বাবা ও রাজা


রাজার পাট ও পোশাক আমাকে দিও না
হরিণ শিকারে মায়া হয়,
মায়া হলে রানি নয়, বাবাকে মনে পড়ে
বাবা সমুদ্রে একা যেতে নিষেধ করেছে
সমুদ্র অতিকায় জীব,
আকাশও এখানে ভেঙে পড়ে
নতুন জামার মতো নতুন রাজা চাই এবার পুজোয়
রাজস্ব যে নেবে, আর রাজস্ব যে নিজেও খানিক দেবে
দুইখানি শাল ছাড়া যার আর কিছুই থাকবে না
তিনি এক অতিকায় জীব —দানাশস্য মজুত রাখে না

ঘুম না এলে কী করবেন : ৫টি মজার টিপস


ঘুম একটা সাধনা। আর আমরা কেউই তেমন সাধক নই। ধ্বংসকামী আমরা কেননা আমরাই ঘুমকে নানাভাবে নষ্টের আয়োজন করি । কী করবেন এই নির্ঘুম রাতে?

১. উঠোনে যান। উঠোন না থাকলে রাস্তায় চলে যান। কুকুরদের সঙ্গে গল্প করুন। তারা ভালো শ্রোতা।

২. বাথরুমে গিয়ে বসুন। একা এই ঘরে কী করবেন সিদ্ধান্ত নিন।

 ৩. সিগারেট খাবেন না। পান চিবোন। গোপাল ৬০ ও সুরভি জর্দা ব্যবহার করতে পারেন। গায়ে সুগন্ধী মেখে পান খেতে বসবেন তাতে নিদ্রাদেবী আকৃষ্ট হন।

৪. জোকস পাঠ করুন যেভাবে লোক ধর্মগ্রন্থ পড়ে থাকে। গান ধরবেন না, গানের দেবীর সঙ্গে ঘুমের দেবীর সম্পর্ক ভালো না।

৫. চিৎ হয়ে থাকুন। উপুড় হবেন না। চুলে ৩ বার হাত বুলোন। শুধু মাথার চুলেই কিন্তু। 

বসন্তে জানালা কেন বন্ধ রাখবেন? ৫টি মজার টিপস



১. আপনি কি রূপমুগ্ধ? যে-কোনও সৌন্দর্য আপনাকে ডুবিয়ে চুবিয়ে ধরে? শামসুর রাহমানের চেয়ে আল মাহমুদ ভালো লাগে? তাহলে সাবধান।

২. ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনেন টেলর সুইফটের বদলে? আলো জ্বালিয়ে ঘুমান? পিশাচে ভয়? বসন্ত, সরি টু সে, আপনার জন্য নয়।

৩. বিছানায় বই রাখেন? সস্তার চপ্পল পরেন? মশারি ঘেন্না করেন? মুসুর ডাল ভালোবাসেন? বসন্তে তাহলে জানালা বন্ধ রাখুন।

৪. বসন্তকে জানালা নয়, বারান্দা থেকে দেখুন। দোতলার ছাদ না থাকলে গাছের তলায় গিয়ে দুপুরে বসুন।

৫. কবিতা হুট করে ঢুকে পড়তে পারে জানালা দিয়ে। নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব আপনারই। কবিতা আপনাকে লোভ দেখিয়ে খ্যাতির কিনারে নিয়ে যাবে। ফিরতে পারবেন না, পথ নেই। 

বসন্ত এসে গেছে : আফগান কবিতা : রিশাদ


......................
বসন্ত এসেছে, এসো, শোকগুলো ভাঙো ;
দেখতে দাও শক্তির প্রতি পদক্ষেপ।
সুন্দর আর কলা ছাড়া এ আর কি ;
বিবিধ আকারে সে আসে।
কতদিন শুয়ে থাকবে অশক্ত শরীরে, কতদিন আর?
বেচারা জাহিদ! চোখ খোলো।
বেরিয়ে পড়ো, এখানে নতুন উৎসব ;
কুঁড়ির কলার ছিঁড়ে ফেলার কথা।
চোখের পাতায় সুন্দর তার সতর্ক পা রাখে ;
শিশিরের দোলনা ছেড়ে যায় ফুলপুষ্পদল।
সাকি! পানপাত্রে কিছু জল ঢেলে দাও
যাতে অচেতন হয়ে পড়ি একটি পলকে।
শুঁয়োপোকা!  সুসংবাদ তোমার জন্য, বাগানে এসো
দুর্ভাগা রূপও বেঁচেবর্তে গেছে।
রিশাদ! গতি কি থাকে সূক্ষ্মতার?
ফুলের চিবুক চুম্বন করে মৃদুমন্দ হাওয়া।


ভাবানুবাদ 
জিয়া হক 

প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে কী করবে? ৭টি পরামর্শ


পরীক্ষা কক্ষে প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শুধু নার্ভাসই বোধ করে না, তারা খানিকটা হতভম্ব হয়ে পড়ে। এটা অস্বাভাবিক নয়। মানসিক চাপ এর মুখ্য কারণ। প্রস্তুতি ভালো থাকার পরও এমনটা হতে পারে। কীভাবে শুরু বা শেষ করা যেতে পারে তা নিম্নে বলা হল :

১. প্রথমে উত্তরপত্রে মার্জিনের কাজ সেরে রাখতে হবে। এই শুরুর কাজটি যত দ্রুত সম্ভব করে ফেলা উচিত। এবং মার্জিন টানতে টানতে মনকে প্রস্তুত করে ফেলতে হবে।

২. এটা ভাবতে হবে যে প্রশ্ন যেমনই হোক, সবটা শেষ করতে হবে। কোনও প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না।

৩. সব উত্তর সম মানের হয় না। তাই এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই।

৪. প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার আগে আকাশপাতাল ভাবার অবকাশ নেই। শুধু মনে রাখতে হবে, তুমি যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি রাখো নির্দিষ্ট বিষয়ে।

৫. মনকে যতটা সম্ভব শান্ত ও দৃঢ় রাখা দরকার। অযথা দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।

৬. সব প্রশ্নই যে জানা থাকবে তা না ও হতে পারে। তবে যেগুলো সবচেয়ে ভালো ভাবে তৈরি সেগুলো আগে লিখতে হবে।

৭. নিজেকে বলো — তুমিই সেরা। তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ক্ষতি করতে পারে। সেদিকে খেয়াল রেখো।

শুভেচ্ছা
হিমালয় বসু
এম. এ, বি. এড (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)


পরীক্ষার্থী বন্ধুদের সাফল্য কামনা করলে তাদের সঙ্গে শেয়ার করে নাও।

সাফল্য কামনা করি। 

পরীক্ষার আগে কীভাবে প্রস্তুতি নেবে : ১১টি পরামর্শ


সামনে যখন 'বড়ো' পরীক্ষা তখন নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করা দরকার তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বেশ আতান্তরে পড়ে। কী পড়া হবে, কতটা পড়া হবে, কতক্ষণ পড়া হবে —এগুলি ভাবনার। পরীক্ষার সময় জীবনযাপনই বা কেমন হবে, সে বিষয়ে সঠিক ধারণার বিশেষ অভাব দেখা যায়। নিম্নে কয়েকটি শেষ মুহূর্তের পরামর্শ দেওয়া হল :

১. দিনের মধ্যে খেলাধুলোর জন্য একটা সময় বা একটু সময় বরাদ্দ রাখতেই হবে।

২. খুব সকালে যে ঘুম থেকে উঠতে হবে তার কোনও মানে নেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে পড়ায় পর্যাপ্ত ও যথেষ্ট, যথাযথ সময় দেওয়া হচ্ছে কি না।

৩. যা পড়া হয়ে গেল তা যেন ভেবে দেখা হয়। অর্থাৎ যা পড়া হল সেটা স্মরণ করার চেষ্টা করাটা ভীষণ জরুরি।

৪. বন্ধুদের সঙ্গে যা পড়লে তা আলোচনা করতে পারলে খুব ভালো হয়।

৫. অতিরিক্ত সাজেশন করা অনুচিত। সাজেশন হল বাজি ধরার মতো। যারা সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনা করে তারা রীতিমতো ভয়-শঙ্কিত থাকে, যেটা পরোক্ষে ক্ষতি করে।

৬. পড়ার সঙ্গে লেখাটাও সমান জরুরি। লিখতে গেলেই বোঝা যাবে পড়ায় কতখানি ফাঁক রয়ে গেছে। লিখলে মূল পরীক্ষার একটা রিহার্সাল বা মহড়া হয়ে যায়। উত্তরপত্র কীভাবে সুন্দর করে তোলা যেতে পারে সে বিষয়ে নানা 'আইডিয়া' আসে।

৭. সহায়িকা বই পড়লেও মূল পুস্তক নিখুঁত ভাবে পড়ে রাখা দরকার।

৮. সাহিত্যের ক্ষেত্রে কবিতা অংশের সারাংশ বা সারমর্ম যেন স্পষ্ট ভাবে জানা থাকে।

৯. অযথা দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। তাতে প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

১০. জীবনযাপনে বিনোদনের জন্য  ডিজিটাল মিডিয়ামের ব্যবহার কমিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো বেশ কার্যকর।

১১. খেয়াল রাখবে, এটা শেষ অবধি একটি পরীক্ষাই। জীবন মরণের প্রশ্ন নয়। নিজেকে সহজ ও সাবলীল রাখতে পারলে আখেরে তোমারই লাভ।

শুভেচ্ছা নাও
হিমালয় বসু
এম. এ, বি. এড (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)

পরীক্ষার্থী বন্ধুদের সাফল্য কামনা করলে তাদেরকেও লিঙ্কটি শেয়ার করে পড়ার সুযোগ করে দাও।

ধন্যবাদ

Saraswati : oh girl!

