There is a nation in our imagination


বারান্দা আর ব্যবহার্য ফুলকপিতে ভেঙে পড়েছে সূর্য
চাকরি চার বেতনরহিত —যাবে এইবারে
গরু ও গরুর মাতৃসম্প্রদায় ফিরে আসছে ঘরে
বালক রাখাল শ্রেণি, লিঙ্গ, জৈবসচেতন তাই
গাভীকন্যা অস্পৃশ্য, নিরাপদে থাকে
ঘন্টা বেজে যায় বিদ্যালয়ে, পাকস্থলীর
রাস্তায় ঘোরে রঙিন চাদর যা
চাদরের পিতালোকের অর্ধেক সঞ্চয়
পতনোন্মুখ এই সাধারণ ঘরের খাবার আসে
কে খাবে কাকে?
কে কার পাত্রপক্ষ হবে এই প্লেটে?
গান বাজে, বাজে জ্ঞান যত উঁচু গ্রামে যায় গলা
গ্রামীণ শিশু নেয় রুটি পশুপ্রেমিকের
কুক্কুরবিস্কুটও এ অঞ্চলে সহৃদয়তা
পিকনিক এখানেই সম্ভব,  সূর্য যায় ধান্যে ও পাটে
জনতা যাবে মশামুক্ত ঠান্ডা পাটিতে
জনতা হবে কি ওই বন্য ফুল, আগাছা উদ্ভব?
ব্যাখ্যাকার জুতোদের পাশেই রেখেছে
এত মাটি চপ্পল তবু ফসলও দেয় না
সন্ধ্যা তার ওপরে পড়েছে


জিয়া হক 

পতিত লোকের পদ্য


আর লোকালয়ে সে আর থাকেনি
কেন থাকবে এই দাওয়াতখানায়?
পিপীলিকা, পিঁপড়া, শুঁয়োপোকা যেদিকে
গিয়েছে তার খাদ্য সেভাবেই আসে
লোকে জানে সে এক শূকর যার
আতরের নদী ছিল স্থানীয় ড্রেনের আশেপাশে
কালো ময়ূরীর দেশে সে এক রাখাল যার
গাভীগুলি ঘাসের সন্ধানে
প্রবাসী হয়েছে আর দুধ, দুধজাত
তৈজস আসবাব জলের অসহ মূল্যে
ব্যাঘ্র কিনেছে
আজান ঠেকেছে দূরে মন্দির, শুঁড়িখানা,
কৃষিক্ষেত্রগুলি
মক্তব শিখিয়ে যায় কতক্ষণ আলিফে টান হবে
ভক্ত আছে, ভক্তি নেই কোনও সভাঘরে
পীড়া তার পীড়িতকে কতদূর জানে
দুঃখের মুখে তুমি জল নয়, দিয়েছ প্রস্তাব

ট্রেনের বগির মতো দুঃখ বয় লোক
কোনও শোক কোথাও নামে না
শীতকাল এখানে বর্ষার সামরিকে আসে
জুতো, তুলোদের পশমের জুতো
ইঁদুরের ভক্ষ হয়ে পুরালোকে সহিংস হাসে
অচল কয়েন সেই লোকটাই
পকেটে পকেটে তাঁবু ফেলে —দেখে
সন্তানের ব্যর্থতায় ছোট হয়ে গেছে পায়জামা

জিয়া হক 

Song of a distant cemetery


ও কিদওয়াই রোড, ও হাসপাতালরেখা
কবরের ফুলগুলো চিরকাল নেচেছে অধিক
ফুলগুলো যথেষ্ট রঙিন,
যথেষ্ট পরলোকগত
এই ফুলে পূজা হতে পারে,
ওই পুষ্প নঞর্থক নয়
শিশুর নকল খোঁপায় তাকে রাখা যায় কি না
সভ্য ভেবেছে?
একটি সাদা বক আরেকটি সাদা বক
আসবে তাই বসে আছে জলে
এ ঠিক বৈঠক বসা নয়
নয় এ ভালবাসা যেভাবে ভালবাসার জন্য
বসে থাকে বলে দাবি করে থাকে
বিকেল গড়ায় — গড়িয়ে গড়িয়ে
কালো পাথরে ধাক্কা লেগে ভেঙে যায়
একটি মেয়ে আসে ফুল যার অন্তিম জীবিকা
তার জরায়ু তার ব্যথা হয়ে
গভীর এক খামারে ফুটে আছে
বাঁশের তলোয়ার তার উপর
ক্ষমাবশত ঝরে পড়ে, ঝরে পড়ে
তার আর উপায় কোথাও নেই বলে
প্রেম শব্দটি এখানে আভিধানিক ধুলো
ঝেড়ে প্রাণীর উন্নয়নে শ্রীহীন এসেছে
চঞ্চলকুমারী যত বেরিয়েছে চঞ্চলকুমারের
দেশে যেখানে শোক নেই,
নেই শুভ বিবাহ ভবন
বালিকা বিদ্যালয় যায়নি তাই জানে
কবরে বালিশ থাকে না তাই
সাদা বক বসো দেড় মিনিট
ফুলের খাদ্য হয়ে কেউ তো আসবেই

জিয়া হক 

Lone wolf


কে আর কার কাছে যাবে
জীবিতের নাকে কালো মাছি বসে
অনুল্লেখ্য সঙ্গীত শোনায়
কে যাবে কার কাছে আজ
পথ শুধু জন্ম দেয় ঘাস
এই ঘাসে কাগজ হয় না
কাগজে বিচ্ছেদ লেখা হয় শুধু
কাগজে বাঘ বাস করে
কে যাবে কার কাছে আর
অতিথিরা মিষ্টান্নবাহক
ও বটফল তিতা, তিতকুটে, লবনাম্বু
কাঠিছাড়া এ অাত্মীয় বরফ
মৃতদেহ যেভাবে বরফ খেয়ে
প্রবাসী বন্ধুর পথ
চেয়ে বসে থাকে —
লঙ্কাশাখা প্রজাপতিমুক্ত এক প্রজা
সমস্ত সম্ভাষণা লঙ্কাপানির মতো মিঠা
এত মিষ্টি এত তার গোপনীয়তা
ফুচকাঅলার স্ত্রী গন্ধরাজে তাকেও রাখেনি
বড় আশা করে এসেছিল যে শালিক
সে আর দ্রষ্টব্য নয়, সে একা
ক্ষতির প্রতীক হয়ে শীতের দুপুরে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘোরে
যাবে কার কাছে
কে এসে মোছাবে ওই অসমাপ্য চুল যার
শখ ছিল দক্ষিণের নিরীহ বাতাসে উড়বে
শাটল ট্যাক্সির ভাঙা কাচে

জিয়া হক 

Lip locked : an urban death


দিন বুড়ো
..............
অন্ধকার বসো পাশে এসে
উপদ্রব আলোর আর শেয়ালের
উচ্চতম শাখাটির নাম ভালোবাসা
সব পথ নিজ নিজ ধর্মঘরে গেছে
শীত এসেছে
হেসে উঠবে পাখিদের শিশুখাদ্য, প্রবাসী
স্নেহের চুমুগুলো, ব্লিচিং পাউডার যত
আত্মীয়তা জমা ডিব্বাদের
চটকল, রুমাল কারখানা ডুবে যায়
উৎসবের চোখের প্রস্রাবে
এত লোক, এত নির্জনতা
এত নাচ, এত ভেঙে পড়া
কত ধান, কত টাকা চাল
এত চাল, এতই বাচাল
কে পারে এমন এক রম্য লিখে দিতে,
সুরভিত ভীতু সুর সমক্ষে আনিতে
যা বলবে,  শকুন - সংগীত থেকে
সাবধান হও পিতঃ
সন্তান ঢাকতে গিয়ে যে পিতা নগ্ন হয়েছে
কম্বল এই শৈত্যে প্রাপক তার দেহ
কেউ আর ঘুঁড়ি ওড়াবে না
কাগুজে স্বার্থে তাই আকাশও
দেখবে না কেউ
ছোট মেঘ আরও ছোট পরিজন নিয়ে
চলে যায় আলাদা আকাশে
কিছু আর অনিবার্য নয়, হে সঙ্গসুখ
চলেই তুমিও যেতে পারো, কেননা
শাহজাহান বোকা লোক ছিল — এ ভাষা
রাষ্ট্র হয়ে গেছে ;
আমিই মমতাজ আমার — এ ভাষ্য রাষ্ট্র করা হল
কী নষ্ট এই বিকেলের হাওয়া
সঙ্গী বদলে বড় চাপ দিয়ে থাকে
ও এক এমন ধুতুরা যা তুলসীর পোশাকে
আমারই মনে মনে নমস্য হয়েছে
চেনে না যারা গাছ, লোক, বইয়ের প্রকার
প্রতিবন্ধী তারা কি নয়?
তারাই কি তীর্থক্ষেত্র জমজমাট রাখে?
কোলে তুলে দেখ দু পেয়ে শিশুকে
কোলে নিয়ে দেখ কুকুরছানাকে
কী মনে হয়?
কাল থেকে দুধে জল দেবে?
সরিষার ভেতরে আর ভৌতিক মেশাবে?
সমস্ত ব্যাখ্যায় তাছাড়া
শৈশব আনা হবে কেন?
তারা কি টুকরো উনুন
সকলেই সেঁকে নেবে রুটি, হাত, ভাবমূর্তিগুলো?

