সিরিয়া ও একটি বক্সিং ব্যাগ
শহরটার ল্যান্ডস্কেপ আমি হারিয়ে ফেলছিলাম । বাজার, স্কুল, আদি গঙ্গা, বন্ধুর বাড়ি, প্রেমিকা যেখানে মুখে থুতু ছুঁড়ে দিয়েছিল, চপের দোকান, সাইকেলের লিক সারানোর সেন্টার, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র, ছাপাখানা, রাধেশ্যাম বস্ত্রালয়, আসমা হোটেল, অন্নপূর্না মিষ্টান্ন ভান্ডার, পদ্মপুকুর বাস স্ট্যান্ড, পাথর-ওঠা নতুন বাইপাস, আমার নিজের বাড়ি —একে একে আমি সব গুলিয়ে ফেলছিলাম । গুলিয়ে পড়া লোকেরা গুলিয়ে ফেলে । গুলিয়ে হঠাৎ করে যায় না, তার একটা পূর্বাশ্রম থাকে । অতীত আপাতত থাক । কেননা 'অন্ধকার যুগ' থেকে শিক্ষা নিয়ে 'নতুন' যে যুগ আমরা গড়েছি তা মোটেও আলো-ভর্তি নয় । আসলে নিজের অন্ধকার ঢাকার জন্য অন্যকে অন্ধকার প্রমাণ করা জরুরি । কিন্তু আমার চিন্তা তা নয়, আমি ভাবছি যে কীভাবে আমার ঘনিষ্ঠতম শহরটার ল্যান্ডস্কেপ ফিরে পেতে পারি ।
তাপসীকে জানালাম ।
নাফিসাকে জানালাম ।
অপরূপকে জানালাম ।
আর জানালাম সুনয়নাকে ।
এখন সব এমসিকিউ । চারজনকে জানালে একজনের সাড়া মিলতে পারে । না মিললে আবার চারজন । আমি অক্লান্ত কারণ গুলিয়ে পড়া কোনও কাজের কথা নয় আর এখান থেকে আমাকে বেরিয়ে আসতেই হবে । আসতেই হবে কারণ আমার রোজগার দিয়ে আব্বা মা কে এখনও দু'জোড়া জুতো কিনে দিতে পারি নি ।
সুনয়নার গলা শুনে মনে হল আমার বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করবার মতো অবসর তার রয়েছে ।
সে বলল, আমার সঙ্গে বকখালি চল । এসব একঘেয়েমি থেকে হয় ।
সেই মুহূর্তে ওকে বিলেত-ফেরত ডাক্তারই মনে হল । যদিও সে মেটালার্জি নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে শিবপুরে । ওর বাবা রাজ্য সরকারের কোনও একটা দপ্তরের সচিব ।
আমি বললাম, আমার এমন একজনকে দরকার যে বিকালে আমার সঙ্গে হাঁটতে বেরবে, বকখালি না গেলেও অসুবিধে নেই ।
সুনয়না বলল, তুই আমাদের কসবার ফ্ল্যাটটায় মাসখানেক অজ্ঞাতবাস নে । চেনা, জানা, পরিচিত দুনিয়াটাকে একটু দূর থেকে দেখ না । আমার মনে হয় না খারাপ লাগবে ।
আমি বলি, এভাবে কি নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়?
সে বেশ মজার একটা কথা বলল । এমন কথা তার মুখে কখনও শুনি নি ।
সে বলল, দুভাবে স্বর্গে যাওয়া যায় । যদি স্বর্গে আদৌ তোর বিশ্বাস থাকে । প্রথম হল, পুণ্য করে আর দু নম্বর হল, পাপ না করে ।
সব কিছুর উত্তর সব সময় দিতে নেই । আমি সুনয়নাদের কসবার ফ্ল্যাটে আত্মগোপন করে থাকবো স্থির করে ফেলেছি ।
শুধু বললাম, সন্ধ্যাগুলো আমার সঙ্গে কাটিয়ে যাস কিন্তু ।
সে মাথা নাড়ল ।
প্রগলভ নয় এমন মেয়েদের আমি পছন্দ করি কিন্তু আমার পছন্দ কাউকে জানাই না কারণ সেটা রাষ্ট্র হয়ে গেলেই ওই রাষ্ট্রে আমার যে অ-বান্ধব শ্রেণি আছে তাদের প্রাথমিক কাজই হবে আমার পছন্দ - অপছন্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমাকে আক্রমণ করা । আক্রান্ত হতে তারা ভালোবাসে যারা আক্রান্তের রাজনীতি জিনিসটা বোঝে ভালো । আমি শুধু বুঝি না তা নয়, বুঝতে চাইও না ।
গোল বাধল অন্যত্র ।
ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়েছি, শনিবার বিকেল, সন্ধ্যার আগেই কসবায় পৌঁছতে চাই । ৩টে ২০ তে ট্রেন । পারতপক্ষে আমি বাসে চড়ি না । বাস ব্যবসায়ীরা আমার বিরুদ্ধে যান-বৈষম্যের অভিযোগ আনতেই পারে । একমাত্র মহামান্য আদালত যদি বছর দশেকের মধ্যে এই তুমুল জটিল বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটিয়ে আমাকে স্বস্তি দিতে পারে ।
বেরনোর ঠিক আগে তাপসীর ফোন ।
'তুই সেদিন কীসব বলছিলি বল তো, একটু ডিস্টার্বড ছিলাম তাই মন দিতে পারি নি । '
ওকে কসবার ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিলাম ।
সেক্টর ফাইভ থেকে ফেরবার পথে ও একবার ঘুরে যাবে ।
তাপসী কয়েক মাস হল বিয়ে করেছে । ওর বর ইস্টার্ন রেলের টিকিট পরীক্ষক । ওদের বিয়েতে আমি যাই নি । আসলে আমি মেনে নিতে পারি নি । আমি চেয়েছিলাম যে তাপসীও আমার মতো একা থাকুক । একা থাকতে গেলে এক নীল আগুন নিজের মধ্যে জ্বালিয়ে রাখতে হয়, নিভতে দেওয়া যায় না । তাপসী পারত । মনে হত, যে-আগুনে চাল সিদ্ধ হতে পারত, সেই আগুনে বিড়ি জ্বালানো হতে থাকবে । এ অপচয় ।
অপরূপের ফোনও এল ।
এখন আর কিছুই অস্বাভাবিক মনে হয় না । কিছুই আর সমাপতন নয় । নাফিসার ফোনও এসে যেতেই পারে । সে যতই আমাকে ঘৃণা করুক । প্রসঙ্গত বলবার, নাফিসা বানু অত্যন্ত মিতবাক আর সেই সঙ্গে মেধাবী । কলেজের কোনও কোনও শিক্ষক ও অ-শিক্ষক কর্মচারীও তার পাণিপ্রার্থী ছিলেন । আর নাফিসার স্বপ্নে ছিল অভিনব বিন্দ্রার মতো কেউ । ও একদিন স্বপ্ন বলে ফেলেছিল । কিন্তু মিস্টার বিন্দ্রাকে ভালবাসতে হলে আমাকে যে কেন ঘৃণা করতে হবে তার কোনও সদুত্তর পাই নি ।
অপরূপকেও কসবার ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়েছি । ও স্কুল থেকে ফেরার পথে আসবে ।
নিজেরই আধা-পরিচিত বাড়ি ছেড়ে বেরনোর সময় দেখি মা ঘুমোচ্ছে । তার পায়ে হাত রাখতেই তার ঘুম ভেঙে গেল । মা বেশ অবাক, কেননা প্রণাম আমি আগে কখনও করিনি । শ্রদ্ধা জানাতে কারো পায়ে হাত দিতে হয় —এই তত্ত্বে আমার বিশ্বাস নেই । আমার শুধু একটাই স্বপ্ন ছিল, মায়ের জন্য একটা এসি যন্ত্র কিনে আনব । এই গরমে তার ভীষণ কষ্ট হয়, ঘুমোতে পারে না ।
একজন মানুষ ঘুম থেকে তৃপ্তি নিয়ে জেগে ওঠে অথচ মা'র চোখে জল ।
আমি ও মা দুজনেই দুজনকে বললাম, কী হয়েছে?