ঘটনাচক্রে ছাত্রী যারা, নীচে বসে টিভি দেখে।
জানি, তারা পাঠে নয়, দর্শনে মনোযোগী, তথ্য তাই বলে।
বিজ্ঞাপন, কার্টুন, সিরিয়াল সিরিজে তাদের
হাসি ছড়িয়ে পড়ে উঠে আসছে এত দূর উপরে।
এক বকধার্মিকের গান শোনা গেল,
শোনা গেল ছাত্রীজীবনের খলখল হাসি।
ব্যাকরণ বোঝে না তারা, আসনপিঁড়ি দিয়ে বসতে শিখেছে।
মনে পড়ে, যখন ছাত্র ছিলাম
শীতের এমন দিনে হাওয়া দিত খুব আর
মাছি বসত ব্যাকরণে এসে। সন্ধিচুক্তি ছাড়া। 

Epiphany : drooping soul

আমার এখন একজন সঙ্গী দরকার।
 তার লিঙ্গ-পরিচয় নিয়ে চিন্তিত নই।
মানুষ হলেই হবে।
কথা বলতে চাই।
কী কথা, জানি না, তবে কথা।
শব্দ, বাক্য, কথা।
বিমানের আওয়াজ শুনতে পাই আর মনে হয় কত লোক উড়ে গেল।
পোকাদের চিৎকার আসে, ভাবি কবরস্থান বেশি দূরে নয়। মশারির মধ্যে কোনও শত্রু নেই।
পক্ষপাতদুষ্ট নই।
বিছানার চাদরে যে ফুলের বাগিচা আমি তাতে কতকাল আগে হারিয়ে গিয়েছি।
 এখানে খননকারী আসে না।
আমাকে খুঁজে পেতো।
এত রাতে আলো জ্বলে কেন?
বিদ্যুৎ কত মূল্যবান জানো?
মূল্য যাকে দিতে হয় সে অন্ধকারে হায়নাতাড়িত গৃহপালিত পাখিশাবকের মতো বসে থাকে।
 দেখেছি, নিজেকে প্রকাশ করতে গিয়ে মধ্যযুগ বরাবর কবিদের মুখ মনে পড়ে।
 ছবি নেই, তবু মনে পড়ে।
 প্রকাশ্যে যাবার আগে ধুতিখানি ধুয়ে নিতে হয়।
 মুর্খের মতো কথা বলি, সমস্ত সভায় মুর্খের স্বর্গে বাস করি, গড়ি। ওই যে আদি গঙ্গা বয়ে যেতে চেয়েও পারে না,
তার উপত্যকা ধরে শোকপ্রকাশ করবার মতো সঙ্গী আমি চাই এত রাতে।
চাকুরিরত, তুমি চাও প্রতিদিন রবিবার হবে।
রবিবার আমাকে সোম বা শুক্রবারের অনুভূতি দেয়।
প্রতিটি দিন আমার পাথর,
 প্রতিটি পাথর আমার আয়না,
প্রতিটি আয়নায় হাত কেটে যায়,
 সময় কাটে না।
সময় কাটার মতো বিদ্যুৎ আমার নেই আর বিদ্যুৎ খুব দামি। ছাদের মাথায় বুদ্ধি থাকে না বলে সেখানে দাঁড়াই, বলি, সূর্য আর কত দূর?
১টা ৪০ তো বাজে।
 বলি, সূর্যাস্ত, আর কত দূরে?
 সময় উল্লেখ করেছি।
 স্থাননাম নেই এমন কোথাও নিয়ে চলো।
 দারোগারা আসে,
মানুষ আসে না। 

বঙ্গ ১৯ : ছোটগল্প : জিয়া হক


...............................................................................


কুকুরটা আমার পিছনে এসে বসল।
বললাম, বিস্কুট খাবেন?
সে অলসভাবে তাকালো একবার।
আপনি আমার পোষ্য হবেন?
আমি কিন্তু স্বদেশি, আপত্তি নেই তো?
আপনার দেশ-পরিচয় নিয়ে আমার চিন্তা নেই।
একটা মাছি উড়ছিল কুকুরটার কানের পাশে।
কুকুরটা বলল, মাছিদের আমি পছন্দ করি না। আপনার বাড়ি মাছিমুক্ত তো?
মাছি যে নেই তা নয়, তবে উপদ্রব নেই।
একজন চানাচুর বিক্রেতা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, দাদা, এখন কটা বাজে?
১১টা ৭।
ডিজিটাল ঘড়ির এই সুবিধা। সেকেন্ডের হিসেবও বলে দেওয়া যায়।
সে বলল, চানাচুর খাবেন?
বললাম, পয়সা নেই।
আপনাকে এমনিতেই আমি খাওয়াতে চাই।
কিন্তু কেন?
আপনার মুখে একটা মায়া আছে। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।
আপনার মন ভালো হয়ে গেছে তাহলে?
আজ আমার মন এমনিতেই ভালো।
তাহলে ব্যবসায় ক্ষতি করছেন কেন?
আমি সকাল ১১টায় রাসমাঠের এক কোণে ভাঙা জমিদার বাড়ির পোড়ো পিলারের উপর বসে আছি। দূরে মেন রোড। অটো, বাস, ভ্যান, রিক্সা যাচ্ছে। ট্যাক্সি কম। মফস্বল শহর তো। সব লোক কাজে বেরিয়ে পড়েছে। আকাশে মেঘ। আজ সোমবার।
চানাচুরওয়ালা এক ঠোঙা চানাচুর দিয়ে চলে যেতে আমি পিছনে শুয়ে থাকা কুকুরটাকে জিজ্ঞেস করলাম, চানাচুর খাবেন?
চোখ বুজেই সে বলল, না, আমি গায়ে পড়া লোকের দেওয়া কিছু খাই না। আপনিও খাবেন না। খেলে এখনই ঘুমিয়ে পড়বেন।
কী বলছেন?
আমার দায়িত্ব পালন করলাম, বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
কিন্তু আমার কাছে যে পয়সা নেই সেটা তো ওকে বললাম, তারপরও সে আমাকে...
বিশ্বাস না হয়, মেন রোডে গিয়ে দেখুন লোকটা আড়াল থেকে আপনাকে লক্ষ রাখছে।
সত্যিই তাই।
মেন রোডে গিয়ে দেখলাম একটা চা দোকানের আড়ালে সে বসে আছে। আমি আসছি দেখে হাওয়ায় মিশে গেল।
ফিরে গিয়ে কুকুরটাকে ধন্যবাদ জানাতে সে বলল, আমি আর আপনার সঙ্গে নেই, চলি।
ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
আপনি আমাকে অবিশ্বাস করেছেন। আমি খানিকটা ঈশ্বরের মতো। অবিশ্বাসীদের সঙ্গে থাকতে পারি না।
কিন্তু ঈশ্বর তো ক্ষমাশীলও?
ঈশ্বর ক্ষমাশীল কিন্তু আমি তো ঈশ্বর নই। ঈশ্বরের মতো, তবে আমি একটা কুকুরই।
মাছিটাকে মাথায় নিয়ে সে চলে গেল।
মনটা ভারী হয়ে গেল। মেঘ আরও কালো হয়ে এসেছে। রাসমাঠের পাশের বিশাল পুকুরে ঢেউ উঠছে। দূরে সেগুন কাঠ চেরাইয়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আওয়াজ শুনে আমি কাঠের নাম বলে দিতে পারি। তবে মনটা বড়ো খারাপ। একটা উড়োজাহাজ যাচ্ছে।
মেন রোডে উঠতেই বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। আমার ছাতা নেই। জ্বরে পড়বার মতো সৌভাগ্যও নেই।
একজন পথচারী আচমকা কানের কাছে মুখ এনে বললেন, দাদা, ছাতায় আসুন।
নীল ঢাউস ছাতা তার মাথায়। পোশাক দেখে বেশ ভদ্রলোক বলেই মনে হয়। পায়ে খাঁটি চামড়ার মোকাসিনা জুতো। চামড়ার জুতো দেখলে আমার একটা ছাল ছাড়ানো খাশির কথা মনে পড়ে। আকাশ থেকে কারা যেন সমবেতভাবে ঢিল ছুঁড়ছে। সাড়ে এগারোটা বাজে।
লোকটা বললেন, এই বৃষ্টিতে ভেজে নাকি কেউ?
আমি বললাম, আমাদের মতো লোকেদের কোনো বৃষ্টিতেই ভেজা উচিত নয়।
আমরা চৌমাথার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে একটা হ্যারিকেনের দোকান আছে। একজন প্রায় অন্ধ লোক সেই দোকানটা চালায়।
লোকটা জিজ্ঞেস করলেন, কী করা হয় আপনার?
ভাববাচ্যে কথা বলার দরকার নেই, আমি কিছু করি না, বললাম।
কথা শুনে আপনাকে শিক্ষিত বলেই মনে হয়। সত্যিই আপনি কিছু করেন না?
মিথ্যে কিছু করি কী করে!
একটা কাজ আছে, করবেন?
কী কাজ? তবে শুনে রাখুন, আজ আমার মনটা বড়ো খারাপ।
মন খারাপ? সে তো হতেই পারে। তবে কাজটা করলে আপনার ভালো লাগবে বলেই মনে হয়।
কী কাজ বলুন তো।
আমার একটাই ছেলে। হোলি ক্রসে নাইনে পড়ে। তাকে পড়াবেন। সপ্তায় দু দিন। পারবেন?
আচ্ছা, আমাকেই কেন এই দায়িত্ব দিতে চান বলুন তো?
বললে বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, আপনার মুখে একটা মায়া আছে।
বৃষ্টি কাটতে কাটতে একটা অটো আমাদের পাশে এসে গতি কমিয়ে দিল। আমার হাতে একটা কার্ড গুঁজে দিয়ে প্রায় লাফিয়ে অটোতে উঠে পড়লেন লোকটা।
তার ছাতাটা আমার হাতে।
কার্ডে চোখ বুলিয়ে দেখলাম, ভদ্রলোকের নাম নাসির হোসেন। পেশা ওকালতি। বাড়ি ফুলতলা। ফোন নম্বরও দেওয়া আছে।
পকেটে রাখলাম কাগজের টুকরোটা।
মুখে কীভাবে মায়া গজায়? কেমন দেখতে হয় মায়াময় মুখ? আয়নায় কি নিজেকে দেখব একবার? মায়ার সঙ্গে কি দয়ার কোনো সম্পর্ক আছে?
প্রায় অন্ধ লোকটা অসংখ্য হ্যারিকেন ঝুলিয়ে দোকানে বসে আছে। এই যুগে কে কেনে হ্যারিকেন? প্রৌঢ় দোকান মালিক দিনরাত একটা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রাখে দোকানের ঠিক সামনেটায়। লোকটার চোখ আর বেশিদিন নেই, দৃষ্টি দেখলেই বোঝা যায়।
দোকানের নাম : আলো।
বৃষ্টি পড়ছেই।


