প্রিন্সিপিয়ার ইতিহাস এবং : অর্পণ পাল



এই কাহিনির শুরু ১৬৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে। সেবারে লন্ডনে ঠাণ্ডাটাও পড়েছিল একেবারে হাড়কাঁপানো। টেমস নদীর জল জমে গিয়েছিল পুরো। সেই রকম এক ঠাণ্ডা দিনে রয়্যাল সোসাইটির একটি অধিবেশনের শেষে সেখানকার তিন সদস্য-বন্ধু কাছাকাছি একটি কফি হাউসে কফি খেতে আর গল্প করতে একত্রিত হলেন। তিনজন আমাদের পূর্বপরিচিত— এডমণ্ড হ্যালি, রবার্ট হুক আর ক্রিস্টোফার রেন। তাঁদের মধ্যে শুরু হল গ্রহের গতিপথ নিয়ে আলোচনা। কিন্তু সে পথ কেমনতর, তা তো অনেক আগে থেকেই জানা। জোহানেস কেপলার তো পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগে তথ্যপ্রমাণ-সহযোগে বলে গিয়েছিলেন, গ্রহের গতিপথ হবে উপবৃত্তাকার। সে না হয় হল, কিন্তু গ্রহেরা কোন সূত্র মেনে ঘুরে চলে সূর্যের চারপাশে?
এখন এই ‘রয়্যাল’ দলটি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছে যে গ্রহেরা মেনে চলবে মহাকর্ষ বলের বর্গের ব্যস্তানুপাতের সূত্র। কিন্তু একটাই সমস্যা, তাঁদের কেউ এটা প্রমাণ করতে পারছেন না গাণিতিকভাবে। মহাকর্ষ বল বর্গের ব্যস্তানুপাতের সূত্র মেনে চললে যে গ্রহের চলার পথ উপবৃত্তাকার হবেই, এটা প্রমাণ করা খুব দরকার। নইলে কোন দিন দেখা গেল নতুন একটা গ্রহ খুঁজে পাওয়া গেল যে মহাকর্ষ বলের ওই সূত্র মেনে চলেও হয়তো অন্য কোনওরকম পথে ঘোরে। ক্রিস্টোফার আর এডমণ্ড তো স্বীকার করে নিলেন, তাঁদের দ্বারা এই প্রমাণ করা সম্ভব না। রবার্ট হুক চিরাচরিত পথেই হার না মানা ভঙ্গিতে বললেন, তিনি যদি একটানা এই সমস্যাটা নিয়ে লেগে থাকেন, তবে নিশ্চয়ই সমাধান করে ফেলতে পারবেন।
ক্রিস্টোফার এই শুনে বললেন, যদি এডমণ্ড বা হুক, এঁদের কেউ দু’মাসের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারেন, তবে তিনি এই মুহূর্তে বাজি ধরলেন, তাঁকে দুই পাউন্ড দামের একটি বই উপহার দেবেন।
এরপরে আড্ডা শেষে যে যার বাসায় ফিরে গেলেন। হ্যালিকে পারিবারিক ব্যবসায় এখন সময় দিতে হয় আগের চেয়ে বেশি, কারণ তাঁর বাবা এক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন সদ্য। তো ব্যবসার কাজে সময় দিতে হলেও তাঁর মাথার মধ্যে কিন্তু ঘুরছিল ওই গ্রহের গতিপথ সংক্রান্ত সমস্যাটা।