ভালবাসা একটা ডিসেম্বর যার শীতসমূহ
ঔদাসীন্যে হারিয়ে গেছে কোনও
বিশ শতকের গ্রামধারে


জিয়া হক 

শাশ্বত নিপ্পনের গল্প : No Man's Land


শাশ্বত নিপ্পনের গল্প
..........................
ছোটগল্প-গ্রন্থটির উৎসর্গপত্রটি একজন লিখনতাড়িত আব্বাজান তাঁর দুই সন্ততিকে দুই পংক্তির এক খোলামুখ চিঠি পাঠাচ্ছেন। তিনি লিখছেন, 'তন্ত্রী ও নীল /বাবার শ্রেষ্ঠ উপহার জেনো'। অপত্যের নামকে একটি পংক্তিই ধার্য করা হয়েছে। এই তন্ত্রী আর নীলের বয়ঃক্রম অজ্ঞাত কিন্তু একজন পিতা কী শেখাচ্ছেন তাঁদের? 'নো ম্যানস ল্যান্ড'-এর গল্প। কী ঘটে এই আখ্যানে? কেন উল্লেখ্য? পরিমল দত্ত আর তার শিশুবেলার বান্ধব আলফাজ কীভাবে তন্ত্রী-নীলের উপহার হয়ে উঠবে? পিতা ও লেখক শাশ্বত নিপ্পন গল্পটিতে বলতে চেয়েছেন, দুই স্বতন্ত্র ব্যক্তি কার্যত দুটি স্বতন্ত্র ধর্ম —প্রতিষ্ঠান। তাই তিনি ব্যক্তিদের হিন্দুপরিচিতি আর মুসলিমপরিচিতিকে পৌন:পুনিক হারে ফিরিয়ে এনেছেন। গল্পটি আসলে পরিমল দত্ত বা আলফাজের নয় —গল্পটি ধর্মীয় সহনশীলতা, স্থিতি ও অ্যাকসেপটেন্সের। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম 'স্বতন্ত্র'। তাদের বন্ধুধর্মও কি সার্বভৌম নয়? স্বাতন্ত্র্যের জঙ্গ বা আধিপত্যকামী গেরিলা অস্ত্র নিক্ষেপ নেই এখানে, রয়েছে গ্রহিষ্ণুতা, মান্যতার উদারীকরণ । বাংলাদেশি বাস্তবতা আর ভারতীয় সমাজ বাস্তবতা আনুপুঙ্খ মিলে যায় —সেই ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যার ভাষ্য। 'নো ম্যানস ল্যান্ড' সংখ্যা-রাজনীতিকে সখ্য-মানবিকতায় নিয়ে এসেছে।
এর চেয়ে ভালো উপহার তন্ত্রী ও নীল বাবার কাছ থেকে আর কী পেতে পারত?

ভালবাসা
জিয়া হক 

King Kong Khan


বাজার যাহা বলে, তাহা ফলে?
...........................................

যার বিশেষায়িত জ্ঞাপন নেই, তার বাজারি অস্তিত্ব নেই। এই সরলমতি বাক্যবন্ধকেই নিয়তি ধরে বহুজাতিক সংস্থাগুলি বানাচ্ছে বিজ্ঞাপন-প্রকল্প। এটা কি ভিন্ন অর্থে 'পুশ সেলিং' নয়? কিন্তু বিপণন আধিকারিক এইভাবে বেচা-বাটার মধ্যে কোনও অনৈতিকতা দেখেন না। তাঁরও থাকে এক কর্তাপক্ষ। তিনিও কার্যত বিক্রিত। বিকৃত?  বিকারের প্রসঙ্গ এসে যায় কেন না এই জ্ঞাপন-প্রক্রিয়ায় 'অ-সত্য' বা তথ্য গোপনের মতো বিষয়গুলি থাকেই। ব্যাঙ্কের ঋণ সংক্রান্ত বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ বা বীমার বিজ্ঞাপনক্ষেত্রগুলিতে সবচেয়ে জরুরি তথ্য সবচেয়ে দ্রুত পাঠ করা হয় কিংবা ছোটতম লিপিতে লেখা হয়ে থাকে। সংস্থাগুলি 'পোলিটিকালি ঠিক', তারা অবধ্য —অন্তত আইনি কুরুক্ষেত্রে। ভোক্তারাই ভোগে। আমাদের অনক্ষরতা, আমাদের অশিক্ষা এদের মূলধনের কিয়দংশ।
ছেলে ভুলানো ছড়ার মতো জনমন গলানো বিজ্ঞাপন যে আসলে একটি বড়তর চক্রের উপরিতল মাত্র —তা কারও অজ্ঞাত নয়। উষ্মা সেখানেই যখন একজন সাংস্কৃতিক তারকা তাঁর ভক্তকুলকে প্রতারিত করতে বিসর্গমাত্র ভাবেন না। ধরা যাক চিত্রতারকা শ্রী খান একটি ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনে সুটোল হাসিতে জানাচ্ছেন, তাঁর 'বিশ্রী' থেকে 'শ্রীযুক্ত' এবং তাঁর সফলতায় ওই শ্রী-এর ইস্তেমাল কীভাবে তাঁকে আজ 'মহান' করে তুলেছে। এই কথাগুলো বলছেন কাদের? যারা তাঁকে ভালবেসেছে, শ্রদ্ধা করেছে, গ্রহণ করেছে, মান্যতা দিয়েছে। শ্রী খান কি জানেন না কী বিষয়ে কী কথা তিনি বলছেন বিপণন কর্মী চরিত্রে? চলচ্চিত্রে আমরা তাঁর খলনায়কোচিত রূপকে স্বীকার করে তাঁকে হিরোত্বে বরণ করে নিয়েছি। কিন্তু বিজ্ঞাপনে তো তিনি ব্যক্তিগতকে, সতত সততাকে বেচছেন । শ্রী খান, শ্রী কপুর, শ্রী সিং, শ্রী চট্টোপাধ্যায় —সবাই কি একই ক্ষমতার ভাষায় কথা বলছেন না? তাঁরা কি কার্যত দেশজোড়া অশিক্ষাকেই উপহাস করছেন না? লগ্নি / 'এনক্যাশ' করছেন না?  কাল্পনিকতা দিয়ে নিজেকে বৈধতা দিতে পারবেন কি বিজ্ঞাপনচিত্রে? প্রসঙ্গত কয়েকটি প্রশ্ন উপস্থিত হয়। শ্রম, অধ্যবসায়, মেধা নয় —সফলতা বহিরাঙ্গিক রূপ-নির্ভর। একটি শ্রীবর্ধক ক্রিমের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, রূপ-বৃদ্ধি পুরুষটিকে হারেমের মালিক করে তুলেছে। নারীরা তার গুণমুগ্ধ কেন না তার ত্বক পূর্ববৎ 'নেটিভতা' হারিয়ে এখন উজ্জ্বল। জাতীয়তাবাদকে বিক্রি করছে কোনও সংস্থা। রাষ্ট্রপ্রীতিও পণ্য। এই পণ্যায়ন বিশেষ রাজনৈতিক দলের ম্যানিফেস্টো-সম্মত। বেড়ালই এখানে ঘন্টা উৎপাদনের বিনিয়োগকারী। কে বাঁধে কী? কাকে?
চিন্তা অন্যত্র। এই কর্পোরেট বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলিতে যারা কর্মরত, যারা ভেবে চলেছে গণমন ভোলানোর করণ-কৌশল, ফিকির-ফন্দি —তারা কারা? মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবীরা। এই মেধা তো আত্মহন্তারক। অবক্ষয়ী। এই মেধা যে এক্সপ্লয়টেড মেধা তা এই মেধাবীরাও জানে। তাহলে? কী তাদের বিবেককে সংহত, সংযত রাখে? এর সঙ্গে কী বিধি-বদ্ধ আছে কোনও প্রতারণাময় অতীত যা তার প্রতারক সত্তাকে সেফ-গার্ড করে? নাকি কেবলই জীবনযুদ্ধ, মুদ্রারাক্ষস আর অস্তিত্বের সংকটের কাহানি? সমস্যা কি নিহিত আছে আমাদের শিক্ষাতন্ত্রে? শিক্ষাক্রম - শিক্ষক - শিক্ষণ : এই ত্রিবিধের যে বিজ্ঞাপন শিক্ষার্থী আশৈশব পেয়ে থাকে, 'ভূত' কি সেখানে? আমাদের শ্রেয়বোধ যত হ্রাস পাচ্ছে এই ভূতও কিন্তু তত মান্যতা পেয়ে যাচ্ছে।
কবি শঙ্খ ঘোষ খেদোক্তি করেছিলেন, বিজ্ঞাপনে ঢেকে যাচ্ছে মুখটাই। একুশ শতকের প্রথম দশকে মানুষ নিজেই হয়ে উঠেছে বিজ্ঞাপনের বর্ধিত অংশ। সে বিজ্ঞাপনের ভাষায় কথা বলে, বিজ্ঞাপিত স্বপ্নই এখন তার স্বপ্ন। বিজ্ঞাপনের অ-সত্য বা আধা-সত্যকে সে অনুমোদন দিয়েছে যেহেতু তার জীবনেও কম 'মিথ্যা' নেই। অন্তর-মুখ নিয়ে চিন্তিত নয়, সে বাহির-মুখাপেক্ষী এবং এই 'ঢাকা'টা তার সচেতন নির্বাচন। বরং বিজ্ঞাপনহীনতাই তাকে পীড়িত করে। সোশাল মাধ্যমে রেস্তোরাঁ ভ্রমণের ছবি অপ্রকাশিত থাকলে তার হৃদমাঝারে চিনচিন করে। এর উৎস কোথায়? এই জ্ঞাপন ও নিভৃতিবাসে তার প্রাপ্তি কী? ফিল্টার্ড আলোকচিত্র কি কারও কাঙ্ক্ষিত সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সন্ধান দিচ্ছে? ধরা যাক দেয়, কিন্তু দিচ্ছে কি স্বস্তিসুখের সন্ধান? আসলে 'বাড়ন্ত বাচ্চাদের জন্য' যে পানীয় দরকার, 'প্রকৃত পুরুষদের জন্য' যে সুগন্ধি দরকার, 'রান্নায় স্বাদ আনতে' যে গুঁড়ো মশলা দরকার —সেই সবই বিশ্বাস-অবিশ্বাস, প্রয়োজনীয়তা - বিকল্পহীনতার মাঝখানে থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। যেভাবে আমরা আমৃত্যু বিক্রিত হয়ে যাই।
আমরা বিজ্ঞাপনদাতারা কার্যত গোয়েবলস।