ফুলতলা
বিরাট বাড়ি। প্রাসাদই বলা চলে। বাড়ির উঠোনে দেশি বিদেশি ফুল লতাপাতা গাছের মধ্যে কয়েকটা পাতাবাহার আর বোগেনভেলিয়াকে চিনতে পারলাম। দশটা মতো টব উল্টে রাখা আছে। এখন মঙ্গলবার। সন্ধ্যাকাল।
নাসের হোসেন আমাকে চিনতে পেরে তার বই-ঠাসা বসার ঘরে নিয়ে গিয়ে ছেলেকে ডাকলেন, আফরোজ!
কেউ এলো না।
তিনি আবার ডাকলেন, আফরোজ, নীচে এসো, তোমার মাস্টারমশাই এসেছেন।
আপনি কী পড়াবেন? এবার আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন ভদ্রলোক।
কখনও তো কিছু পড়াইনি কাউকে, নির্বিকার ভাবে বললাম।
এমন একজনকেই খুঁজছিলাম যিনি জ্ঞানের দিক থেকে ভার্জিন।
জ্ঞানের আবার কুমারত্ব আছে এই প্রথম জানলাম, ধন্যবাদ, আমি দুই হাতের তালু একবার ঘষলাম নিঃশব্দে।
জ্ঞান আপনি কখনও কাউকে দান করেননি, মানে তার হাইমেন এখনও অটুট। তা যাক গে, আপনি নিশ্চয়ই এম এ?
এম এ, বি এড, কিন্তু বুঝলেন কী করে?
আমি একজন সফল অ্যাডভোকেট, মানুষ নিয়ে আমার ব্যবসা, বুঝি। তাছাড়া আপনার মুখে...
একটা মায়া আছে, তাই তো?
একটু চুপ করে থেকে তিনি বললেন, আমি বুঝতে পারছি মুখে মায়া থাকাটাকে আপনি ভালো চোখে দেখছেন না, কিন্তু আমি একে ইতিবাচক গুণ বলেই ধরছি।
চা এলো। কাচের কাপে লাল রঙা চা। কাচ খুব ঠুনকো বলেই কাচ আমাকে টানে। যারা কাচের কাপে চা খায় তারা স্বচ্ছ না ও হতে পারে। লাওপালার পিরিচ বলে মনে হল।
আফরোজ ইতিমধ্যে দোতলা থেকে নেমে এসে দরজার পাশে দাঁড়িয়েছে।
আফরোজের উচ্চতা বেশি নয়, গোল মুখ, গৌর বর্ণ, চিনাদের মতো চুল সোজা সোজা।
সে ঘরে ঢুকতেই নাসের হোসেন বললেন, বাবা, তোমার লেখা সেই ইংরেজি কবিতাটা 'where is my grave' আবৃত্তি করে শোনাও একবার।
আমি তৎক্ষণাৎ বাধা দিয়ে বললাম, ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র নয় যে অতিথি এলেই আবৃত্তি করে শোনাতে হবে।
৭:৪৫ বাজে। জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। আকাশে তারা ফুটেছে। সব তারাই সমান। সকলেই যেন মৃত। শেষ আলোর বার্তাটুকু দিয়ে ফিরে যাবে কৃষ্ণ কালো ঘরে। হ্যারিকেন বিক্রেতার চোখদুটো মনে পড়ে গেল।
আজ থেকে আমি আফরোজের শিক্ষক। ক্রিয়েটিভ রাইটিং আমার বিষয়।
নাসের হোসেন বাড়ির গেট অবধি এসে বললেন, ওকে তৈরি করুন।
সংক্ষেপে বলি, আমার মতো?
তিনি চুপ করে রইলেন। তারপর খুব নরম ভাবে প্রিয়জন যেভাবে বলে সেভাবে বললেন, দেখে পথ হাঁটবেন।
এগিয়ে গেলাম কয়েক পা। একটা কুকুর আমার পিছু নিয়েছে। আফরোজের মুখের মধ্যে আজ আমি মায়া দেখতে পেয়েছি।
চাঁদের বুড়ি নিরলস চরকা কাটছে আর আমার সামনের পৃথিবী আলোয় এক হাঁটু ডুবে যাচ্ছে। এমন দিনে মানুষের ধুমপান করতে ইচ্ছা হয়। আমি ধুমপান করি না। এই আলোয় তামাকের ধোঁয়া মিশিয়ে দেওয়ার কোনো অধিকার আমার নেই।
একটু নির্জন দেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে দেখলাম, এই কুকুরটা সেই কুকুর নয়।
বললাম, বিস্কুট খাবেন?
কুকুরটা বললেন, আজ ধুমপান করতে ইচ্ছা করছে।
আমার বাড়ি গেলে ব্যবস্থা করতে পারি। আপনি কি আমার বাড়ি যাবেন? জানতে চাই।
তিনি সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললেন, আসি, আমার বকলশ পছন্দ নয়।
অন্ধকারে হারিয়ে গেল কুকুরটা। দেখলাম, ফুলতলার লীলা সিনেমা হলের আলোয় একটা আধা - পর্ণ ছবির পোস্টার। ছবির নাম 'নটি পড়োশন' ।
খুব সঙ্গম করতে ইচ্ছা হল। ঘরের মধ্যে নয়, নদী বা সমুদ্রের পাড়ে বালির উপর। বাঘের মতো গর্জন করতে করতে রমণ। আহত বাঘের মতো।  শুধু নারী নয়, পুরুষও চিৎকার করে উঠবে। এ তো এক লড়াই, আদিম কাল থেকে চলে আসছে জঙ্গল থেকে বিছানায় । বিনা যুদ্ধে কেউ কাউকে সূচ্যাগ্র মেদিনী ছেড়ে দেবে না। স্বর্গে যুবকেরা যত খুশি রমণ করতে পারবে, ক্লান্তি আসবে না, বীজ পড়ে যাবে না, সন্তান হবে না, রাবারের সতর্কতার দরকার পড়বে না।
আমার তো পাপ নেই, পুণ্যও নেই, আমি কি স্বর্গীয় হতে পারব?
কে যেন বলেছিল, পাপ না থাকা মানেই তো পুণ্য। তাই কি? যদি বলি, আমার জ্ঞান নেই, অজ্ঞানতাও নেই —কেমন দাঁড়ায় বিষয়টা?
একজন দালাল গোছের লোক এগিয়ে এলো।
বলল, স্বর্গে যেতে চান?
কী করে বুঝলেন আমি স্বর্গে যেতে চাই?
আমরা লোক চিনি দাদা। যেতে চাইলে চলুন আমার সঙ্গে।
বললাম, চলুন।


