যে ওড়ে ওড়ার যন্ত্রণায়

দুর্গের মাথার চুলের হাওয়ায় আর কাউকে মনে পড়ে না
এখানে বড়ো গ্রীষ্মকাল, রঙিন বক ওড়ে
আমাদের পালকের ঘরবাড়ি ইতস্তত
শান্তি আসে? শান্তি আসে ধীর পদক্ষেপে?
যে যুবকের বুক থেকে চটি খুলে গেছে, তার দিকে চাও
যে জঙ্গলে কোনো গাছ গুঞ্জন করে না সারা বর্ষব্যাপী
উপহারে বাঘ কেন তাকে দিতে চাও?
সমস্ত জলই ঘোলা আর মাছও স্বাদমুক্ত, টক
দুর্গের মাথায় তাই চুল নেই, ঘাসের ভেতরে মৃত বক

জিয়া হক 

হাত একটি প্রতিষ্ঠান


এই হাতে মলিনতা বাসা বেঁধে আছে, এই হাত ধরো
স্বর্গ থেকে দূর, তবে যাত্রাপথ ভালো
সোনালি অক্ষরে নাম চায় যারা কিছু গড়ে
গড় রক্ষা করে
ওই হাত অমলিন, ওই হাতে নেই কোনো সংক্রামক ব্যাধি
স্বর্গ থেকে ওই হাত এক হাত দূরে
স্নান করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে যেতে আঙুলেই বসো
অনেক আঙুর, পিত্তলমূর্তি, মাংস ও প্রজাপতি ছুঁয়েছে ওই হাত
উহাকেই প্রতিষ্ঠা, ধরো, অবলম্বন করো

জিয়া হক
চিত্রী: অনুরিতা দাস 

দিন বুঝি শেষ


আমার এই নাট্যালয়, যতটুকু কাব্যরঙ্গ আমি, শেষ হল বুঝি?
গন্তব্য দেখা যায় বুঝি?
অতিপক্ব ফল থেকে দানার ধারনাগুলি ঝরে এলো বুঝি?
জানালা, শার্সি সব একে একে নিভে গেল বুঝি?
কান্নার পর্যাপ্ত কয়লা অবশিষ্ট রইল না বুঝি?

কিছুই বুঝি না
লেজকাটা, পা-হীন কুকুরটি হাঁটিতেছে শুধু
আমার এই পুঁটলি ও না-বোঝার পাশে

আমাদের ছায়া মিলে যায় 

আত্মীয়তাবোধ


........................................
নিঝুম গাছ, পাতা থেকে সবুজ সরিয়ে রাখে পাশে
লোক আসে, তার কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নেই, পাপী
যেহেতু দুপুর, আলো পড়ে অনেক উপর থেকে নিচে
ভেঙে যায়,
সংরক্ষা করে রাখে কেউ, পরিপাকা হয়ে ওঠে ফল
এই সুবিন্যস্ত মাঠে নেই গরু কিংবা কৃষকের মেয়ে
                                                     এত গাছ
                                                     তবু যেন
                                                     গাছগুলি
                                                     একা
পাতা সব করে রব, তবু যেন
আত্মীয়তা তাহাদের নাই
নদীদের প্রিয় খাদ্য গ্রাম, তারপরও
লোককথা তাদের অজানা 

