প্রতিটি মানুষ আলো দেয় : জিয়া হক

আহা, আজ, আহা, সেই পাখিটা কোনো পেয়ারা গাছের মরণোন্মুখ ডাল থেকে ডাকছে।
তিনি নিকটেই আছেন।
ওই পাখি আমার সব স্মৃতি নিয়ে ফিরে এসেছে।
তিনিও এসেছেন। আরোগ্য এসেছে।
ছাদ আমাকে নক্ষত্র দেখতে বাধা দেয়, তবু আমি
একটা ছাদ চেয়েছি, চেয়েছি ছাদের তলায় সব জীব।

সূর্য নয় শুধু, প্রতিটি মানুষ আলো দেয়।
প্রতিটি লোকের চারপাশে প্রত্যেকে ক্রমান্বয়ে ঘোরে।
গ্রহাণুপুঞ্জের কথা জানি?
নবদ্বীপ থেকে ধরো এই আমার ঘর,—
এর মধ্যে কত লোক, লোকান্তর, মৃত্যুজন্মবিয়ে
এসবই ছায়াপথ, আমার বিশ্বাস

ভিজিয়ে দেয়, স্পর্শ করে না


এই বৃষ্টি আমাকে স্পর্শ করছে না।
শুধু ভাবছি, আমি কী হতে চাই।
কী হতে চাই, চেয়েছিলাম
পুরনো হাতে আমি মুখ রাখি
নিজের আশ্রয় আমি নিজে হব, ভাবি
শ্রোতা হয়ে জীবন কাটাবো, ভাবিনি কখনও
অপরাধী আমার কাছে তথ্য রাখে, অপরাধ —
সেও কিছু রেখে যায় তথ্যসদৃশ
রটে গেছে আমি ভালো লোহার সিন্দুক
নীরবতা পালনেই আমি ভালো অভ্যস্ত আছি
বাদামের, মুড়ির, চায়ের বিনিময়ে আমি
অশ্রাব্য গানও শুনে যেতে পারি
কেননা আমি ভুলে গেছি, কী হতে চাই,—
কথা ছিল কী কী হওয়ার
বৃষ্টি তাই ঝরে পড়া তীরবেগে জল
ভিজিয়ে দেয়, স্পর্শ করে না 

শেখো : আফগান কবিতা : আবদুল্লাহ


পাপিয়ার মতো সুরারোপিত বাক্য বলতে শেখো,
ফুল ও পাপিয়ার নীরব আলাপ কীভাবে ঘটে, শেখো
মাথা ঢেকে ফুলের অরণ্য থেকে বের হও,
শিখে নাও হাওয়ার ভেতরে বাতাসের চলাচল।
কতদিন বাঁচবে পাখির মতো, পাখি হয়ে?
ওড়া শেখো মুক্ত ঈগলের মতো।
গতি বাড়াও, যাত্রীদল যাতে গতিপ্রাপ্ত হয় সে ব্যবস্থা করো,
গন্তব্য কাছেই।
শেখো ঘন্টাধ্বনি কীভাবে নিজেকে বিস্তার করে।
ও ফুর্তিবাজ আফগান! আরাম ছাড়ো, কষ্টকে নাও,
যে দেশ তোমার তার ব্যথা ও শোকে কান্নাকাটি শেখো।

আবদুল্লাহ
৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ 

আত্মা-হনন


জীবন তখন অসভ্য
তাই
গাধার পিঠে ছুটছিলাম
আর
গাধাই এখন অসুস্থ
তাই
অন্য পশু —জয় শ্রী রাম

কৃষি আমার ভিত্তি
তবে
গোটা কতক পাশ ছিল
আর
গোবর গাদায় কী ফুল
যেন
আমার দেহ ভাসছিল



মফস্বলের গীতি


এই রাতে কি গান বাজবে বালিশের তীরে?
ঢেউ এসে লাগবে গতরে? এখন বসন্ত।
গাছে গাছে পাখি আর মাঠে মাঠে মানুষ।
এই মফস্বলেও দূর থেকে গ্রামীণ গাজনগান আসে।
গায়ক চিনি না, সুরে বড় ব্যথা।
এ তবে গাজন নয়, অন্য কোনো গান।
শুনি আর ভাবি যে মানুষ অনুভূতি দেশ থেকে আলো আর পায় না এখন, সে এক বিপুল অপচয়।
এমন রাত্রে পাহারাদার পথিক কুকুরের পায়ের আওয়াজও কী সঙ্গীতময়! পোকা ডাকছে।
এই সুর রবীন্দ্রসঙ্গীতের চেয়ে আপাতত প্রিয়।
ডাকে আমার চিঠি পাঠাও —দাবি করো কেন?
যদি তুমি ঠিক ঠিক দাও, আমি তবে ঠিক ঠিক পাব।
এত রাতে ডাক বিভাগ খোলা?
পিওনের বিবাহ হয়নি?
তাকে কিছু লিখতে দাও বিছানা, বালিশে 

