On Society : Zia Haque



ওখানে কচুগাছ ছিল তখন। ওখানে মুক্তা পাওয়া যেত।
আমি তো পেয়েছি।
তুমি পাবে না কেন? তুমি তো পাপ করোনি।
আমার যেমন কোনও পাপ নেই, তবে পাপবোধ আছে।
আমি এখন আর লিখতে পারছি না। এর কারণ, আমি চিন্তা করতে পারছি না। অতীত একটা ক্রমে সাজানো থাকে স্মৃতিতে। সেই জন্য আমরা বলতে পারি কোন ঘটনার পরে কোন ঘটনা ঘটেছে। সেই স্মৃতি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লে তা থেকে ঘটনা উদ্ধার করা শক্ত। যেভাবে আমি আপাতত উদ্ধার করতে পারছি না। হয়ত পরে পারব। নিশ্চিত নই, নিশ্চিন্ত নই। কেন চিন্তা করতে পারছি না, এই নিয়েই এখন আমার দুশ্চিন্তা। আমার সমস্যা আমি কাউকে বলতে পারি না পাছে লোকে আমাকে অস্বাভাবিক ভাবে। এই সমাজকে ছোটবেলা থেকেই ভয় পাই, তারপরও যেখানে যাই সেখানে গিয়ে দেখি সেখানেও একটা সমাজ আছে। আমি সমাজকে ত্যাগ করলেও সমাজ আমাকে ত্যাগ করে না। এর মানে এই নয় যে সমাজ কত উদার, কত মহান, কত গ্রহিষ্ণু। এর মানে হল সমাজ এমন একটা পেট যার সব সময় খাদ্য দরকার। আমি সমাজকে পরিপাক করতে পারি না, সমাজই আমাকে পরিপাক করে ছিবড়ে করে ফেলে। এবার ভাবতে বসি, সমাজ আমাকে কী কী দিয়েছে? আমি সমাজকে কী কী দিয়েছি? ভেবে দেখেছি, সমাজ আমাকে অস্বীকৃতি দিয়েছে এবং আমিও সমাজকে অস্বীকৃতি দিয়েছি। সে আমাকে ঘেন্না করেছে, আমি তাকে ঘেন্না করেছি। এ কথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে সমাজ মানে কয়েকজন মানুষ নয়। তবে এই বড় সমাজের মধ্যে আমি কয়েকজনকে নিয়ে একটা ছোট সমাজ বানিয়ে নিতে চেয়েছি। কিন্তু এই ছোট সমাজটাও সময় বিশেষে বড় সমাজের মতো আচরণ করে আর তখনই তাকে ভয় পেয়ে পরিত্যাগ করে বসি। সমাজ একটা বাজার ছাড়া আর কিছু নয়। প্রয়োজন হলে যাও তার কাছে, তারপর ফিরে এসো। আর বাজারের ধর্ম অনুযায়ী সমাজও যে তোমাকে ঠকাবে, সেই বিষয়ে প্রস্তুত থাকা দরকার। মানুষ সামাজিক জন্তু —এই কথাটা একটু বাড়াবাড়ি। মানুষের সঙ্গ দরকার, সঙ্গী দরকার, তার মানে এই নয় যে তার সমাজ দরকার। এই সমাজের ধর্মই হল নিজেকে ক্রমাগত বাড়াতে বাড়াতে এগিয়ে চলা, সব কিছু গ্রাস করা আর এইভাবে একদিন প্রসব বেদনা ওঠে সমাজের এবং জন্ম হয় রাষ্ট্রের। আমাদের আরও সংগঠিতভাবে পরিপাক করার জন্য। তোমাকে ছিবড়ে করে ফেলবার জন্য।  আমার ছিবড়ে হয়ে যেতে আপত্তি আছে। কেননা আমি জানি, আমি ওই কচুপাতার মতো যে নোংরা জলকেও আলোকবিন্দু করে মাটিতে ঝরিয়ে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share. Comment. Subscribe