প্রসূন মজুমদার-এর তিনটি কবিতা

 এই অসময়

 এখন স্তিমিত সব সুর।  ঝর্ণাধারা। নিরীহ যাপন।

বন ও বন্ধন থেকে রক্ত ঝরে। কাদামাখা মাথা

লাফ দিয়ে শিকারি সিংহের দ্রুততায়

দিগন্তে মিলায়। শুধু দুটো একটা ম্লান, প্রবীণ ভিখারি

তুখোড় স্পর্ধায় একা গোটা একটা দেশ হয়ে রাস্তায় দাঁড়াল।

এরও পরে সামান্য বাতির মতো আলো, ঝরে থাকে

সজিনার ডালে ও পাতায়, আলো নয় শুঁয়োপোকা

ধীরে ধীরে ছালের ভিতরে সরে যায়।

প্রজাপতি হবে ভেবে অপেক্ষায়, অলস প্রহর

দেখে নিম্নে শৃগালেরা অন্ধকারে সন্দিগ্ধ আঁচড়

রেখে চলে গেছে জাহান্নমে, বাকি যা, রুধির

মাটির সোঁদায় মিশে, অতিকায় ভবিতব্য, ঘ্রাণঘর্মে মিশে যাচ্ছে, ধীর।



পলাতক

কোথাও যাওয়ার নেই তাই যে তোমার ছায়ায় রয়েছে

অন্য কোন ছায়া পেলে মুহূর্তেই মিলাবে ছায়ায়।

বাস্তবতা সে যেমন অনুপুঙ্খ জানে, তুমিও তেমনই।

আমি শুধু ছায়ার ওপারে কবন্ধ - কৌতুক খুঁড়ে, সরে সরে যাই।


ছায়াবাজি দেখি, হাসি , ধীরে ধীরে ভারকেন্দ্রহীন মৃত নক্ষত্রে হারাই।



অন্ধকার অথবা নির্জন

এক সূর্য অন্ধকার, নদীর আড়ালে ভেসে যায়।

ভাঁটার বিবর্ণ স্রোত। দুটো একটা মৃতদেহ।

পাখির বা গাছের অথবা অসুখী কোন বিষণ্ণ পাতার।

এই দৃশ্য বাস্তবিক, কল্প মনে হয়।

সূর্য - এর আড়ালে নদী বয়ে ভেসে যাওয়ার সময়

রুপোলি আগুন জ্বলে, কিছুটা চিতার মতো, কিছু বিপ্লবের।

শব্দের ভিতরে যত নির্জনতা, আলস্য ভাঙার ঢং-এ

দিগন্তে ছড়ায়।




গৃহদাহের দিনে : জিয়া হক



চেয়েছি রাত্রি, রাত্রির কাছে সমতার সাদা পদ্য
ফুটেছিল চাঁদ, আকাশের গায়ে, ডুবে গেল ইহা সদ্য
শিশু ও কুকুর, খুকুর কান্না বনজঙ্গলে বাজে
পরিবার নিয়ে পারিবারিকতার যাবতীয় হীন কাজে—
ব্যস্ত ছিলাম, এই কথা বলে জলে ডুব দিল তারা
ভাসতে ভাসতে বাড়িগৃহডোর বদলে ফেলেছি পাড়া
কুশপুতুলের আগুনে আমার মুখ পুড়ে যায় দেখি
সহজ লোকের দিন ফুরোবার সূর্য ডুবল সখী?

ভুল লোক


কাহিনিতে মজে গিয়েছি। যে-কোনও গল্পই এখন আকর্ষণ করছে। এই গল্পগুলো কিন্তু আমি যে পাঠ করছি, এমনটা নয়। মূলত শুনছি। আন্তর্জাল বিস্তর সুবিধা প্রদান করেছে। তার নির্মিত কারাকক্ষে কার্যত বন্দি। এই অবস্থানটাই একটা ঘেমো দুঃস্বপ্ন। অথচ এই ঘুমের মশারি কেটে বেরিয়ে আসতেও পারছি না। কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার। কী সংশোধন হল আমার, বুঝতে পারি না। বরং এক শোধন অযোগ্য কূপের বাসিন্দা হয়ে পড়ছি ক্রমাগত। ভেবেছিলাম, কাহিনির জন্মস্থান হবে আমার মন ও মানস। বাস্তবতা ভাবনার সহযোগী নয়, বলা বাহুল্য। নিজেই একটা মুখরোচক কাহিনি হয়ে উঠছি। কারও সান্ধ্যবাসরে দুঃখ-উদযাপনের বিষয় হতে পেরে ভেঙে পড়ছি। দুঃখের আলোচনাবিহীন আসর বরফশূন্য মেরুপ্রদেশের মতোই অপূর্ণ। চাই না গলে যাক তুষারপর্বত, কিন্তু আমাদের কর্মপরিকল্পনা আমাদের চিন্তার সত্যতার সাক্ষ্য দেয় না। কাঠের পালঙ্কে বসে বৃক্ষছেদনের বিরোধিতা করা এই মানুষ চোখের জল ফেলাকে আনুষ্ঠানিক করে তুলেছে। ধ্যান আত্মার জন্য নয়, চিত্রগ্রাহক যন্ত্রের জন্যে। প্রসাধন-প্রীতিই প্রমাণ করে আমরা নিজেদের স্বাভাবিকতাকে কতটা ঘেন্না করি। বাক্যেরও প্রসাধন হয়। তাই ভুল লোককে নির্বাচন করে ফেলি। 