স্বর্গ
খুব কাছেই ছিল স্বর্গ, পথ জানা ছিল না। পৃথিবীতে দালালদের বড়ো দরকার আজ। আমার দেশ দালালে ভরে যাচ্ছে। কী অপূর্ব সংবাদ! রাত বেশি নয়।
গুহার মতো একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। জীবন এখানে যেন আজও আদিম। দূরে একটা বাঁশের মাচার উপর কয়েকজন যুবক কথাবার্তা বলছে।
ছোট ছোট ঘর। ঘর না বলে খোঁয়াড় বললেই ভালো হয়। টিমটিম করে আলো জ্বলছে প্রতিটি খোঁয়াড়ে। রাস্তার আলোর জোর খুব বেশি। সারি সারি মেয়েদের দেখা যাচ্ছে। সকলেই যেন একটাই মুখ ভাগ করে নিয়ে বসে আছে। ড্রেনের দুর্গন্ধ তাদের স্নো পাউডারের গন্ধকে ম্লান করে দিয়ে পরাজিত করেছে।
সামনের ঘর থেকে একজন গোমড়ামুখো মেয়ে বেরিয়ে এসে দালালকে জিজ্ঞেস করল, কত বলেছিস?
দালাল বলল, এখনও দরদাম হয়নি।
মুখ খারাপ করে উঠল মেয়েটা। তার পুরো শরীরটাই শুধু ঝুলে পড়েনি, তার ভাষা-কপাল-বারান্দার তক্তপোষ সব যেন ঝুলে পড়েছে। তার ঘরের মাথায় যেটুকু আকাশ সেখানে কোনও তারা নেই। একটা কালো চাঁদ গলগল করে কালো আলকাতরা অন্ধকার ঢেলে দিচ্ছে।
আমি বললাম, পারব না।
দালালটা প্রথমে শুনতে পায়নি। কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, কী বলছেন?
না, আমি পারব না।
মেয়েটা এই ফাঁকে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা খোঁয়াড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে ভেতর থেকে তালা বন্ধ করে দিল। তারপর বিশ্রী ভাষা দিয়ে বলল, কী আছে বের কর, নইলে পুলিশ ডাকব, তখন সব ঘোমটা খুলে যাবে।
আমি বললাম, আমার কাছে পয়সা টয়সা নেই। এক প্যাকেট বিস্কুট আছে।
আবার নোংরা ভাষা দিল মেয়েটা। তারপর আমার পকেট হাতড়াতে লাগল। যথারীতি কিছুই পেল না, এক প্যাকেট বিস্কুট ছাড়া। পার্লে মারি।
সেটাই কেড়ে নিয়ে বলল, যা, ভাগ শালা।
বাইরে বেরিয়ে দালালটাকে আর দেখতে পেলাম না। ছেলেগুলো তখনও সেই মাচায় বসে ফিসফাস করছে। আমার শুধু মনে হল, এখনই আমার সঙ্গে যা ঘটল সেটা ধর্ষণ আর প্রতিটা ঘরে যে ধর্ষণ ঘটে চলেছে সেটা সঙ্গম।
কটা বাজে জানি না। রাত বাড়ছে। বাড়ি ফিরতে হবে। হেঁটেই। এ পাড়ায় ভিড় বাড়ছে ক্রমশ। সবার চোখ চকচক করছে। চারিদিকে নজর রাখছে। ভদ্রলোকের পরিচিতি এক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
প্রথম জীবনের এক প্রেমিকার কথা মনে পড়ল হাঁটতে হাঁটতে। তার বাড়িতে মিলিত হয়েছিলাম এক দুপুর বেলা। সঙ্গমের পর সে আমাকে প্রণাম করেছিল। তখন তার মানে বুঝিনি। এখন বুঝতে পারি। তার কাছে সেটা আদিম লড়াই ছিল না, সেটা ছিল প্রিয়কে পূজা।
হাওয়া দিছে। মেন রোডে বড়ো বড়ো ট্রাক। লোক কমে এসেছে। আমি হাঁটছি।
শুধু মনে হল, কুকুর বিস্কুট খায় না, মানুষ খায়।


প্রথম ক্লাস
আফরোজ!
জ্বি স্যার।
তোমার প্রিয় কবি কে?
কোন ভাষার স্যার?
তুমি কটা ভাষা জানো?
তিনটে ভালো জানি। একটা মোটামুটি।
কী কী ভাষা?
বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি আর উর্দু অল্প অল্প।
বাংলা ভাষার প্রিয় কবি কে?
জীবনানন্দ দাশ। স্যার, আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
আপনার প্রিয় বাঙালি লেখকের নাম কী?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তুমি কি তাঁর লেখা পছন্দ করো?
স্যার, বঙ্কিমের লেখায় নাকি মুসলিম বিদ্বেষ আছে? আনন্দমঠ, কৃষ্ণচরিত তো তাঁরই লেখা?
তোমাকে কে বলেছে এ কথা?
শুনেছি।
আচ্ছা, ধরো তোমার ধর্মকে তুমি খুব ভালোবাসো আর চাও এমন একটা দেশ তৈরি হোক যেখানে তোমার ধর্মাবলম্বীরা শাসন করবে, তাহলে তুমি কী করবে?
তাহলে কি অন্য ধর্মকে ছোট করে দেখব স্যার?
আফরোজ, জাতি-গঠন অনেক বড়ো বিষয়। এখানে ধর্মটা একটা টুল মাত্র।
জাতি-গঠন অনেক বড় ব্যাপার স্যার কিন্তু সেই জাতির মধ্যে তো সবাই আছে। একজনকে বাদ দিয়ে কি জাতি-গঠন হয়?
তুমি ভুলে যাচ্ছো যে জাতিকে তিনি কাঠগড়ায় তুলছেন সেই জাতির প্রায় ৭০০ বছরের আধিপত্য। তারা তো বাইরের মানুষ। ভারতীয় নয়। বঙ্কিম তো আদি ভারতীয়দের জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন, সেটা কি ভুল?
ভুল কি না বলতে পারব না স্যার, তবে তিনি যে রাজপুতদের বীরত্ব নিয়ে এত কথা লিখলেন, তাদেরকে জিতিয়ে দিলেন, সেই রাজপুতরা কি আদি ভারতীয়?
তারা ভারতীয় নয়?
রাজপুতরা তো হুনদের বংশধর। হুনরা কি বাইরে থেকে আসেনি?
আমাকে আরও পড়াশোনা করতে হবে আফরোজ। জেনে তোমাকে বলব। আজ আসি।
আবার কবে আসবেন স্যার?
এখনও জানি না।
আমার প্রথম ক্লাস এভাবে শেষ হয়ে গেল। রাস্তায় এসে উঠলাম। ৮টা ১০ বাজে। আজ বুধবার।
মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে। আমার প্রিয় লেখককে আমি ডিফেন্ড করতে পারলাম না। বঙ্কিম কখনও বিদ্বেষী হতে পারেন না। চৈতন্য দেবের মতো তিনিও কৃষ্ণকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। রামা কৈবর্ত্যর পাশে কি তিনি হাসিম শেখের নাম বলেননি? পল্লী গ্রামের প্রজাদের দুরবস্থা যিনি লেখেন তিনি কি সেখানে ডিসক্রিমিনেট করেছেন? বাঙ্গালার কৃষকরা কি শুধু হিন্দু ছিলেন?
সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
দু দিন ভালো ঘুম হয়নি। খুব ঘুম পাচ্ছে। এই সন্ধ্যা কি ঘুমের জন্য প্রশস্ত? আরো একটু হাঁটতে হবে। অটো নেওয়া একটা বিলাসিতা। আকাশের দিকে তাকাতে এখন মন চাইছে না। শুনেছি, তারা গুনলে ঘুম আসে। কিন্তু তারা গুনতে গুনতে হাঁটা যায় না।
রাসমাঠের ভাঙা জমিদার বাড়ির চাতালে এসে দাঁড়ালাম ২০ মিনিট হাঁটার পর। জায়গাটা নির্জন। নিঝুম। মনে হয় স্বর্গ এমনই। আম পাতা ছড়িয়ে রয়েছে সিমেন্টের চাতালে। পা দিতেই মড়মড় করে আওয়াজ হল। এখানে একটা কুকুর থাকে।
পাতার শব্দে কুকুরটা বেরিয়ে এলেন।
আমি প্রার্থনার ভঙ্গিতে বললাম, আমি আপনার এক স্বদেশী ভাই, আজ রাতে এখানে ঘুমোতে পারি?
এই বলে সেই শুকনো আম পাতার বিছানায় শুয়ে পড়লাম। চোখ জুড়ে আসছে। ঘুম একটা আঠা।
একেবারে ঘুমিয়ে পড়বার আগে খেয়াল করলাম, কুকুরটা আমার মাথার পাশে মায়ের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে শুলেন।
আমি জানি, আমার কাছে কিছুই নেই, নাম নেই, পরিচয় নেই,  শুধু মুখে একটু মায়া লেগে আছে।

খুকু ও খুকুর মা


সাদা রাতের বৃষ্টি
......................
গতকল্য এখানে বৃষ্টি হল, বৃষ্টিভর্তি আকাশ
আমি আর দুটো কুকুর খুকুর মতো দৃষ্টি নিয়ে দেখেছি
খুকুরা পাটিগনিত ভুল করে
বিমানসেবিকা হয়ে যেতে চায় অধিকাংশ খুকু
বৈদ্যুতিক মেঘের ভেতর দিয়ে যেতে ভালবাসে
ছড়িয়ে রেখে যেতে চায় গাঁদা ফুল, কানের গহনা
রাবণের দেশে যাবে রাম, উদ্ধারপর্বে
গতকাল বাড়ির ছাদে ঢেউটিনে পড়েছিল ছন্দ অলংকার
ছাতা নেই, কুড়োতে পারিনি
ঘুমিয়েছিল খুকু, তার মাতা শ্রম দান করে
রাজপুত্র চেয়েছে তারা সারারাত্র ধরে 

