I am fake, as you are


ফলত এখানে জাগতিক কোনো পিঠা
হয়নি বানানো, জানতে চাইছো মঙ্গলপদ কী তা ?
নয়া সন্দেশ গড়ে ওঠে ভান্ডারে
লোক নেই তাই মাছি আসে কিনিবারে
মালিক প্রয়াত, কুকুরেরা ডাকে খুব
গেটে তালা ঝোলে, কাঁচা পাতাদের স্তূপ
পোড়ে না অথচ নাকে মুখে এসে লাগে
যেদিন বৃষ্টি সেদিনের পুরোভাগে
একটি বৃদ্ধা পাতা কুড়নোর ছলে
বলে ইতিহাস, সমাজবিদ্যা বলে
হোটেল যেখানে, উনিশ শ দুই সালে
বুনো ঝোপ আর শেয়ালের গোলমালে
ভেঙে গিয়েছিল যত ছিল সেরা ফুল
ভিজে যায় শুধু সাদা বুড়িমার চুল
ছিল কি বিপদ, ছিল কি শান্তি এত?
রেলগাড়ি আসে, হয়নি কি উন্নত?
প্রাচীন লোকেরা গায় যত লোককথা
অঞ্চলে তত নেমে পড়ে নীরবতা
আকাশে কত না বিদ্যুৎ জন্মালো
'এসো সখি আজ বোরখাটি খুলে ফেল।'
দেখো মোহরের ছড়াছড়ি ওই দেশে
লোক নেই তাই মাছি বসে সন্দেশে

Evening dreamers

সন্ধ্যাগুলি নির্জন

.................................................
দেবতারা খুবই লাজুক মিছরিভাষী
ধুতিও তাদের মাড় দিয়ে বহু কাচা
নকল গোলাপ যেখানে বাজারে বসে
তার দূর থেকে এগোয় তাদের রুমাল

ধুলোগাড়িগুলো জল দিয়ে যাবে কবে
বসন্ত কবে আনবে না গুটিপোকা
কোথায় গঞ্জে পাঠাগারে লোক যাবে
কবে সন্ন্যাস ফিরে আসে পরিবারে

দেবতা হওয়ার উপকারিতাও আছে
হাসি আর শুধু হাসি দিয়ে ঘর ভরা
দ্বিতীয়ত থাকে পাদুকা মোছার জাতি
বিপদঘন্টি তৃতীয়ত বাজবে না

বাড়ি রং করে অফিসের করণিক
বর্ষাকাল কি কৃষির জন্য আসে?
দেবতা হওয়ার সহজ উপায় হল
স্ত্রীয়ের বাধ্য কুক্কুর হয়ে থাকা


জিয়া হক 

Shree Nagar

শ্রীনগর

...........
একদা এক বৃষ্টি হল ছাদে
প্রকাশ পায়নি স্থানীয় সুসংবাদে

দুটি কাক আর তিনটি শান্ত ছানা
হারিয়েছিল
পৈতৃক আস্তানা

দুইটি কাক ও তিনটি শান্ত ছানা
হারিয়েছিল সে
পিতামহ আস্তানা

বাড়ি মালিকের হারমোনিয়াম খুব
হেসে উঠেছিল
গাঁদাচারাগুলো চুপ

দূর থেকে বোকা দেখেছিল প্রজাপতি
জল ফেলবার
নেই তার অনুমতি

আসে লোকগান, শ্রোতা এক রোগা বট
মছলিবিহীন
সূতিখাল কালো মঠ

গীতিকার বলে, 'পিচ্ছিল নদী রাধা
ছড়িয়ে ফেলো না
ভারতীয় মর্যাদা'

বিদ্যাপতির পাতা হয়ে ওঠে লাল
গুলিবৃষ্টিকে
                বাদ দাও যদি
                                     ভাল ছিল গতকাল


জিয়া হক 

An unknown tree

আমলকি বন

....................
আমলকি বন কেঁপে গিয়েছিল বিশ শতকের শুরু
ফলত সংখ্যাগুরু
গুরুবাদ থেকে নেমে এসেছিল তুষারপাতের দিনে
আহত ঘাসের, নিহত বটের হিতকর দক্ষিণে
ছিল না বার্তা অনুকূল কোনো কাগজের পরিচয়ে
কানাপূর্ণত ভয়ে
একটি পায়রা শকুনের ছায়া এড়িয়ে চলবে বলে
শিখে নেয় কিছু যন্ত্রবিদ্যা উপনিবেশের কলে—
কারখানাগুলি মালের মতোই কাঁচা ঘরে তাকে রাখে
যেখানে পেয়েছে যাকে
এরই পরেই নামগান হয়, জাগে পল্লির রাধা
রাধাবল্লভী মাছিরা বসেই করে ফেলে দুধ সাদা
কাঁপে আমলকি বন
কাঁপে কলকাতা, কাঁপে পূর্বের সদ্যজাতীয় স্তন