একদিন হ্যালি ভাবলেন একবার কেমব্রিজ থেকে ঘুরে এলে কেমন হয়?
যেমন ভাবা তেমন কাজ। আগস্ট মাসে একদিন কেমব্রিজের ট্রেনে চেপে বসলেন এডমণ্ড হ্যালি, উদ্দেশ্য ট্রিনিটি কলেজে গিয়ে দেখা করা সেই মানুষটির সঙ্গে, যিনি এই সমস্যার সমাধান করতে সবচেয়ে উপযুক্ত লোক।
নিউটন তখন নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে রেখেছেন। কলেজে তাঁকে ক্লাসও নিতে হয়না আর, ছাত্ররা, তিনি দেখেছেন প্রাকৃতিক দর্শনের ক্লাস করতে মোটেই আগ্রহী নয়। এমন অনেকবাওই হয়েছে, তিনি শূন্য ক্লাসরুমে একাই লেকচার দিয়ে গিয়েছেন। এখন আর সেটাও করেননা।
ব্যক্তিগত জীবনেও শোকের সময় চলছে তখন তাঁর। বছর পাঁচেক আগে তাঁর মা হানা ম্যালিগন্যান্ট জ্বরে আক্রান্ত হয়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। লিংকনশায়ারে তাঁর কাছে গিয়ে নিউটন শেষ কয়েক দিন সেবা করবার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু মাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেননি।
তবে মায়ের মৃত্যুতে নিউটন আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়েছেন, এটাও বলে নেওয়া দরকার। তিনি ছিলেন বড় সন্তান, সুতরাং মায়ের বেশিরভাগ সম্পত্তি তিনিই পেলেন।
আরও একটা আঘাত পেলেন নিউটন, যখন তাঁর কুড়ি বছরের গৃহসঙ্গী তাঁর সঙ্গ ছেড়ে চলে গেলেন অন্যত্র। এই সঙ্গীর নাম জন উইকিনস, বা উচ্চারণের তফাতে অনেকে উইকেনস বলেন (নিউটনের সঙ্গে তাঁর সমকামী সম্পর্ক থাকলে থাকতে পারে বলে অনুমান করেছেন অনেকে, তবে এর কোনও সলিড প্রুফ নেই)। স্টক এডিথ-এর পেরিশ চার্চের মিনিস্টারের দায়িত্ব নিয়ে চলে যান তিনি; বিয়েও করেন, পরে নিকোলাস নামে তাঁর একটি ছেলেও জন্মায়, সুখেই ঘরকন্না করতে থাকেন উইকিনস। বেচারা নিউটন হয়ে পড়লেন সঙ্গীবিহীন। পরবর্তীকালে তাঁদের আর কখনও দেখাসাক্ষাতই হয়নি, সামান্য দু’চারটে চিঠির আদানপ্রদানেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে তাঁদের যোগাযোগ।
সব মিলিয়ে নিউটন এখন বিষণ্ণ, উদাসীন এক জীবন কাটান। ভালো করে খান না, তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী হামফ্রে নিউটনের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় এইসময় তিনি টেবিলে খেতেও বসতেন না। মাঝেমাঝে দু’এক চামচ খাবার ইচ্ছে হলে মুখে দিতেন, আর তাঁকে দেখেই বোঝা যেত— সারাক্ষণই কিছু একটা নিয়ে যেন ভেবেই চলেছেন। আপনমনে পায়চারি করেন, রাতে ঘুমোতে যান দেরি করে, সকালে উঠে পড়েন পাঁচটা ছ’টার মধ্যে। শুতে যাওয়ার সময় পোশাকও বদলান না; চুল অবিন্যস্ত থাকে, চিরুনির স্পর্শ পড়ে না। এই ধরনের আচরণ সাহেবদের কাছে একবারেই অপ্রত্যাশিত। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার, তিনি এইসময় তারিখ বা দিনরাত সম্বন্ধেও উদাসীন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর এইসময়কার চিঠিতে বা লেখাপত্রে প্রায়ই দেখা যায় ভুল তারিখ বা বার লিখে ফেলেছেন।
হ্যালি এসব কিছুই জানতেন না। তাঁর সঙ্গে নিউটনের এর আগে একবারই সাক্ষাৎ এবং আলাপ-পরিচয় হয়েছিল লন্ডনে, এবারে তিনি যে এখানে আসছেন, সেটা চিঠি লিখেও জানাননি। তবে এসে দেখলেন, তাঁর আগমনে নিউটন বিরক্ত হন নি মোটেই। বরং বেশ স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের কথাবার্তা আরম্ভ হল।
অন্য নানা প্রসঙ্গে কিছু কথাবার্তা হয়ে যাওয়ার পর আসল প্রসঙ্গ এল; নিউটনকে হ্যালি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, যদি একটা গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক হারে মহাকর্ষ বল অনুভব করে, তবে আপনি কী মনে করেন, ওই গ্রহের গতিপথ কীরকম হওয়া উচিত?’
নিউটন, শুনেই নাকি বলে ওঠেন, ‘কেন, উপবৃত্তাকার!’
হ্যালি তো আনন্দ আর উত্তেজনায় হতবাক, আমতা আমতা করে বললেন, ‘কী করে জানলেন?’
নিউটন স্বভাবসিদ্ধ শান্তভাবে উত্তর দিলেন, ‘আমি কষে দেখেছি।’
‘তা আমাকে সেই হিসেবটা একটু দেখাতে পারেন?’
নিউটন এই কথা শুনে কিছুক্ষণ তাঁর কাগজপত্র উল্টেপাল্টে দেখলেন, তারপর বললেন, ‘নাহ, খুঁজে পাচ্ছি না। আচ্ছা ঠিক আছে, আর একবার কষে পরে তোমায় পাঠাব’খন।’ [*/ নিউটন-হ্যালি এই কথোপকথনের কথা জানা যায় অনেক বছর পরে এক ফরাসী আব্রাহাম দি ময়ার-এর লেখা থেকে, ইনি সেইসময় নিউটনের সঙ্গেই থাকতেন, তবে তাঁর কথা পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য না যদিও; কিন্তু কী আর করা যাবে, এ ছাড়া আর কোনও স্মৃতিকথা নেই যে কারও!]
নিউটনের জীবনীলেখক অনুমান করেন, তাঁর এই হিসেবটা কষে ফেলবার পর সেটা আবার হারিয়ে ফেলার কথাটা একেবারে মিথ্যে। আসলে তিনি চেয়েছিলেন তিনি যে এটা পেরেছেন এই কথাটা ছড়িয়ে পড়ুক; আর পরে তিনি যখন এটা সত্যিই কষে সবাইকে দেখাবেন, তখন এর সময়কাল কিছুটা আগের বলে চালানো যাবে।
তবে এটাও ঠিক, নিউটন কোনও একটা মনোমত সমস্যা পেলে সেটার সমাধান শেষ না করা অব্দি থামতেন না। সুতরাং এই হিসেবও দিন রাত খেটে তিনি অবশেষে করে ফেললেন।
সেই বছরেই নভেম্বর মাসে হ্যালি একটা ন’পাতার চিঠি পেলেন। তাতে সুন্দর করে গুছিয়ে গ্রহের গতিপথ আর বর্গের ব্যস্তানুপাতিক সূত্রের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা আছে। আর এই লেখাতেই একটা সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, ব্যাপারটা পরে বই হয়ে উঠতে পারে!