মা বলল, একটা খারাপ স্বপ্ন কদিন আমাকে খুব জ্বালাতন করছে রে ।
আমি বললাম, সেই স্বপ্নটা আবার ফিরে এসেছে মা?
-কোন স্বপ্নটা?
আমি ধরিয়ে দিতে চাইলাম, যে-স্বপ্নে আমি মরে যাচ্ছি, সেই স্বপ্নটা ।
মা বলল, তুই কী করে বুঝলি?
আমি সত্যিই মরে যাচ্ছি মা । তুমি টের পাবে না তা কি হয়?
মা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, এসব কী বলছিস আসাদ ?
-শুধু দোয়া কোরো যেন ন্যাচারাল ডেথ হয় ।
মা তাকিয়ে আছে তার ছেলের মুখের দিকে । বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে । কেউই তার সৃষ্টি করা জিনিসের মৃত্যু দেখতে চায় না । খুব বিকৃত হলেও সে চায় জিনিসটা থাক ।
মা শুধু জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছিস বাবা?
আমি বললাম, জানলে তুমি যেতে দেবে না মা । কিন্তু যেতে আমাকে হবেই ।
মা'র চোখেমুখে সন্তান হারিয়ে ফেলবার বিন্দু বিন্দু ভয় জমে উঠেছে ।
আমি রাস্তায় নামলাম ।
পরিচিত রাস্তায় নামলে যেমন অনুভূতি হওয়া দরকার তা হচ্ছে না । এ রাস্তা আমাকে বারুইপুর রেলস্টেশন নিয়ে যাবে —এই জ্ঞানটুকু আমার সান্ত্বনা । সান্ত্বনা খুব জরুরি । অনেকে শুধু সান্ত্বনা পেতে চিকিৎসকের কাছে যায় । চিকিৎসক একটি মূর্তিমান সান্ত্বনা ।
কসবার ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি গত পঁয়তাল্লিশ মিনিট । চাবি নিতে ভুলে গেছি । সুনয়নাও আমাকে চাবিখানা দিতে ভুলে গেছে । তাপসী, অপরূপ কেউ এখনও এসে পৌঁছয় নি । দশ মিনিটের মধ্যে কেউ না এলে সন্তোষপুরে এক জ্যোতিষীর দরবারে যাবো, মনস্থির করে ফেলেছি । জ্যোতিষীদের আত্মবিশ্বাস খুব কন্টাজিয়াস । আমার এখন সেটুকুও দরকার ।
আরও মিনিট পাঁচেক পর সিড়িতে অনেক জোড়া পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল । ওরা হয়ত এসে গেছে । আমার উদভ্রান্ত মুখ দেখে তারা কী ভাববে আমি তাই-ই ভাবছি । ভালোবাসা যে পাত্র থেকেই আসুক সেটা যদি তোমাকে শীতল না করে তবে সরেজমিনে আবার দেখে নিতে হবে আগাছা কোথায় জন্মে গেল । যে কোনও সম্পর্কে নিড়ানি ব্যবহার জরুরি ।
এ আমি কাদের দেখছি এখানে? তাপসী, সুনয়না, অপরূপ তো এরা নয় । খাকি-পরা তিনজন পুলিশ ।
সবচেয়ে লম্বা পুলিশটা বলল, তোকে থানায় যেতে হবে ।
আমি বললাম, 'তোকে' বলছেন কেন, আপনি বলুন ।
সবচেয়ে মোটা পুলিশটা বলল, যতক্ষণ তুই নির্দোষ প্রমাণ না হবি ততক্ষণ আমরা তোকে আপনি বলতে পারব না ।
-কিন্তু আমার দোষ কী?
সবচেয়ে রোগা পুলিশটা বলল, থানায় না গেলে আমরা তোকে কিছু বলতে পারব না ।
অগত্যা থানা ।
লকাপে বসে আছি । জেল যদি হয় সংশোধনাগার, তাহলে লকাপকে কী বলা যাবে? ভাবছি সংশোধনাগারে যদি আমাকে পাঠানোই হয় তাহলে আমার কী কী সংশোধন হতে পারে । প্রথমেই মনে হল, মানুষকে সহজে বিশ্বাস-ভরসা করবার পাপটাই সবার আগে শোধন হবে ।
সবচেয়ে মোটা পুলিশটা লকাপের গেট খুলে দিয়ে বলল, আয়, বড়বাবু কথা বলবেন ।
গিয়ে দেখলাম সবচেয়ে রোগা পুলিশটাই বড়বাবু ।
একটা চটি - পাতলা পুস্তিকা এগিয়ে দিয়ে বড়বাবু বললেন, এটা পড় ।
একটা আরবি বর্ণপরিচয় ধরনের বই । আলিফ, বা, তা, সা, জিম, হা, খ, দাল, জাল —প্রতিটা অক্ষর প্রায় তিরিশ ফন্ট সাইজে নিউজ প্রিন্টে ছাপা ।
আমি বললাম, এসব পড়তে হবে কেন? আর আমিই বা পড়তে যাব কেন?
বড়বাবু বললেন, তুইই পড়বি কারণ এটা যা-তা বই নয় । এটা একটা সন্ত্রাসী সংগঠনের ইশতেহার । আর তুই সেই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ।
-কীভাবে?
—তোর ব্যাগে এই ধরনের কয়েকটা বই পেয়েছি আমরা ।
আমি জানি যে আমার ব্যাগে এখন নাপাম বোমা, ক্ষেপনাস্ত্র, এবং রাসায়নিক অস্ত্র পাওয়া যাবে একে একে । আর এঁদের সঙ্গে তর্ক করেও লাভ নেই ।
বিনীতভাবে বললাম, স্যার, এটা একটা আরবি বর্ণপরিচয় । এই দেখুন, এই আলিফ জবর আ, শিন জবর শা, মিম জবর মা, যেমন আমাদের বাংলায় তালব্য শ আকার শা, ম আকার মা, ঠিক তেমনি । দেখুন দুটোতেই মা আছে, কী মজার না?
সবচেয়ে লম্বা পুলিশটা বললেন, দেখলেন স্যার, বলেছিলাম, এ সব জানে, তথ্য গোপন করছে ।
পরের দিন সকালে একজন বিরাপ্পানী গোঁফের পুলিশ এসে লকাপ খুলে আমাকে বড়বাবুর সামনে নিয়ে গেলেন ।
বড়বাবু বললেন, বসুন ।
আমি বেশ অবাকই হলাম । জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার স্যার, আমাকে আপনি-আজ্ঞে করছেন?
তিনি বললেন, উই আর সরি ।
-সরি কেন স্যার?
