে বলল, না, আমি গায়ে পড়া লোকের দেওয়া কিছু খাই না। আপনিও খাবেন না। খেলে এখনই ঘুমিয়ে পড়বেন।
কী বলছেন?
আমার দায়িত্ব পালন করলাম, বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
কিন্তু আমার কাছে যে পয়সা নেই সেটা তো ওকে বললাম, তারপরও সে আমাকে...
বিশ্বাস না হয়, মেন রোডে গিয়ে দেখুন লোকটা আড়াল থেকে আপনাকে লক্ষ রাখছে।
সত্যিই তাই।
মেন রোডে গিয়ে দেখলাম একটা চা দোকানের আড়ালে সে বসে আছে। আমি আসছি দেখে হাওয়ায় মিশে গেল।
ফিরে গিয়ে কুকুরটাকে ধন্যবাদ জানাতে সে বলল, আমি আর আপনার সঙ্গে নেই, চলি।
ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
আপনি আমাকে অবিশ্বাস করেছেন। আমি খানিকটা ঈশ্বরের মতো। অবিশ্বাসীদের সঙ্গে থাকতে পারি না।
কিন্তু ঈশ্বর তো ক্ষমাশীলও?
ঈশ্বর ক্ষমাশীল কিন্তু আমি তো ঈশ্বর নই। ঈশ্বরের মতো, তবে আমি একটা কুকুরই।
মাছিটাকে মাথায় নিয়ে সে চলে গেল।
মনটা ভারী হয়ে গেল। মেঘ আরও কালো হয়ে এসেছে। রাসমাঠের পাশের বিশাল পুকুরে ঢেউ উঠছে। দূরে সেগুন কাঠ চেরাইয়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আওয়াজ শুনে আমি কাঠের নাম বলে দিতে পারি। তবে মনটা বড়ো খারাপ। একটা উড়োজাহাজ যাচ্ছে।
মেন রোডে উঠতেই বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। আমার ছাতা নেই। জ্বরে পড়বার মতো সৌভাগ্যও নেই।
একজন পথচারী আচমকা কানের কাছে মুখ এনে বললেন, দাদা, ছাতায় আসুন।
নীল ঢাউস ছাতা তার মাথায়। পোশাক দেখে বেশ ভদ্রলোক বলেই মনে হয়। পায়ে খাঁটি চামড়ার মোকাসিনা জুতো। চামড়ার জুতো দেখলে আমার একটা ছাল ছাড়ানো খাশির কথা মনে পড়ে। আকাশ থেকে কারা যেন সমবেতভাবে ঢিল ছুঁড়ছে। সাড়ে এগারোটা বাজে।
লোকটা বললেন, এই বৃষ্টিতে ভেজে নাকি কেউ?
আমি বললাম, আমাদের মতো লোকেদের কোনো বৃষ্টিতেই ভেজা উচিত নয়।
আমরা চৌমাথার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে একটা হ্যারিকেনের দোকান আছে। একজন প্রায় অন্ধ লোক সেই দোকানটা চালায়।
লোকটা জিজ্ঞেস করলেন, কী করা হয় আপনার?
ভাববাচ্যে কথা বলার দরকার নেই, আমি কিছু করি না, বললাম।
কথা শুনে আপনাকে শিক্ষিত বলেই মনে হয়। সত্যিই আপনি কিছু করেন না?
মিথ্যে কিছু করি কী করে!
একটা কাজ আছে, করবেন?
কী কাজ? তবে শুনে রাখুন, আজ আমার মনটা বড়ো খারাপ।
মন খারাপ? সে তো হতেই পারে। তবে কাজটা করলে আপনার ভালো লাগবে বলেই মনে হয়।
কী কাজ বলুন তো।
আমার একটাই ছেলে। হোলি ক্রসে নাইনে পড়ে। তাকে পড়াবেন। সপ্তায় দু দিন। পারবেন?
আচ্ছা, আমাকেই কেন এই দায়িত্ব দিতে চান বলুন তো?