প্রজাতন্ত্র একবেলা : জিয়া হক


মুরগির খামারে স্বাগত ভগ্নস্বাস্থ্যবান
খাদ্যের সম্ভারে অনবদ্য সম্ভাষণ
ওই দেখুন লাল মুরগি,
                 কালো মোরগ তার উপর
গান শুনতে পাও? রফি
ধ্রুপদী রান্না হচ্ছে ও পাশের ঘরে, গন্ধ পাও?
আজ বড় বড় বাতাস বইছে
শীত নেই, অথচ বসন্ত তিন মাইল দূরে
শৌচালয় ওইদিকে, জলাভাব নেই
মুরগিরা আসছে, ওদের অভিবাদন নিন
গর্ভবতীরা এদিকে, প্রসবাগার কাছেই
আপনার হাসিমুখ দেখাই ওদের স্বপ্ন
মশলা পেষার শব্দের জন্য দুঃখিত
আজ বড় বাতাস
আপনার পতাকার জন্য এই আয়োজন, বুঝেছেন, এই শান্তি
বিশ্রামকক্ষ বাতানুকূল, পছন্দ করুন
কাকে পেতে চান
রাতে
পাতে

ডিপ্রেসনের বাংলা মানে ডিপ্রেসনই


ডিপ্রেসন কি জ্বরের মতো, থার্মোমিটার মাপতে পারে?
ডিপ্রেসন কি কর্কুটে রোগ, উড়িয়ে নেবে পগারপারে?
ডিপ্রেসন তো কুনকি হাতি, কর্ন নাড়ে মাথায় বসে
ঘর চলে যায়, বর চলে যায়, এমন মৌন রাক্ষসী সে।

জিয়া হক 

১১ জানুয়ারির কবিতা : বিশেষত জন্মদিন


অকাল প্রয়াত এই দিনে
      হেঁটেছে সূর্য সারা বেলা
গত রাত্রে চিত্র চলাকালে
    কৃত্রিমের বসে সৌরমেলা

বাস আনে ভালোবাসা
  বাসা থেকে ওড়ে নোনা তুলো
সরিয়ে রাখতে পারো তবে
  পরিচ্ছন্ন দানপাত্রগুলো

দাতা সব, করে রব
             সূর্য যায় বৃহত্তম ঢালে
পাতারা খাদ্য রাঁধে
স্বর্গে তারা যাবে পরকালে!

জিয়া হক 

পুষ্প চাও ফুল, কীট সখি?


রাতে কথা হবে পুষ্প, রাখি?
ফলবতী হতে চাও, রাখি?
যাদের ওঠে না, যারা নীচু
তুমি কি তাদের কাছে যাবে?
পুষ্প, পুষ্প, এখানে মালা হয়ে যায়
মৃতের শোভায় তুমি যাও?
পরম্পরা মনে রাখে যারা, যারা নীচ
জলসত্র খুলেও রেখেছে
তুমি কি তাদের তাদের কাছে যাবে?

রাত হল, রাখি পুষ্প, কাল কথা হবে?


খারাপ বলছো কেন?
নিজের নামকে ভালোবাসা দাও,
        আদর করো
সে তো তোমারই অংশ
ওকে বৃষ্টি থেকে বাঁচাও

পরিপাকতন্ত্রের শিক্ষা তুমি পাওনি এখনও? পুষ্প!


জিয়া হক 

দাও ও ২০১৯


আমাকে দাও সেই ভাষা যে-ভাষা নতুন, সেই ভাব যে-ভাব নতুন, সেই কল্পনা যে-কল্পনা নতুন।
আমাকে দাও। আমি লিখতে চাই। আমার মনুষ্যধর্মের পাশাপাশি এই এক ধর্ম আমি বয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমাকে মূর্খের দেশে পাঠিও না। আমাকে অজ্ঞের দেশে পাঠিও না। নির্বিকার করো না আমাকে। শুধু দুশ্চিন্তা আমাকে কেন ভোগ করে যাবে? আমাকে আমার উপর জয়ী করো। আমার যা নাকি সম্ভবনা, দিয়েছো, তাকে অনন্ত অন্ধকারের মধ্যে জাগিয়ে রেখো। আমাকেও জাগিয়ে রেখো। অনেক ঘুমিয়েছি। এবার ভারসাম্য দাও। এবার আমার টেবিলে আলো জ্বেলে দাও। এবার আমার কলমে আলো ঢেলে দাও। আমার খাতায় ফুটিয়ে তোলো বিকল্প ফুল। এই ফুলে সুগন্ধ ভরে দাও, এত গন্ধ যে সমুদ্র সুবাসিত হয়। আমাদের বড় দুঃখ, আমি সেই দুঃখ মুছিয়ে দেবার একখানি রুমাল ধার চেয়ে নিতে চাই। এই শীতে আমি যেখানে যেখানে বরফ জমে আছে সেখানে সেখানে আগুন জ্বেলে দিতে চাই। তুমি সে বন্দোবস্ত করো। অকাতরে অতর্কিতে ঘুমিয়ে পড়া লোকের মাথার নীচে বালিশের উচ্চতা দিতে চাই। তুমি সে ব্যবস্থা করো।
আমি তো বামন। চাঁদে হাত দিতে নয়, কেবলই চাঁদের শোভার সুখ্যাত বর্ণনাকারী হওয়ার সু-ভাগ্য দাও। সূর্যে জ্বালানি দেওয়ার আমি কেউ নেই, শুধু উত্তাপ পরিবহনের সু-ভাগ্যটুকু দাও।
দাও।

জিয়া হক 

পাঠিকা ও লেখার অপমৃত্যু সংক্রান্ত


এ লেখা হারিয়ে যায়, এ লেখা বস্তাবন্দি পথ
হারায় রৌদ্রে আর হারায় অন্ধকার জলে
কে আর পৃষ্ঠপোষণা দেয়, এ লেখার পিতামাতা নেই
জন্ম হয় কুমারীর গর্ভ ফোটা ফুল
জন্ম হয় শূকরের শুভ আস্তাকুড়ে
শুভ কেন—এ চিন্তা চিরে দেয় সমুদ্রের রাশি
ভোর হয় চিন্তা নিয়ে, সন্ধ্যা আসে চিন্তারাজ্য থেকে
শূকরেরও দিন ছিল কোনো এক স্বচ্ছ প্রদেশে
সুগন্ধ কোনদিন ছিল না এখানে তাই মৃতেরা আতর ভালোবাসে
এ লেখা হারিয়ে যায়, এ লেখা হারিয়ে যাবে
গোত্রপরিচয়হীন কোনো লবণাক্ত ঘাসে

সজনী পড়বে বলে লিখে রাখি আত্মজীবকথা
প্রেমিকার সৌধ গড়া যেই মতে প্রথা
সৌধ থেকে বালি খসে পড়ে
যেরকম আত্মা হয় রাতের বাগান
পরীরা রাজ্যজুড়ে মানুষের স্নানে
যোগ দেয়
দেশ গড়া হয় এইভাবে
খানিকটা আত্মরতি, খানিক স্বভাবে

এ লেখার মানে কি, এ লেখা কেন লেখা হবে?
মনেতে মাধুরী থাকে, বেকার কর্মীর কোনো স্তবে
উচ্চারিত হবে এ লেখা?
কর্মপ্রার্থী ও কবির কি কোনদিন দেখা—
হয়ে যাবে পথে, ট্রেনে, বাসে?
হয়ত এখানে নয়, হয়ত বাগানে নয়
হয়ত নরম দোকানে কিংবা শ্রীহীন আকাশে।

সূর্য থেকে ঢেউ এসে স্পর্শ করে ঘর
পাঠোদ্ধার হবে হয়ত
                         এই লেখা শীতে অতঃপর।
বসেছে দুজন পাত্রী, মুখোমুখি, রাখা
পদের পাত্রখানি চায়ের পেয়ালা দিয়ে ঢাকা

রচনা উপচে যায়, রচনা তলিয়ে যায় ঘুমে
যে রচে সেও কি মরে না নিজভূমে?
নিজভূমি নীচুভূমি হাজির হয় না সেখানে রোদ
শূন্য পাত্রে বেজে ওঠে অসিদ্ধ ভাতের সরোদ
কে শুনবে সে-গান? ওই গান?
পাখিরাজি, বৃক্ষকুল, যন্ত্রচালিত জলযান।


জিয়া হক 

রাধা থেকে ধারা-পতনের গন্ধ


ভালো আর বাসবে না কেউ, কোথাও আর ধ্রুবতারা নেই
মাঠের মাথায় জাগে বন্য সেই চাঁদ
যা কিছু যায় না ধোয়া তাই আজ জলের তলায়
ধ্রুবতারা চাও কেন? তুমিই যখন নীল গ্রহ
চাওয়া ধর্ম —এই জেনে তুমি রোজ প্রার্থনায় বসো
আলোকিত গাছ থেকে আলোকসদৃশ ফল ঝরে
তুমি তার পাশে এসে, তুমি তার লাবণ্য হতে চাও?