লেখাটির ল্যাটিন নাম ‘De Motu Corporum in gyrum; ইংরেজিতে দাঁড়ায় – ’‘On the Motion of Bodies in an Orbit’। বিজ্ঞানের ইতিহাসের একটি বিখ্যাত পেপার। জানুয়ারিতে যে সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন তিন মূর্তি, সেটার সমাধান অবশেষে এল নভেম্বরে। আনন্দিত আর বিস্মিত হ্যালি আরও একবার কেমব্রিজে ছুটলেন নিউটনকে জিজ্ঞেস করে আসতে, তাঁর পেপারটি রয়্যাল সোসাইটিতে পেশ করা যাবে কি না।
নিউটনের সম্মতিতে ডিসেম্বর মাসের দশ তারিখে রয়্যাল সোসাইটির মিটিং-এ হ্যালি পেশ করলেন সেই পেপার। তখন সোসাইটির নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন স্যামুয়েল পেপিস। সকলের সম্মতিতে ফেব্রুয়ারি মাসে এই পেপারটি প্রকাশিত হল সোসাইটির ট্র্যাঞ্জ্যাকশনে।
তবে নিউটন পেপার লিখেই ক্ষান্ত হলেন না, তখন তাঁর মনের মধ্যে ভাবনার স্রোত বইতে শুরু হয়ে গিয়েছে— এই পেপারটাকে ফুলিয়ে বইয়ের আকার দেওয়ার। সুতরাং আগামী কয়েক মাসের জন্য তিনি তাঁর অ্যালকেমিচর্চা সাময়িকভাবে থামিয়ে দিলেন, টানা পনেরো মাসের পরিশ্রমে শেষ হল এই বইয়ের প্রথম অংশের খসড়া। 


ক্রমশর

দ্বিতীয় পর্ব

[*/ Gale E. Christianson-এর নিউটন জীবনী থেকে এই অংশের অনেক তথ্য নেওয়া হয়েছে।]



কমদামী বাজার : জিয়া হকের দুইটি কবিতা


প্রথম
প্রয়োজন না হলে জাতির জন্যে লেখা গান কে আর সময় ব্যয় ক'রে শোনে

তার সুর আরোপিত, মনে হয় কেউ বলে, দেশের বিভিন্ন চার কোণে

আমাদের দলের ভেতরে

লৌকিকতার থেকে লোক মুছে গেছে

যাদের ভাসার ঢং
        ঘৃণা করেছিল

বীরখালি গ্রামে শুধু তাহাদের ছায়া পড়ে আছে

দ্বিতীয়
আমি, মনে হয়, গতিপ্রকৃতির নীচে নেমে গেছি
নীচে শুধু আমি ব'লে আমার মতন গতিপ্রকৃতির
কিছুজন থাকে।
যার যৌবন আসে, কাছে, দূরে, ছেড়ে চলে যায়
বালিশে মাথা দিয়ে না শুলে বালিশ ঠাণ্ডা হয়ে থাকে
পুকুর কাটার জন্যে পুকুরে নেমেছি। সেটা নীচে নামার
মতো ভীতি। আমি পেয়েছি। মানুষদের কাজে আসে ব'লে
মাছেদের, মাছিদের, কোনও কাজেই লাগে না এই জল। মাছেরা
অমূলক কথা কম বলে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও তারা জেগে থাকে
মানুষের চেয়ে বেশিক্ষণ তাদের চোখ খোলা আছে। আমি বলি--
ওই ঘাটে বসা ঘষে রাখা রাত্রির ডিশখোলাদের
ব্যবহৃত হয় আর ব্যবহার করা মিলে সমাজের গতিপ্রকৃতির
নীচে নেমে বহু দেখি ওপর ব'লে কিছু নেই; সেখানে রাতের গায়ে
মানুষের কমদামী বাজার বসেছে;
জড়ুলের ঘষামাজা দেখে দেখে মাছের মতন চোখ
যাদের অসংখ্য খুলে গেছে,
আমি যাদবপুরে অনেককে দেখেছি, সার্কাসে কেউ কেউ ছিল
প্রতিভাপূর্ণ ব'লে পাশ কেটে সাধারণতের মধ্যে গেছি
সকলের কান আমি নীচ থেকে চিনতে পেরেছি
অ-নীচু, অ-উঁচুর তলা দিয়ে নিম্ন চলে যায়, চলাচল উচ্চ ক'রে থাকে
যাকে আমি মান্যতা দিয়েছি
হয় নম্রতাকে ভালোবাসে ব'লে কখনও সে নীচ হয় 