বললে বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, আপনার মুখে একটা মায়া আছে।
বৃষ্টি কাটতে কাটতে একটা অটো আমাদের পাশে এসে গতি কমিয়ে দিল। আমার হাতে একটা কার্ড গুঁজে দিয়ে প্রায় লাফিয়ে অটোতে উঠে পড়লেন লোকটা।
তার ছাতাটা আমার হাতে।
কার্ডে চোখ বুলিয়ে দেখলাম, ভদ্রলোকের নাম নাসির হোসেন। পেশা ওকালতি। বাড়ি ফুলতলা। ফোন নম্বরও দেওয়া আছে।
পকেটে রাখলাম কাগজের টুকরোটা।
মুখে কীভাবে মায়া গজায়? কেমন দেখতে হয় মায়াময় মুখ? আয়নায় কি নিজেকে দেখব একবার? মায়ার সঙ্গে কি দয়ার কোনো সম্পর্ক আছে?
প্রায় অন্ধ লোকটা অসংখ্য হ্যারিকেন ঝুলিয়ে দোকানে বসে আছে। এই যুগে কে কেনে হ্যারিকেন? প্রৌঢ় দোকান মালিক দিনরাত একটা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রাখে দোকানের ঠিক সামনেটায়। লোকটার চোখ আর বেশিদিন নেই, দৃষ্টি দেখলেই বোঝা যায়।
দোকানের নাম : আলো।
বৃষ্টি পড়ছেই।
২
ফুলতলা
বিরাট বাড়ি। প্রাসাদই বলা চলে। বাড়ির উঠোনে দেশি বিদেশি ফুল লতাপাতা গাছের মধ্যে কয়েকটা পাতাবাহার আর বোগেনভেলিয়াকে চিনতে পারলাম। দশটা মতো টব উল্টে রাখা আছে। এখন মঙ্গলবার। সন্ধ্যাকাল।
নাসের হোসেন আমাকে চিনতে পেরে তার বই-ঠাসা বসার ঘরে নিয়ে গিয়ে ছেলেকে ডাকলেন, আফরোজ!
কেউ এলো না।
তিনি আবার ডাকলেন, আফরোজ, নীচে এসো, তোমার মাস্টারমশাই এসেছেন।
আপনি কী পড়াবেন? এবার আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন ভদ্রলোক।
কখনও তো কিছু পড়াইনি কাউকে, নির্বিকার ভাবে বললাম।
এমন একজনকেই খুঁজছিলাম যিনি জ্ঞানের দিক থেকে ভার্জিন।
জ্ঞানের আবার কুমারত্ব আছে এই প্রথম জানলাম, ধন্যবাদ, আমি দুই হাতের তালু একবার ঘষলাম নিঃশব্দে।
জ্ঞান আপনি কখনও কাউকে দান করেননি, মানে তার হাইমেন এখনও অটুট। তা যাক গে, আপনি নিশ্চয়ই এম এ?
এম এ, বি এড, কিন্তু বুঝলেন কী করে?
আমি একজন সফল অ্যাডভোকেট, মানুষ নিয়ে আমার ব্যবসা, বুঝি। তাছাড়া আপনার মুখে...
একটা মায়া আছে, তাই তো?
একটু চুপ করে থেকে তিনি বললেন, আমি বুঝতে পারছি মুখে মায়া থাকাটাকে আপনি ভালো চোখে দেখছেন না, কিন্তু আমি একে ইতিবাচক গুণ বলেই ধরছি।
চা এলো। কাচের কাপে লাল রঙা চা। কাচ খুব ঠুনকো বলেই কাচ আমাকে টানে। যারা কাচের কাপে চা খায় তারা স্বচ্ছ না ও হতে পারে। লাওপালার পিরিচ বলে মনে হল।
আফরোজ ইতিমধ্যে দোতলা থেকে নেমে এসে দরজার পাশে দাঁড়িয়েছে।
আফরোজের উচ্চতা বেশি নয়, গোল মুখ, গৌর বর্ণ, চিনাদের মতো চুল সোজা সোজা।
সে ঘরে ঢুকতেই নাসের হোসেন বললেন, বাবা, তোমার লেখা সেই ইংরেজি কবিতাটা 'where is my grave' আবৃত্তি করে শোনাও একবার।
আমি তৎক্ষণাৎ বাধা দিয়ে বললাম, ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র নয় যে অতিথি এলেই আবৃত্তি করে শোনাতে হবে।
৭:৪৫ বাজে। জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। আকাশে তারা ফুটেছে। সব তারাই সমান। সকলেই যেন মৃত। শেষ আলোর বার্তাটুকু দিয়ে ফিরে যাবে কৃষ্ণ কালো ঘরে। হ্যারিকেন বিক্রেতার চোখদুটো মনে পড়ে গেল।
আজ থেকে আমি আফরোজের শিক্ষক। ক্রিয়েটিভ রাইটিং আমার বিষয়।
নাসের হোসেন বাড়ির গেট অবধি এসে বললেন, ওকে তৈরি করুন।
সংক্ষেপে বলি, আমার মতো?