জিয়া হক 

Kept

কেপ্ট 

...........
বলিউড কি কেবলই বম্বে (অধুনা মুম্বই, তবে কি মলিউড হবে!)? গোটা ভারতবর্ষ একটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। ভারতবর্ষ বানান যদি 'বি' দিয়ে শুরু হয় তাহলে টলিউড, কলিউড না, বলিউডই থাকছে। পুনেতে ছবির ইন্ডাস্ট্রি হলে নাম হত পলিউড। পলিউড আর পলিউট —কী কাছাকাছি, তাই না! কেন এমন মনে হল? যদিও আমার মনের ঠিক নেই। এখন একজন বেঠিক মনের লোকের কথা কেন পড়বেন? তবে এখানে কোনও পুঙ্গবের নাম রাহুল হলেই পয়লা আলাপে কোনো তন্বীকে (সৌন্দর্য কি শুধুই রোগাত্বের বিষয়? মনে হয় না) বলবে, রাহুল —নাম তো শুনা হোগা। আপনি বলবেন, তরুণরা এমনই হয়। তাহলে একজন মাঝবয়সী গলা ও গাল ভরাট করে কেন আলোচ্য তরুণটিকেই কেন বলবে, রিস্তে মে হাম তুমহারে বাপ লাগতে হ্যায়। এটা ভারি মজার। যদি ওই ভদ্রলোকের কোনো তন্বী (আবার তন্বী! স্বভাবদোষ এসব, সমাজদোষও বলা যেতে পারে) থাকে তাহলে তরুণটি তাঁকেই বলবে, বাপই তো, আপনি মাই বাপ ; আ সিমরান আ, জি লে আপনি জিন্দেগি।

আশ্চর্য লাগে। এই গল্পটিও এক সিমরানের। সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের স্কলার, তন্বী, ফ্যাব ইন্ডিয়ার স্লিং ব্যাগ ব্যবহার করে, রোজই নতুন লং স্কার্ট, হাতে থাকে জাঁ কেরুয়াক বা অ্যালেন গিনসবার্গ। হবে না কেন? তার বাবা রাজ্য সরকারের সচিব। কোন বিভাগের তা আজ আর মনে নেই। বাবার পদ আর পদবী মনে রাখতে গেলে যে কেউ ভাবতে পারে সিমরান নয়, আমি ভালবেসেছি তার আব্বাজানকে। সেটা সর্বৈব অসত্যি।

মাথাটা কেন খারাপ হয়ে গেল? শ্যামলশোভা বসুর চেম্বারে কে আর যেতে চায়? তাঁর পেশেন্ট মানে সমাজ তাকে মনোরোগী বা মানসিকভাবে পীড়িত বলে না, বলে পাগল। এটা খুব মুশকিলের। যে গতদিন অবধিও জানত এই সমাজের চোখে পাগলের জন্য কী কাঁটার পশমিনা পাতা রয়েছে সে শ্যামলশোভা বসুর আত্মীয় হলেও আত্মপরিচয় গোপন করবে। পশ্চিম দিকে সূর্যদয় হলে পৃথিবীর মৃত্যু আসন্ন। ধর্মগ্রন্থ বলে। কোন ধর্ম? থাক না। সিমরানের ওয়েলিংটনের ফ্ল্যাটটা কী নির্জনই না ছিল।
রিজাকে কে ভুলতে পারে? রিজা —রিজাউদ্দিন হায়দর, আমাদের পাহারাদার। রোগা, দাড়ি, পাঞ্জাবি, নকল রিস্ট ওয়াচের রিজাকে আমরা তিন বন্ধু ভুলতে পারি না। তবে এখানে একটা কথা আছে। তার রিস্ট ওয়াচই সব সময় ঠিক সময়টা দিত। অনুপম, শঙ্খশুভ্র, আর আমি। ত্রয়ী। অন্যায়টা দেখুন, রিজা কিন্তু আমাদেরই ছায়াসঙ্গী ছিল। একজন ছায়াসঙ্গীকে বন্ধু যে হবেই তা হয়ত অতি-যুক্তিবাদি মন নানা প্রমাণ সাজিয়ে নাকচ করে দেবে কিন্তু আমাদের অপরাধটা অন্য জায়গায়। ছিঃ ছিঃ। তাকে বলতাম তুই আমাদের প্রিয় বন্ধু। আসলে সে ছিল তিন অভিজাত 'সভ্য' - এর ফরমাশ খাটার মুনীষ। অনুপম প্রেমিকার সঙ্গে বাইক নিয়ে ড্রেনে পড়ে থাকলে রিজা দৌড়বে উদ্ধার করতে। শঙ্খশুভ্রের মাঝরাতে সিগারেট পান করতে ইচ্ছে জেগেছে, মিন্ট ফ্লেভার খুঁজে নিয়ে হাতে দিয়ে আসবে রিজা। সে রেসকিউ ওয়ার্ডেন কিন্তু সে স্বীকৃতি পাবে না, দাবিও করতে পারবে না। আর আমি তাকে কীভাবে ব্যবহার করেছি? ছিঃ ছিঃ।