চিত্র : উইলিয়ম ব্লেক


বন্দীশালার ছড়া : এপ্রিল ২০২০


আলো আসে বঙ্গবিদ্যা, অ-পূর্বের জাফরি পথ ধরে
আমার কল্যাণ হয় বন্ধুবৃত্তে, যদিও তা কাল্পনিক স্তরে
বিদ্যা প্রাঞ্জল তাই বিদ্যাধরী তীর
ভুল মন্ত্র, ভুল কন্যা করেছেন অস্থির—
নাটকীয় যত ফুল
তুলে তুলে দেখি, তুলে তুলে দেখি
                         কতদূর নির্ভুল
বিদ্যা অল্প ব'লে
প্রজাপতি শুধু ঘুরে যায় আর প্রস্তাব যায় চলে
কাদের প্রস্তাবনা?
চিঠিতে জানাব, দুধ ফুটে ওঠে, আপাতত ভাববো না
জানো কি পত্র-রীতি?
প্রিয় বন্ধুতে শুরু আর জেনো শেষে আমাদের প্রীতি
যায় না এভাবে সুর?
যন্ত্র, বাদ্য, ব্যাকরণ ছাড়া যাবে যে অন্তঃপুর—
জাল বিজ্ঞান মতে
ভালোবাসা এক অপরাধ যার সমাপ্তি নাক ক্ষতে

জিয়া হক
চিত্রঋণ : হরিশ মণ্ডল

আর্কাইভ । শ্রুতি আন্দোলন । সংগ্রাহক অর্পণ পাল । ডাউনলোড করতে পোস্টে যান।

সৌখিন লোকেরাও পড়ে দেখতে পারেন : প্রশান্ত হালদারের পাঁচটি কবিতা




ফ্যান চালিয়ে যে কোনো ভাবনার কাছে যেতে ভয় পাই
স্থিরতায় বিশ্বাস করিনি বলে ভর্ৎসিত ঘরে-বাইরে
শুভকামনার নামে নোংরামির শিকার হচ্ছি রোজ
ক্রমশ পরিবার ও রাষ্ট্রের মঙ্গলকর বারান্দায় ঝুঁকে পড়ছি
হয়ে উঠছি বিবৃতিদানের মাস্টার
যথারীতি অসুখ-বিষয়ক চর্চা চলতেই থাকে
আমিও অনুপ্রাসের ফাঁদে আটকে যুগ পার করে দিলাম
কিন্তু এসব কথায় তোমার কোনো ক্লান্তি নেই
তুমি তো রাষ্ট্রদূত


দেখে গিয়েছিলে
বিশাল বাড়ির ছোট্ট একটা ঘরের
লাগোয়া বাথরুমে বসে থাকতে, সিগারেট ধরিয়ে
তাও সমুদ্রে গিয়েছ
কাউকে বলোনি

তোমার খুনের নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে—
এই স্বপ্নের কথা যেন পাঁচ-কান না হয়

তবু এত এত সাবধানতা
দুঁদে গোয়েন্দার আতস কাচের নিচে ধরা পড়ে যাবে

তবে কি রহস্য বলে কিছু নেই

পাড়াতুতো ভ্যানস্ট্যান্ড জ্বলছে

খাঁ-খাঁ করছে গোটা ছাদ
রাস্তায় বিশাল ছায়ারা ওঁৎ পেতে আছে

আমরা হাঁটছি, ধরা পড়ছি
বেরিয়ে যাচ্ছি
আগামী ছায়ার পাহাড়ে চাপা পড়তে চেয়ে

বাঁদিকে কালীঘাট ব্রিজে সস্তা বেশ্যা আর
ডাইনে জেলখানা। আছি অটোর ভিতর
নজরে সারা-বাংলা কারা-কর্মীদের সংগঠন অফিস
দু-দুখানা-প্যান্টে বন্দী মিইয়ে যাওয়া মাংসল ছোরা নিয়ে
এগুচ্ছি অটোতে
সামনে আদালত। জানি, এর কোনো বিচার হবে না।


সুতপা চক্রবর্তীর দুইটি কবিতা


 আকন্দরজনী

নিয়মমাফিক 
তুমিও খেল সন্তাপ

প্রহর, অচেনা লাগলে তার দুহাতে
তুলে দাও বাঁধানো অভ্যাস
বসে আছ কুঠুরি ; পায়ে মল
হ্যাজাক,লণ্ঠন সারসার...

আদ্রিস্নানের ঘট আমপাতায়
মাখা।

আহ্, মরি অবিশ্বাসে; যুগলকিশোর। 

মায়াপুষ্প!
মনে পড়ে তার সাথে...একদা...ভগ্ন
তীব্র...রাজকীয় বেশে 
হেঁটেছিলাম পথভাগ, সীমিত যৌবন

হ্রেষাকালে, আকন্দরজনীতে



 অশ্বখুর

অন্দরে এসেছে, তাকে ধরে রাখ

মতিভ্রমে,বাহ্যে ; প্রিয়মুখ

জানে না সঞ্চয়, ইরশাদ্
তোমারি মতো সেও চলে যাবে

হেঁটে।

রজোগুণে,প্রপাতে জলসিন্ধু!