-আপনার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই ।
আমার খুব দুঃখ হল । এটা অনৈতিক । এতে পুলিশি ব্যবস্থার মানহানি হয় ।
বললাম, স্যার, দুঃখ করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে ।
থানার বাইরে বেরিয়ে এসেছি । থানার বাইরে পৃথিবীটা সত্যিই অন্যরকম । কিন্তু এই অন্যরকম পৃথিবীটা আমি এখন চিনতে পারছি । সবাইকে চিনতে পারছি । আর অসুস্থ বোধ হচ্ছে না । আমাকে জ্যোতিষীর কাছে একবার যেতে হবেই।
জ্যোতিষী গোবর্ধন শাস্ত্রীর বাড়ির সামনে প্রচুর লোক । এত মানুষ জ্যোতিষে বিশ্বাসী! ঠিক, যখন জনপদ খুব হতাশায় ভোগে তখন এই ধরনের খোপগুলোতে ভিড় বাড়ে । জ্যোতিষীদের মতো ধৈর্য খুব অল্প প্রাণীরই থাকে । তারা ঠিক দেবতা নয়, ঠিক দৈত্যও নয় —মাঝখানে আটকে থাকা জীব —এই অবস্থানে থাকা যে কী উপভোগ্য তা সংখ্যালঘু মাত্রেই জানে ।
জানলাম যে জ্যোতিষার্ণব শ্রী গোবর্ধন শাস্ত্রী হিমালয় চলে যাচ্ছেন । ইহজগৎ থেকে কিছু দিনের জন্য মুক্তি । তাঁর কাছে হিমালয় ইহজগতের অংশই নয় ।
ভিড় ঠেলে তাঁর সামনে যেতেই তিনি বললেন, ভিজিলান্তে! কিছু ভাষা এবার ভুলে যাও বৎস ।
আমি জানি তাঁর কানে সব খবর চলে এসেছে । কীভাবে তিনি এত খবর পেয়ে যান, রাখেন আমি বুঝি না ।
আমি বললাম, আপনাকে এখন আমাদের খুব দরকার শাস্ত্রী মশাই ।
তিনি মৃদু হাসলেন । তারপর মুখময় সেই হাসিটা ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, কেউই দরকারি নয় বৎস । প্রত্যেকে শাস্তি ভোগ করে চলে যাবে । এই যেমন আমি চলে যাচ্ছি ।
আমি অবাক হলাম । কী বলছেন ইনি!
জিজ্ঞেস করলাম, আপনার অপরাধ কী শাস্ত্রীজি?
তিনি একই ভঙ্গিতে বললেন, অপরাধ আমার না, অপরাধ আমার পিতামাতার । আমাকে জন্ম দেওয়ার মহান যে অপরাধ তারা করেছিল তার শাস্তি আমাকেই ভোগ করে যেতে হবে ।
-আপনার সঙ্গে কথা বলে আজ মোটেও ভালো লাগছে না । এর একটা বিহিত করুন ।
শাস্ত্রীজি বললেন, আসাদ, আমরা সবাই মুক্তি চাই কিন্তু যে - সামান্যটুকুও আমাদের আয়ত্তাধীন তাকে মুক্তি দিতে আমরা পারি?
নাহ, এত রগরগে জীবনবোধ আমার ভালো লাগছে না । বললাম, যাই শাস্ত্রীজি । হিমালয়ে কখনও গেলে দেখা করে আসব ।
তিনি আবারও হাসলেন । এই হাসির ব্যাখ্যা সবাই জানে । এমন হাসি হাসতে সবাই পারে না ।
আমি উঠে ভিড় ঠেলে বারান্দায় এসেছি, তাঁর একজন ভক্ত ডাকলেন , গুরুজি তোমাকে ডাকছেন ।
ভক্তটি আমাকে পাশেই আরেকটা ঘরে নিয়ে গেলেন । এই ঘরে লোকজন নেই । দেওয়ালে একটা বড় ফটো টাঙানো । শাস্ত্রী মশাইয়ের যৌবনের ফটো । উলোঝুলো দাড়িগোঁফ নেই, একেবারে ক্লিন শেভেন । সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো লাগছে । চোখময় দ্রোহ ।
শাস্ত্রী মশাই ঘরে ঢুকে বললেন, আখলাক, এই টাকাটা রাখ, মায়ের জন্যে একটা এসি নিও ।
এ আবার কী? আমি তো নিজের উপার্জনে মা'কে যা কেনার কিনে দিতে চাই । এই টাকায় আমার শ্রম কোথায়? এ টাকা আমি নিতে পারব না, তা-সে যতই মহৎ কাজের জন্য দেওয়া হোক না কেন ।
বললাম, আমার কাজ আপনি কেন করে দিতে চাইছেন?
শাস্ত্রী মশাই বললেন, তুমি জিজ্ঞেস করলে না কী করে আমি জানলাম ।
-আপনার 'জানা' নিয়ে সংশয় অনেক দিন আগে থেকেই আর আমার মনে নেই । কিন্তু এ টাকা আমি নিতে পারব না ।
তিনি তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে , যদিও তাঁর দৃষ্টিতে আমি নেই তা স্পষ্ট বুঝতে পারছি, তাঁর দৃষ্টি আর মোটেও ইহজাগতিক নয়, আমার এবার যাওয়া দরকার । ভিড় ঠেলেই আবার আমাকে যেতে হবে । ভক্তদের ভিড় ।
বিকালে নিঃশব্দে বাড়িতে এসে ঢুকলাম । একটা অচেনা বেড়াল আমাদের গেটের ধারে দুটো ছানা নিয়ে বসে আছে । ধবধবে তাদের লোম । মা ঘুমাচ্ছে ।
ছাদে আমার একটা গোপন কুঠুরি আছে । আদৌ সেটা গোপন নয়, তবে ভাবতে ভালো লাগে যে এই ঘরের হদিশ কেউ জানে না । এই কক্ষটার নাম দিয়েছিলাম উত্তমাশা অন্তরীপ । তখনও বার্থালোমিউ দিয়াজ একটা স্বপ্ন । সে দস্যু না এক্সপ্লোরার তা চিন্তাতেই ছিল না ।
ওই অন্তরীপে ঢুকে আমার প্রথম কাজ হল একে একে তাপসী, সুনয়না, অপরূপকে ফোন করা ।
পুরো বিষয়টা এখনও আমার কাছে স্পষ্ট নয় । হঠাৎ সবাইকে নিজের জীবনে ডাকলাম, তারা এলোও, কিন্তু এটা কী হল তারপর?
প্রথমেই সুনয়নাকে ফোন করলাম ।
তার ফোনের সুইচ বন্ধ ।
অপরূপের ফোনের সুইচ বন্ধ ।
তাপসীর বেলাও তাই ।
কিন্তু এ থেকে কোনও সিদ্ধান্তেই আসা অনুচিত । একই সঙ্গে তিনজনই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারে । একই সঙ্গে তিনজনের ফোন বিগড়ে যেতেই পারে । তাদের প্রতি ক্ষোভ করে আমি নিজেকেও আর যন্ত্রণা দিতে চাই না । খুব স্বাভাবিক ।
বারুইপুর শহরটাকে এখন আমার স্নায়ুর মধ্যে অনুভব করতে পারছি কি না —সেটা দেখাই এখন আমার প্রাথমিক কাজ ।
জিয়া হক
ম্যাকারেল : জিয়া হক
ম্যাকারেল : জিয়া হক: পোয়েট অফ ফল আমার দাদার ঘড়ি ঘড়িটি দাদার নয় আসলে। দাদা দিয়েছিলেন আমাকে। তখন সদ্য হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালে চাকুরি পেয়েছেন। আব্বা...