শিশুরা লেখে মঙ্গলকাব্য আর


ছায়া ছায়া রৌদ্র জুড়ে আমি বাছুর ও মানুষের খেলা দেখেছি।
কেউই হারে না রৌদ্রে, সবাই পুরস্কৃত, ধাতব সম্মান—
নেই, সংগঠক, বাচিকেরা নেই
থেকে যায় সূর্য, ঘাস, মানুষ, বাছুর
তেরো কিংবা একুশ সাল এভাবেই অভিনীত হয়
নায়কেরা, নায়কের মাংসপেশী কম, চোখদুটো ভালো
দুধ দোয় নায়িকারা আর দুগ্ধ দেয়
মঙ্গলকাব্য লেখেন শিশুরা,
আকাশ সাদা, বিদেশী বা স্বদেশীর বিমানেরা নেই
গ্রামীণ ভিক্ষু গায় পাকস্থলী, মুদ্রার গান
কবিতা নয়, —জীবন এমত
জীবন পেরিয়ে গেল চিত্রশিল্পকলা
লেখক পেরিয়ে যায় জৈবনিক টিলা ও নাটক
পান নাই এমন পানীয়?
গাভী নাম্নী বালিকারা দেশে প্রার্থনীয়
গাছেরাই ছায়া ফেলে, ছায়া তার পায় কি কখনও?

ভোরের ভ্রম : একটি মনোলগ


শব্দ ছিল আশ্রয়। এখন আশ্রয়হীনতায় ভুগছি।
কেউ পাশে নেই, এমনকি শব্দও। জানি না কীভাবে তাকে ফিরে পাব। আতিথেয়তায় আমি ত্রুটি রাখতে চাইনি কিন্তু কোথাও বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। অজ্ঞাতসারে। নাকি জ্ঞানত?
বাক্য নির্মাণ করার চেয়ে তাজমহল নির্মাণ করা সহজ যেন এখন। অথচ শোক পালনের জন্য কারও মৃত্যু কামনা করিনি কখনও। সৌধ গড়ার রাজকীয় গর্ব রাখিনি, এ তো অসত্য নয়। সত্য কী, তা এখন ব্যাখ্যা করতে অক্ষম। যা বিশ্বাসযোগ্য, তা-ই? বিজ্ঞান যা বলে, তা? জনসমক্ষে যা প্রমাণিত, তা কি? জানি না। ভীতি অমূলক বলে রাস্তায় ফেলে দেব তাও ভাবতে পারি না, পথিকের কথা চিন্তা হয়।
কবিতার ঈশ্বর একে কীভাবে গ্রহণ করবে তার পারিষদ জানে। 

শ্রী মজুমদারের কবিতা : আবহমান বাংলা কবিতার ছায়া

রাত্রিচর বুনোচাঁদ বইয়ে আপনি কোন কোন বাঙালি কবিকে পেতে পারেন :
১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. জীবনানন্দ দাশ
৩. সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
৪. শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৫. বিনয় মজুমদার
৬. জয় গোস্বামী
তাহলে কবি কোথায় রইলেন? তাঁর নিজস্বতা, স্বর —কোথায়? এ তবে কি একটি প্রভাবলিপ্ত বই? তা নয়। গ্রন্থটি 'ইউনিক' কেননা কবি সবাইকে আত্মস্থ করেছেন, সবার কাছে আত্মসমর্পণ করেননি সর্বৈব। পূর্বজরা অনুষঙ্গ হয়ে উপস্থিত হয়েছেন, কবিকে স্থানান্তরিত করে দিয়ে নয়। মহাজনদের খোঁজ যেখানে শেষ হয়েছিল, এ বই সেখান থেকে শুরু। এই যে অনুষঙ্গ, তাও খুবই বাইরের। এর কারণ কবির নিজস্ব একটি কাব্যদর্শন আছে এবং দর্শন আছে। পাঠককে অতৃপ্ত করে রাখবে। ভাবাবে। এখানেই কবি সফল।

বিস্তারিত ক্রমশ প্রকাশ্য... 

পালোয়াড় বা খেলোয়ান


ফাঁকা জ্যোষ্ঠীর
ন্যাকা ষষ্ঠীর
মনে
যুদ্ধু দিয়েছে দোলা
ভরা চৈত্রের
শুভ মৈত্রের
বাড়ি
সদর দরজা খোলা
খালি মাঘেদের
পালে বাঘেদের
আসা
যেন অভ্যাস সর্বৈব
আহা ফাল্গুন
দুটো মাল খুন
তাই
রাত জেগে লাশ বইবো 

Test