জিয়া হক

ক্যাটরিনা সলমনের দেশ


ও সভ্যতার কাহানি
.............
যেখানে সবাই ক্যাটরিনা কাইফ, সেই দেশে
আমি যেতে চাই না। আস্তাকুড়়ে, রেলগেটে, পান দোকানে, সবজায়গায় কাইফ —এ অস্বাস্থ্যকর।
কাইফরা থাকবেন মগডালে, তাকে পেড়ে আনবার জন্য প্রাণান্তকর প্রয়াস করবে সভ্যতা —এমত দৃশ্যই মনকে শুশ্রূষা দেয়।
নগরপিতা বসবেন ছোটকচি কাইফ নগরবালিকাদের নিয়ে। তিনি সলমন খানেদের পাঠ দেবেন।
সভ্যতা এমন।

জিয়া হক

First Death Experience : in memoriam of Afrazul


প্রথম মৃত্যু ও এক স্তন্যপায়ী শিশু
...........................
প্রথম মৃত্যু আর প্রথম মৃত্যুর স্মৃতি —পাঠ্যপুস্তক এতদিন যা শেখাতে চেয়েও পারেনি, অথবা শেখানোর প্রয়োজন বোধ করেনি —সেই জ্ঞান দিয়ে যায়। শিশুর সর্বপ্রাণবাদীতায় প্রথম জড়ের সংক্রমণ। আর এই জড় আদি থেকে জড় নয়, হঠাৎ-জড়।
শিশু তখনও স্মৃতিচারণ করতেও শেখে না। যা মনে আসে সেটা ভেসে আসা কুটো, ভাসিয়ে আনা নয়। স্মৃতিচারণ শিক্ষণীয়।
শিশু একটি নব্য প্রাণের টিলা আর সে যখন ঠিক তার বিপরীত অ-প্রাণ, নিষ্প্রাণতা দেখে তখন এক মনোজাগতিক সংঘাত হয়। এই 'সন্ত্রাস' - এর স্মৃতির স্থায়িত্ব পারত্রিকতার আগে অবধি।
খুব শিশুর কাছে মৃত্যু একটা ভিড়। মৃত্যু একটা সমাগম। একটা মেলার কম কিছু নয়। মৃত্যু - পরবর্তী আলোচনাসভা থেকে সে শেখে গৃহকর্তাদের ক্ষমতার, পদাধিকার, আধিপত্যের স্তর। কে বাদশাহ আর কে পারিষদ —সে আঁচ করে।
শিশু তখনও পূর্ণাঙ্গ প্রকৃতির পূর্ণাঙ্গ অংশ। মৃত্যু তার কাছে প্রকৃতি প্রদত্ত এক রহস্য, আর সেই মিস্ট্রিকে, সেই মিস্টিককে হয়ত বুঝতে নয়, এমনিতেই প্রকৃতির চলনের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। হয়ত সেদিন ঝিরি-বৃষ্টি হল, হয়ত সেদিন সূর্য ছায়াময় ছিল, হয়ত সেদিন সামান্য গতির বাতাসে কোনও বৃদ্ধ কলাগাছ ভেঙে পড়ে গিয়েছে —এই সব কিছু শিশু তার স্কিমা বা তথ্যাধারে জমা করে। হয়ত অচেতনেই। হয়ত অজ্ঞাতসারেই। মানুষের মৃত্যুকালীন এই প্রাকৃতিক চিহ্নগুলোকে সে অব্যবহিত পরে 'অ-মঙ্গল' - এর ধারনার আওতায় নিয়ে আসে।
শিশুরা তো পতঙ্গের মৃত্যু দেখে, সে হয়ত একটা ফড়িং বা ঝিঁঝিঁ পোকার ডানা কেটে দেয়, দলে দেয়। এরা দলিত। শিশুর কাছে গতিশীলকে স্থির করে দেওয়া একটা খেলা মাত্র তখন।  ফলত মৃত্যু একটি স্পোর্টস। নিজের যম বা আজরাইল হয়ে ওঠাই তখন তার প্রাইজ। এই মনুষ্যেতরদের মৃত্যু কার্যত প্রকৃতির বিপক্ষপাতিত্ব ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এর অনেক পরে এই আত্মক্ষয়ী বিপ্লবের প্রায়শ্চিত্তের ভান করতে তাকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি করতে হবে। সে পরের কথা।
মৃত্যু কিশোরকে যাবতীয় 'রতি' র দিকে সরিয়ে আনতে পারে অথবা যাবতীয় থেকে তাকে 'রত' করতে পারে। মৃত ব্যক্তির জন্য মৃত্যু যেমন একটা স্থিতি-ফোর্স, তেমনই জীবিতকে সে গতি দিয়ে যায়। এই গতি তাকে শিয়ালদহ নিয়ে যাবে না, তবে উপাসনালয়ে নিয়ে যেতে পারে কিছুকে, কাউকে।
মৃত্যু শিশুকে মুগ্ধ করে, খানিক বিস্মিত করে, চঞ্চল করে ; কেননা মৃত্যু-সংক্রান্ত পরিবেশ, সে পারিবারিক আবার সামাজিক বা বিশেষ ব্যক্তিক যেটা শিশুর কাছে বৃহত্তর প্রকৃতির অংশ —তাকে অভিভূত করে।
এতদিন সে কেঁদেছে, বাবা মা শান্ত করিয়েছে ;
এখন, আজ বাবা মা কাঁদছে —এ দৃশ্য তাদের কাছে বিরল। সমস্যা হল, তারা জানে না কীভাবে এই বয়ঃপ্রাপ্ত কাঁদুনেদের শান্ত করতে হয়।
সে বড় জোর মৃত্যুর বিপ্রতীপ হিসেবে তাদের কোলে গিয়ে বসতে পারে।
রোহিঙ্গা শিশু, সিরীয় শিশু, ইরাকি শিশু কার কোলে গিয়ে সান্ত্বনা রাখবে?  তাদের অভিভাবকরাই কী জীবিত?  একটি শিশু কতবার শান্তি, সান্ত্বনা আর নিরাময়ের ঔষধ হয়ে উঠতে পারে? মৃত্যু কি সেখানে নৈমিত্তিক নয়? খেলনা হারিয়ে যাওয়ার মতোই কি আত্মীয় হারিয়ে যায় না তাদের? মৃত্যু কি তাদের কাছে আর আদৌ প্রাকৃতিক - দৈব - ঐশ্বরিক কোনও অ-ঘটন?  'দুর্ঘটনা'র ধারণা-শূন্য শৈশব তাদের কৈশোরের রাগ ও জঙ্গ-স্পৃহার ভিত্তি নির্মাণ করে দেয়। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা শিশুর পৃথিবীর প্রতি প্রীতি-ভালবাসা আসবে কোন আকাশপথে? আকাশপথ তো সেখানে বিমানময়। আর সেই বৈমানিকেরা লজেন্স বৃষ্টি করে না। যে-শব্দ তার স্কিমা গঠনের সহায়ক হতে পারত, সেই শব্দ তার ভয়ের আয়োজন করে। উচ্চনাদ মানে মৃত্যু।
দুর্গার মৃত্যু-স্মৃতি অপু জীবনান্তেও ভোলেনি। স্মৃতিভ্রংশতা ভিন্ন এর উপশম নেই। আছে?
উল্লেখে রোহিঙ্গা বা পশ্চিম এশীয় একটি বিশেষ ধর্মীয় শিশুরা রয়েছে —এর অর্থ এই নয় যে, অন্যত্র সীমাহীন স্বস্তি। হিংসা তো মানুষের মজ্জাগত আর পরিকল্পিত সন্ত্রাস তো তারই নিরাবরণ প্রকাশ। প্রথম বিশ্ব, তৃতীয় বিশ্ব বলে আলাদা কোনও উচ্চবচতা নেই —সকলেই প্রায় আক্রান্ত। প্রায় সবাই আক্রান্ত-সীমার ধারেকাছে ঘোরাফেরা করছে। ফলত কেউই নিরাপদ নয়। দুঃখজনক সত্য হল নিরাপত্তা বিষয়ে সাধারণ বিশ্ব যাদের মুখাপেক্ষী সেই রাষ্ট্রগুলিই 'আত্ম'রক্ষায় মগ্ন। 'আমার শিশু'র প্রাণ গুরুত্বপূর্ণ, 'তোমার শিশু' শ্রেণিশত্রু। ফিলিস্তিনে তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বারুদ পাঠানো যায়, হাসপাতাল, প্রসূতিসদনে যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োগ করা যায়। পাঠক্রম শেখায় শিশুরা পবিত্র —ঈশ্বরের অংশ। আমরা ঈশ্বরের মুখে আগ্নেয় 'মানবতা' নিক্ষেপ করি। মোজেস, যীশু, মহম্মদ —যাঁরা অখন্ড মানুষের 'ধর্ম'পরিচয় দিয়েছেন, যে-ধর্মপরিচিতি এখন নীতিবর্জিত ও রাজনীতি-নিয়ন্ত্রিত —সেই মৌল ধর্ম আর তার ধর্ম প্রচারকেরা শিশুর সমার্থক এবং শিশুকে কেবল একটি বিশেষ্য নয়, বিশেষণ হিসেবে দেখেছেন, যা একাষেঁড়ে দৈত্যের বাগানে শৈত্যপ্রবাহ রুখে বসন্ত উপহার দিয়েছিল কোনও এক কালে ।