বক্তৃতাসভায় যাওয়ার আগে। befor going to a seminar
বাঙালি আলুবৎ। শুধু বাঙালি কেন, হোমো সেপিয়েন্স মাত্রই পট্যাটোসম। সব তরকারিতে দরকারি। নুনও বলা যায় এই অপরিহার্যতা সম্বন্ধে। আমরা domestic help-এর জন্য শিশুকর্মি রাখব এবং child labor বিষয়ে সারস্বত তর্ক তুলব। তর্ক একটি প্রপঞ্চ। একটি illusion.। পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর তর্কানুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে, প্রয়োগ হয়নি তর্ক-ফলের। তাই এটা সারস্বত 'ধানাইপানাই' ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা বলব, অধ্যাপকের তো তর্কই পেশা। আমরা বলব, উৎপাদকের কাজ ফলানো, ব্যবহারকারীকে সব সময় উৎপাদক হতে হয় না। thinkers চিন্তা পরিবেশন করবেন, society তার usage নির্ধারণ করবে। এই হল প্রক্রিয়া। system.। অথচ এমন ব্যবস্থা আমরা চেয়েছিলাম যেখানে অ-ন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীও 'সার্বিক'ভাবে just থাকবেন। আমার শিক্ষক লিখেছেন, 'যত বেশি জানে, তত বেশি মানে'। হওয়ার তো ছিল তা-ই। কিন্তু তা কি হয়? ঘটে? প্রথমত, জ্ঞানী আক্রমণ করেন অজ্ঞানীকে, অজ্ঞানতাকে নয়। জ্ঞান কার্যত এমন এক advocacy তে নেমে পড়ে যেখানে যাবতীয় 'disobey'কে মান্যতা দেওয়ার পয়জার-judo ছকা হয়।
এখন 'knowledgeable' আর 'wise' শব্দদুটি নিয়ে মেধা-চক্র চলতে পারবে।
আপাতত বক্তৃতা সভায় যাওয়ার আগে বক্তার বাকযন্ত্রপাতিকে তুলায় তোলার আগে বক্তাকেই তুলুন না। অন্তত অব্যবহিত পরে হৃদয়-বিদার-মুক্তির জন্যে।
NB: বিবেচক নির্বাচক চাই।
জি হ
এখন 'knowledgeable' আর 'wise' শব্দদুটি নিয়ে মেধা-চক্র চলতে পারবে।
আপাতত বক্তৃতা সভায় যাওয়ার আগে বক্তার বাকযন্ত্রপাতিকে তুলায় তোলার আগে বক্তাকেই তুলুন না। অন্তত অব্যবহিত পরে হৃদয়-বিদার-মুক্তির জন্যে।
NB: বিবেচক নির্বাচক চাই।
জি হ
প্রথামাফিক ধর্মে যাদের বিশ্বাস, তাদের জন্য কিছু কথা।
এই ভোট-তপ্ত অঞ্চলে আপনি কী করবেন? তাঁদের কথাই বলছি যাঁরা উপনিষদ-সংহিতা-কুর'আন-ওল্ড টেস্টামেন্ট-হাদিস-ত্রিপিটক-গ্রন্থসাহেব-জেন্দাবেস্তা পড়েন নি, পৈত্রিক/মাত্রেয় কিছু অনুশাসনকে 'ধর্ম' বলে জানেন, স্বগৃহই উপাসনালয় যাঁদের, অনিচ্ছাবশত চাঁদা দেন ধর্মানুষ্ঠানে এবং পথিমধ্যে অনুশোচনা করেন, উত্তরণ-অযোগ্য বিপদে না পড়লে ধর্মের সাধারণত দরকার পড়ে না যাঁদের, তাঁরা কী করবেন এই ভোট-নগরে? আমরা একটি তালিকা প্রস্তুত করেছি করণীয়ের--
১। প্রচারে ধর্ম অনুষঙ্গ হয়ে এলেও আপনি মুখ ফেরান কেননা প্রচারক কার্যত আপনার বোধকে অপমান করছেন।
২। উন্নয়নের কোনো ধর্মীয় বিভাজন হয় ? মানে, প্রজাতিভিত্তিক উন্নয়ন-গ্রাফের অস্তিত্ব আছে কারণ প্রজাতিভিত্তিক ডিসক্রিমিনেশনের অস্তিত্বও রয়েছে। আপনি সবার কথা ভাবেন, কেউ শুধু আপনার কথা ভাবছেন বলে নাট্যাভিনয় করেন।
৩। রাজনৈতিকতাকে রাজনীতি দিয়ে সামলাতে হয়। আপনি শুধু শুধু কারো ধারালো বুদ্ধির সামনে আপনার করোজ্জ্বল হৃদয় পেতে দেবেন না। যে প্রীতি তাৎক্ষণিক তা আসলে 'গুডএনাফ' নয়।
জি হ
১। প্রচারে ধর্ম অনুষঙ্গ হয়ে এলেও আপনি মুখ ফেরান কেননা প্রচারক কার্যত আপনার বোধকে অপমান করছেন।
২। উন্নয়নের কোনো ধর্মীয় বিভাজন হয় ? মানে, প্রজাতিভিত্তিক উন্নয়ন-গ্রাফের অস্তিত্ব আছে কারণ প্রজাতিভিত্তিক ডিসক্রিমিনেশনের অস্তিত্বও রয়েছে। আপনি সবার কথা ভাবেন, কেউ শুধু আপনার কথা ভাবছেন বলে নাট্যাভিনয় করেন।
৩। রাজনৈতিকতাকে রাজনীতি দিয়ে সামলাতে হয়। আপনি শুধু শুধু কারো ধারালো বুদ্ধির সামনে আপনার করোজ্জ্বল হৃদয় পেতে দেবেন না। যে প্রীতি তাৎক্ষণিক তা আসলে 'গুডএনাফ' নয়।
জি হ
গাভী-খেলানো মেয়েরা অনতিদূরে শুয়ে আছে
একটি রূপাতীত
পোকা এসে বসল জংলী পাতায়।
আমি এখানে এলাম
অনেকদিন পরে।
এখানে গাভী আর
গাভী। কিছু ধেনু ষাঁড়ের দৌলত। তার জঙ্গ।
দূরে, অনেকানেক
দূরে উড়ন্ত চাকির মতো জলের ট্যাঙ্ক দেখা যায়, খাঁ খাঁ করে।
শুধু তৃণজীবীদের
ঘাস টেনে ছেঁড়ার শব্দ।
গাভী-খেলানো মেয়েরা
অনতিদূরে শুয়ে আছে।
রয়েছে অপ্রাপ্তবয়স্ক
বাবলার মরমর মূরতি।
‘আকাশ ছড়িয়ে আছে
আকাশে আকাশে’।
এই রূপ দেখবার
কোনো সঙ্গী আমার নেই।
প্রকৃতি ধীরে
ধীরে মেনোপজে চলে যাচ্ছে,
আমরা তার সবুজ-লাগা
সাদা থানখানি
৮০০ স্কোয়ার ফিট
বাড়ির টবে টবে টাঙিয়ে রাখলাম।
সে অবলা, সে অবোলা।
সূর্যোদয়ের জন্য
আপাতত সে পুব। সূর্যাস্তের জন্য ফলত তা পশ্চিম।
এতে যেমন বিজ্ঞান
নেই,
ঘাসে শুয়ে রূপের
এই যে বর্ণনাকারী সে ও প্রকৃতিপ্রেমে নেই কার্যত।
Book review : Mr. Mukherjee
এই গ্রন্থটি উপকারী। অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়ের শাক্ত-শক্তি-উপাসনা নেই শুধু, এখানে রয়েছে তাঁর জীব-দর্শন। রামকৃষ্ণের কৃষ্ণ-দেবী-আকুতির সূক্ষ্মরূপ আর মায়া ও মোক্ষ-এর উজাড়-চিন্তা এই বইয়ে আছে। এটি কি কাব্যগ্রন্থ? বোধ হয়, না। আপনি একে রাজনৈতিকতা মিশিয়ে পড়ে দেখতে পারেন, কিংবা উত্তর-আধুনিকতা, শুধু আপনার সহৃদয়তা চাইছে পংক্তিগুলি।
ইলাহি ভরসা।
ইলাহি ভরসা।
hrid+kamal
ami roj eka eka ak ak janmo dekhte pachchhi. dekhchhi mane upolobdhi korchhi. chokher dristi ar ei dristir tafat achhe boiki. ke na jane! jonnmer katha elo kano? erpar toh mrittu o asbe praaner path dhore. se appyaito noy athocho se e kendromoni hoye praanojo sovar sovapotitto korte shuru korbe. kintu janmer ato aayojon ar proyojoner kachhe proyaan basi gandar moto ruposree. ei sab asole drishyo. alnaay nil jamar buk pocket-e bwaro dnater kalo chiruni rakha, barshsr bagane gorali doba kaday dopati patar jwal jhoriye dewar motoi dhuper subaase sada thaner vetor shuye thakao drishyo boi ar kichhu noy. ei sab rup shikhlam kamal babur kachhe. tini tnar lepe dhaka baranda dekhalen. tobe gachh. kauke praay chini na. chule dimer kusum ar patilebu dile jyamon shakto khorkhore hoye jaay, akta bisesh jater ghash dekhlam.