মাইনর-নারী


সসম্মানে পরগাছা ফুটেছিল দেহে
অশত্থ, বটের ছায়া আর কিছু অনুকম্পা বেয়ে
এসেছিল দুর্দিনের দিন
ফুলভক্ত গণরাশি আগাছায় ভক্তিবিহীন
ফলত সে পুড়ে যায় উনুনের ঘৃণার আলোকে
আহত কি হয় কেউ ঘাসেদের মৃতজীব-শোকে?
বন্ধ হয়ে যাবে তবে হিতবাদী পাঠশালার ঘর?
নেমে যেতে থাকে শুধু সামাজিক, একা জলস্তর

ভগন্দরের দেশ : জিয়া হক

আমার মনকে একটু করে সরল বাক্যে ভরিয়া দিন
ও পরিপন্থাবিহীন
মনোরোগী সুন্দর, —বলে না কেউ, যাদেরকে চিনি
গবাদিপশুসম প্রাণী
ভাবে এই লোকালয়, লোকেদের সুশীল বন্দর
মুখ যার কবেকার জীর্ণ ভগন্দর
জামা ওড়ে পাল তোলা গাড়ির মতোই
এ লুডো সাপের দেশ,
                        বিরল নারীর মতো বিরল দড়িগাছা, মই
উঠে সব যেতে চায়, —দূরদেশে, অন্তত বাস
টার্মিনাসের পাশে
ঘাসেরা কাব্যে থাকে, পিচ ঢাকা দিয়ে যায় ঘাসে

Under twelve : Zia Haque


Oh dear God
Open the secret window of mind
Mind that seeks answers to many questions
Kept as mystery
We want our caged birds to sing the way we sing
We confine the winged creature and
Talk about our freedom
Sing like trees who are perplexed but still
Draw the shadows around her
So that we can befool the birds 

একটি কবিতা : জিয়া হক


খুকুর দেশ
...............
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গান
পার হয় দেবতারা, —
               ভক্তি ও শিষ্যের সন্ধান
কখন সন্ধ্যা হবে, লম্ফ কখন যাবে ভেসে
জেগে উঠবে পড়শিবাড়ি, —
                            শাস্ত্রের প্রাচীনা সন্ত্রাসে
ভোর হল, দোর খোলো, খুকু,—খুকুমনি
তোমাকে আদর করবে
           আপেল বাগানের অভুক্ত সেনানী

এসেছে শকুন আর নক্ষত্রখচিত সেনাপতি
সে চায় দেশপ্রেম,
                      এক-শয্যা জাতিসেবা —রতি 

তুমি, তুমি ও গোরস্থান : জিয়া হকের কবিতা


যদিও তোমার গল্পকে চুমু খাই, অবলম্বন করি
খসে যাও, ভেসে যাও, এমনভাবে হারাও যে
পুরনো পকেটগুলো ধোঁয়া আর বরফ ছাড়া
কিছুই রাখে না।
তোমার গল্পে যে-চরিত্র পেয়ে থাকি আমি,
যে-বাক্য নির্দেশ করে আমাকে
ও যে কবরস্থল, আমি তার পাশ দিয়ে যেতে ভয় পাই
ভালোবাসা চৈত্রের শেষে সাড়ে তিন হাত প্রাসাদ দিয়েছে