ইশারায় চলেছে প্রৌঢ়া
হাতে তীর, বুকেতে পাথর ফলক
পায়ে তার গুহাহিত

প্রেমিক,অজগর!
যেভাবে  জড়িয়ে ধরে তেমনি বিরহে
ছোটে অশ্বখুর, গৃহহীন শামুকেরা


তার নামে বিদ্যালয় হবে : জিয়া হক


ভুলেই গিয়েছিলাম দিন আসছে ধীরে, রাত্রি দূরে নয়,
মাঠে মাঠে গাভীর পায়ের ছাপে জল ভরা আছে, আত্মজীবনীর সটীক সংলাপ ওই রাত্রিচরাচর জুড়ে
বেছানো রয়েছে,
বাগদী বুড়ির মতো তুলে আনতে হবে চুবড়ি ভর্তি করে, পেহচান কৌন বলে চোখ চেপে ধরে আমার অতীত,
কে ওই অনুল্লেখ্য লোক, পাতা খোঁজে জঙ্গলে জঙ্গলে,
উলঙ্গ তাই পোশাক বানাবে,
সে একটা নদীর মালিক,
এইমাত্র খনিজের জন্ম দিয়ে এলো, তার হাতে মহিলার খোঁপার উল্লাস অথচ চুম্বনরহিত,
প্রত্যাখ্যান পেয়ে পেয়ে সে আজ ব্রোঞ্জের ঝুরি হয়ে গেছে, শিশুর দোলনা হয়ে জীবন কাটায় এক প্রতিবেশী গ্রামে, পেহচান কৌন বলে কেউ তার পিছুও ডাকে না,
পেহচান কৌন বলে সে শুধু সময়ের চোখ চেপে ধরে।


রাইনার মারিয়া রিলকের চারটি কবিতা : অনুবাদ সাইফুল ভূঁইয়া




অস্তিত্বের অন্ধকার সময়

ভালোবাসি জীবনের অন্ধকার
যেখানে প্রোথিত সমস্ত অনুভূতি।
যেনো পুরাতন চিঠি, খুঁজে পাই
যাপিত দিন, আর আঁকড়ে রাখি
প্রতীত আর কিংবদন্তির মতো
তারপর জেগে উঠে দর্শন:
খুলে দিতে পারি, উন্মুক্ত আর
শূন্য-কালের নতুন জীবন
তাই কখনো আমি বৃক্ষের মতো
ফিস্ ফিস্ করি সমাধির বুকে
আর সত্যি করি সেই সব স্বপ্ন
জড়িয়ে রাখে তার জীবন্ত শিকড়:
একদা হারিয়ে গেছে এক স্বপ্ন
বেদনা আর সঙ্গীতে

যেতে থাকবো...
 
চোখ বন্ধ করে তোমাকে দেখতে থাকবো।
কান বন্ধ করে শুনতে থাকবো।
আর পা ছাড়া তোমার দিকে চলতে থাকবো।
মুখ বন্ধ করে তোমার নামে কসম করবো।
আমার হাত ভেঙে দিয়ে হাতের মতো
হৃদয় দিয়ে তোমাকে ধরে থাকবো।
আমার হৃৎপিণ্ড বন্ধ করে দিবো
আর স্পন্দিত হতে শুরু করবে মস্তিষ্ক।
আর যদি আমার মস্তিষ্ক আগুনে পুড়াও
আমার প্রতিটি রক্তকণায় দগ্ধ হবে তুমি


পুবে কোথাও এক গির্জা আছে

মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়ে একজন
টেবিলে পড়ে থাকে রাতের খাবার
হাঁটতে থাকে, হাঁটতে থাকে
পুবে কোথাও এক গির্জা আছে
তাঁর নামে শিশুদের প্রার্থনা যেনো মরে গেছে সে
অন্য একজন মানুষ আমৃত্যু
বসে থাকে ঘরে জল-খাবার নিয়ে
যেন শিশুসন্তান বেরিয়ে গেছে
পুবে হারিয়ে ফেলা গির্জার খোঁজে


রাত

তুমি, সেই অন্ধকার
যার থেকে জন্ম আমার-
ভালোবাসি, আলো থেকে বেশী
যে শৃঙ্খলিত করে রাখে
তার উজ্জলতার দেয়ালে
আর দূরে রাখে তাবৎ পৃথিবী
কিন্তু তোমার কালো হাতে
আগলে রাখে সবকিছু:
ছায়া আর আকার, সমস্ত জীব আর আমাকে
মানুষ আর সমস্ত জাতি- যে যেমন।
যেনো, দারুণ কিছু করে যায় মন্থণ
রাতেই রেখেছি আমার বিশ্বাস