মিষ্টি সিমরান। রাজ্য সরকারের সচিবের একমাত্র কন্যা। সেটা বড় কথা না। সে স্কলার। জে আর এফ। ভারতীয় দর্শন, বৈদান্তিক দর্শন —কী সব জটিলতার মধ্যেও মেয়েটি কেরুয়াক পড়ে। আমি বাংলা সাহিত্যের ছাত্র। বিষ্ণু দে নিয়ে একদিন সাড়ে সাতশো প্রশ্ন করেছিল, মনে আছে। আমি তাকে জীবনানন্দ আর সুধীন্দ্রনাথ পড়তে অনুরোধ করেছিলাম। বুদ্ধদেব বসু নয় কেন? তুমি কাকে দেখে ভয় পাবে, আশ্চর্য হবে —বনের বাঘ না খাঁচার বাঘ? এ সব আলোচনা রিজা কিছুই বোঝে না। পারিবারিক কারণেই তার পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি। ওর অশিক্ষাই ছিল, ছিঃ ছিঃ, আমাদের মূলধন।

পাহারা দিত রিজা। আমার বাড়িতে মা বাবা নিচের তলায় থাকত। বাবা ধুতি, মাড়হীন ফতুয়ার কমিউনিস্ট। মা কৃষ্ণপূজারিনী। রিজা বসে থাকবে সিঁড়িতে আর আমি সিমরানের বুকে মুখ রেখে শুয়ে থাকব আমার দোতলার পাঠকক্ষে। জ্বরো ভল্লুকের মতো সে বসে থাকত। এরপরও সিমরানের প্রতি তার শ্রদ্ধা ছিল চোখে পড়বার মতো। যেন কেউ কোনো পাপ করছে না। অশ্লীলতা করছে না। আমাদের যৌনতা পরবর্তী জলও সে সম্ভ্রমের সঙ্গে জোগান দিয়েছে। গুরুমাকে যেভাবে প্রণাম করে শিষ্যেরা, তার চোখেও সিমরানের জন্য তেমনই একটা ফুটফুটে প্রণাম রাখা ছিল।

ব্যানানা ফ্লেভার এনে দিয়েছিল সেবার সে-ই। ওয়েলিংটনের ফ্ল্যাটে সেদিন শঙ্খশুভ্র এসেছে। সে ইংরেজি সাহিত্য একবছর পড়ে ছেড়ে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে সাত মাস ক্লাস করে এখন বাংলা সাহিত্যে ফিরতে চায়। ও খুব ইন্সটিংটিভ। ভীষণ মেধাবীও। যা ভাল লাগবে না তা সে যতই অর্থকরী হোক ও সেটা ছাড়বে। একই কারণে কেমিস্ট্রিও ছেড়েছিল। ও যে পারেনি তা ভাবলে ভুল হবে। ওর ভাল লাগেনি। একটা বিষয় হল, যে মেধাবীটি বিজ্ঞান ত্যাগ করে, সামাজিক স্নেহাকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে শুধু ভালবেসে বাংলা পড়তে আসছে সে ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিচ্ছে। এই বিষয় বদল এমন কিছু মহান ব্যাপার না। যেভাবে বিজ্ঞান শেষ কথা নয়, যেভাবে সাহিত্য শেষ কথা হতে পারে না। কিন্তু তারপরও ঔদ্ধত্য বলছি তার কারণটা ছিল সমাজ রিয়ালিটিতে। বাংলা কেন মেধাবীরা পড়বে? এ এক অপরাধ। বাংলা সাহিত্যের ছাত্র একটা অপভাষা। শঙ্খশুভ্রের বাবা তার হাতখরচ বন্ধ করেছে। মটন কষা আর লাচ্চা পরোটা খাইয়ে তার আত্মাকে শান্তি দেয় সিমরান। হোটেলে যাবে কে? বাড়ির গেটে রেজা যখন আছে, আমাদের চিন্তার কিছু ছিল না। হঠাৎ সিমরান ব্যানানা ফ্লেভারের কথা বলে।  ব্যবহারকারী কারা? আমি ও সিমরান। ক্রেতা কে? ক্রেতা অবশ্যই রিজা। মটন পরোটা খেয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে শঙ্খ। আমরা দরজা বন্ধ করি। দরজার বাইরে বসে থাকে রিজাউদ্দিন হায়দর। রিজা ।