আমি এক নিরীহ দৈত্যকে চিনি। শুঁয়োপোকার মত, অ্যামিবার মতো নিরীহ এক দৈত্য। সে সবার ভেতরে লেপ টেনে ঘুমিয়ে আছে।  তাকে অকালে জাগিয়ে তোলা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। প্রতিটি রাবণ তাই অপারগ না হলে চায় না ওই ভাইকে জাগাতে যার নিদ্রাভঙ্গই কার্যত জীবনভঙ্গ। এই দৈত্য থ্যানাটস। সে কর্কট। সে মরণসংক্রান্তি। তাকে জাগাতে নেই। আরও একটা ব্ল্যাঙ্কেট তার জন্য এই শৈত্যদিনে বরাদ্দ হলে যাবতীয় জাগতিক সাম্য, প্রাণজ ভারসমতা থাকবে। আকাশপথ বেলুনের, ঘুড়ির, নীলাকাশের, মেঘের, বৃষ্টির —এই পথে কর্কশ কর্কট, বিপুল বৃশ্চিক নামিয়ে দেওয়া পশ্চিম এশিয় ভূ-দেহে। কুম্ভকর্ণদের ঘুমই প্রার্থনীয় । সে এতটাই নিরাপদ আর নিষ্ক্রিয় যে তাকে জাগাতে হলে অর্কেস্ট্রা দরকার হয়। সে এতটাই বধ্য, মৃত্যুপ্রবণ যে তার আকস্মিক জাগা-ই চিরকেলে ঘুম নির্দিষ্ট করে রেখেছে। প্রাচ্যের তৈলাক্ত অংশটির ঘুম সেদিনই ভেঙে যায়, অন্তত বৈশ্বিক রাজনৈতিক আলোচনায়, যেদিন ওই ফ্লুইড মিলল যে তরল ম্যাজিকল। যেমন মৃত্যু। মৃত্যু একটি যাদুক্ষমতা। কিন্তু এই যাদুর সাধনা সম্ভব নয় কেননা এ কোনো আঙুরফল নয়, আর সাধকও কোনো শেয়ালদেবতা নন।
—ধরে নাও কাল তোমার মৃত্যু। আজ কী কী করবে?
—প্রথম কথা,  আমি কিছুই ধরে নেব না।বাই দ্য ওয়ে, আপনি কি আজরাইল?
—আমি আজরাইল হতে যাব কেন? আমি তো ফেরেশতা নই।
— তাহলে এত মৃত্যু মৃত্যু করছেন কেন?
—ফেরেশতারা কি মৃত্যু মৃত্যু করে?
—ওই যে ছেলেটিকে দেখছেন, ওকে জন্ম দিতে গিয়ে ওর মা নিজেকে হারিয়েছে।
—এসব রাখুন।  দেখুন চাওয়ালা কুকুরকে বিস্কুট ভেঙে খাওয়াচ্ছে।
এক মৃতের গল্প দিয়ে এই অসার লেখাটি শেষ করতে চাই আপাতত।  সেই লোকের নাম আলম বারি। তো,  মৃত্যুর দেবতা এসেছেন আলম বারির প্রাণ কব্জা করতে। আলম বারি পায়খানায় লুকিয়ে বসে আছে কেননা সে শুনেছে দেবতারা পবিত্র —মনুষ্য পায়খানায় নিশ্চয়ই তারা ঢুকবে না। তার ধারণা অমূলক ছিল না একেবারে। মওতের দেবতা বলল, বাবা আলম, তোমাকে যদি মৃত্যুর পর আরেকবার জান দেওয়া হয় তাহলে কি তুমি বেরিয়ে আসতে পারবে?
আলম ভিজে লুঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন করল, সেই জীবনে কি আবার আমাকে মরতে হবে?
দেবতা বলল, তা তো বটেই বাবা আলম।
—চাই না ও জীবন।
আলমকে যেতে হল পরলোকে। মৃত্যুর দেবতা দেবতাদের আড্ডায় কিছু একটা মুখে দিতে দিতে বলল,
—অভিজ্ঞতা থেকে বলছি,  দুনিয়ায় সবাই আলম বারি। 

ভালবাসা
জিয়া হক 

A parental elegy : my epitaph


আমি তো বুঝেছি, এ পৃথিবীতে
গাছ নয়,
আব্বামা প্রকৃতই ছায়া

যদি পুড়ে যায় কেউ
মাআব্বাই বন্দোবস্ত জল

দূরে অনেকেই চলে যাবে, হয়ত
স্মৃতি তার এতটাই নম্র হয়ে যাবে যে
ভুলে যাবে তারও এক জন্ম হয়েছিল

ছায়ায় কেউ না এলে ছায়া
কষ্ট পায়, গুটিয়ে নেয় সন্ধ্যায়
ফলত সবটুকু হয়েও গাছ আমাদের
আব্বামা হতেও পারে না

জিয়া হক 

Life is a dustbin and you need a handkerchief


I always need to have a purpose. A purpose to go somewhere. Somewhere everyone goes. I find myself a good for nothing amidst the crowd. I used to understand the way crowd's mind functions. I used to know that I am a part of that crowd and I am destined to be a person who will add nothing to the crowd.
I always need someone whom I can wait for, whom I can spend my life for. I neither depend on him/her, nor I become his/her sole horse. I just want to wait outside the shop where he or she is busy, marketing, talking to the shop girls, having laugh with their little jokes. I want him or her to be happy being with me. Their happiness  begets newer relief zone. This is where I belong.
Yes, lone hearts have lone zones and those cubicles look for its suitable owner. We are not fortunate enough, I believe, to get one. Having one in right time is not the solution. Does it emancipate you from the mundane longing for perpetual love?
Curse me.
I have never understood what the love is. To trust is to love. To be believed is to be loved. If you hesitate to keep faith on me, sorry dear, you don't love me either.
I look at you so intensely that you start thinking that I am in love with you, but the reason is I have no other things around to look at. Don't feel broken listening to me, you had been broken the day I expressed my love for you cause love itself is a broken winged unicorn. I never saw a unicorn in my cornfield.
I am late cause I am not in hurry. I am not in hurry cause I have nothing to prove to anyone. I am the one who matters most. Call this confession an epitaph of a failed person. I don't mind. I, at least, know what an epitaph should be like and I can write one. I can give you the liberty to judge me, only when you will free yourself to be judged by others, without grinning.
You are an unexplored mountain, full of mystery and notoriety. But my question is, do you know yourself entirely, na?
Totalitarian idea of knowledge is illogical. It's bit romantic school of thought. The word 'complete' is not that complete which can vouchsafe for completeness. Rasools said that they were just messenger of God and not a farista. Therefore, they claimed themselves to be human beings and the cemetic scriptures say that humans are incomplete. So even prophets are incomplete.