রাইনার মারিয়া রিলকে :
রেনে কার্ল ভিহেম জোহান জোসেফ মারিয়া রিলকেরেনে মারিয়া রিলকে নামে পরিচিত ছিলেন ১৮৭৫ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রাগ শহরে জন্ম গ্রহন করেন। জার্মান-ভাষি অবসরপ্রাপ্ত অস্ট্রিয়ান সৈনিক জোসেফ রিলকের একমাত্র সন্তান রাইনার মারিয়া রিলকে ছিলেন বিংশ শতাব্দির জার্মান ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। অনেক বিখ্যাত কবির মতো তাঁর শৈশব ছিলো বিষন্নতাপূর্ণ; মাত্র নয় বছর বয়সে তাঁর পিতামাতার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এগারো বছর বয়সে রিলকে একটি সামরিক আবাসিক স্কুলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-জীবন শুরু করেন কিন্তু ১৮৯১ সালে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কারণে স্কুল ছাড়তে হয়। পরবর্তীতে প্রাগমিউনিখ এবং বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ১৮৯৪ সালেই তাঁর প্রথম কাব্য প্রকাশিত হয়১৮৯৫-৯৬ সালে দ্বিতীয় এবং ১৮৯৬ সালে তৃতীয় গ্রন্থ প্রকাশ হয়। ১৮৯৭ সালে তিনি রাশিয়া ভ্রমণ করেনযা তাঁর জীবনে দারুণ প্রভাব রাখে। সেখানে তিনি তলস্তয়ের সাথে দেখা পান। তাঁর প্রথম মহান কীর্তি দ্য বুক অব আওয়ার্স ১৯০৫ সালে ছাপা হয় তারপর ১৯০৭ সালে নিউ পোয়েমস এবং দ্য নোটবুকস অব মাঁতে ল্যদে ব্রিজ। পরবর্তীতে ইতালি, স্পেন, মিশর এবং ইউরোপের অনেক দেশ ভ্রমণ করেন; কিন্তু প্যারিসই তাঁর কাব্য চর্চায় প্রভাব বিস্তার করে। এখানে তিনি গীতি কবিতার এক নতুন ধারা সূচনা করেন। রিলকে তাঁর সময়ে জার্মান ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকবি ছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁকে পেরিস ত্যাগ করে মিউনিখে অবস্থান করতে হয়। তারপর ১৯১৯ সালে সুইজারল্যান্ডে চলে যান, সেখানে জীবনের শেষ দুটো গ্রন্থ রচনা করেন। লিউকিমিয়া নামক ব্লাডকেন্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯২৬ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। 




কবীর দেব-এর কবিতা : অনুবাদ ঔরশীষ ঘোষ


প্রাদুর্ভাব

চতুর্দিকে চাপচাপ অন্ধকার
আর খাঁচা বন্দী মানুষের দল
পরিবার ও সঞ্চয় ঘিরে জমাট বেঁধেছে
বিপণি এখন তুচ্ছ মনে হয়
বাতাস আতঙ্কে ঘনীভূত আর ধুলোসর্বস্ব রাস্তায়
দেখেছি আশার আলো উড়ন চাকীর মত
মাথার ভিতর, যেন ফড়িঙের ডানার কল্লোল
তীব্রতর হচ্ছে আরো

এটি কোনও ঈশ্বরের অভিশাপ বা আশ্চর্য নয়

বহুকাল ধরে আমি
আমাদের বিশৃঙ্খলায় দেখেছি
জমি বা জুতোর জন্য বা শব্দের অমোঘ আকর্ষণে
কবর দিয়েছি মৃত অর্ঘ্য,
ভুলে গেছি পিতা ও পুত্রের বাক্যালাপ, মায়ের আদর

এটি কোনও ঈশ্বরের অভিশাপ বা আশ্চর্য নয়

এমন সময় অভিপ্রেত ছিল
পৃথিবীর ঘড়ি যাতে ক্লেদ ঝেড়ে ফেলে
যখন পাখিরা পুনরুদ্ধার করবে তাদের আশ্রয়
শীলমাছ নির্ভয়ে সাঁতরাবে হিমগ্ন স্রোতে
আর ভালুকেরা ফুলের নেশায় ফিরে আসবে
আজ মনে হয় এমনই হওয়ার কথা ছিল
হয়তো আমার ভুল, কিন্তু এমন চিন্তার মধ্যে
দেখা পাই আত্মবসন্তের

এটি কোনও ঈশ্বরের অভিশাপ বা আশ্চর্য নয়

কবিতা ও সঙ্গীতের নেশায় মাতাল হয়ে
চিরশান্ত ঘুম নেমে আসে চোখে
আর যে ভয় তাড়া করতো কখনো আমাকে
মৃত্যুর অপ্রীতিকর পরিনাম, প্রতিশোধ মাখা
জামায় যে মন্ত্র লেখা আছে, একটি সুন্দর লাইন
বিষণ্ণ গাছের নিচে, 'মুহুর্ত বিশ্বাস করে,
একদিন অসুস্থতা ভবিষ্যৎ আগলাবে'