তিনি চুপ করে রইলেন। তারপর খুব নরম ভাবে প্রিয়জন যেভাবে বলে সেভাবে বললেন, দেখে পথ হাঁটবেন।
এগিয়ে গেলাম কয়েক পা। একটা কুকুর আমার পিছু নিয়েছে। আফরোজের মুখের মধ্যে আজ আমি মায়া দেখতে পেয়েছি।
চাঁদের বুড়ি নিরলস চরকা কাটছে আর আমার সামনের পৃথিবী আলোয় এক হাঁটু ডুবে যাচ্ছে। এমন দিনে মানুষের ধুমপান করতে ইচ্ছা হয়। আমি ধুমপান করি না। এই আলোয় তামাকের ধোঁয়া মিশিয়ে দেওয়ার কোনো অধিকার আমার নেই।
একটু নির্জন দেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে দেখলাম, এই কুকুরটা সেই কুকুর নয়।
বললাম, বিস্কুট খাবেন?
কুকুরটা বললেন, আজ ধুমপান করতে ইচ্ছা করছে।
আমার বাড়ি গেলে ব্যবস্থা করতে পারি। আপনি কি আমার বাড়ি যাবেন? জানতে চাই।
তিনি সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললেন, আসি, আমার বকলশ পছন্দ নয়।
অন্ধকারে হারিয়ে গেল কুকুরটা। দেখলাম, ফুলতলার লীলা সিনেমা হলের আলোয় একটা আধা - পর্ণ ছবির পোস্টার। ছবির নাম 'নটি পড়োশন' ।
খুব সঙ্গম করতে ইচ্ছা হল। ঘরের মধ্যে নয়, নদী বা সমুদ্রের পাড়ে বালির উপর। বাঘের মতো গর্জন করতে করতে রমণ। আহত বাঘের মতো। শুধু নারী নয়, পুরুষও চিৎকার করে উঠবে। এ তো এক লড়াই, আদিম কাল থেকে চলে আসছে জঙ্গল থেকে বিছানায় । বিনা যুদ্ধে কেউ কাউকে সূচ্যাগ্র মেদিনী ছেড়ে দেবে না। স্বর্গে যুবকেরা যত খুশি রমণ করতে পারবে, ক্লান্তি আসবে না, বীজ পড়ে যাবে না, সন্তান হবে না, রাবারের সতর্কতার দরকার পড়বে না।
আমার তো পাপ নেই, পুণ্যও নেই, আমি কি স্বর্গীয় হতে পারব?
কে যেন বলেছিল, পাপ না থাকা মানেই তো পুণ্য। তাই কি? যদি বলি, আমার জ্ঞান নেই, অজ্ঞানতাও নেই —কেমন দাঁড়ায় বিষয়টা?
একজন দালাল গোছের লোক এগিয়ে এলো।
বলল, স্বর্গে যেতে চান?
কী করে বুঝলেন আমি স্বর্গে যেতে চাই?