হরফ যদিও রোমান
amar bondhu-bhagyo niye harbakhot amar borai. maa bolten, bondhu-kopali. ke noy amar bandhu. je lok karor bandhu noy, se amar bandhu. kivabe jyano jure jai. kintu jakhon haat chhartei hoy takhon maya lage samparkatir proti. kanona oikhane akdin amra dulechhinu. dada akdin ese bollo, se o naki amar dada kam, bandhui beshi. kirakam? ak manishir katha udhrito kore dada bollo, bhai holo ishwar nirdisto dost. dada chhoto theke dharmopraan. aar ami dadapraan bole dharmo valobasi. dadar oi katha besh mone dhorlo. akta bayos abodhi quotation-mogdhota kaaj kare. amuker mukhe tomuk katha bosiye bani toiri korechhi kato. ei byapare barda siddho. ar kano jani bardar bondhura amar bondhu hoye othe. amar kono bondhu kintu amar chhoto bhaier bondhu noy. ami sei bayojostho bandhobder snehei khushi chhilam. takhono bujhini je prem noy, amar abosthan snehe. strir kachheo ki sneho cheye bosbo? k jane! na, dampottye je sneho thake na mote ta noy. shabdotir modhyei toh apottyo. bstsallyo. ete ki bikriti achhe kono? lull l
গৃহস্থল কাহিনি
tin jon bandho darja boithake boslo. rannar pisir chhuti. tini buro kanthsliyay meyer bari jaben. tnar meyer ekti meye hoyechhe. futfute, sada, tultule. sishur kantha nijer purono shari diye selai korechhen tini. tnar swamir dewa nil-sobuj tnater shari theke sabcheye sundar tin ti kantha hoyechhe. reshomer jayagay jaygay khoskhose. dhare achhe, sishur lagbe na. ranna-pisi du hazar taka dhar cheyechhilen anamitrar kachhe. anamitra almirah te rakha kuri hazarer bundle theke duto 500 taka ranna pisir haate diye bollo, ar nei pisi, ektu manage kore nao.tini jodi na manage korben toh ar ke korben. ajiboner aviggyota je. baghajatin rail station-e
sadyo ma haowa meyer jonye bok phul, pui shak, chaal kumro, thankuni pata, atop chal vijiye guro kora aata, natnir jonye kantha niye canning train er apekkhay dnariye roilen. ghiye sharite sanvranto ginni lagchhe tnake.
sadyo ma haowa meyer jonye bok phul, pui shak, chaal kumro, thankuni pata, atop chal vijiye guro kora aata, natnir jonye kantha niye canning train er apekkhay dnariye roilen. ghiye sharite sanvranto ginni lagchhe tnake.
কিটি পার্টিতে বোমা
রাত এগারোটায়
সুমোহরের ফোন। রহিতাশ্ব জেগে ছিল। এই নয় যে সে জানত আজ সুমোহরের ফোন আসবে। সে রোজ এই
সময় ঘুমোতে যায় না। পড়ে। আজ যেমন পড়ছিল সাদাত হোসেন মাণ্টোর ছোটগল্পের অনুবাদ। দেজ
পাবলিশিঙের বই। প্রচ্ছদ করেছেন অনিতা রায়চৌধুরী। ১০০ ভাগ কালোর ওপর সাদায় লেখকের নাম
আর রামধনুর রঙে গ্রন্থনাম। ভারি মনোরম অথচ তীক্ষ্ণ মুখচ্ছদ। গল্পগুলির অনুবাদক রবিশংকর
বল।
সুমোহর- আমি আর
চাপ নিতে পারছিনা রাশু।
রহিতাশ্ব গেট
খুলে উঠোনের অন্ধকারে এসে দাঁড়ায়। বাইরে শিশু হিম পড়ছে। বাবার বসানো কপির পাতায় বসে
থাকা জল রাস্তার আলোয় মিহিদানার হয়ে আছে। পশ্চিমের ডাক্তার অভ্রলীনবাবুর বাড়ির দোতালার
জানালার বারান্দা ফুঁড়ে এখনও একটি বাতি জাগছে। সুমোহরের বিয়ের দিনই রোহিতাশ্ব আজকের
এই মুহূর্তের ফোনকলটির কথা জানত। তাহলে বলেনি কেন? বলেনি কারণ হয়ত সুমোহরও জানত। তাহলে
সুমোহর সরে এল না কেন ওই ‘চাপ’ থেকে? সরতে পারেনি কারণ রহিতাশ্ব যেটা জানত, তার সেই
‘জানা’ তাকে কোন পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দিল না। যে পুরুষটি নিজের হাতপা গুটিয়ে একজনকে
আগুনে যেতে দিল, সেই পুরুষটিকে আজ ওই আগুনে পোড়া ব্যক্তি কোন যুক্তিতে অভিযুক্ত করতে
এল? এল হয়ত এই ভেবে যে আগুন নেভানোর জল তখন সেই পুরুষের ছিল না বলেই চুপ ছিল। চলে যাওয়ার
পথ থাকে একটি, কিন্তু ফেরার পথ অনেক।
সুমোহর- দেবদীপ্ত
আমার কাছে সন্তান চাইছে রাশু।
অন্ধকার টিপটিপিয়ে
গায়ে পড়ছে রহিতাশ্বর। তার গায়ে গড়িয়ার নতুন শপিং প্লাজার লাল সুতির জামা। এখন গাঢ় মেরুন,
কালচেই প্রায়। সে ডান হাত উঁচিয়ে দুবার নাক মুছল। এটা অভ্যাস। যেমন তার নাকডাকা অভ্যাস।
বাম হাতে লেখা অভ্যাস। লাজুকতা অভ্যাস। লাজ কি অভ্যাস? ও তো চরিত্র, স্বভাব। কেউ কি
‘লজ্জা’—এই ব্যাপারটি অভিনয় করতে পারে যদি না তার স্বভাবে থাকে? লজ্জার অভিনয় কি একেবারে
অসম্ভব জিনিস? সে নিজেই তো লজ্জার ভান করেছে। করেনি? সেটা কি লজ্জা ছিল নাকি ভয়?
সুমোহর- তুই ভয়
পাচ্ছিস আমার গলা শুনে?