যেমন লেখাও তেমন লিখি


আমার ছলনা যাত্রা কোন পথে হারালো এখন
বন্য প্রাণী দেখে বুঝি এমন অরণ্য আমি চাই
বহুদিন ধরে
গাভী শুধু নয়, রাখালের গর্ধভেরও পরিচর্যা হবে
সকল পশুই ওই কচি ঘাস সুপ্রভাতে চায়
ঘাসে হোক সুবিচার,
            রাজা কি নামাজপাঠে গেছে?
দেশের প্রয়াণ যদি আসন্ন হয়, তবে
তুমি কি সেনানী হবে? ভ্রমণে পাকিস্তান যাবে?
সব দেশ বাদ রেখে এই যে পাকিস্তানই উল্লিখিত হল,
প্রিয় দেশ এভাবে বলেছে,
আমি তা অতিক্রম করে দেশদ্রোহী হবো?
আমার মায়ের রান্না করা মাংসের প্রশংসা করো আর
আমার মাংসও তুমি সমিতিতে চাও, আমি জানি

দেখো, লিখতে চাই তো কিছু প্রেম, কিছু প্রাকৃতিক কথা
রাষ্ট্র আমাকে দিয়ে কী সব লেখায়, দেখো তুমি
সহিংস তপোবন কারিগর গড়ে,—রাজধানী, প্রত্যন্ত অঞ্চলে
এসো সখী, মন খারাপ, চুমু দাও, ভালোবাসা নাও,
হে আমার পাখি, দুলে ওঠো দ্বৈত পুষ্প —
এইসব লিখতে পারি না।
এও জানা গেছে, ভালোবাসা কুমড়োর দানার মতো
ছড়িয়ে দিতে হবে, এতে শান্তি, গণহত্যা চুপ হয়ে যাবে

কৃষিকাজই করি যদি সুসময়ে বৃষ্টি এসে যেতো

জিয়া হক 

প্রতিটি মানুষ আলো দেয় : জিয়া হক

আহা, আজ, আহা, সেই পাখিটা কোনো পেয়ারা গাছের মরণোন্মুখ ডাল থেকে ডাকছে।
তিনি নিকটেই আছেন।
ওই পাখি আমার সব স্মৃতি নিয়ে ফিরে এসেছে।
তিনিও এসেছেন। আরোগ্য এসেছে।
ছাদ আমাকে নক্ষত্র দেখতে বাধা দেয়, তবু আমি
একটা ছাদ চেয়েছি, চেয়েছি ছাদের তলায় সব জীব।

সূর্য নয় শুধু, প্রতিটি মানুষ আলো দেয়।
প্রতিটি লোকের চারপাশে প্রত্যেকে ক্রমান্বয়ে ঘোরে।
গ্রহাণুপুঞ্জের কথা জানি?
নবদ্বীপ থেকে ধরো এই আমার ঘর,—
এর মধ্যে কত লোক, লোকান্তর, মৃত্যুজন্মবিয়ে
এসবই ছায়াপথ, আমার বিশ্বাস

ভিজিয়ে দেয়, স্পর্শ করে না


এই বৃষ্টি আমাকে স্পর্শ করছে না।
শুধু ভাবছি, আমি কী হতে চাই।
কী হতে চাই, চেয়েছিলাম
পুরনো হাতে আমি মুখ রাখি
নিজের আশ্রয় আমি নিজে হব, ভাবি
শ্রোতা হয়ে জীবন কাটাবো, ভাবিনি কখনও
অপরাধী আমার কাছে তথ্য রাখে, অপরাধ —
সেও কিছু রেখে যায় তথ্যসদৃশ
রটে গেছে আমি ভালো লোহার সিন্দুক
নীরবতা পালনেই আমি ভালো অভ্যস্ত আছি
বাদামের, মুড়ির, চায়ের বিনিময়ে আমি
অশ্রাব্য গানও শুনে যেতে পারি
কেননা আমি ভুলে গেছি, কী হতে চাই,—
কথা ছিল কী কী হওয়ার
বৃষ্টি তাই ঝরে পড়া তীরবেগে জল
ভিজিয়ে দেয়, স্পর্শ করে না 