হও তবে, কোথাও রয়েছে কোনো বাধা?
তুমিই কৃষ্ণ জেনো,
                    তুমিই তার প্রকাণ্ড রাধা

জিয়া হক 

মিথ্যুকের গান


ও আমার ঘুমপাড়ানি রাত —বলো
বালিশ বিছানা টলমলো
শয্যাদ্রব্য পানীয় নেয় নাকি?
স্থির নয়, বাকি
বাকি আছে রাতের আঘাত
তপশিলি কোনো উপজাত
ভিক্ষা দেয় যদি
ক্ষতি হবে? হয়ে যাবে বড় লস-ক্ষতি?
নেই বলে হাত পাতে যারা
লোকেরা কি জেনে যায় তাহাদের মুখের চেহারা?
সাধু থেকে শুরু করা লোকে
অমূলক খাদ্যাভাবে ভোগে
অদ্য রজনী তার ঘুম
কেড়ে নেবে গাজনের লৌকিক মরসুম
পরিজন থাকে যদি দূরে
সাংবাদিকের মতো
           জেনে নেয়
আখ্যানের বাকি নাকিসুরে
কে-ই বা আর হায়
শান্তি-পেয়ালা দিতে চায়
                          এই দেশে

জিয়া হক

প্রাচ্যবিদ্যা


ভূত, ভূত, ভূত!
কোথায়?
ওই তো খাটের তলায়।
কই, খাটের তলায় তো কিছু নেই?
না না, দরজার ওপাশে।
দরজার পাশে তো মাদুর দাঁড়িয়ে।
ওই তো, আলমিরার পিছনে।
আরে, আলমিরার পেছনও তো ফাঁকা, কেউ নেই।
তাহলে জানালা দিয়ে পালিয়েছে।
তুই কি মস্করা করছিস? এই এলো আর এই জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল? এতগুলো লোক তাকে দেখবার জন্য অপেক্ষা করছে আর সে ব্যাটা পিঠ টান মারল?
ভূত কি আর আমার কথা শুনে চলে নাকি?
কিন্তু তুই তো বললি এখানেই সে আছে।
ভূত এক জায়গায় বেশি ক্ষণ স্থির থাকতে পারে না।
তুই কি ভূতের স্পোক পার্সন? সে নিজে এসেই বলুক না সে কী পারে আর কী পারে না। আমরা কি তাকে অসম্মান করি?
এখানেই তো সমস্যা?
এতে আবার কী সমস্যা?
ভূতেরা আমাদের কাছে সম্মান চায় না, তারা আমাদের কাছে ভয় চায়।
আমরা না হয় ভয়ও করব, সে যদি একান্ত চায়। আমরা কি এতটাই নিষ্ঠুর?
আবার ভুল করলে।
আবার কী ভুল করলাম?
নিষ্ঠুর হবে ভূতেরা, আমাদের হতে হবে মিনমিনে, ভীতুর ডিম।
মিনমিনে মানে কী বলতে চাইছিস? বড় বাবু যেমন তার বৌয়ের সামনে করেন, সেই রকম মিনমিন?
মিনমিনে মানে উঠতে বসতে ভয় পাওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া, হাত পা কাঁপা, ফিট হয়ে যাওয়া, চোখ কপালে তুলে মেঝেতে শুয়ে পড়া—এই সব আর কি।
এ কী বললি তুই?
কেন?
যাকে দেখলামই না তাকে না দেখেই চোখ কপালে উঠবে কী করে? এ অন্যায় দাবী নয়?
এখানেই তো আসল মজা। সে তো সবাইকে দেখা দেবে না। ভগবান কি সবাই কে দেখা দেয়?
ভূত আর ভগবানকে এক করলি?
এই জন্য তোমরা তাকে দেখতে পাওনা। যা ভূত তাই ভগবান। এই সত্যিটা বুঝতে হবে।
ভগবানের পুজো করা হয়, ভূতের কেউ পুজো করে?
আজ সে এসে এই কারণে চলে গেল। তাকে শুধু ভয় করলে হবে না, ভক্তিও করতে হবে। তোমাদের তার প্রতি কোনো ভক্তি নেই। তাই তোমাদের ভূত-লাভ হল না।
তোর কি ভূতের প্রতি ভক্তি আছে?
ওরে বাবা, বলে কী! ভূতের সঙ্গে আমার অন্য চুক্তি।
চুক্তি?
সে তোমরা বুঝবে না। ভূতেরা সবার সঙ্গে চুক্তি করবে না।
তোর সঙ্গে তার চুক্তি হল কীভাবে?
আরে আমি তো ভূতের ফ্যাঞ্চাইজি নিয়েছি।
ভূতের ফ্যাঞ্চাইজি?
হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগছে তো?
না মানে, হ্যাঁ। কিন্তু ভূতের ফ্যাঞ্চাইজি নিয়ে তুই করবি কী?
আমার কাজ হল ভূতকে প্রমোট করা।
ভূতের আবার প্রমোশন লাগে?
লাগে বৈকি। কার প্রমোশন লাগে না বলো তো?
কিন্তু তাতে তাদের লাভ কী?
যে কোনো প্রোডাক্ট বাঁচিয়ে রাখতে গেলে তার প্রমোশন জরুরি। টিভিতে অ্যাড দেখো না?
তোরা টিভিতে ভূতের অ্যাড দেওয়ার কথাও ভাবছিস নাকি?
না, এখন টিভির চেয়ে ইন্টারনেট বেশি কাজের।
আমার কথাটা এখনও তুই বুঝতে পারছিস না। এসব করে ভূতেদের লাভটা কী?
তুমি যদি এসব বুঝতে তাহলে আর কেরানি হয়ে জীবন কাটাতে না।
একটু বুঝিয়ে বল না।
ভয়ের বিজনেস। এর চেয়ে লাভজনক ব্যবসা আর নেই।
কিন্তু ওরা তো আর কোনো দেশ শাসন করছে না। ভয়ের ব্যবসা করে তারা পাবে কী?
এই তো গোল করলে। কে বলেছে তারা দেশ শাসন করে না! আমাদের দেশ যারা শাসন করে তারা অধিকাংশই ভূত। এরা মানুষের মধ্যে এমন ভাবে মিশে থাকে যে সহজে চেনা যায় না কে ভূত আর কে মানুষ।
তুই বলতে চাস আমাদের চারধারে যে সিপাই-সান্ত্রী, মন্ত্রী-পারিষদ তাদের মধ্যে ভূতেরা মিশে আছে? তাদের অনেকেই ভূত?
বলতে চাইছি না, নয়। এটাই বলছি আর এটাই সত্যি।
কিন্তু আমরা বুঝব কী করে? না বুঝতে পারলে বিশ্বাস করব কী করে?
তোমরা যে অবিশ্বাস করো, তাই নিয়ে ভূতেরা খুব মস্করা করে।
কিন্তু তুই বুঝতে পারছিস না, আমরা বিশ্বাস না করলে তাদের অস্তিত্বই যে টিকে থাকে না।
এই একটা অবৈজ্ঞানিক কথা বলে ফেললে তো!
ভূতের আবার বিজ্ঞান?
পূর্ণিমার রাতে তুমি যদি চোখ বন্ধ করে রাখো তাহলে কী চাঁদের অস্তিত্ব শূন্য হয়ে যাবে?
কিন্তু আমরা তো ভূত দেখতেই চাই, চোখ কোথায় বন্ধ করে আছি? তাদের দেখা দিতে সমস্যা কোথায়?
 এই একটা অর্থহীন প্রশ্ন করলে। আচ্ছা, যারা সিনেমার হিরো হিরোইন হয়, তারা আমাদের বাড়ি এসে দেখা করে না কেন? দেখা করলে কি তাদের নিয়ে ক্রেজটা আর থাকবে? কে আর টিকিট কেটে ঘরের লোককে দেখতে যাবে বলো?
কিন্তু তারা তো আর অদৃশ্য নয়, কোথাও না কোথাও তাদের তো আমরা দেখতে পাই।
ভূতেরা কি বলিউডের নায়ক নায়িকাদের মতো আচরণ করবে বলে তোমার মনে হয়? কেন তারা ওদের নকল করবে কেন? ওদের কোনো মৌলিকতা নেই? ওদের ইন্ডিভিজুয়ালিটি নেই? তারা ভূত বলে আমাদের নকলনবিশি করে বেড়াবে নাকি?
সবই তো বূঝলাম কিন্তু তোকে ওরা পেল কী করে?
পেল মানে?
মানে তুই ওদের পেলি কী করে?
সব কিছুকে খুব সহজ মনে করো, না? আমাকে রীতিমতো পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হয়েছে? অনেক ক্যান্ডিডেট ছিল।
পরীক্ষা? অনেক ক্যান্ডিডেট?
ভূতটা আবার এসেছে। ওই তো সে।
কই, কোথায়?
ওই তো, খাটের তলায়।
খাটের তলায়?
না, এখন দরজার পাশে।
কই, দরজার পাশে তো নেই। দরজার পাশে তো মাদুর।
এখন সে আলমিরার পেছনে।
কই?
এই জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল। যাহ!