এটি কোনও ঈশ্বরের অভিশাপ বা আশ্চর্য নয়

কোনও না কোনওভাবে
একদিন সকলেই মরে যায় প্রিয়
এবং নিজের মৃত্যু আমরা নির্বাচন করি না
কিভাবে মরণ দেখা দেবে, এবং যন্ত্রণা কত তীব্র হবে
তা কখনো কারো সম্মতির অপেক্ষা করেনি
কিন্তু আমি বেছে নিতে পারি বাঁচার উপায়
তা কখনো পূর্বনির্ধারিত নয়, আর পরবর্তী দুঃস্বপ্নে
যখন সবার সাথে দেখা হয়ে যাবে, জানি
আবার সকলে আমরা মাতোয়ারা হব উৎসবে

এটি কোনও ঈশ্বরের অভিশাপ বা আশ্চর্য নয়

সময় এসেছে
যখন মানুষ মানুষের জন্য দুশ্চিন্তায়
কিভাবে সে বাঁচবে আর নিজের শিশুকে
শেখাবে লড়াই করতে, এবং মানিয়ে নিতে
ভয়ংকর প্রলয়ের সাথে
এখন ওষুধ হয় আরেকটু নিঃশ্বাস দেবে ফুসফুসে
অথবা রক্তের নদী বয়ে যাবে অদৃষ্টের দিকে
আমাদের অর্ঘ্য তবু পারে ফিরিয়ে আনতে
আরেকটি নতুন ভোর

এটি কোনও ঈশ্বরের অভিশাপ বা আশ্চর্য নয়
শুধু বহু মানুষের উন্মাদনা- কিন্তু কেন?
শুধু আমাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য
কারা ক্ষমতায় আছে
________________________

ইমরুল কায়েসের কবিতা : আরবি কবিতা



একক নারীর ঘরে কত দিন, কত রাত্রি আর কাটিয়ে যাব আমি
রেখা দিয়ে গড়া মূর্তির মতোই সংক্ষিপ্ত ও মেয়ে
মোমের নরম আলোর উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে যখন সে
তার সঙ্গীর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়
উদার আগুন নিয়ে তার স্তন জ্বলজ্বল করে  
পাহাড় বরাবর উত্তরে দক্ষিণে মরুযাত্রীর
তাঁবুর কিনারে উতল বাতাসের ভেতর
শৈত্যপীড়িত লোক মরুস্থলে জাগায় যে আগুন, তেমন

কৈশোরেই মুখ তার এতখানি স্পষ্ট ও আনন্দনিকেতন যে
ভুলে যাই আমি আমার জামা ও কাপড় চলে যাবার সময়
বালিয়াড়ির মতো গোলাকার যেমন
ভালোবাসার শিশুদের মসৃণ আর ভেলভেট স্পর্শের কল্যাণ পাবো ব’লে
চেয়ে বসে থাকি
সবটুকু চেয়ে যখন ছেলেটি তাকে মুক্ত করে পোশাকের বন্দিদশা থেকে
ধীরে ও নরমে সে ঝুঁকে পড়ে, সরু তার কোমর আর বিষময় ঠোঁট থেকে
দ্রুত তার শ্বাস নেমে আসে তখন সে দৃঢ় ।

