কিটি পার্টিতে বোমা




রাত এগারোটায় সুমোহরের ফোন। রহিতাশ্ব জেগে ছিল। এই নয় যে সে জানত আজ সুমোহরের ফোন আসবে। সে রোজ এই সময় ঘুমোতে যায় না। পড়ে। আজ যেমন পড়ছিল সাদাত হোসেন মাণ্টোর ছোটগল্পের অনুবাদ। দেজ পাবলিশিঙের বই। প্রচ্ছদ করেছেন অনিতা রায়চৌধুরী। ১০০ ভাগ কালোর ওপর সাদায় লেখকের নাম আর রামধনুর রঙে গ্রন্থনাম। ভারি মনোরম অথচ তীক্ষ্ণ মুখচ্ছদ। গল্পগুলির অনুবাদক রবিশংকর বল।
সুমোহর- আমি আর চাপ নিতে পারছিনা রাশু।
রহিতাশ্ব গেট খুলে উঠোনের অন্ধকারে এসে দাঁড়ায়। বাইরে শিশু হিম পড়ছে। বাবার বসানো কপির পাতায় বসে থাকা জল রাস্তার আলোয় মিহিদানার হয়ে আছে। পশ্চিমের ডাক্তার অভ্রলীনবাবুর বাড়ির দোতালার জানালার বারান্দা ফুঁড়ে এখনও একটি বাতি জাগছে। সুমোহরের বিয়ের দিনই রোহিতাশ্ব আজকের এই মুহূর্তের ফোনকলটির কথা জানত। তাহলে বলেনি কেন? বলেনি কারণ হয়ত সুমোহরও জানত। তাহলে সুমোহর সরে এল না কেন ওই ‘চাপ’ থেকে? সরতে পারেনি কারণ রহিতাশ্ব যেটা জানত, তার সেই ‘জানা’ তাকে কোন পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দিল না। যে পুরুষটি নিজের হাতপা গুটিয়ে একজনকে আগুনে যেতে দিল, সেই পুরুষটিকে আজ ওই আগুনে পোড়া ব্যক্তি কোন যুক্তিতে অভিযুক্ত করতে এল? এল হয়ত এই ভেবে যে আগুন নেভানোর জল তখন সেই পুরুষের ছিল না বলেই চুপ ছিল। চলে যাওয়ার পথ থাকে একটি, কিন্তু ফেরার পথ অনেক।
সুমোহর- দেবদীপ্ত আমার কাছে সন্তান চাইছে রাশু।
অন্ধকার টিপটিপিয়ে গায়ে পড়ছে রহিতাশ্বর। তার গায়ে গড়িয়ার নতুন শপিং প্লাজার লাল সুতির জামা। এখন গাঢ় মেরুন, কালচেই প্রায়। সে ডান হাত উঁচিয়ে দুবার নাক মুছল। এটা অভ্যাস। যেমন তার নাকডাকা অভ্যাস। বাম হাতে লেখা অভ্যাস। লাজুকতা অভ্যাস। লাজ কি অভ্যাস? ও তো চরিত্র, স্বভাব। কেউ কি ‘লজ্জা’—এই ব্যাপারটি অভিনয় করতে পারে যদি না তার স্বভাবে থাকে? লজ্জার অভিনয় কি একেবারে অসম্ভব জিনিস? সে নিজেই তো লজ্জার ভান করেছে। করেনি? সেটা কি লজ্জা ছিল নাকি ভয়?
সুমোহর- তুই ভয় পাচ্ছিস আমার গলা শুনে?
ছ’ফুটের আবছায়াটি থতমত খেয়ে বলে, কাল প্রজেক্ট মিটিং আছে, পরে কথা হবে।
বলেই ফোন সুইচ অফ করে দেয় রহিতাশ্ব। সে জানে তার কোন প্রজেক্ট নেই। আর জানে বলেই ফোন অন রাখতে পারল না। আসলে সে ভীতু, নপুংসক—সুমোহরের বিয়ের দিন ওর মুখে শুনতে হয়েছিল এই বর্ণকাটাগুলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share. Comment. Subscribe