জিয়া হক
চিত্র ঋণ : রেহান ইসলাম রিদা 

নির্জন লোকটা ও তার গোরস্থান


গরমের দিনগুলিতে সে নিজেই বাগানের চারাগাছে জল দেয়। সে এটাকে প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিসেবে ধরে নেয়। এভাবেই সে পৌত্তলিকতাকে ব্যাখ্যা করে। ঘন সবুজ বনই আসলে দেবতার মূর্তি। পরিচর্যাই কার্যত পূজা —উপাসনা। ঘটনা খুবই সামান্য। একদিন তাকে এই বাগানেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার নিজের হাতে লেখা একটি কাগজের টুকরোও পাওয়া গেছে। তাতে লেখা — আমি এই মৃত্যুর তদন্ত চাই না। ভাগ্য বিপর্যয়! একে ভাগ্য বিপর্যয় বলা যায় না। মৃত্যু নামের ঘটনাকে মৃত্যুর সঙ্গেই সমাধিস্থ করা হল, এইভাবে বলা যায় একে। সে দেশ-ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে চাইল কিনা বলা মুশকিল। তবে তার গায়ের রং নীল ছিল না আর সে বাজার বলতে বুঝত নোংরা জায়গা যার শুধু দেহ নয়, আত্মাও বিক্রি হয় সুলভ মূল্যে।
তার পরিবার যখন সেই কাগজের টুকরোর ভাষাকে অস্বীকার করে পুলিশ ডাকল তদন্তের জন্য তখন সে ওই বাগানেই শুয়ে শুয়ে বুঝতে পারল পৃথিবীটা কোনোমতেই গণতান্ত্রিক নয়। এখানে উলঙ্গ লোকেরাই উলঙ্গের নগ্নতা নিয়ে চর্চা করে।
সে চুপচাপ শুয়ে রইল যেভাবে সে পরিবারে এতদিন সময় কাটিয়েছে।

জিয়া হক
চিত্র ঋণ : রেহান ইসলাম রিদা 

দার্শনিক : পুরস্কার প্রাপ্ত


মায়ের কথা বলতে গেলেই বাবার কথা আসে। বারান্দায় বসে থাকা আমার বাবা। ঝুঁকে থাকা একজন মানুষ। যেন এইমাত্র পড়ে যাবেন। দড়ির ওপর থেকে নির্দেশ দিচ্ছেন নিজেকে। কেননা তাঁর নির্দেশ আমরা আর কবেই বা মান্য করেছি। অবমাননাই তাঁর প্রাপ্য ছিল আজীবন। অবমাননাকেই তিনি শ্রেয় জ্ঞান করেছিলেন আজীবন। তাঁর জুতোখানি এখনও সাজানো রয়েছে জুতোর র‍্যাকে, যেভাবে রামের পাদুকা ছিল ভরতের আশ্রয়। তার রাজ্যপাটের অভিজ্ঞান।
আমার মায়ের দাবি শূন্য। তিনি শুধু রান্না করে গিয়েছেন রান্নাঘরে। মায়ের সঙ্গে আমাদের সবার তরিতরকারির স্মৃতি। শীতের রোদে বসে পালং শাক থেকে আগাছা বেছে বেছে প্লাস্টিকের চুবড়িতে রাখছেন—এই হল পরিচিত দৃশ্য। তাঁর জঙ্গলি ছাপা শাড়ি শুকোয় একা একা উঠোনের তারে। দোল খায়। আমরা তাঁর মনের খবর রাখিনি।
সেই মা-ই সেদিন বললেন, বাবা, একবার সমুদ্রে নিয়ে যাবি?
অবাকই হয়েছিলাম। মা কখনও বাড়ির বাইরে যেতে চান না সচরাচর। নিজেকে ঘরকুনো বলেই আত্মপ্রসাদ লাভ করেন।
দু মাস হল বাবা নেই। চিরদিনের জন্য নেই। শিশুদের মতো নক্ষত্রের রাতে তাঁকে আকাশে খুঁজব নাকি গাছের অগণিত পাতায় খুঁজব ভাবি। বাবার প্রিয় নিমগাছটা এখনও বাড়ির সামনে শোভা পাচ্ছে।
মা সমুদ্রে যেতে চায়; মা বাড়ির বাইরে বেরবে—এ কি কম কথা।
বাবা-মা দুজনেই বলতেন তোকে বিয়ে দিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়ব। যেখানে যেখানে এতদিন কথা দেওয়া ছিল, যাওয়া হয়নি, যাইনি, সেখানে ঘুরে বেড়াব। সংসার থেকে অবসর নেব। পারবি না সংসার বুঝে নিতে?
বাবা বেরিয়ে পড়েছেন ইহকালের মতো। চিরকালের মতো। মা সমুদ্রে যেতে চান।
আমি জিজ্ঞাসা করি, মা, তুমি সমুদ্রে যেতে চাও কেন?
আজীবন চুপ করে থাকতে থাকতে মা চুপ করে থাকাকেই ধর্ম মনে করেন। তাই তিনি উত্তর দেন না। আমাদের বুঝে নিতে হয়। আমরা কবে বুঝতে চেয়েছি অব্যক্তকে?
মা বেশ খানিকক্ষণ নীরব থেকে কথা বললেন, তোর বাবা বলেছিলেন আমাকে সমুদ্রে নিয়ে যাবে। আমি তো সমুদ্র বলতে শুধু বুঝি জল আর জল যার কোনও কূল কিনারা নেই। তোর বাবা বলেছিল, দার্শনিকেরা সমুদ্র ভালোবাসে।
দার্শনিক কী জানো মা?
আমার মায়ের তো লেখাপড়া কম। তিনি লৌকিক জ্ঞানে শিক্ষিতা। জীবনের সব সমস্যা পেরিয়ে আসতে তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়েই।
মা বললেন, দার্শনিক মানে আমি জানি না তো রে, তবে তোর বাবা বলেছিল যারা শুধু দেখে যায়, কিছু বলে না, শুধু দেখে যায়।
আমাদের কাজের পিসি তখন ঘরে ঝাঁটা দিচ্ছিল। তিনি সব বিষয়ে মন্তব্যে পারদর্শি।
আমি ঘুরিয়ে বলি, আচ্ছা পিসি দার্শনিক মানে জানো?
পিসি তো কিছু বলবেই। পিসি বলল, ফেরিওয়ালা?
আমি বলি, ঠিক বলেছো।
পিসির মুখে প্রসন্ন হাসি। মা জানেন না যে প্রশ্নের উত্তর সেই উত্তর সে জানে—এ কম কথা নয়।
আমার মায়ের দিকে পিসি আড়চোখে তাকিয়ে নিল একবার।
পিসি চলে যেতে মা বললেন, দার্শনিক মানে তোর বাবা ভুলই জানত, না?
মা, শোনো, আমরা সবাই দার্শনিক,--তোমার বিশ্বাস হয় আমার কথা?
তারা সমুদ্র ভালোবাসে কেন? মা জানতে চান।
মাকে কীভাবে বোঝাব যে বাবার যুক্তি অকাট্য নয়। দার্শনিকরা পাহাড়, মরুভূমি, ঝর্ণা, গিরিখাত, হিমবাহ সবই ভালোবাসতে পারে। বাবাকে কি ভুল প্রমাণ করা উচিত হবে। বাবা তো মায়ের কাছে একজন শুধু মানুষ নয়,--বিশ্বাস, স্থান, তীর্থ।
এক সপ্তাহ পরের কথা। আমরা ভাইজাগ-আরাকু উপত্যকা ঘুরে এসেছি। এখানে পাহাড় আছে, পাশাপাশি সমুদ্রও।
দুপুরে বাড়ির বারান্দায় মা গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছেন। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম মায়ের।
খুব নরম স্বরে বললাম, মা, তোমার কোনটা ভালো লাগল? পাহাড় না সমুদ্র?
মা বললেন, মানুষ।




জিয়া হক

অযথা বিপ্লব ২০১৯


কী হবে এই দীর্ঘদিন, কালো কালো মেঘ
পাখিরা ফুলের কাছে মধু চায় নাকি
কী হবে ও মাছেদের রোদনসঙ্গীত
আমি কি নিরামিষাশী, সমাজ-আহত
নিদ্রাশেষে জলাধারে খাব সামাজিক
কেন যে কোথাও নেই মৃত মানুষেরা
কোথাও কেন যে নেই পূর্বমাতৃদল
সূর্য কি আলো দেয় দুপুরে ও ঘরে?
ঘরেতে ঘুমোয় যারা স্বপ্ন-দার্শনিক
তারা কি পুরনো রীতি কলঙ্কিত করে?


জিয়া হক 

মোজাফফর হোসেন ও তাঁর গল্পচিন্তা


কিছু বই পড়বার ইচ্ছা থাকে, —সহজে মেলে না। আচমকা পেয়ে গেলাম, —এ অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তিই।
এবার আপাতত পাঠ ও পরিক্রমা।
বিস্তারিত ক্রমপ্রকাশ্য... 