Love
ZIA HAQUE 

Griha Madhav গৃহমাধব


গৃহমাধব
.............
ছিলে অন্তিম বাদাম
না খেয়ে রোপন করার কথা ছিল
আমি তো মানুষ প্রজাতি
আমার বাদ্যযন্ত্র সব খায়,
           সব বলে ফেলে
অনায়াস বাদাম এক ছিল
ছিল খেত —পেটের ভেতরে

জিয়া হক 

Mir Sahib's Dilemma



মির তাকি মিরের কিছু কবিতা পড়ছিলাম। আহ মির!  কবিতার জন্য, শুধু পংক্তিলগ্ন জীবনসন্ধানে তিনি জীবনের সবটুকু ছেড়েছেন। ট্রেন চলছে আর মিরের নজমের দিকে তাকিয়ে আছি। এক ঘন্টা পরে এই ট্রেন শিয়ালদহ দাঁড়িয়ে থাকবে। একটা প্রশ্ন জেগে উঠল তখন।
আমিও যে লিখি একটা-দুটো। কিন্ত কী হয় এতে? শুভানুধ্যায়ীরা তো বলে, বিয়ে করো, সংসারী হও, চাকরি জোগাড় করো, বাড়িটা রং করার সময় হয়ে এল।
শুভানুধ্যায়ী যার নেই সে একটা পোড়ো বাড়ি।
আমি চিরকাল ভেবেছি, আমার মৃত্যু নিয়ে, কেমন হবে, কোন হালতে হবে, কী মনে পড়বে তখন, কে পাশে থাকবে। আদৌ কেউ থাকবে?
কী-ই বা হবে মৃত্যুর পরে? আমার তো সন্তানকন্যাপুত্র নেই। স্মৃতি আগলানোর কেউ নেই। যদিও আমি চেয়েছি, আমি গত হলে, আমার সংক্রান্ত ও সম্পর্কিত সব স্মৃতিরও যেন গতি হয়। সান্ধ্য-মজলিশে আমার রূহ যেন অনুপস্থিত থাকে।
সেখানে সুগন্ধী সুপেয় চা থাকুক, মৃতেরা আবার কেন?
মির, আমি আপনার নজমগুলোর দিকে তাকিয়ে এইসব ভাবছি। ট্রেন চলছে, আমার মধ্যে আপনিও প্রবাহিত হচ্ছেন ।
আর বাঙালি এক ট্রেনবাহিত পাঠক সম্পূর্ণত নিশ্চিহ্ন হওয়ার কথা ভাবছে।
মানুষ কি বোকা, তাই না মির সাহিব! 

ভালবাসা 
জিয়া হক 

Victims of the fake knowledge


FAKE KNOWLEDGE
................................
জ্ঞান 'ফেক' আদমিকে আধিপত্যকামী করে তোলে। সে আর কোনো প্রশ্ন, কুতুহল, জিজ্ঞাসা গ্রহণ করতে পারে না। যাবতীয় অনুসন্ধিৎসা তার তখন বিরুদ্ধতা ঠেকে। সে বলে বসে, সম্পূর্ণ না জেনে মন্তব্য করো না।
'সম্পূর্ণ' মানে জ্ঞানের কতটা, কতখানি?  যদি জ্ঞানের টোটালিটারিয়ান জায়গা ছেড়ে বৈষয়িক সম্পূর্ণতায় যাই, তাহলে সে পূর্ণতা বিষয়ের কতটা, কতখানি?
যে 'জ্ঞানী'র সমালোচনায় চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, বিপরীতবাদীকে অশিক্ষিত, অদীক্ষিত মনে হয় —সেই সেল্ফ প্রক্লেমড জ্ঞানী কার্যত ফিউডাল মনের। সে নিজেকে 'নায়ক' ঠাউরে বসে আছে আর প্রশ্ন মাত্রেই সে হেনস্থা ভাবতে শুরু করে।
কেবলই উপহার যেমন একজনকে এতটাই 'স্পেশাল', বিশেষ ভাবিয়ে ফেলে যে প্রকৃত/প্রাকৃতিক থেকে তার চ্যুতি ঘটে, এমন এক স্বরচিত গর্তে সে হাজির হয় যেখানে দেওয়ালে দেওয়ালে তার হাসিমুখ, প্রতিটি গালে চুমু, গর্তটাই রিবন-নির্মিত।
দুঃখপ্রকাশ করছি —এ ব্যক্তি নিজের কাছে আমৃত্যু অজ্ঞাত রয়ে যাবে। নিজের সেই অংশে যেতে সে ভয় পাবে, অনীহা বোধ করবে যেখানে টর্চ জ্বলছে না।
কেবলই শংসা ও প্রশস্তি একজনকে মনুষ্যেতর বানিয়ে দিতে পারে। খানিকটা ওই গাধার মতো যে নিজের পিঠকে আর শরীরের অঙ্গ ভাবতে ভুলে যায় —সে ভাবে ওটা এক তাকিয়া —ওতে তার অধিকার নেই —বোঝাশূন্য পিঠ তার কাছে পিঠই নয় —সে কাপড়ের গাঁটরি আর রবীন্দ্ররচনাবলী আলাদা করতে পারে না —সবই আবশ্যকীয় বোঝা। এই গাধা নেহাত গাধা হলে ক্ষতি নাই, সে 'জ্ঞানী' মানুষ হলে বিপত্তি।
এই জ্ঞানীদের কাছে 'সম্পূর্ণ' জ্ঞান হল ততটুকু যতটুকু সে নিজে জানে। বাকিটা অজ্ঞানতা —অসম্পূর্ণতা।
সিদ্ধ ভাতের প্রতিটি টিপে ছেনে পরখ করতে নির্দেশ দেয় এই ধরনের জ্ঞান। জ্ঞান যদি কান্ডজ্ঞানমুক্ত হয়, তাহলে তার শ্রেষ্ঠ জায়গা হল ডাস্টবিন।
এই জ্ঞানালোক ভর্তি হয়ে আছে এমন মহাপৌরুষে। পুরুষ নয়, পৌরুষই। নারীরাও এর আওতাধীন। এরা নিজেকে পির ভাবে, সাঁই ভাবে, নিজেকে ভাবে মুর্শিদ —যে তার মুরিদ নয়, যে তার আশিক নয় তার জ্ঞানলোকে ঠাঁই নাই। সে অজ্ঞান। মুর্খ।
ভালবাসা
জিয়া হক

New Ton


নতুনত্ব একটি পরাণপ্রিয় ধোকা 
..................
নতুনতা জোগানোর ভার পড়েছে। নতুন কথা,  নতুন বই,  নতুন চা,  নতুন দোকান, নতুনের নতুন।
আমি ভাবি, আমি নিজেই কি এতটা নতুন?  তিনি নিজেই কি এতটা নতুন? তাহলে এত নতুনের কড়াকড়ি, কাড়াকাড়ি কেন? এ জগৎও কি পর্যাপ্ত নতুন?  তাহলে? তবে?
অনেকানেক পুরাতনী কথা আমি সংগ্রহ করি। তা-ই সরবরাহ করি। তাঁর নতুন ঠেকে এই সব।
আমার স্বস্তি কেন না জোগানদারের কাজেও আমি নতুন। 


ভালবাসা
জিয়া হক

An unknown 'prophet'


I  am a sovereign

প্রতিটি মানুষ সার্বভৌম। সে একটি বৃহৎ সার্বভৌমত্বের অংশ। প্রতিনিধি। অধীন নয়। অধীনতার প্রসঙ্গ এলেই ওই ব্যক্তি-সার্বভৌমত্ব আহত হয়।  ব্যক্তি কীভাবে রক্ষা করবে তার নিজস্ব সার্বভৌমত্বকে? তার বাহিনী কে, কী? ফিজুলি বলছেন,  শব্দই তার সেনা। এই সেনারা কি নিরঙ্কুশ? এরা কি অপরাজেয়? এরা কি বলশোভিত? কোথায় থেকে আসে এই শব্দসেনানীর বল? ফিজুলি বলবেন,  এই ক্ষমতা কার্যত সত্য-জাত।
জাতীয়তাবাদী মনোবিকাশ একটি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন। রাষ্ট্র এই বিশেষ চিন্তা-ঘোর দিয়ে তার নানা 'পাপ' কে সিদ্ধ করে ফেলতে পারে। তবে, একটি জাতির একক তো একটি সার্বভৌম মানুষ। এই মানুষকে প্রস্তাব দিতে পারি, অনুরোধ করতে পারি, সচেতন করতে পারি, কিন্তু বাধ্য করতে পারি না। ফিজুলি যা বলতে চাননি তা হল, রাষ্ট্র একটি হ্যাজাগ আলো আর ব্যক্তি হল একটি লম্ফ কিন্তু ধর্মে দুজনেই আলো। কে কত জোর খাটাবে, কে কত জোর দেখাবে, সেটা ক্ষমতা-বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার আওতাধীন।