ত্যাজ্য পুত্র একজন হয়ে যাবে। ছেলেকে ত্যাগ তো সেই বাবাও করতে চাইবে না যে-বাবা জানে তার ছেলেটি আসলে তার নয়, বৌয়ের জিম ট্রেনারের। কঠিন কাজ ত্যাগ করা। ত্যাজ্য কন্যা আরো বিরল। অমরীশ পুরি তো শেষে হাত ছেড়ে দিলেন সিমরানের। কিন্তু সেই হস্তান্তর তো সম্পূর্ণ ত্যাগ নয়। বরং কন্যার চরিত্রের যে শেডসগুলি তিনি অনবহিত ছিলেন তা গ্রহণ করা। অনুপমকে আমার বাবা একদিন বাড়িতে ডেকে কমিউনিস্টদের কায়দায় তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করল। অনুপম যে ততদিনে রাসেল পড়েছে তা তিনি জানেন না। সে তর্কের পদ্ধতি জানে, কী গোপনীয়, কতটুকু প্রকাশযোগ্য তা তার জানা। সে প্রেম আর বন্ধুত্বের সংজ্ঞা জানতে চায়। ঠিক কোথায় গেলে একটা বন্ধু প্রেমিক হয়ে যাবে? বিছানায়? না, সে বিছানার কথা বলেনি। সে তো জেনে গেছে প্রতিপক্ষকে দিয়ে কীভাবে বলিয়ে নিতে হয়, চুপ করিয়ে দিতে হয়। আমার বাবা তাকে সেন্টিমেন্টাল জায়গায় এনে ফেলে। কিন্তু রাসেলের ছাত্রের কাছে সেন্টিমেন্টের মূল্য জিরো। বাবা আক্রমণের পথ নেয়, জানি না মেয়েটাকে নিয়ে তনুময় দরজা বন্ধ করে দেয়? আসলে এই জেরাটা রিজাকে করা দরকার ছিল, বাবা বোঝেনি। যেখানেই যাই সেক্সম্যানিয়াক মেয়েদের চক্রে পড়ে যাই বলে সারা পশ্চিমবঙ্গে বাবা আমাকে নিয়ে চাকরিতে বদলি নিয়েছে। সেক্সম্যানিয়াক শব্দটি বাবাই উচ্চারণ করেছে। সেটা আমাদের ভোকাবিউলারিতে রসশব্দ হিসেবে স্থান পেয়েছে। কিন্তু অনুপম সমস্ত জেরা জরিমানার অনেক ঊর্ধ্বে। যে ছেলে নিজের ধর্ম মায়ের মেয়েকে বুদ্ধগয়া যাওয়ার পথে মোটর গাড়িতে চুমু খায় সেই ধ্যানতাপসের থেকে তথ্য জোগাড় করা লেনিনেরও ক্ষমতার বাইরে। ধর্ম বোনের সে কী কান্না! ধর্মভাইয়ের চুমু? ছি ছি, এ তো ব্লাসফেমি। তোকে বিয়ে করব, বিয়ে করব, কাঁদিস না, অনুপম ধর্মবোনের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। বিখ্যাত বা বি সি এস অফিসার না হলে ধর্মবোন বিয়ে করবে না —শর্ত। ডব্লিউ বি সি এস-এর জন্য তখন পড়াই তার প্রেম নিবেদন। শুধু আর্জেন্টিনার রাজধানীটা গুলিয়ে যায়। মারাদোনাকে ঘৃণা করতে শুরু করে ব্রাসিলিয়াতে যোগ দেওয়া অনুপম বিখ্যাত 'বড়' মানুষদের আত্মজীবনী পড়ে ধর্মবোনের অজ্ঞাতে। আমার বাবা তাকে শ্রেণিশত্রু ভাববে কিনা ঠিক করতে পারে না।

২০ কোটি টাকার মালকিন। অবাস্তব শোনালেও এটাই সত্যি। সিমরান তখনই কুড়ি কোটির মালকিন। ওয়েলিংটনের মোড়ে তাদের তিন তলা বাড়ির দামই তো কয়েক কোটি। হিসাবরক্ষকের জাতি বাকি হিসেব নিশ্চয়ই টের পাচ্ছে। প্রেম তার কাছে খানিকটা কেয়ার টেকার নির্বাচনের মতো, যে আগলাতে জানবে, অকর্মা হলেই ভাল। এখানেই এত কাজ। আমি একা না, সে বহু দোকানে পুরুষ খুঁজে বেড়াচ্ছিল। পরে বুঝেছি। সে কারো পোষ্য নয়, সে-ই পুষবে। প্রেম তার কাছে কতখানি 'প্রেম', তা নিয়ে সন্দেহ হবে যে কোনো 'এলিটিস্ট' মধ্যবিত্তের। আমাদের প্রেমটা ধীরে ধীরে দরজা খোলা আর দরজা বন্ধ করার মধ্যে ঢুকে পড়ছিল। ফ্লেভারড প্লাস্টিক কিছু মাঝখানে। সলমন রুশদি পড়ছে সিমরান। তার বৈদান্তিক দর্শনের আচার্যদের নাম জানি না। বিষয়টি খুব সহজ। তাকে বোদলেয়র সাজেস্ট করলে বইপাড়া থেকে কেনে কিন্তু সে কখনও দর্শনের কোনো বইয়ের পরামর্শ দেয় না। ছিটকিনিটা ভেঙেই গেল।