শেখো : আফগান কবিতা : আবদুল্লাহ


পাপিয়ার মতো সুরারোপিত বাক্য বলতে শেখো,
ফুল ও পাপিয়ার নীরব আলাপ কীভাবে ঘটে, শেখো
মাথা ঢেকে ফুলের অরণ্য থেকে বের হও,
শিখে নাও হাওয়ার ভেতরে বাতাসের চলাচল।
কতদিন বাঁচবে পাখির মতো, পাখি হয়ে?
ওড়া শেখো মুক্ত ঈগলের মতো।
গতি বাড়াও, যাত্রীদল যাতে গতিপ্রাপ্ত হয় সে ব্যবস্থা করো,
গন্তব্য কাছেই।
শেখো ঘন্টাধ্বনি কীভাবে নিজেকে বিস্তার করে।
ও ফুর্তিবাজ আফগান! আরাম ছাড়ো, কষ্টকে নাও,
যে দেশ তোমার তার ব্যথা ও শোকে কান্নাকাটি শেখো।

আবদুল্লাহ
৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ 

আত্মা-হনন


জীবন তখন অসভ্য
তাই
গাধার পিঠে ছুটছিলাম
আর
গাধাই এখন অসুস্থ
তাই
অন্য পশু —জয় শ্রী রাম

কৃষি আমার ভিত্তি
তবে
গোটা কতক পাশ ছিল
আর
গোবর গাদায় কী ফুল
যেন
আমার দেহ ভাসছিল



মফস্বলের গীতি


এই রাতে কি গান বাজবে বালিশের তীরে?
ঢেউ এসে লাগবে গতরে? এখন বসন্ত।
গাছে গাছে পাখি আর মাঠে মাঠে মানুষ।
এই মফস্বলেও দূর থেকে গ্রামীণ গাজনগান আসে।
গায়ক চিনি না, সুরে বড় ব্যথা।
এ তবে গাজন নয়, অন্য কোনো গান।
শুনি আর ভাবি যে মানুষ অনুভূতি দেশ থেকে আলো আর পায় না এখন, সে এক বিপুল অপচয়।
এমন রাত্রে পাহারাদার পথিক কুকুরের পায়ের আওয়াজও কী সঙ্গীতময়! পোকা ডাকছে।
এই সুর রবীন্দ্রসঙ্গীতের চেয়ে আপাতত প্রিয়।
ডাকে আমার চিঠি পাঠাও —দাবি করো কেন?
যদি তুমি ঠিক ঠিক দাও, আমি তবে ঠিক ঠিক পাব।
এত রাতে ডাক বিভাগ খোলা?
পিওনের বিবাহ হয়নি?
তাকে কিছু লিখতে দাও বিছানা, বালিশে 

শিশুরা লেখে মঙ্গলকাব্য আর


ছায়া ছায়া রৌদ্র জুড়ে আমি বাছুর ও মানুষের খেলা দেখেছি।
কেউই হারে না রৌদ্রে, সবাই পুরস্কৃত, ধাতব সম্মান—
নেই, সংগঠক, বাচিকেরা নেই
থেকে যায় সূর্য, ঘাস, মানুষ, বাছুর
তেরো কিংবা একুশ সাল এভাবেই অভিনীত হয়
নায়কেরা, নায়কের মাংসপেশী কম, চোখদুটো ভালো
দুধ দোয় নায়িকারা আর দুগ্ধ দেয়
মঙ্গলকাব্য লেখেন শিশুরা,
আকাশ সাদা, বিদেশী বা স্বদেশীর বিমানেরা নেই
গ্রামীণ ভিক্ষু গায় পাকস্থলী, মুদ্রার গান
কবিতা নয়, —জীবন এমত
জীবন পেরিয়ে গেল চিত্রশিল্পকলা
লেখক পেরিয়ে যায় জৈবনিক টিলা ও নাটক
পান নাই এমন পানীয়?
গাভী নাম্নী বালিকারা দেশে প্রার্থনীয়
গাছেরাই ছায়া ফেলে, ছায়া তার পায় কি কখনও?