ভালবাসা
জিয়া হক 

Rotten Words : two point zero



A few more Rotten Words





More Rotten Words





Rotten Words





বাংলাদেশি কবিতা : দ্বিতীয় প্রস্থ : পাঠ-প্রতিক্রিয়া

সমান্তরাল নয়, মুখ্য স্বর
শ্মশানে নদীর চিতা, চন্দ্রচূর্ণ
.......................................................................................
ভিড়-প্রবাহের ধারে তিরতিরে একটি মগ্ন স্রোত —এভাবেই সাইফুল ভুঁইয়ার কবিতাকে 'ব্যাখ্যা' করতে চাইব। বাংলাদেশি কবিতার যে ফেনায়িত দীর্ঘ আলুলায়িত, কিঞ্চিৎ আবেগের নিয়ন্ত্রণ-উদাসী প্রবণতার বাইরে একটি অপর বাংলাদেশ।

কবিতা কারো কারো কাছে একটা খেয়াল। এই খেয়ালি কবিমহল সরগরম করে রাখে আবৃত্তিতালিকা, পুরষ্কারমঞ্চ, শোভা যাত্রা। এ ভারি অশোভন কেননা আপনি কখনই সেই শিক্ষকের উপর নিজের সন্তানের শিক্ষা-জীবনের ভার দেবেন না যাঁর কাছে শিক্ষকতা নেহাতই একটা প্রফেশন।

কেউ বলতে পারবেন এমতাবস্থায়, কবি কেবলই রূপ তৈরি করে দিয়ে তার ইহলৌকিক দায় সারবেন। তাঁকে না হতে হবে সমাজচিন্তক, না হতে হবে দার্শনিক, না হতে হবে 'মানুষ'। তিনি হবেন পানীয়জীবী ও পরজীবী। এমন উদ্বায়ী না হলে কবিতা 'আসবে' কোন পথে? শব্দসন্ধানী হওয়াই কবির ইহজাগতিক ভবিতব্য। শব্দের সংস্থান ও শব্দের বন্ধন —এই হল 'শিল্প' —আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি —দুই অর্থে। সাইফুল ভুঁইয়া কিছু বলতে চান। তাঁর মতো করে। তাঁর কবিতা কেবল কানের জন্য নয়। বাংলাভাষী তা দ্রুত বুঝে উঠতে পারলে মঙ্গল কেননা কবিকে শুধুই 'একজন ডার্মাটোলজিস্ট যে কিনা কাব্যচর্চাও করে থাকেন' —এই সূত্রে দেখবার চল আছে।

সেই পুরনো কথাটি এখন 'পাড়তে' ই হয় —কবিতা কতখানি বুদ্ধির আর কতখানি আবেগের।  মধ্যপন্থীরা বলবেন, দুটোর বাড়-অবস্থান - বৃদ্ধির হার সমানুপাতিক। সুষম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু প্রশ্ন হল মাত্রার। কত পরিমাণ ঈষদুষ্ণ জলে কত ফোটা হোমিওপ্যাথ —এই পদ্ধতি এখানে খাটবে না। তবে, আমাদের বিশ্বাস, এই 'পোস্ট ট্রুথ' পর্বে, কবিতায় মেধা কয়েক আউন্স বেশি থাকবে আর আবেগ তাকে সৌন্দর্য এনে দেবে। মেধা যদি রুটি-চাপাটি হয়, তাহলে আবেগ হবে নকশাদার প্লেটটি। কিন্তু পাত্রখানিই হল লাওপালার আর তাতে পরিবেশিত হল অ-কু-খাদ্য —আপনি কী করবেন ভদ্রে? সাইফুল ভুঁইয়া প্লেটটি দেশজ আর পরিবেশিত খাদ্যে লবণের আধিক্য নেই। তবে কোথাও কোথাও যে একেবারেই নেই তা বলা অন্ধত্ব হবে।

শ্মশানে নদীর চিতা, চন্দ্রচূর্ণ —বাংলাদেশি কবিতার ইতিহাসে দুটি ঘটনা। এ কথা প্রায়জনমান্য, দূরত্বই কবিতাকে পুনর্জীবন দেয় —যখন কবি থাকেন না কাছেপিঠে, দূরে, কোথাও —তখন তাঁর কবিতা নয়া জন্ম নেয়, পুনরায় ভূমিষ্ঠ হয়, যেভাবে জীবনানন্দ দাশের কবিতা হয়েছে। তবে এ ও অসত্য নয় যে, চির-অদর্শনের ভাবনা পাঠককে গ্রহিষ্ণু করে। সব দৃষ্টিই তখন ক্ষমাসুন্দর।

বাঙালি সমালোচকরা জীবিতদের চিনতে পারেন না।

জিয়া হক 

ঝাউবন শুধু কবিতায় মানায়

বৃষ্টি-উত্তর আকাশ আর জ্যোৎস্না-উত্তর আকাশের
মাঝখানে সে চেয়ার টেনে বসতে চেয়েছে একদিন ;
জঙ্গলকে সে বলতেই পারে না অরণ্য —ভালো শব্দ
ভালো পৃথিবীর সম্ভাবনা দেয় —তৈরি করে না
জুতোর দোকানে সে অভিজাত কেউ, তা প্রমাণে
ব্যস্ত থাকেনা বৌসহ ; সে যে আকাশ হয়ে যেতে চায়
বলে আকাশি প্রেম করে তা নয়,  মানুষের মুখনখ
তাকে ব্যথা দেয় উদ্বায়ী করে

Dr. B. R. Ambedkar and his progeny

শীতের পশমিনা জ্যাকেট, জওহর কোট চাপিয়ে এল বি এড কলেজের নায়কনায়িকারা। তারা যে কোনো বাংলা মেগা সিরিয়ালের কুশীলব হতে পারে। অভিষেক মালি, সচিন, রাধামাধব —সবাই পরিবারের 'বড় থেকে ছোট'  সজ্জায় ভাই হতে পারে। দেবশ্রী দি হতে পারেন স্নেহশীলা জননী গোত্রের কেউ। সংহিতা হবে বাড়ির ছোট ননদ, যে কিনা আদর-জবজবে আর কোমল-মতির। সায়ন্তিকা বসবে কোনো লাফটার চ্যালেঞ্জের জাজের ফুলো চেয়ারে। বিনা পাঞ্চেই সে দু বস্তা হেসে দিতে পারে।
ইতিহার দা যেন অনেক অনেক দূর-সম্পর্কীয় কোনো আত্মীয় ; বহু যুগ পরে দেখা হয়ে গেছে ; নির্ভুল চিনে উঠতে পারছেন না মুখগুলো ; তাই 'হাসিব কি হাসিব না' —এই দ্বন্দ্বে আড়ষ্ট হয়ে আছেন। তাঁকে বৈঠকখানায় বসানোর ব্যবস্থা হোক ভদ্র মহোদয়গণ।

এই আমাদের মহা-মহা-মহাবিদ্যালয়। অনেকে বুঝে উঠতে পারছে না, একে ভালবাসা যায় কি না আর গেলে কীভাবে!!

বাকিরা কে কী রোল পেতে পারে সাজেস্ট করতে পারো। নইলে আমাকেই পূর্ণাঙ্গ দায় লইতে হইবেক...

Essential Qabbani : Poetry


কোনো গ্রীষ্মে
সমুদ্রের কোণায় নিজেকে ছড়িয়ে
ভাবি তোমাকে,
সমুদ্রকে বলিও তোমার কথা —
কী ভাব আমার তুমি-বিষয়ক

সমুদ্র ছেড়ে দিত তার জল-তীর
তার মাছরাজি
তার ঝিনুকখোল
আর
অনুসরণ করত আমাকেই

[আরও কাব্বানি ক্রমশ-প্রকাশ্য ] 

Nizar Qabbani : an essential poet


নিজার কাব্বানির কবিতা


১.
দূর থেকে ফিরে
      যতবারই
  চুমু রাখি —ততবারই
মনে হয়, একটা
কর্মব্যস্ত চিঠি
ফেলে চললাম
      লাল এক
ডাকবাক্সে


২.