আমরা লোক চিনি দাদা। যেতে চাইলে চলুন আমার সঙ্গে।
বললাম, চলুন।
৩
স্বর্গ
খুব কাছেই ছিল স্বর্গ, পথ জানা ছিল না। পৃথিবীতে দালালদের বড়ো দরকার আজ। আমার দেশ দালালে ভরে যাচ্ছে। কী অপূর্ব সংবাদ! রাত বেশি নয়।
গুহার মতো একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। জীবন এখানে যেন আজও আদিম। দূরে একটা বাঁশের মাচার উপর কয়েকজন যুবক কথাবার্তা বলছে।
ছোট ছোট ঘর। ঘর না বলে খোঁয়াড় বললেই ভালো হয়। টিমটিম করে আলো জ্বলছে প্রতিটি খোঁয়াড়ে। রাস্তার আলোর জোর খুব বেশি। সারি সারি মেয়েদের দেখা যাচ্ছে। সকলেই যেন একটাই মুখ ভাগ করে নিয়ে বসে আছে। ড্রেনের দুর্গন্ধ তাদের স্নো পাউডারের গন্ধকে ম্লান করে দিয়ে পরাজিত করেছে।
সামনের ঘর থেকে একজন গোমড়ামুখো মেয়ে বেরিয়ে এসে দালালকে জিজ্ঞেস করল, কত বলেছিস?
দালাল বলল, এখনও দরদাম হয়নি।
মুখ খারাপ করে উঠল মেয়েটা। তার পুরো শরীরটাই শুধু ঝুলে পড়েনি, তার ভাষা-কপাল-বারান্দার তক্তপোষ সব যেন ঝুলে পড়েছে। তার ঘরের মাথায় যেটুকু আকাশ সেখানে কোনও তারা নেই। একটা কালো চাঁদ গলগল করে কালো আলকাতরা অন্ধকার ঢেলে দিচ্ছে।
আমি বললাম, পারব না।
দালালটা প্রথমে শুনতে পায়নি। কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, কী বলছেন?
না, আমি পারব না।
মেয়েটা এই ফাঁকে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা খোঁয়াড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে ভেতর থেকে তালা বন্ধ করে দিল। তারপর বিশ্রী ভাষা দিয়ে বলল, কী আছে বের কর, নইলে পুলিশ ডাকব, তখন সব ঘোমটা খুলে যাবে।
আমি বললাম, আমার কাছে পয়সা টয়সা নেই। এক প্যাকেট বিস্কুট আছে।
আবার নোংরা ভাষা দিল মেয়েটা। তারপর আমার পকেট হাতড়াতে লাগল। যথারীতি কিছুই পেল না, এক প্যাকেট বিস্কুট ছাড়া। পার্লে মারি।
সেটাই কেড়ে নিয়ে বলল, যা, ভাগ শালা।
বাইরে বেরিয়ে দালালটাকে আর দেখতে পেলাম না। ছেলেগুলো তখনও সেই মাচায় বসে ফিসফাস করছে। আমার শুধু মনে হল, এখনই আমার সঙ্গে যা ঘটল সেটা ধর্ষণ আর প্রতিটা ঘরে যে ধর্ষণ ঘটে চলেছে সেটা সঙ্গম।
কটা বাজে জানি না। রাত বাড়ছে। বাড়ি ফিরতে হবে। হেঁটেই। এ পাড়ায় ভিড় বাড়ছে ক্রমশ। সবার চোখ চকচক করছে। চারিদিকে নজর রাখছে। ভদ্রলোকের পরিচিতি এক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
প্রথম জীবনের এক প্রেমিকার কথা মনে পড়ল হাঁটতে হাঁটতে। তার বাড়িতে মিলিত হয়েছিলাম এক দুপুর বেলা। সঙ্গমের পর সে আমাকে প্রণাম করেছিল। তখন তার মানে বুঝিনি। এখন বুঝতে পারি। তার কাছে সেটা আদিম লড়াই ছিল না, সেটা ছিল প্রিয়কে পূজা।
হাওয়া দিছে। মেন রোডে বড়ো বড়ো ট্রাক। লোক কমে এসেছে। আমি হাঁটছি।
শুধু মনে হল, কুকুর বিস্কুট খায় না, মানুষ খায়।
৪
প্রথম ক্লাস
আফরোজ!
জ্বি স্যার।
তোমার প্রিয় কবি কে?
কোন ভাষার স্যার?
তুমি কটা ভাষা জানো?
তিনটে ভালো জানি। একটা মোটামুটি।
কী কী ভাষা?
বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি আর উর্দু অল্প অল্প।
বাংলা ভাষার প্রিয় কবি কে?
জীবনানন্দ দাশ। স্যার, আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
আপনার প্রিয় বাঙালি লেখকের নাম কী?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তুমি কি তাঁর লেখা পছন্দ করো?