ভোরের ভ্রম : একটি মনোলগ


শব্দ ছিল আশ্রয়। এখন আশ্রয়হীনতায় ভুগছি।
কেউ পাশে নেই, এমনকি শব্দও। জানি না কীভাবে তাকে ফিরে পাব। আতিথেয়তায় আমি ত্রুটি রাখতে চাইনি কিন্তু কোথাও বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। অজ্ঞাতসারে। নাকি জ্ঞানত?
বাক্য নির্মাণ করার চেয়ে তাজমহল নির্মাণ করা সহজ যেন এখন। অথচ শোক পালনের জন্য কারও মৃত্যু কামনা করিনি কখনও। সৌধ গড়ার রাজকীয় গর্ব রাখিনি, এ তো অসত্য নয়। সত্য কী, তা এখন ব্যাখ্যা করতে অক্ষম। যা বিশ্বাসযোগ্য, তা-ই? বিজ্ঞান যা বলে, তা? জনসমক্ষে যা প্রমাণিত, তা কি? জানি না। ভীতি অমূলক বলে রাস্তায় ফেলে দেব তাও ভাবতে পারি না, পথিকের কথা চিন্তা হয়।
কবিতার ঈশ্বর একে কীভাবে গ্রহণ করবে তার পারিষদ জানে। 

শ্রী মজুমদারের কবিতা : আবহমান বাংলা কবিতার ছায়া

রাত্রিচর বুনোচাঁদ বইয়ে আপনি কোন কোন বাঙালি কবিকে পেতে পারেন :
১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. জীবনানন্দ দাশ
৩. সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
৪. শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৫. বিনয় মজুমদার
৬. জয় গোস্বামী
তাহলে কবি কোথায় রইলেন? তাঁর নিজস্বতা, স্বর —কোথায়? এ তবে কি একটি প্রভাবলিপ্ত বই? তা নয়। গ্রন্থটি 'ইউনিক' কেননা কবি সবাইকে আত্মস্থ করেছেন, সবার কাছে আত্মসমর্পণ করেননি সর্বৈব। পূর্বজরা অনুষঙ্গ হয়ে উপস্থিত হয়েছেন, কবিকে স্থানান্তরিত করে দিয়ে নয়। মহাজনদের খোঁজ যেখানে শেষ হয়েছিল, এ বই সেখান থেকে শুরু। এই যে অনুষঙ্গ, তাও খুবই বাইরের। এর কারণ কবির নিজস্ব একটি কাব্যদর্শন আছে এবং দর্শন আছে। পাঠককে অতৃপ্ত করে রাখবে। ভাবাবে। এখানেই কবি সফল।

বিস্তারিত ক্রমশ প্রকাশ্য... 

পালোয়াড় বা খেলোয়ান


ফাঁকা জ্যোষ্ঠীর
ন্যাকা ষষ্ঠীর
মনে
যুদ্ধু দিয়েছে দোলা
ভরা চৈত্রের
শুভ মৈত্রের
বাড়ি
সদর দরজা খোলা
খালি মাঘেদের
পালে বাঘেদের
আসা
যেন অভ্যাস সর্বৈব
আহা ফাল্গুন
দুটো মাল খুন
তাই
রাত জেগে লাশ বইবো 

Test


বক্তব্য নেই অথচ বক্তা

কোনো বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই কেন?
 আমি যে একেবারে অজ্ঞ, তা নয়।
আমার যে মত প্রকাশের ইচ্ছা নেই, তা নয়।
তাহলে কি চিন্তা করতেই আমার সমস্যা?
গুছিয়ে ভাবতে অক্ষম কি আমি?
এমনটা কি অনেক মানুষের হয়ে থাকে?
 বলতে চেয়েও বলতে না পারা —এ ভারি দুঃখের।
আমাকে প্রতি মুহূর্তে জ্ঞানীর ভান করে যেতে হয়।
 ডিগ্রি আছে মানে লোকে ভাবে আমার জ্ঞানও আছে।
এ ভাবনা অমূলক নয়, কিন্তু আমি যে এর ব্যতিক্রম তা বোঝাতে না পেরে অভিনয়কেই পন্থা হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছে।
 এ ভীষণ যন্ত্রণার। সবাই বুঝবে না।
ফলত সমব্যথীর সংখ্যা হতাশাজনকভাবে কম।
 সমব্যথী পেলে ব্যথার উপশম হয়।
ব্যথার নিষ্ক্রমন ঘটে, অন্যথায় তা জমে পাহাড় তৈরি হয় আর সেই পাহাড়ের পাদদেশে নিয়মিত পাথরের ধাক্কা খায় ব্যথিত মানুষটি। 