কোনো গ্রীষ্মে
সমুদ্রের কোণায় নিজেকে ছড়িয়ে
ভাবি তোমাকে,
সমুদ্রকে বলিও তোমার কথা —
কী ভাব আমার তুমি-বিষয়ক

সমুদ্র ছেড়ে দিত তার জল-তীর
তার মাছরাজি
তার ঝিনুকখোল
আর
অনুসরণ করত আমাকেই



[আরও কবিতা ক্রমপ্রকাশ্য
অনুবাদ: জিয়া হক ] 

অন্য বাংলাদেশ : অন্য কবিতা : সাইফুল ভুঁইয়া

সপ্তম বাংলাদেশ বইমেলার আজ শেষ দিন। আসর বসেছে মোহরকুঞ্জে। বাংলার একান্ত বাঁশদন্ডের ছবির ফ্লেক্স জড়ানো স্টলগুলোতে।  ভূগোলের তো স্থানান্তরণ হয় না,  সংস্কৃতির হয়। লোকজনপদের হয়। এই মেলাকে বইয়ের বলব না, বলব ভাব বন্টনের বৈঠক। তিস্তা এখানে বয় না। সচল বই আছে, জড় বইয়ের সৌজন্যে। যদিও কোনও বই 'জড়' হতে পারে না। যে বই প্রকৃতই নির্জীবনপ্রাপ্ত, সে বই প্রকৃতই কিছু সেলাইকৃত কাগজ। দুটি জীবন-গ্রন্থ পেয়েছি — শ্মশানে নদীর চিতা, চন্দ্রচূর্ণ। পড়ছি। প্রতিক্রিয়া বিস্তারিত জানাব। আরও একটু শীত হোক, শৈত্যপ্রবাহ সীমান্ত পেরিয়ে আসুক।

ভালবাসা
জিয়া হক  

I love cryptogram

গুগল প্লে স্টোরে একটা গেমিং অ্যাপ আছে — ক্রিপ্টোগ্রাম।
কাল্পনিক শত্রুদের কাল্পনিক বন্দুক দিয়ে খুনের জঙ্গিপনা, শিশুকিশোর মনের খুনকে শ্রেয় জ্ঞান করতে শেখা, নৃশংসতার মান্যতা প্রাপ্তি, কানুন 'স্ব হাতে তুলে নেওয়া' —এই সবই ঘটে খুনে গেমগুলোতে।  এটা ঠিক যে, গ্রাফিক্সের কাজে কর্মে এই গেমগুলো সিনেমার সমকক্ষ। অ্যানিমেটেড মুভির নিয়ন্ত্রণ যেন খেলোয়াড়ের হাতে। খেলোয়াড় কি এখানে খানিকটা পরিচালকের আসনে বসবার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে?  এটাও কি খানিক সত্যি যে পারিপার্শ্বের কিছুই যার কথা শোনে না, সেখানে একটা অঞ্চলের বন্দুকধারী কর্মকর্তা হয়ে ওঠা প্লেয়ারের এমপাওয়ার্ড অনুভব করার প্লেজার আছে? লোন উলফের ধারণাকেও এক্ষেত্রে মেলানো যেতে পারে।
বলতে চাই ক্রিপ্টোগ্রাম গেমটি সম্বন্ধে। এই খেলাকে কেউ বলতে পারে 'গেসিং গেম'। বর্ণ আন্দাজ করা, সেই অন্ধকারি ঢিল কুড়িয়ে শব্দের সন্ধানে বেরনো।  আসলে কিন্তু তা নয়।  আমাদের মস্তিষ্কের স্কিমা অঞ্চলের প্রক্ষালনই কার্যত ঘটে।  এটা অসত্যি নয় যে, শুরুটা অনুমান নির্ভর, কিন্তু ওইটুকুই। তারপর আপনার ভাষাজ্ঞানই আপনাকে সুপথ দেখাতে পারে। বৈষয়িক জ্ঞানগম্যিও প্রদর্শক হবে।
গেমটা কী? প্রখ্যাত মনীষীদের উক্তি উদ্ধার করাই খেলা। আছেন বুদ্ধ, অ্যারিস্টটল, শেক্সপিয়র, শেলি প্রমুখ। তবে টুইস্ট হল, উক্তিগুলো প্রায় নেই বললেই চলে। হিন্টের জায়গায় থাকবে —উক্তিটা কার ও কী বিষয়ক। আর থাকবে বিচ্ছিন্ন কয়েকটা বর্ণ। অন্তর্বর্তী বর্ণের মালা বানিয়ে শব্দ থেকে বাক্য নির্মাণই আপনার খেলোয়াড়ি প্রকল্প।
যেমন...।  আসলে উদাহরণ দেওয়াই সম্ভব নয়।  অ্যাপটা ডাইনলোড করে খেলে দেখুন। সুবিধা হল, এর সাইজ মাত্র ৩ এমবি।
আমরা তো ত্রাতা নই, কিন্তু শব্দের উদ্ধারকারী হতে কে না ভাষায় ডুব দিতে চায়।
শুভ অবগাহন।

ভালবাসা
জিয়া হক

Virgin Road


I find no one who could sit by me. I am neither a river nor I do have benches to sit upon. I still wait for a passenger who will enter this compartment and everything will look gentle. Am I bothered about 'looks'?  Am I scared of ugliness? How come I, with a mind that is not as much clean as it should be.  Body sprays take care of bodies. It is merely another tool to hide ourselves. When you say, I love you and put burden on my head, it really stinks. I know, life stinks.
Why don't you leave this dress then?
—To be true, it already has ruined my nasal competence.
—Your nose is beautiful, I must say.
—It has just been a facial accessory and I have lost my mirror the day it has lost its job.

With love
ZIA HAQUE

Dreamlessness

We are scared of the hell . We all love and want to go to the jannat . We want everything and everyone to be safe .
'why do you make your life a Jahannam ? '
How do I ?
—Why do you dream then ? 

Early riser

To live in the hearts, he left the world. I got him in my dream and asked, 'don't you think, heart is not a safe place to be in?'
He smiled. He laughed. He started crying.
It was middle of the night. It was the time for tahazzud salat.
He said, why do you get up so early?
—to perform salat.
—why do you perform salat?
—Is this just a curiosity or a question?
He said,  I just want to know.
I said, to have a good life in here after.
'This was the reason I got up early ', he said and my dream faded away.

এক আশি


ছেলেটি ভীষণ উজ্জ্বল, একদিন রবীন্দ্রনাথ
হয়ে উঠবে বলে ধারণা মফস্বলবাসীর।
সে গানের ব্যাখ্যা জানে, জানে ছবিতে
লাল রঙ মানে কী, তার জন্ম অল্প দিনই
আগের ঘটনা, তার নামই উজ্জ্বল,
উজ্জ্বল সিরিয়া কোথায় জানে, সিরিয়া
কোথায় চলেছে জানে, ডাক্তার বলেছে,
বেশিদিন বেঁচে থাকা উজ্জ্বলের জন্য হানিকর,
এই বয়সে জ্যোৎস্না রাত উপভোগ করতে শিখে
গেছে সে একা একা, নিজে নিজে,
সব সাদা আর সব কালোর মাঝখানে ঘষা অঞ্চল
সে জানে, সে তার আত্মজীবনীর নাম ভেবে রাখে,
একটা বিষয় সে জানে না, সবাই কি এই স-ব বোঝে?

জিয়া হক

Fragrance of poetry

http://m.banglatribune.com/literature/news/256921/সুকবিতার-সুগন্ধhttp://m.banglatribune.com/literature/news/256921/সুকবিতার-সুগন্ধ

Being incorrect

Being incorrect :
psychologically & grammatically
.........................
Ignore me. Do I deserve that much attention u pay? I love to be left out, I liked to be hated, I preferred to stay far from the daily celebration party of life. I had no grievance. Watching everything from a distance is bliss, a few can afford. A very few can tolerate to be ignored or to be dominated by all. It requires a healthily strong mind. One in a million possesses that extra natural or super normal psyche. A dark horse or an under dog is an 'animal' I always loved. I could have waited for the flower which bloomed lately as if I was its sole buttler. As if I was its honey bee and ambitious auctioneer. I dreamt of being a chosen one. There must be some one or some agencies that will choose me out of this massive mass. It is a vivid waiting like the boy in the short story 'araby' written by James Joyce. That waiting made his life worth living. It should not have been ended ever. Oh, poor chap!  He tried to go through the final page of the notebook. Life is like an onion, if too close you lean on it, what you only have is tears. Keeping distance is being safe.
I bought two gold fish. It taught me a lesson before dying. What was it? I pined for beauty, I longed for beauty, I craved for beauty but all I did was pining, longing and craving. I never thought if I deserved beauty at all or the beauty deserved me at all. I did not thrash the aquarium as it was a cemetery for two poor souls. Two gold fish were buried in oblivion. I did not want them to be Phenix for deconstructing the experience is painful. It rested in peace and my peace of mind rested in them. They were not poor souls but my idea was. The idea of beautifying my cage. A cage with luxury. It is like being on the top. It is like being loved and surrounded by strangers in a holy place where you cannot utter any cussing word. There always is a close circuit god like cctv or iblish watching which spot you are itching in. I was fed up with iblish. I never saw him but could sense its presence near me. It was a battle of sahi-path. I wanted him to be visible, to come for a fist but he opted the guerrilla way.

I still lurk amidst the debris. I want to be my own rescuer, with His blessings. A road ends only when you lose the wish to walk. You lose the desire to walk only when you start thinking that it is your legs that make you walk.

With love
Zia Haque

যাদুপুর লোকাল ডাউন

অনুষ্ঠান কর্মী
জিয়া হক
..............
বন্ধু দরকার কেননা সবারই
অন্তত একটি জনম্ দিন আছে
যখন সব কেক নিভে গেল তখন
একটা পুরনো বটগাছের নিচে
জিজ্ঞেস করতেই পারো, 'আপনি কি
কারো জন্যে দাঁড়িয়ে আছেন?'
সেও মুখ হয়ত তুলে বলবে, 'আজ কারও
জন্মদিন নেই?'
দুজনেই তারপর ডুবে যাবে অপরিচয়ে —
সমাজি মাধ্যমে / সোশিও সাগরে

মাঝপথে

মাঝপথে
(অনু নাটিকা)
জিয়া হক
...............