ছ’ফুটের আবছায়াটি
থতমত খেয়ে বলে, কাল প্রজেক্ট মিটিং আছে, পরে কথা হবে।
বলেই ফোন সুইচ
অফ করে দেয় রহিতাশ্ব। সে জানে তার কোন প্রজেক্ট নেই। আর জানে বলেই ফোন অন রাখতে পারল
না। আসলে সে ভীতু, নপুংসক—সুমোহরের বিয়ের দিন ওর মুখে শুনতে হয়েছিল এই বর্ণকাটাগুলো।
শঙ্খবাবুর জন্মদিন
আজ সারাদিন মৃত্যুর খবরে খবরে ভরে রইল। গতকালও ভাবিনি এমনটা হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় আলস্য যাপন করছি, আব্বা রুটিমাখনের সঙ্গে মৃত্যুসংবাদ নিয়ে ঘরে ঢুকল। আরিফের দাদু ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমি দুয়া করি তিনি জান্নাতবাসী হোন। কারণ শত্রুরও জাহান্নাম আমি চাইতে পারিনা। কেউই পারেনা বোধহয়। সে তো কল্পনাতীত ব্যথা। আমি আব্বার দিকে বিস্ফার চোখে তাকালাম না। গলার আওয়াজে সেই উদ্বেগ ছিল না। বিছানা থেকে নেমে মায়ের পেছনে দাঁড়ালাম। মা রুটি সেকছে, ছোট ছেলে বউয়ের জন্য। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে মা বলল, আরিফের দাদু মারা গেছে। এবার এটি আমার কাছে পুরনো খবর। এখনও চোখেমুখে যেটুকু বিস্ময় সে আগের বিস্ময় থেকে টানা। অনেক থিতনো। নিভু নিভু। চমকাচ্ছি না কেন? আমি কি অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছি? তা কেন হবে। তাহলে কি এই মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে উঠবার আগে আমরা আরিফের দাদুর জন্য মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছিলাম? যেভাবে, যেভাবে...লাগসই উদাহরণ পেলাম না যার সঙ্গে মিল করা যায়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০র ও বেশি। ধবধবে চুলদাড়ি। হাতে সৌখিন লাঠি। শুনেছি তাঁরা কোথাকার জমিদার ছিলেন। এই প্রথা উঠে যাবার পর মাটি বিক্রি করে এখানে চলে এসেছেন। দুই ছেলে। দুজনের সুপ্রতিষ্ঠিত। একজন রাজধানী এক্সপ্রেসের চালক। আরেকজন সদ্য রাজ্য সরকার বিদ্যুত দফতরের উচ্চ পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। বৃদ্ধর নাতি-নাতনিরাও উন্নতি করছে। ভরাট অট্টালিকা, ভরাট পরিবার। এই বাড়ির সাম্মানিক গৃহকর্তা অমৃতলোকে হাঁটলেন।
যতগুলো মৃত্যুর কথা শুনলাম সবার হয়ত এমন সুন্দর গল্প নয়। সেটাই স্বাভাবিক। অনেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে মৃতের স্মৃতিটুকু পেয়েছেন। পয়সা-সচল রাস্তায় তার বিনিময় মূল্য কানাকড়ি। হয়ত অসুস্থ কড়িও নয়, শূন্য। আকাশের মতো শূন্য নয়, কেননা ফাঁকা মানে সেখানে কিছু আছে। এর বেলা খালির অর্থ খালি।
এই গ্রামে মৃত্যু দেখা দিলে মসজিদে ঘোষণা দেওয়া হয়। মৃতের পরিচয় জানিয়ে তার শেষকৃত্যের সময় ও জায়গা জানানো হয়। শুরুটা হয় এভাবে--একটি বিশেষ ঘোষণা...(বাক্যটি দুবার)। ঘোষক ভেদে বাক্যের কিছু তারতম্য ঘটে। মুয়াজ্জেন ফকির মিয়াঁ দীর্ঘ কত বছর এই দায়িত্ব পালন করছেন তার হিসেব নেই। তারপরেও তাঁর ভুল হয়। 'মারা গিয়েছেন'-এর জায়গায় বলেন 'মারা যাবেন'। বকুনি খান। কিন্তু হজম হয় না। তাই সারবান হয় না।
এক সময় ভাবতাম, তখন সবে পৃথিবীর সঙ্গে ভাব হচ্ছে, যে ক্রমে জন্ম সেই ক্রমে মৃত্যু। মানে পাঁচ ভাই যেভাবে বড় মেজ সেজ... সেভাবে বড়র মৃত্যু, মেজর মৃত্যু, সেজর...। শিশুমনে নৈতিকতা ঈশ্বর। আসলে তার কাছে পরস্পরবিরোধী, বৈপরীত্যময় উদাহরণ কোথায়। যত বড় হয়, সে তার পূর্বজদের কৃতদার হয়ে পড়ে। এ ভবিতব্য। সে সংযম দেখে, অসংযম দেখে। সে শৃঙ্খলা দেখে, দেখে উচ্ছৃঙ্খলা। সে দান করে আনন্দ পায়, চুরি করে 'আনন্দ' পায়। আনন্দসুখভোগ। শিশুমনে নৈতিকতার মনোপলিতে একটি প্রায় হ্যাঁবাচক 'না'-এর মতো এসে দাঁড়ায় আনন্দসুখভোগ। এই প্রথম ঈশ্বরের পাশে সে আরেকজনের আঁশটে আটকে থাকা টের পায়। এ কে, কে ইনি? সে আমার আনন্দের সপক্ষে সওয়াল করে, আমার কমফোর্ট নিয়ে ভাবে, সে আপন। নৈতিকতা! আপনি বড় ভয় দেখান, অ-সুখের কথা বলেন, বড় কাঠকাঠ। তবে এটাও ঠিক আপনার থাকায় একধরনের পূর্ণতার বোধ জেগে থাকে। এটাই হয়ত ভারসাম্য। জানি না। শিশুমন তো ধীরে ধীরে কিশোরমন, ধীরে ধীরে যুবকমন। 'বৃদ্ধমন'-এর কিন্তু এই সব পর্যায়গুলোর অংশত স্মৃতি থাকেই। যাইহোক, আমরা তো জানি যে, মন শিশুকে চালায়, মন আর কিশোর তর্ক করতে করতে এগোয় আর যুবক চালায় মনকে। বৃদ্ধের বেলায় কী তা অনুমেয়--না চলে মন, না বুড়ো। এখানে কথা হল, যে যুবক সে তো মন সমেত যুবক, তাহলে সে আবার আলাদা হয়ে মনকে চালাবে কী করে? এই জিজ্ঞাসার সমাধা এভাবে হতে পারে যে, আমি ঘোড়াকে চালাইয়ের অর্থ হল, কোনো একটি বিশেষ অবস্থানে আমি ঘোড়ার ওপর জয়ী। তাই সে আমার আয়ত্ত, বশংবদ, নির্দেশানুসারী। হতেই পারে, জয়ী আর বিজিতের এই ছক পালটে গেল। তখন কিন্তু বাহন চালকের কাঁধে চড়বে। এবং চড়বেই। এতে যতটা অপারগতা জনিত অসহায়তা আছে তার চেয়ে বেশি অত্যাচারিতের