যুদ্ধখেলার নিয়ম



ভারতীয় বঙ্গবাসী গোলপুকুরী আমি
চলেছি দূর, যুদ্ধ হবে, যেখানে রাজধানী
রাজার বাড়ি প্রায় দেখি না এমনও উৎসবে
তোমার সঙ্গে আমার নাকি ভীষণ যুদ্ধ হবে
কবর খোঁড়ার লোক এসেছে,
                                      উপরতলার লোক
মায়ের মতো নরম গলা, মাতৃসম চোখ
কফিন থেকে ধূপের গন্ধ, আমার জন্য আসে
উপরতলার লোক এসেছে, স্বনামধন্য হাসে
আকাশপথে রাত্রি নামে আত্মীয়তার মতো
বাড়ির বাইরে যুদ্ধ হাঁটে, রাতের ইতস্তত
মনের ভেতর জল জমেছে, আজকে লড়াই থাক
আমি এমন অলস এবং এমনই বুড়বাক —
কাকতাড়ুয়া ভাবতে ভাবতে কাকতালীয় দিনে
নিজের সঙ্গে যোদ্ধা নামাই, নিজেকে না চিনে

বাবা ও রাজা


রাজার পাট ও পোশাক আমাকে দিও না
হরিণ শিকারে মায়া হয়,
মায়া হলে রানি নয়, বাবাকে মনে পড়ে
বাবা সমুদ্রে একা যেতে নিষেধ করেছে
সমুদ্র অতিকায় জীব,
আকাশও এখানে ভেঙে পড়ে
নতুন জামার মতো নতুন রাজা চাই এবার পুজোয়
রাজস্ব যে নেবে, আর রাজস্ব যে নিজেও খানিক দেবে
দুইখানি শাল ছাড়া যার আর কিছুই থাকবে না
তিনি এক অতিকায় জীব —দানাশস্য মজুত রাখে না

ঘুম না এলে কী করবেন : ৫টি মজার টিপস


ঘুম একটা সাধনা। আর আমরা কেউই তেমন সাধক নই। ধ্বংসকামী আমরা কেননা আমরাই ঘুমকে নানাভাবে নষ্টের আয়োজন করি । কী করবেন এই নির্ঘুম রাতে?

১. উঠোনে যান। উঠোন না থাকলে রাস্তায় চলে যান। কুকুরদের সঙ্গে গল্প করুন। তারা ভালো শ্রোতা।

২. বাথরুমে গিয়ে বসুন। একা এই ঘরে কী করবেন সিদ্ধান্ত নিন।

 ৩. সিগারেট খাবেন না। পান চিবোন। গোপাল ৬০ ও সুরভি জর্দা ব্যবহার করতে পারেন। গায়ে সুগন্ধী মেখে পান খেতে বসবেন তাতে নিদ্রাদেবী আকৃষ্ট হন।

৪. জোকস পাঠ করুন যেভাবে লোক ধর্মগ্রন্থ পড়ে থাকে। গান ধরবেন না, গানের দেবীর সঙ্গে ঘুমের দেবীর সম্পর্ক ভালো না।

৫. চিৎ হয়ে থাকুন। উপুড় হবেন না। চুলে ৩ বার হাত বুলোন। শুধু মাথার চুলেই কিন্তু। 

বসন্তে জানালা কেন বন্ধ রাখবেন? ৫টি মজার টিপস



১. আপনি কি রূপমুগ্ধ? যে-কোনও সৌন্দর্য আপনাকে ডুবিয়ে চুবিয়ে ধরে? শামসুর রাহমানের চেয়ে আল মাহমুদ ভালো লাগে? তাহলে সাবধান।

২. ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনেন টেলর সুইফটের বদলে? আলো জ্বালিয়ে ঘুমান? পিশাচে ভয়? বসন্ত, সরি টু সে, আপনার জন্য নয়।