আমাদের ব্রেক আপ হল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কৃতি ছাত্র, আমলার পুত্রদের সঙ্গে তাকে দেখা যেতে লাগল। ব্রেক আপের পর আলিয়াকে পেলাম। কার্ভি, মধ্যমেধাবী, শাড়ির আলিয়া। কুমার শানুর ভক্ত। তার পদবী দাস চক্রবর্তী। নানা রকমের খোঁপা বাঁধা জানত। একদিন কুঞ্জবন পার্কের গেটে সিমরানের সঙ্গে দেখা। তার পাশে নাদুসনুদুস এক ছেলে। চোখে চশমা। সফটওয়্যারের লোক বলেই মনে হবে। বুট ভীষণ চকচকে। এত চকচকে যে প্রণাম করতে হলে হাত ধুতে হয়। আলিয়া 'গাওয়া হ্যা, চান্দ তারে গাওয়া হ্যা' গুনগুন করছে, নিশ্চয়ই আমার কোনো কথায় এমন কিছু ইঙ্গিত পেয়েছে, বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী, তবে সে বড়ই 'অন্তর্নিহিত অর্থ' খোঁজে সব কথায়। সিমরান তাকালোও না। সে হয়ত আমাদের গ্রুপের যাবতীয় স্মৃতি ময়লার স্তূপে ফেলে দিয়েছে ততদিনে। ঘাস একটা তুলতে নেই, ঝাড় তুলতে হয়।

বিয়ে করছে সিমরান। ন'মাস পরের কথা এটা। হঠাৎ খবর পেলাম। আমরা তিন বন্ধু খুবই আশ্চর্য হয়েছি। যদিও তিনজন নয়, আশ্চর্য হয়েছি দু জন কেননা তথ্যটি এনেছে অনুপম। সে বড্ড চুপ। কিন্তু বিয়ে? সিমরান? কাকে? কোনো কোটিপতির বাচ্চাকে নিশ্চয়ই। তবে সে তো কারো পোষ্য হবে না, পোষ মানাবে। কেন একজন ধনীপুঙ্গব তাহলে ওই তন্বীকে বিয়ে করবে কেননা সেও হতেই পারে তার সমমনস্ক। ফিট করবে কেন সে, ফিট সে করাবে তো বরং। অনুপম চুপ।
শঙ্খ বাংলা সাহিত্য নিয়ে ইতিমধ্যেই যাদবপুরে ভর্তি হয়ে গেছে। কবিতার একটা ছোট পত্রিকা প্রকাশ করতে চায়। তার দাবি একটাই, কৃত্তিবাস, হাংরি-শ্রুতি আন্দোলনকে ডুবিয়ে দিতে হবে। সিগারেট ধরেছে কয়েক মাস। চারমিনার ধরিয়ে 'যার জন্যে শ্যামল বসুর কাছে যেতে হল তনুময়কে, তাকে ছাড়া অন্য একজনকে বিয়ে করছে জঘন্যটা!' বলে সে থুতু ফেলে, 'দার্শনিক স্লাট, শালী।  কোন জন্তুকে বিয়ে করছে রে? '। শঙ্খ ভীষণ উত্তেজিত।
'কাকে বিয়ে করছে সে? কাকে?'
কে সে?
অনুপম শান্তভাবে বলল, রিজাকে। তুষারপাতের মতো খবরপাত হল।

বোঝা যায়। বলিউডে ক্রিস্টোফার নোলান নেই। কী হবে শেষে বোঝাই যায়। এখানে টুইস্টের বড় অভাব। তারপরও গোটা ভারতবর্ষ তার রক্ষিতা। হলের একদম পেছনের সিটগুলো আমার পছন্দের। পাশের সিটে ফাঁকা থাকলে আরও ভাল লাগে। আমি নীল অন্ধকারে দর্শকদের দেখতেও ভালবাসি। তারাও বড়তর সিনেমার অংশ। কিন্তু কেন সিনেমা চলাকালীন একজন পাহারাদার বাইরে বসে থাকে? লাইট ম্যানদের মুখে কখনও হাসি দেখিনি। পাহারাদার কি এই কারণে থাকে যে কেউ যেন দর্শকদের মগ্নতার সুযোগ নিতে না পারে? খুব কমই শুনেছি যে পাহারাদারই হয়ে উঠেছে হলের মালিক। অস্বীকার করব না, সিনেমা বিষয়ে আমি খুবই কম জানি।