স্যার, বঙ্কিমের লেখায় নাকি মুসলিম বিদ্বেষ আছে? আনন্দমঠ, কৃষ্ণচরিত তো তাঁরই লেখা?
তোমাকে কে বলেছে এ কথা?
শুনেছি।
আচ্ছা, ধরো তোমার ধর্মকে তুমি খুব ভালোবাসো আর চাও এমন একটা দেশ তৈরি হোক যেখানে তোমার ধর্মাবলম্বীরা শাসন করবে, তাহলে তুমি কী করবে?
তাহলে কি অন্য ধর্মকে ছোট করে দেখব স্যার?
আফরোজ, জাতি-গঠন অনেক বড়ো বিষয়। এখানে ধর্মটা একটা টুল মাত্র।
জাতি-গঠন অনেক বড় ব্যাপার স্যার কিন্তু সেই জাতির মধ্যে তো সবাই আছে। একজনকে বাদ দিয়ে কি জাতি-গঠন হয়?
তুমি ভুলে যাচ্ছো যে জাতিকে তিনি কাঠগড়ায় তুলছেন সেই জাতির প্রায় ৭০০ বছরের আধিপত্য। তারা তো বাইরের মানুষ। ভারতীয় নয়। বঙ্কিম তো আদি ভারতীয়দের জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন, সেটা কি ভুল?
ভুল কি না বলতে পারব না স্যার, তবে তিনি যে রাজপুতদের বীরত্ব নিয়ে এত কথা লিখলেন, তাদেরকে জিতিয়ে দিলেন, সেই রাজপুতরা কি আদি ভারতীয়?
তারা ভারতীয় নয়?
রাজপুতরা তো হুনদের বংশধর। হুনরা কি বাইরে থেকে আসেনি?
আমাকে আরও পড়াশোনা করতে হবে আফরোজ। জেনে তোমাকে বলব। আজ আসি।
আবার কবে আসবেন স্যার?
এখনও জানি না।
আমার প্রথম ক্লাস এভাবে শেষ হয়ে গেল। রাস্তায় এসে উঠলাম। ৮টা ১০ বাজে। আজ বুধবার।
মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে। আমার প্রিয় লেখককে আমি ডিফেন্ড করতে পারলাম না। বঙ্কিম কখনও বিদ্বেষী হতে পারেন না। চৈতন্য দেবের মতো তিনিও কৃষ্ণকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। রামা কৈবর্ত্যর পাশে কি তিনি হাসিম শেখের নাম বলেননি? পল্লী গ্রামের প্রজাদের দুরবস্থা যিনি লেখেন তিনি কি সেখানে ডিসক্রিমিনেট করেছেন? বাঙ্গালার কৃষকরা কি শুধু হিন্দু ছিলেন?
সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
দু দিন ভালো ঘুম হয়নি। খুব ঘুম পাচ্ছে। এই সন্ধ্যা কি ঘুমের জন্য প্রশস্ত? আরো একটু হাঁটতে হবে। অটো নেওয়া একটা বিলাসিতা। আকাশের দিকে তাকাতে এখন মন চাইছে না। শুনেছি, তারা গুনলে ঘুম আসে। কিন্তু তারা গুনতে গুনতে হাঁটা যায় না।
রাসমাঠের ভাঙা জমিদার বাড়ির চাতালে এসে দাঁড়ালাম ২০ মিনিট হাঁটার পর। জায়গাটা নির্জন। নিঝুম। মনে হয় স্বর্গ এমনই। আম পাতা ছড়িয়ে রয়েছে সিমেন্টের চাতালে। পা দিতেই মড়মড় করে আওয়াজ হল। এখানে একটা কুকুর থাকে।
পাতার শব্দে কুকুরটা বেরিয়ে এলেন।
আমি প্রার্থনার ভঙ্গিতে বললাম, আমি আপনার এক স্বদেশী ভাই, আজ রাতে এখানে ঘুমোতে পারি?
এই বলে সেই শুকনো আম পাতার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। চোখ জুড়ে আসছে। ঘুম একটা আঠা।
একেবারে ঘুমিয়ে পড়বার আগে খেয়াল করলাম, কুকুরটা আমার মাথার পাশে মায়ের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে শুলেন।
আমি জানি, আমার কাছে কিছুই নেই, নাম নেই, পরিচয় নেই, শুধু মুখে একটু মায়া লেগে আছে।
খুকু ও খুকুর মা
সাদা রাতের বৃষ্টি
......................