উজ্জ্বল ঘৃণাদের ভিড়


এই উজ্জ্বল ঘৃণা আমাকে ফিরিয়ে দাও
দাও ওই ঘৃণ্য উজ্জ্বলতা
সাবেকী রাতের শীতলতা, —প্রীতির পিরিচে
নীল শুদ্ধ চা
সে তো জানে না অজ্ঞতা কী
ভেবে দেখো তাকে ক্ষমা করা যায় কিনা
সে তো জানে না ক্ষমা কী
যে ঘৃণা প্রকৃতই উজ্জ্বল বলে মনে করা হয়
যে মন প্রকৃতই মৃদুমন্দ বয়
কে তাকে প্রেমপ্রস্তাব দেয় বছরের ওইসব দিনে

জিয়া হক 

ঈশ্বরের দরবার


ওদের দাবি অন্যায্য নয়। দাবি আছে মানে কোথাও ক্ষীণ হলেও কোনও যুক্তি পরম্পরা আছে ; অন্তত বিশ্বাস আছে। যে প্রার্থী সে সব সময় প্রার্থনার যোগ্য না হলেও সে যে তার প্রাপ্তির ইচ্ছা প্রসারিত করেছে সেটাই বিবেচনার। এতে কি দুর্বলতা প্রকাশ পায়? স্বাভিমান নিকাশিত হয় কি? হয়ত হয় কিন্তু তা গুরুত্বপূর্ণ নয় তখন। প্রয়োজনই প্রণিধানযোগ্য। কথা অন্যত্র। আমরা তো দাবিদার, আমরা কি অপর দাবিদারদের বিষয়ে সচেতন? যদি না হই, যদি চিন্তায় অযত্ন থাকে তাহলে প্রার্থনা করার অধিকার থাকে না। জ্ঞানদানন্দিনী একবার আমাকে প্রশ্ন করেছিল, তুমি জীবনের কাছে কী প্রত্যাশা করো?
আমি বলেছিলাম, শান্তি।
সে পরক্ষণেই বলেছিল, তুমি কি কারও শান্তির কারণ হয়েছো কখনও?
আমি বলি, না।
তাহলে জীবন তোমাকে শান্তি দেবে কেন? সে সপ্রতিভভাবে জিজ্ঞাসা করে।
তারপরই শান্তির সংজ্ঞা জানতে চায়।
আমি উত্তর দিতে পারিনি সেদিন। আজও পারব না।
হাত পাততে গেলে যেমন হাতের থাকা জরুরি তেমনই হাত পাতার আগে সেই হাতের ইতিহাসে কিছু কার্যক্রম থাকাও বিশেষ জরুরি।
ভিখিরি কি রোজ বাড়ি ফিরে তার ভিক্ষাপাত্র সাবান দিয়ে মাজে? সে কার কাছে কৃতজ্ঞ —ভিক্ষাপাত্র না মানুষের কাছে? কে তাকে বঞ্চিত করে —ভিক্ষাপাত্র না মানুষ?
বৃক্ষরোপনের রচনা লেখার আগে একটা বৃক্ষচারা রোপন করা জরুরি।

জিয়া হক 

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে


লোকচক্ষু
............
শুবি আয় ফুলমণি, শুবি আয়
এ খাটের তলা
খানাখন্দ, ভ্রান্তি তবু
এখানেই তোর শিল্পকলা
দেখা হবে অমাবস্যা দেখে
আমি যদি লিপি হই
তুই তোর বর্ণমালা রেখে
এসে দেখ
টুনি বাল্ব চাঁদ লাগে কিনা
তুই যদি দিকভ্রষ্ট
          আমি হব বায়ুর দখিনা
লোক আসে? 
কতগুলো লোক?
তারা তো কর্পূর আর
ঘৃণার ঘোষক

জিয়া হক 

দেশ পরিচয়

দস্যু আর নাবিকের ভেদ আমি করতে পারি আর পারি
অতিথিকে ভালোবাসা দিতে
আমি জানি, কে অতিথি, কার ব্যাগে কী কী রাখা আছে
অথচ এ আবাসন—অতিথিশালাই বলা যায় একে
গাভী চরে, দুগ্ধজাত প্রেম প্যাকেটে যায় দূরে
এখানে জানালা থেকে মৃত্যু দেখা যায় তবু আমরা
বড় আর নকশা করা জানালা বসাই
সিঁড়ি ওঠে দোতলায়, সিঁড়ি ওঠে আকাশের সদর রাস্তায়
এভাবেই পুরনোকে দেখেছি আমরা
আমাদের হিন্দুমতে মরে গেলে ঈশ্বর হয় লোকে
জাহান্নমবাসীকেও আমরা স্বর্গীয় বলে ভাবি
এটুকু উদারতা, চক্ষুলজ্জা আজও টিকে আছে

বাড়া ভাতে ছাই দেয়, সেই ছাই দন্ত সাফে লাগে
এরকমই হত নাকি আগে



সে রকম লোক
.......................................................................

লোক হবে সাধারণ, লোক হবে কিছু মাথামোটা
ঝুল ছোট জামা পরা, ঝুল ছোট স্বপ্ন অর্ধ-গোটা
দেখবে কি দেখবে না—নিজে তার নির্বাচনে এসে
বৃদ্ধ আর শিশু আর মহিলা সভায় গিয়ে মেশে

সে কি তার প্রয়াত মায়ের কথাগুলি
বলে দেবে গর্ধবের কানে বা সমাজে?
বিদেহী আত্মার যদি শান্তি থেকে থাকে
এই তথ্য তার কোনো লাগবে কি কাজে?

লোক হবে অলৌকিক, লোক হবে সাদা ফুলগাছ
ঝরে যাবে সান্ধ্যকালে, ঝরে যাবে অপ্রাকৃত সাজ
দুপুরে সে ছোট হবে, এত ছোট পাদুকার নিচে
রাত্রি গড়িয়ে খাবে
                  প্রাচীন পন্থা মেনে
                                         মাটির পিরিচে


জিয়া হক 

সংসার যাত্রা

সংসারে বড় সুখ, রমণী রয়েছে, তার গুণ
সংসারে কী জানি অসুখ
পুরুষ রয়েছে
                 তার ঘুন

কে দীর্ঘ, —কে সেই পিরামিডখানা
শ্রমিকেরা নেই তবু
               জাদু কারখানা
বানিয়ে তুলেছে তার তার
রোগের মাথার পাশে
তুমি এসে
           বসো সংসার

ছিল ভালোবাসা—টেবিলে সাজানো
টেবিলটি ছিল দুই
তলায় সাজানো

এসেছে তন্দ্রাকাল, এসে গেছে ঘুন
ভালোবাসা বিশেষত জ্বালায় উনুন


রাত্রিকানা লোক
......................
এই রাত্রি বরং শান্ত, শুধু উড়োজাহাজ যায়
লোক পারাপার, যন্ত্রের পাখি সেজে ওঠা আর
তা ব্যতিরেকে শান্ত এই জীবনসুন্দর, গোঙানি
কলকাতা সুন্দর, নর্দমা সুন্দর, রঙিন ত্বক —সে সুন্দর
ভাড়াবাড়ি অ্যাকোরিয়ামের মতো বাষ্পে বাষ্পে জ্বলে
দূরগামী লোক দূরগামী ট্রেনে উঠে গেল
চুম্বন সুন্দর, চপেটাঘাত সুন্দর, জীবনীকাব্য— সে সুন্দর
এই রাত্রি তস্করের, এই রাত্রি ঘুমের বাসনা যার তার
আগ্নেয় উড়োজাহাজের শব্দ ব্যতিরেকে
শান্ত —সুমুখশ্রী —নিখরুচে ত্বকের

জিয়া হক 


ওহে বোর্হেস


গরমের দিনগুলিতে সে নিজেই বাগানের চারাগাছে জল দেয়। সে এটাকে প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিসেবে ধরে নেয়। এভাবেই সে পৌত্তলিকতাকে ব্যাখ্যা করে। ঘন সবুজ বনই আসলে দেবতার মূর্তি। পরিচর্যাই কার্যত পূজা —উপাসনা। ঘটনা খুবই সামান্য। একদিন তাকে এই বাগানেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার নিজের হাতে লেখা একটি কাগজের টুকরোও পাওয়া গেছে। তাতে লেখা — আমি এই মৃত্যুর তদন্ত চাই না। ভাগ্য বিপর্যয়! একে ভাগ্য বিপর্যয় বলা যায় না। মৃত্যু নামের ঘটনাকে মৃত্যুর সঙ্গেই সমাধিস্থ করা হল, এইভাবে বলা যায় একে। সে দেশ-ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে চাইল কিনা বলা মুশকিল। তবে তার গায়ের রং নীল ছিল না আর সে বাজার বলতে বুঝত নোংরা জায়গা যার শুধু দেহ নয়, আত্মাও বিক্রি হয় সুলভ মূল্যে।
তার পরিবার যখন সেই কাগজের টুকরোর ভাষাকে অস্বীকার পুলিশ ডাকল তদন্তের জন্য তখন সে ওই বাগানেই শুয়ে শুয়ে বুঝতে পারল পৃথিবীটা কোনোমতেই গণতান্ত্রিক নয়। এখানে উলঙ্গ লোকেরাই উলঙ্গের নগ্নতা নিয়ে চর্চা করে।
সে চুপচাপ শুয়ে রইল যেভাবে সে পরিবারে এতদিন সময় কাটিয়েছে।

জিয়া হক