৩. বিছানায় বই রাখেন? সস্তার চপ্পল পরেন? মশারি ঘেন্না করেন? মুসুর ডাল ভালোবাসেন? বসন্তে তাহলে জানালা বন্ধ রাখুন।

৪. বসন্তকে জানালা নয়, বারান্দা থেকে দেখুন। দোতলার ছাদ না থাকলে গাছের তলায় গিয়ে দুপুরে বসুন।

৫. কবিতা হুট করে ঢুকে পড়তে পারে জানালা দিয়ে। নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব আপনারই। কবিতা আপনাকে লোভ দেখিয়ে খ্যাতির কিনারে নিয়ে যাবে। ফিরতে পারবেন না, পথ নেই। 

বসন্ত এসে গেছে : আফগান কবিতা : রিশাদ


......................
বসন্ত এসেছে, এসো, শোকগুলো ভাঙো ;
দেখতে দাও শক্তির প্রতি পদক্ষেপ।
সুন্দর আর কলা ছাড়া এ আর কি ;
বিবিধ আকারে সে আসে।
কতদিন শুয়ে থাকবে অশক্ত শরীরে, কতদিন আর?
বেচারা জাহিদ! চোখ খোলো।
বেরিয়ে পড়ো, এখানে নতুন উৎসব ;
কুঁড়ির কলার ছিঁড়ে ফেলার কথা।
চোখের পাতায় সুন্দর তার সতর্ক পা রাখে ;
শিশিরের দোলনা ছেড়ে যায় ফুলপুষ্পদল।
সাকি! পানপাত্রে কিছু জল ঢেলে দাও
যাতে অচেতন হয়ে পড়ি একটি পলকে।
শুঁয়োপোকা!  সুসংবাদ তোমার জন্য, বাগানে এসো
দুর্ভাগা রূপও বেঁচেবর্তে গেছে।
রিশাদ! গতি কি থাকে সূক্ষ্মতার?
ফুলের চিবুক চুম্বন করে মৃদুমন্দ হাওয়া।


ভাবানুবাদ 
জিয়া হক 

প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে কী করবে? ৭টি পরামর্শ


পরীক্ষা কক্ষে প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শুধু নার্ভাসই বোধ করে না, তারা খানিকটা হতভম্ব হয়ে পড়ে। এটা অস্বাভাবিক নয়। মানসিক চাপ এর মুখ্য কারণ। প্রস্তুতি ভালো থাকার পরও এমনটা হতে পারে। কীভাবে শুরু বা শেষ করা যেতে পারে তা নিম্নে বলা হল :

১. প্রথমে উত্তরপত্রে মার্জিনের কাজ সেরে রাখতে হবে। এই শুরুর কাজটি যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলা উচিত। এবং মার্জিন টানতে টানতে মনকে প্রস্তুত করে ফেলতে হবে।

২. এটা ভাবতে হবে যে প্রশ্ন যেমনই হোক, সবটা শেষ করতে হবে। কোনও প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না।

৩. সব উত্তর সম মানের হয় না। তাই এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই।

৪. প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার আগে আকাশপাতাল ভাবার অবকাশ নেই। শুধু মনে রাখতে হবে, তুমি যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি রাখো নির্দিষ্ট বিষয়ে।

৫. মনকে যতটা সম্ভব শান্ত ও দৃঢ় রাখা দরকার। অযথা দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।

৬. সব প্রশ্নই যে জানা থাকবে তা না ও হতে পারে। তবে যেগুলো সবচেয়ে ভালো ভাবে তৈরি সেগুলো আগে লিখতে হবে।

৭. নিজেকে বলো — তুমিই সেরা। তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ক্ষতি করতে পারে। সেদিকে খেয়াল রেখো।

শুভেচ্ছা
হিমালয় বসু
এম. এ, বি. এড (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)


পরীক্ষার্থী বন্ধুদের সাফল্য কামনা করলে তাদের সঙ্গে শেয়ার করে নাও।

সাফল্য কামনা করি।