প্রতিশোধ-ইচ্ছা। অর্থাৎ যা পাওয়া গেল তা হল, নৈতিকতা শিশুমনের ঈশ্বর তাই মল্লদাঙ্গাটি নেই, কর্মের ওপর ন্যায়-ভাবন গড়ায়। পরবর্তীতে এই মল্লদাঙ্গা সুন্দ-উপসুন্দের চেহারা নেয়। যত সময় যায়, নিরপেক্ষতার নৈয়ায়িকতাকেই 'অ-নৈতিক' ঠাউরে দলভুক্ত হয়ে পড়ে মন। কোন দল? সেই দল যা দৃশ্যত নীতি-যুক্তির, কার্যত স্বেচ্ছাচারের। আনন্দসুখভোগের। স্ব-ইচ্ছা বা আনন্দসুখভোগ মন্দ হবে কেন? না, ততক্ষণ মন্দ নয় যে অবধি অপরের মৌল-থাকার প্রাথমিক শর্তকে নাড়ায়। কেউ বলবেন, আমাদের সব সম্পর্ক, সামাজিকতা, প্রতিষ্ঠান তো আসলে এই প্রতিটি 'অপর'-এর মৌল থাকার ভেতরে যাতায়াতের মিউচুয়াল পথ! ঠিক, পথটির 'মিউচুয়ালিটি' থাকা পর্যন্তই। 'চেম্বার'স থেসারাস' অভিধান বলছে, মিউচুয়ালিটি শব্দের মানে হল, এ রেসিপ্রোকাল রিলেশন বিটুইন ইন্টারডিপেন্ডেন্ট এন্টিটিজ। 'রেসিপ্রোকাল' অংশে জোর।
ভাবতাম পর পর মৃত্যু হয়ে যাবে। অর্থাৎ এমন এক পর্ব আসবে যখন আমার বড়দা নেই, আমি আছি। আমি আর বড়দা নেই, আমাদের ছোট আছে। সে নেই তার স্ত্রী আছে, যেহেতু ওর চাইতে ওর স্ত্রী সামান্য সিনিয়র। কী করে বাঁচবো যেখানে বড়দা নেই! আমার তাকে প্রয়োজন নেই কিন্তু তাকে আমার প্রয়োজন। কারো কারো আত্মবিশ্বাস 'আত্ম'-এ না থেকে পরাত্মে চলে যায়। অথবা দেহ-নিরপেক্ষতায় বিরাজ করে। যেমন কর্ণের রক্ষাকবচ। কী এই রক্ষাকবচ? একটি দৈব মাদুলি? মন্ত্রপূত গাছড়া? নেহায়েতই কি তাই? ওটাই তার আত্মবিশ্বাস নয়? বিশ্বাসটা এমনই গোঁড়ামিতে পৌছেছে যে কর্ণ নিজেকে এক মনে করলেও ওই পুঁটুলি তার কাছে ডানপাশের শূন্য। ওগুলো না থাকলে তিনি এক, থাকলে একশো। আমার বড়দা আমার এক। আমি শূন্য।
যতগুলো মৃত্যুর কথা শুনলাম সবার হয়ত এমন সুন্দর গল্প নয়। সেটাই স্বাভাবিক। অনেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে মৃতের স্মৃতিটুকু পেয়েছেন। পয়সা-সচল রাস্তায় তার বিনিময় মূল্য কানাকড়ি। হয়ত অসুস্থ কড়িও নয়, শূন্য। আকাশের মতো শূন্য নয়, কেননা ফাঁকা মানে সেখানে কিছু আছে। এর বেলা খালির অর্থ খালি।
এই গ্রামে মৃত্যু দেখা দিলে মসজিদে ঘোষণা দেওয়া হয়। মৃতের পরিচয় জানিয়ে তার শেষকৃত্যের সময় ও জায়গা জানানো হয়। শুরুটা হয় এভাবে--একটি বিশেষ ঘোষণা...(বাক্যটি দুবার)। ঘোষক ভেদে বাক্যের কিছু তারতম্য ঘটে। মুয়াজ্জেন ফকির মিয়াঁ দীর্ঘ কত বছর এই দায়িত্ব পালন করছেন তার হিসেব নেই। তারপরেও তাঁর ভুল হয়। 'মারা গিয়েছেন'-এর জায়গায় বলেন 'মারা যাবেন'। বকুনি খান। কিন্তু হজম হয় না। তাই সারবান হয় না।
এক সময় ভাবতাম, তখন সবে পৃথিবীর সঙ্গে ভাব হচ্ছে, যে ক্রমে জন্ম সেই ক্রমে মৃত্যু। মানে পাঁচ ভাই যেভাবে বড় মেজ সেজ... সেভাবে বড়র মৃত্যু, মেজর মৃত্যু, সেজর...। শিশুমনে নৈতিকতা ঈশ্বর। আসলে তার কাছে পরস্পরবিরোধী, বৈপরীত্যময় উদাহরণ কোথায়। যত বড় হয়, সে তার পূর্বজদের কৃতদার হয়ে পড়ে। এ ভবিতব্য। সে সংযম দেখে, অসংযম দেখে। সে শৃঙ্খলা দেখে, দেখে উচ্ছৃঙ্খলা। সে দান করে আনন্দ পায়, চুরি করে 'আনন্দ' পায়। আনন্দসুখভোগ। শিশুমনে নৈতিকতার মনোপলিতে একটি প্রায় হ্যাঁবাচক 'না'-এর মতো এসে দাঁড়ায় আনন্দসুখভোগ। এই প্রথম ঈশ্বরের পাশে সে আরেকজনের আঁশটে আটকে থাকা টের পায়। এ কে, কে ইনি? সে আমার আনন্দের সপক্ষে সওয়াল করে, আমার কমফোর্ট নিয়ে ভাবে, সে আপন। নৈতিকতা! আপনি বড় ভয় দেখান, অ-সুখের কথা বলেন, বড় কাঠকাঠ। তবে এটাও ঠিক আপনার থাকায় একধরনের পূর্ণতার বোধ জেগে থাকে। এটাই হয়ত ভারসাম্য। জানি না। শিশুমন তো ধীরে ধীরে কিশোরমন, ধীরে ধীরে যুবকমন। 'বৃদ্ধমন'-এর কিন্তু এই সব পর্যায়গুলোর অংশত স্মৃতি থাকেই। যাইহোক, আমরা তো জানি যে, মন শিশুকে চালায়, মন আর কিশোর তর্ক করতে করতে এগোয় আর যুবক চালায় মনকে। বৃদ্ধের বেলায় কী তা অনুমেয়--না চলে মন, না বুড়ো। এখানে কথা হল, যে যুবক সে তো মন সমেত যুবক, তাহলে সে আবার আলাদা হয়ে মনকে চালাবে কী করে? এই জিজ্ঞাসার সমাধা এভাবে হতে পারে যে, আমি ঘোড়াকে চালাইয়ের অর্থ হল, কোনো একটি বিশেষ অবস্থানে আমি ঘোড়ার ওপর জয়ী। তাই সে আমার আয়ত্ত, বশংবদ, নির্দেশানুসারী। হতেই পারে, জয়ী আর বিজিতের এই ছক পালটে গেল। তখন কিন্তু বাহন চালকের কাঁধে চড়বে। এবং চড়বেই। এতে যতটা অপারগতা জনিত অসহায়তা আছে তার চেয়ে বেশি অত্যাচারিতের প্রতিশোধ-ইচ্ছা। অর্থাৎ যা পাওয়া গেল তা হল, নৈতিকতা শিশুমনের ঈশ্বর তাই মল্লদাঙ্গাটি নেই, কর্মের ওপর ন্যায়-ভাবন গড়ায়। পরবর্তীতে এই মল্লদাঙ্গা সুন্দ-উপসুন্দের চেহারা নেয়। যত সময় যায়, নিরপেক্ষতার নৈয়ায়িকতাকেই 'অ-নৈতিক' ঠাউরে দলভুক্ত হয়ে পড়ে মন। কোন দল? সেই দল যা দৃশ্যত নীতি-যুক্তির, কার্যত স্বেচ্ছাচারের। আনন্দসুখভোগের। স্ব-ইচ্ছা বা আনন্দসুখভোগ মন্দ হবে কেন? না, ততক্ষণ মন্দ নয় যে অবধি অপরের মৌল-থাকার প্রাথমিক শর্তকে নাড়ায়। কেউ বলবেন, আমাদের সব সম্পর্ক, সামাজিকতা, প্রতিষ্ঠান তো আসলে এই প্রতিটি 'অপর'-এর মৌল থাকার ভেতরে যাতায়াতের মিউচুয়াল পথ! ঠিক, পথটির 'মিউচুয়ালিটি' থাকা পর্যন্তই। 'চেম্বার'স থেসারাস' অভিধান বলছে, মিউচুয়ালিটি শব্দের মানে হল, এ রেসিপ্রোকাল রিলেশন বিটুইন ইন্টারডিপেন্ডেন্ট এন্টিটিজ। 'রেসিপ্রোকাল' অংশে জোর।