নমস্কার
জিয়া হক

Wordly God

মুহূর্তের অনিবার্যতা

..........................
শব্দ তাঁর অধীন। ধ্বনি, বর্ণ, বাক্য তাঁর দাস। অনুপ্রাস, যমক, সমাসোক্তি, বক্রোক্তি তাঁর। তাহলে কবিতা কে 'রচনা' করেন? কবি নাকি তিনি? তিনি তো সর্বজ্ঞ, অদ্বৈত, ভাবনাতীত — তাঁর রচনা-নির্মাণ কেমনতর? আদিতম ও শেষতম পদকর্তা কি তিনিই? তাহলে মানুষ যা 'গড়ে', তা কী? সবই কি প্রতিফলন মাত্র? মূলের অনুকরণ? মৌলিকতা শব্দটিই কি ততটাও 'মৌলিক' নয়? সকলেই যে মৌল বস্তু যা কিনা সার তার সন্ধান করে নিয়মিত। তাহলে এ সবই অনর্থক? শ্রম কি পন্ড এইখানে? নিরীশ্বরবাদীরা বলবেন, এ সবই অজ্ঞানতা, ভীতিজনিত আনুগত্যের প্রচারণা, শক্তির চিরকেলে সাধনার যুক্তি, পলায়নপর নির্বিঘ্নতার চর্চা। প্রমাণ কই, তথ্য কোথায়, দৃশ্যমান কি কিছু আছে? শুধু বিশ্বাসের কী মূল্য আছে? 'বিশ্বাস' ততক্ষণ নিরপরাধ যতক্ষণ তা 'অপর'কে আহত না করে। কারও বিশ্বাস, এখানেই বিশেষ মসজিদটি ছিল। অতএব যা সাম্প্রতিকের নির্মাণ, 'বাস্তবতা' তা অপসারণযোগ্য। এই বিশ্বাসের অাড়ালের বাস্তবতার দিকে দেখা দরকার জরুরি অবস্থায়। কোন যুক্তি, কাদের যুক্তি, কেমন যুক্তি ক্রিয়াশীল আছে নিহিত বৈঠকে। এই বিশ্বাস কি অনায়াস নাকি ম্যানুফ্যাকচারড। এই বিশ্বাসে ভক্তি নেই, আছে হিংসা। সমষ্টির কল্যাণকামনা থাকে এমন বিশ্বাসে? শিবরাম চক্রবর্তীর 'দেবতার জন্ম' ছোটগল্পটি স্মর্তব্য এ প্রসঙ্গে। কীভাবে গড়ে ওঠে একটি 'বিশ্বাস' চাঁই তা শিব্রামীয় শৈলীতে জানা গেছে। যে পাথরখন্ড গল্পকথককে আহত করত রোজ, সেই পাথরই হয়ে উঠল শিবের অংশ এবং ফলত তার নিমিত্তে মানুষ বানিয়ে তুলল মন্দির। 'সবার' বিশ্বাস যে পাথরের চাঁইটির গতায়াত পাতাল অবধি যার কিয়দংশ মানবকল্যাণে উপরিতলে জেগে রয়েছে। এ অপার্থিব, এ দৈব। নিরীশ্বরবাদী গল্পকথকও শেষাবধি রোগ-মৃত্যুভয়ে প্রণাম করে বসে পারিপার্শ্ব খেয়াল করেন। কেন তাকে পারিপার্শ্ব দেখতে হয়? এখানেও সেই মধ্যবিত্তীয় ভাবমূর্তি সচেতনতার আদুল বিজ্ঞাপন। তবে প্রশ্নটি অন্যত্র। ভাবছি, যে-লোকটি অ-গোচরে একটি নিরীহ পাথরকে পুঁতে তার উপর দেবত্ব আরোপ করে এমন খুঁতবিহীন 'নাটক'-এর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেন, তাঁর 'বিশ্বাস'-এর জায়গাটা ঠিক কেমন? শিবরাম চক্রবর্তী সেই লোকটির মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দেননি। কেননা তাঁর সমালোচনার লক্ষ্য 'আম' জনতা। গল্পকথক এই ভিড়-এরই প্রতিনিধি। আমাদের ভাবনা হল, তাঁকে বিশ্বাস করার জন্য যেমন কেউ যুক্তির সন্ধান করে, বিপরীতে তাঁকে অবিশ্বাস করবার জন্যও কেউ খোঁজে যুক্তিপ্রমাণাদি। দুজনেই সময় হন্তারক। কী সাবলীলায় তারা অনর্থের চর্চা করে। বিবেক ও অনুভব যদি বলে তিনি আছেন, তো তিনি নিশ্চয়ই আছেন। এরা যদি বলে নেই, তাহলে তিনি আপনার কাছে, আপনার জন্য নেই। আপনি এবার যখন রচনা করছেন কবিতা তখন কবিতার উপাদানগুলি আপনার স্বোপার্জিত। ভাষাবিশ্ব থেকে চয়ন করে এনেছেন যা অমোঘ ও অনিবার্য। ইশ্বরবাদী কবিতালেখকের ক্ষেত্রেও তাই। তিনি শুধু বলবেন, আমি কেবল দানা রুয়েছি মাত্র, প্রাণ দিয়েছেন তিনি। সেই তিনি।
কেউ বলেন, আমি শব্দের সন্ধানে বের হই। কেউ বলেন, আমার কাছে শব্দ আসে। বিষয়টি বেশ জটিল, যেমন জটাধারী ওই প্রক্রিয়াটি। শব্দ কি কোনও গাছ, বাজার, দোকান যে তার কাছে যেতে হয়? শব্দ কি বৃষ্টি, হাওয়া, আওয়াজ যে এসে যাবে? মস্তিষ্কের ডিভাইসে শব্দভান্ডার তো রয়েইছে। তা শুধু একটু উস্কানির অপেক্ষায় থাকে। এই 'উস্কানি'টি কারও বাইরে থেকে আসে, কারও ভেতর থেকে। যদিও এই কথাও সম্পূর্ণ সত্য নয়। 'বাহির'-এর যে উদ্দীপনা প্র-তাড়িত করে কবিতালেখককে, তা কি আর বাইরের থাকে? সে তো হয়ে ওঠে অন্তর্গত। আভ্যন্তরীণ। একটি কবিতা তাই বাইরে-ভেতরে দু জায়গায়  'পড়ে' থাকে। তাদের দেখা হয়ে যাওয়ার মুহূর্তটি কবিতার মুহূর্ত।