আনন্দী দল
গম্ভীরা দল
মধ্যবাসী দল
সূত্রধর
...............
সূত্রধর : নমস্কার সুধীবৃন্দ। আলাপ করিয়ে দিই।  আমার ডাইনে রয়েছে আনন্দী দল। তাদের সবেতেই আনন্দ। তাদের পা খালি নেচে বেড়ায়। ছাড়া পেলেই আর খুঁজে পাওয়া ভার। তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট জুড়ে রয়েছে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ছবি,  মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমার পোস্টার পাশে ছবি, লং জার্নি, শর্ট জার্নি, মিডিয়াম জার্নি, উচ্চ মিডিয়াম জার্নি,  নিম্ন মিডিয়াম জার্নির ছবি,  এদের চামড়া কী সুখী! দেখুন হাসছে। এমন জ্বলজ্বলে কটনের ঘেরাটোপে থাকা চামড়াকে চামড়া বলা আমার অনুচিত হচ্ছে, এটা ১০০ ভাগ খাঁটি স্কিন।

এইবার আসি আমার বাম দিকে।  এরা গম্ভীরা দল।  এদের মুখে সূর্যোদয় হয় না। সবেতেই এরা গম্ভীর। এঁরা বাহুবলী দেখে না, মোমো খায় না,  ভারত বিশ্বকাপ ক্রিকেট জিতলেও তাঁদের মুখের ন্যূনতম বিকৃতি হয় না। কপিল শর্মা, মশহুর গুলাটির যৌথ ট্যাবলেটেও এঁরা ঋষিসুলভ।  কী শান্ত,  কী সমাহিত!  তাঁরা ফেসবুকে শুধু কেঁদো ভল্লুকের ছবি শেয়ার করেন আর বিপুল ভারতের বিপুল ডাস্টবিনের কিছু ছবি।  তাঁরা লাইক-প্রত্যাশী নন। তারা না দার্শনিক, না রামগরুড়, কিন্তু কী এক অজ্ঞাত কারণে তাদের মনে তো নয়ই, সৌজন্যের মুখেও সুখ নেই।

এবার আলাপ করাই তিন নম্বর দলের সঙ্গে। এরা মধ্যবাসী। মাঝের পথ ধরে এরা হেঁটে চলেছে। এক গালে চাপড় খেলে এরা আরেকটা গাল বাড়িয়ে দেয় না আবার দূষিত গাল পেলেই কেবল চাপড়ে চলে না। এরা রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনে, হিমেশ রেশমিয়াও শোনে। চেতন ভগতকে এরা ক্ষমা করে দেয় অক্লেশে, সলমন রাশদিও বালিশের পাশে রাখে এরা।  মধু চা কিম্বা চিনি হীন চা —কোনোটাতেই এদের আপত্তি নেই।  আনন্দের গানে তারা নেচে ওঠে, বিষাদের গানে এদের মুখ হয় গম্ভীর।

পরিচয় পর্ব শেষ। এবার শুরু হবে নাটক। দেখুন না, কোনও স্ক্রিপ্ট নেই, কিন্তু তাও একটা নাটক। আসলে এদের জীবনটাই একটা ড্রামা। এনে ফেলুন না যে কোনো একটা বিষয়, দেখবেন শুরু হয়ে যাবে বিপুল বিশাল মহাভারতীয় ড্রামা।

(দর্শকদের মধ্যে বসে থাকবে নাটকদলের একজন প্রতিনিধি। তাকেই ডেকে মঞ্চে তুলবে সূত্রধর।)

এই দেখুন না, অচেনা অজানা আধারকার্ডহীন এই বালক একটা কথা শুধু এই দলের সামনে বলবে আর তাতেই কী বেঁধে যায় দেখুন।

সূত্রধর : আপনার নাম কী রাজন?
—আমার নামই তো রাজন। রাজন হালদার। আপনি কী করে জানলেন গুরুদেব?
সূত্রধর : (খানিকটা বিস্ময় ও খানিক শ্লাঘা মিশিয়ে)  সে অনেক সাধনা রাজন। তা যাক গে, এই যে তিনটে দল দেখতে পাচ্ছেন, এদের সামনে যে কোনো একটা মন্তব্য করুন প্লিজ।

—কী মন্তব্য করব গুরুদেব?
সূত্রধর : এই রে তাও বলে দিতে হবে? (মনে মনে)।  আপনার শিশুর বিষয়ে কোনো কথা বলুন হে রাজন। এরা শিশুপ্রেমিক কি না।
—যথা আজ্ঞা গুরুদেব।

রাজন ইতস্তত করে এগিয়ে যায় মঞ্চের মাঝখানে। তিনটে দলের দিকে আড়ষ্ট ভাবে তাকায়, তারপর আনন্দী দলের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার ছেলেটি বড্ড বেয়াদব।
তাই শুনে আনন্দী দল : ছেলে? হা হা হা হা হা হা
বড্ড?  হা হা হা হা হা হা হা হা হা
বেয়াদব? হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা

রাজন : আপনারা হাসছেন কেন?
তাই শুনে আনন্দী দল : আমরা? হা হা হা হা হা হা
হাসছি? হা হা হা হা হা হা
কেন? হা হা হা হা হা
নিজেরাই জানি না।  হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা

রবীন্দ্র সঙ্গীত শুরু হয়, —'বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও '
আনন্দী দল : বড্ড বড় আশা গো। হা হা হা হা হা হা হা
এসেছে? কিন্তু কার কাছে? হা হা হা হা হা হা হা হা
ডেকে লিবে নাকি তুলে লিবে অ্যা? হা হা হা হা হা হা হা

রাজন ঘাবড়ে যায়। সে এবার গম্ভীরা দলের দিকে তাকায়। বলে, আমার ছেলে জলকে বলে হিসি।
তাই শুনে গম্ভীরা দল : ছেলে?  বলে কী লোকটা!!!
জল?  ওমা সে কি!!!
হিসি?  কী ভয়ানক, কী ভয়ানক!!!

রাজন : আপনারা এত গম্ভীর কেন?
তাই শুনে গম্ভীরা দল : আমরা?  বলে কী লোকটা!!!
গম্ভীর? ওমা সে কি!!!!
কেন?  কী ভয়ানক, কী ভয়ানক!!!!
নিজেরাই জানি না।  উফ্

রবীন্দ্র সঙ্গীত শুরু হয়, —'পাগলা হাওয়া বাদল দিনে পাগল আমার মন নেচে ওঠে '
গম্ভীরা দল : হাওয়া পাগল হয়ে গেছে! কী সর্বনাশ।
বাদল দিনের হাওয়া? লাগলেই সর্দি! হচ্ছেটা কী!
নেচে উঠছে সব! হায় হায়!

সূত্রধর সামনে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ। কী ঘটবে আনুপুঙ্খ তার জানা। মজা দেখছেন —এমন একটা ভাব তাঁর মুখে।

রাজন এইবার মধ্যবাসীদের দিকে তাকায় একবার, আরেকবার দর্শকদের দিকে তাকায়। কী বলবে সে বুঝতে পারে না। তারপর মুখ ফসকে আচমকা বলে ফেলে, আমার ছেলে ফেলু মাল।
তাই শুনে মধ্যবাসী দল : আপনি এখানে বসুন প্রথমে। কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই আপনাকে।
১. আপনার ছেলের বয়স কত?
২. সে কোন ক্লাসে পড়ে?
৩. শুরু থেকেই কি সে ফেলু ছিল?
৪. কবে থেকে এমনটা ঘটল?
৫. পড়াশোনা ছাড়া আর কী করতে সে ভালবাসে?

সূত্রধর মঞ্চের সামনে এসে দাঁড়ান: আপনারা দেখছেন যে রাজন ইজ ইন সেফ হ্যান্ডস নাও। আনন্দী  ও গম্ভীরা এরাও উদ্ধার কাজে নেমে আসতেই পারে। শুধু দরকার মানসিকতার যৎসামান্য বদল।  দুশ্চিন্তা করবেন না,  এই বদলে আপনাকে শনাক্ত করতে কারোরই অসুবিধা হবে না।  আনন্দী ও গম্ভীরা —এই দুই দল এক জায়গায় মিশলেই কিন্তু  সূত্রধর ভ্যানিশ।

খেলা দেখুন।

আনন্দী দল আর গম্ভীরা দল ধীরে ধীরে একে অপরের দিকে এগিয়ে আসে। আর সূত্রধর পিছু হঠতে থাকেন।
আনন্দীদের হাসি মুখ স্বাভাবিক হয়ে আসে। গম্ভীরাদের বিষাদমুখ সহজ হয়ে আসে। তারা মধ্যবাসীদের সঙ্গে মিশে যায়। আর সূত্রধরকেও মঞ্চে খুঁজে পাওয়া যায় না।

নেপথ্যে সঙ্গীত বাজবে : আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে গাছে গাছে পাখি ডাকে
কত শোভা চারিপাশে

সমাপ্ত