ভাবতাম পর পর মৃত্যু হয়ে যাবে। অর্থাৎ এমন এক পর্ব আসবে যখন আমার বড়দা নেই, আমি আছি। আমি আর বড়দা নেই, আমাদের ছোট আছে। সে নেই তার স্ত্রী আছে, যেহেতু ওর চাইতে ওর স্ত্রী সামান্য সিনিয়র। কী করে বাঁচবো যেখানে বড়দা নেই! আমার তাকে প্রয়োজন নেই কিন্তু তাকে আমার প্রয়োজন। কারো কারো আত্মবিশ্বাস 'আত্ম'-এ না থেকে পরাত্মে চলে যায়। অথবা দেহ-নিরপেক্ষতায় বিরাজ করে। যেমন কর্ণের রক্ষাকবচ। কী এই রক্ষাকবচ? একটি দৈব মাদুলি? মন্ত্রপূত গাছড়া? নেহায়েতই কি তাই? ওটাই তার আত্মবিশ্বাস নয়? বিশ্বাসটা এমনই গোঁড়ামিতে পৌছেছে যে কর্ণ নিজেকে এক মনে করলেও ওই পুঁটুলি তার কাছে ডানপাশের শূন্য। ওগুলো না থাকলে তিনি এক, থাকলে একশো। আমার বড়দা আমার এক। আমি শূন্য।
a doc day afternoon
a day with a witty doc. it seems funny. who is patient and who is doc. he knows medicines and me biology. he knew the trick of writing and i knew where wae the pen. thus we lived and gave birth to memories. he was mr. congenial. he was he. i was hehe. we attended seminars, fest, istema, film show. we avoided funerals, political rallies, prostitutes. he was the king. and then what was i? what? i humbly make u know i was, yes this modest dove was kingmaker.
মতি সাহেবের গপ্পো
পাশের বাড়ি থেকে আওয়াজটা এলো " হু হু হু হু হু ..."
কে গায়,কে
সেই দুই বোন কি? যমজ, চোখে পড়বার মতো সাদা , সারাদিন হিন্দি গান গায়, 'দাগাবাজ রে, দাগাবাজ...'
আমার পুরনো ঘরটার পূব জানলার ওপারে ওরা সারাদিন কি 'ভালো' থাকে । সারাদিন দাগাবাজের আশায় থাকে ।
পুতুলের মতো ফ্রক পরে, তুলোর আর নানারকম চকচকে লেস দেয়া পোশাক পরে স্কুল থেকে এসে । কোন স্কুলে পড়ে? যায় হেটে, গোলপুকুর থেকে অটো নেয়, বোধহয় ।
আটমাস ওরা এসেছে, শুধু 'এসেছে' বলা ঠিক নয়, আবির্ভাব হয়েছে বলতে হয় । পাচিলের পাশে হলুদ সর্ষের ফাঁকে মুখগুলো বাজ়নার মতো বাজে, একদিনও ওদের মাকে বাইরে দেখা যায়নি ।
আবার এলো, " হু হু হু হু..., হু হু"
বাড়িমালিক মতিসাহেবর গলা পাওয়া গেল, কে কাঁদে, নীপা না বীথি ?
কোন জবাব কেউ দেয়না। আওয়াজটা হয় । আরো সুর লাগে তাতে । ফোঁপানি এসে মেশে ।
উঁচুস্বরে দুবার সম্বোধন আসে, নীপা !
একটু থেমে, বীথি !
কারো সাড়া নেই । ডানার পালক ওঠা একটা কাক উড়ে বসল বাড়ি ঢোকার রাস্তায় । তিন বয়াম আচার শুকোচ্ছে । আম পাতিলেবু আর জলপাইয়ের । সর্ষের তেলের মধ্যে ডুবে থাকা লঙ্কাগুলো ঝলমলে লাল । লালের দিকে তাকিয়ে আছে ওটা । বয়ামের ডালা খোলা । এদিক ওদিক দেখে কাকটা বলল, "বাড়িওয়ালারা সব কোথায়, একটা আমকুসি খেতুম ।"
মতিসাহেব বলল, হুশ শ শ , এই নীপা ! হুশ শ
কাক বলল, কেন বাবা, তোমার এই কথার মানে কী ? হাত নাড়ছো দেখে মনে তো হয় আমাকে ভাগতে বলছ ।
তেরছাভাবে উঠোনটা দেখা যায় আমার ঘরের জানলা থেকে । সর্ষেগাছগুলো আবার এমনভাবে রয়েছে ফ্রেমটা ঝাপসা ।
হাতে সকালের কাগজ, চোখ পাশের বাড়ির উঠোনে, কান অদৃশ্য লোকজনে । আমার মা তক্তপোশের কাছে এসে বলল,
' দুটো বাজে, গোসল করবি কখন ?'
এই তো, এবার - বলি থতমত করে ।
'প্রথম পাতার হেডিং কী আমাকে বল'
সনিয়া গান্ধি মানে আডবানিকে মানে বিজেপির সেই...
'তোকে বলেছি না - ওবাড়ির মেয়েটাকে ভুলে যেতে, এখনো চোরের মতো নজর রাখছিস ?'
কেউ কাঁদছে তুমি কি শুনতে পাচ্ছো ?
' আমি চাইনা, তাই শুনতে পাচ্ছিনা । তোর আব্বা ফিরুক অফিস থেকে ।' মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ।
আর পেপারের আড়াল দরকার নেই । সোজা পূবদিকে তাকালাম । দেখলাম, অস্বাভাবিকরকম ঘোমটা ঝুলিয়ে একজন মহিলা আচারের কৌটোগুলোর ডালা মুড়ছেন । কাচের চুড়ির ছনছন শোনা যায় এতদূর বসেও ।
দুতলায় মতিসাহেবের গলা পাওয়া গেল, তাহলে তুমি কাঁদছিলেনা ।
না ।
তাহলে হুঁ হুঁ করছিলে কেন ?
আমার আজ খেলার লোক নেই, তাই আপনার সংগে খেলছিলাম ।
বীথি কোথায় ?
থ্রী'র আজ ম্যাথ পরীক্ষা, টুয়ের ছুটি ।
আমাকে মোরগ বানালে, তাই তো ?
ধরুন আমি আপনার মেয়ে হয়ে আজ সকালে জন্মেছি ।
এখন ওসব ধরতে টরতে পারবনা ।
না না , সহজ কথা, বলুন যে আমার কী নাম রাখতেন ?
আগে তো ভাবিনি ।
আপনি যদি আমার ছেলে হতেন আপনার কী নাম রাখতাম তা আমি কিন্তু জানি ।
কী নাম রাখতে ?
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)