নমস্কার
জিয়া হক 

Little laureate and

ছোট লোক, বড় লোক

................................
—তিনি শিশু সাহিত্যিক।
— তিনি শিশু? নাকি সাহিত্যিক?
— তিনি সাহিত্যিক। তবে শুধু শিশুদের জন্য লেখেন।
— শিশু মানে কত বছরের?
— যারা সদ্য পড়তে শিখেছে তারাই মূলত তাঁর পাঠক।
— ও মানে তিনি বর্ণপরিচয় ধরনের বই লেখেন, তাই তো?
— না, তা কেন হবে। আসলে আমার বলতে একটু ভুল হয়েছে। তিনি ছোটদের জন্য লেখেন।
— ছোট আর শিশুর মধ্যে পার্থক্য কী?
— শিশু মানে যারা স্তন্যপায়ী আর ছোট মানে যারা মানসিকভাবে এখনও পাকাপোক্ত নয়।
— অনেক বড় লোক তো ওই যে বললেন 'মানসিকভাবে' এখনও 'পাকাপোক্ত' নয়, তারা কি এর আওতাভুক্ত?
— বড় লোকেদের 'ছোট' হয়ে থাকাটা সমস্যা কিন্তু যারা শিশু তাদের ছোট হয়ে থাকাটা সমস্যা না।
— কিন্তু যে ছোটরা বেশ 'বড়', মানে যাকে আপনারা ইচড়ে পোক্ত বলেন আর কি, তারা কি ওই লেখকের পাঠক? আর 'পাকা' বলতে আপনি কতটা কম 'কাঁচা' বোঝাচ্ছেন?
— পাকা মানে যারা প্রেম, যৌনতা, রাষ্ট্র, কমিউনিজম, কিউবিজম বোঝে। আর কাঁচা বলতে যারা ক্ষিদে, কান্না, হিসি, বেড়ু, কোল বোঝে।
— কমিউনিজম, কিউবিজম তো আমিই বুঝি না, তাহলে আমি কি শিশু শ্রেণিভুক্ত? আর কাঁচা বলতে যা যা বললেন তা ছাড়া আমি অন্য সব বিষয় অল্পই বুঝি, তাহলে আমি কি কাঁচা?
— না না, একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমা আছে। আপনি সেটা পেরিয়ে গেছেন।
— বয়সসীমা কত ধার্য হয়েছে? কোন সংগঠন ধার্য করল?
— সেভাবে সাল তারিখের বয়সসীমা নেই তবে যারা নিজে হাতে ভাত মেখে খেতে পারে তারা আর শিশু নয়।
— আমার এক কাকার ডান হাত অকেজো। তাঁকে এখনও ভাত মেখে দিতে হয়। তিনি কি শিশু হতে পারবেন?
— তা কেন হবে। রোগশোক অন্য জিনিস। এ তো ব্যতিক্রম। তবে তিনি যদি জড় প্রকৃতির হন তাহলে অন্য কথা।
— প্রকৃতি তো জড়ই।
— আমি সে জড়র কথা বলছি না। আমি বলতে চাইছি, মানসিকভাবে পোক্ত যদি না হন।
— তিনি মানসিকভাবে খুবই দুর্বল। সামান্যতেই ভেঙে পড়েন।
— না না আমি ও ভেঙে পড়ার কথা বলছি না। মানসিক প্রতিবন্ধকতার কথা বলতে চাইছি।
— হ্যাঁ, তার মনে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। তিনি ভীষণ কৃপণ। মনকে প্রতি মুহূর্তে বন্ধ করে রাখেন।
— না, এ লোক শিশু নন। শিশু মানে ধরো যে চাঁদকে একটা দূরের বাল্ব মনে করবে।
— চাঁদকে যদি ঝলসানো রুটি মনে করে তাহলে হবে না?
— না।
— কিন্তু শিশুদের তো এই লেখা পড়তে হয় অনেক সময়। তাহলে তারা কি অনধিকার প্রবেশকারী?