গতকল্য এখানে বৃষ্টি হল, বৃষ্টিভর্তি আকাশ
আমি আর দুটো কুকুর খুকুর মতো দৃষ্টি নিয়ে দেখেছি
খুকুরা পাটিগনিত ভুল করে
বিমানসেবিকা হয়ে যেতে চায় অধিকাংশ খুকু
বৈদ্যুতিক মেঘের ভেতর দিয়ে যেতে ভালবাসে
ছড়িয়ে রেখে যেতে চায় গাঁদা ফুল, কানের গহনা
রাবণের দেশে যাবে রাম, উদ্ধারপর্বে
গতকাল বাড়ির ছাদে ঢেউটিনে পড়েছিল ছন্দ অলংকার
ছাতা নেই, কুড়োতে পারিনি
ঘুমিয়েছিল খুকু, তার মাতা শ্রম দান করে
রাজপুত্র চেয়েছে তারা সারারাত্র ধরে
প্রজাতন্ত্র একবেলা : জিয়া হক
মুরগির খামারে স্বাগত ভগ্নস্বাস্থ্যবান
খাদ্যের সম্ভারে অনবদ্য সম্ভাষণ
ওই দেখুন লাল মুরগি,
কালো মোরগ তার উপর
গান শুনতে পাও? রফি
ধ্রুপদী রান্না হচ্ছে ও পাশের ঘরে, গন্ধ পাও?
আজ বড় বড় বাতাস বইছে
শীত নেই, অথচ বসন্ত তিন মাইল দূরে
শৌচালয় ওইদিকে, জলাভাব নেই
মুরগিরা আসছে, ওদের অভিবাদন নিন
গর্ভবতীরা এদিকে, প্রসবাগার কাছেই
আপনার হাসিমুখ দেখাই ওদের স্বপ্ন
মশলা পেষার শব্দের জন্য দুঃখিত
আজ বড় বাতাস
আপনার পতাকার জন্য এই আয়োজন, বুঝেছেন, এই শান্তি
বিশ্রামকক্ষ বাতানুকূল, পছন্দ করুন
কাকে পেতে চান
রাতে
পাতে
পুষ্প চাও ফুল, কীট সখি?
১
রাতে কথা হবে পুষ্প, রাখি?
ফলবতী হতে চাও, রাখি?
যাদের ওঠে না, যারা নীচু
তুমি কি তাদের কাছে যাবে?
পুষ্প, পুষ্প, এখানে মালা হয়ে যায়
মৃতের শোভায় তুমি যাও?
পরম্পরা মনে রাখে যারা, যারা নীচ
জলসত্র খুলেও রেখেছে
তুমি কি তাদের তাদের কাছে যাবে?
রাত হল, রাখি পুষ্প, কাল কথা হবে?
২
খারাপ বলছো কেন?
নিজের নামকে ভালোবাসা দাও,
আদর করো
সে তো তোমারই অংশ
ওকে বৃষ্টি থেকে বাঁচাও
পরিপাকতন্ত্রের শিক্ষা তুমি পাওনি এখনও? পুষ্প!
জিয়া হক
রাতে কথা হবে পুষ্প, রাখি?
ফলবতী হতে চাও, রাখি?
যাদের ওঠে না, যারা নীচু
তুমি কি তাদের কাছে যাবে?
পুষ্প, পুষ্প, এখানে মালা হয়ে যায়
মৃতের শোভায় তুমি যাও?
পরম্পরা মনে রাখে যারা, যারা নীচ
জলসত্র খুলেও রেখেছে
তুমি কি তাদের তাদের কাছে যাবে?
রাত হল, রাখি পুষ্প, কাল কথা হবে?
২
খারাপ বলছো কেন?
নিজের নামকে ভালোবাসা দাও,
আদর করো
সে তো তোমারই অংশ
ওকে বৃষ্টি থেকে বাঁচাও
পরিপাকতন্ত্রের শিক্ষা তুমি পাওনি এখনও? পুষ্প!
জিয়া হক
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)