— দেখুন, শিশু সাহিত্যিক হতে গেলে 'বাড়ি'র সঙ্গে 'গাড়ি'র মিল দিতে হবে।
—'আড়ি' বা 'হাঁড়ি' দিলে হবে না?
— হ্যাঁ, তাও হবে।
— কী দেওয়া যাবে না?
— বাড়ির সঙ্গে তরবারি বা নরনারীর মিল চলবে না।
— আপনারা কি কোনও তালিকা প্রকাশ করেছেন? এমন একটা মহাগ্রন্থ হাতের কাছে থাকলে বড় সুবিধে হয়।
— ঠিক বলেছেন। শিশুদের জন্য লেখা ভীষণরকম কঠিন একটা কাজ।
— গাড়ি-বাড়ি মেলানো ভীষণরকম কঠিন কাজ বলছেন?
— আপনি অস্বীকার করছেন মানেই তো শিশুদের কাগজে আপনার লেখা বন্ধ হয়ে গেল। আচ্ছা যাইহোক, পিসির সঙ্গে কী মিল দেবেন বলুন তো?
— সহজ তো — হিসি।
— হল না। ছোটদের আপনি অপভাষা শেখাতে পারেন না। তারা ছোট বলে তাদেরকে ছোট করবেন না।
— তাহলে কী মিলবে বলে দিন।
— সব বলে দেব। তার আগে বলুন, পাখির সঙ্গে কার মিল দেবেন?
— কেন ডাকি, রাখি, চাখি, কাকি, বাকি, মাখি, দেখি, ফাঁকি, নাকি, লাখ-ই, কত হয়।
— কিন্ত আপনি 'খি'র সঙ্গে 'কি'  মেলাচ্ছেন। শিশুরা কি বুঝবে এত জটিলতা?
— তাহলে কী মিলবে?
— সেটা শিশু সাহিত্যিককে সাধনার মাধ্যমে বের করতে হবে।
— সাধনা?
— কী ভেবেছেন আপনি, এতই সহজ সব? কা-এ কা মেলানো, গা-এ গা মেলানো, পা-এ পা মেলানো — অনেক সাধনা করতে হয়।
— ওই শিশু সাহিত্যিক কি একজন সাধক?
— সে কি আর প্রশ্নের অপেক্ষা রাখে?
— তিনি নিশ্চয়ই শিশুদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয়?
— জনপ্রিয় বলবেন না, বলুন শিশুপ্রিয়। জন বললেই বড় লোক বোঝায়। এগুলো বুঝতে হবে।
— কিন্তু আমার পরিবারে সব মিলিয়ে প্রায় ৭জন শিশু আছে।  কই তাদের তো কখনও তাঁর নাম করতে শুনিনি।
— আপনি শিশুদের ভাষা বোঝেন? শিশুদের ভাষা আর পাখিদের ভাষা এক। বোঝা যায় না।
— তাহলে তিনি নিশ্চয়ই পাখিমহলেও খুব জনপ্রিয়?
— আবার ভুল করছেন। পাখিরা জন হবে কী করে?
— হ্যাঁ ঠিক, পাখিপ্রিয়।
— এই তো, এই তো... এবার ধীরে ধীরে সব বুঝতে পারছেন।
— কিন্তু, শিশু সাহিত্যসভায় শিশুদের দেখতে পাই না কেন?  একজন শিশু অনেকজন শিশুর জন্য একটা শিশুকবিতা লিখে পাঠ করছে —এটা কি আরও ভাল না? আমি তো শিশু সাহিত্য উৎসবেও বুড়োদেরই দেখি।
— আপনি একটা কথা ভুলে যাচ্ছেন।
— কী কথা?
— শেক্সপিয়রের সেই বাণী, মনে করে দেখুন।
— কী সেই বাণী?
— আরে আপনি তো দেখছি কিছুই জানেন না। শেক্সপিয়র বলেছিলেন, বার্ধক্য হল দ্বিতীয় শৈশব।
— তাতে কী প্রমাণ হল?
— শিশু সাহিত্যসভায়, শিশু সাহিত্য উৎসবে তাই বুড়োদের ভিড়।


জিয়া হক