চিত্র : নেট থেকে সংগৃহীত
ভাবানুবাদ : জিয়া হক

পথচারী আজ কোথায়? : জলকণা রাহমান



একটা নৌকো নদীর ধারে পড়িয়াছিল। তাহার শরীর ছিল রুগ্ন। মাঝি তাকে পরিত্যাগ করিয়াছিল, তাই সে একটা আবাসন হইয়া উঠিয়াছিল পাখিদের। এক ঘুঘু দম্পতি তাহার ভিতর বাসা বানাইয়া বসবাস করিতে লাগিল।
কয়েক মাহিনা পর, তাহাদের ছানা জন্মাইলো। ছানারা কিচিরমিচির করিয়া উঠিল। নদীতীরস্থ শান্ত নির্জন প্রাকৃতিক সমাজে উৎসব পড়িয়া গেল।
ছানারা উড়িতে শিখিল একদিন। তাহারা উড়িয়া দূরদেশে ভ্রমণ করিতে চাহিল। তাহাদের পিতামাতা বলিল, ডোন্ট গো, উই ওন্ট লিভ উইদাউট ইউ।
তাহারা শুনিল না। তাহারা চলিয়া গেল। চতুর্দিকে ডানা ঝাপটানোর উচ্চরোল উঠিল। তাহাদের পিতামাতা কেবল নৌকোর চতুর্পাশ্বে ঘুরিয়া ঘুরিয়া কাঁদিল।
তিন দিবস তাহারা বাসা হইতে বাহির হইল না। কেবল কাঁদিল। কিছু খাইল না। কেবল কাঁদিল। 
এই নদীতীরে এক কচ্ছপ পরিবার বাস করিত। তাহাদের আবাসন ছিল ওই নৌকোর নিকটেই। তাহারা এই ঘুঘুদ্বয়ের দুঃখে বড় পীড়িত বোধ করিল।
এক সন্ধ্যায় কচ্ছপজায়া তাহার একটি ছানা লইয়া আসিল ঘুঘুর নৌকো-বাড়িতে। আসিয়া দেখিল দুটি ঘুঘু ডানা এলাইয়া, পাখনা ছড়াইয়া কাষ্ঠ পাটাতনে শুইয়া রহিয়াছে। তাহাদের চোখের জল তখনও শুকাইয়া যায় নাই।
কচ্ছপজায়া আসিয়া ঘুঘুজায়াকে জাগাইয়া বলিল, ডোন্ট বি আপসেট দিদি, উই আর হেয়ার উইথ ইউ, আফটার অল এ ফ্রেন্ড ইন নিড ইজ ফ্রেন্ড ইনডিড। সো মি অ্যান্ড মাই হাজব্যাণ্ড থট দ্যাট উই শুড ডু সামথিং ফর ইউ অ্যাণ্ড উই আর গোয়িং টু গিভ ইউ ওয়ান অফ মাই চিলড্রেন। উড উই হ্যাভ ওয়ান?
ঘুঘুজায়া অশ্রু মুছিয়া বলিল, সো কাইণ্ড অফ ইউ। উই উইল বি গ্ল্যাড টু হ্যাভ ওয়ান বাট ওন্ট ইউ বি মিসিং ইওর চাইল্ড? ক্যান ইওর চাইল্ড অ্যাডজাস্ট উইথ আস অ্যাজ উই আর কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট স্পিসিস।
কচ্ছপজায়া হাসি মুখে বলিল, নো দিদি, ইট উইল নট বি অফ গ্রেট প্রবলেম, আই উইল ফ্রিকোয়েন্টলি কাম অ্যান্ড এভরিথিং উইল বি ফাইন। বাট রাইট নাও ইউ ব্যাডলি নিড সামওয়ান।
কচ্ছপের লড়কা রহিয়া গেল। সে ঘুঘুমাতাকে 'মা' ডাকিল, ঘুঘুপিতাকে 'আব্বা' ডাকিল এবং কণাশস্য খাইতে লাগিল।
একদা সে বয়ঃপ্রাপ্ত হইল এবং ঘুঘুমাতা ও ঘুঘুপিতার নিকট অনুমতি চাহিল যে সে দূরদেশে যাইতে চায় কেননা পৃথিবীটা দেখিয়া লওয়া খুব দরকার।
ঘুঘু দম্পতি পুনরায় মহা ফাঁপরে পড়িল। অনেক অনুরোধ করিল তাদের কচ্ছপ পুত্রকে। কিন্তু সে শুনিল না। সে চলিয়া গেল।
ঘুঘু পরিবার আবার শোকাভিভূত হইল। তাহারা ডানা এলাইয়া, পাখনা ছড়াইয়া শুইয়া রহিল। দিবসেই রাত্রি নামিয়া আসিল।
এই নদীতীরেই এক শামুক দম্পতি বসবাস করিত। তাহারা ছিল বড় কোমল হৃদয়ের।
এক সন্ধ্যায় শামুকজায়া তাহার একটি ছানা লইয়া উপস্থিত হইল ঘুঘুজায়ার নিকটে। সে তখনও শুইয়াছিল। তাহার অশ্রু তখনও শুকাইয়া যায় নাই।
শামুকজায়া আসিয়া ঘুঘুজায়াকে জাগাইয়া বলিল, ডোন্ট বি আপসেট দিদি, উই আর হেয়ার উইথ ইউ, আফটার অল এ ফ্রেন্ড ইন নিড ইজ ফ্রেন্ড ইনডিড। সো মি অ্যান্ড মাই হাজব্যাণ্ড থট দ্যাট উই শুড ডু সামথিং ফর ইউ অ্যাণ্ড উই আর গোয়িং টু গিভ ইউ ওয়ান অফ মাই চিলড্রেন। উড উই হ্যাভ ওয়ান?
ঘুঘুজায়া অশ্রু মুছিয়া বলিল, সো কাইণ্ড অফ ইউ। উই উইল বি গ্ল্যাড টু হ্যাভ ওয়ান বাট ওন্ট ইউ বি মিসিং ইওর চাইল্ড? ক্যান ইওর চাইল্ড অ্যাডজাস্ট উইথ আস অ্যাজ উই আর কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট স্পেসিস।
শামুকজায়া হাসি মুখে বলিল, নো দিদি, ইট উইল নট বি অফ গ্রেট প্রবলেম, আই উইল ফ্রিকোয়েন্টলি কাম অ্যান্ড এভরিথিং উইল বি ফাইন। বাট রাইট নাও ইউ ব্যাডলি নিড সামওয়ান।
শামুকের লড়কি রহিয়া গেল। সে ঘুঘুমাতাকে 'মা' ডাকিল, ঘুঘুপিতাকে 'আব্বা' ডাকিল এবং কণাশস্য খাইতে লাগিল।
একদা সে বয়ঃপ্রাপ্ত হইল এবং ঘুঘুমাতা ও ঘুঘুপিতার নিকট অনুমতি চাহিল যে সে দূরদেশে যাইতে চায় কেননা পৃথিবীটা দেখিয়া লওয়া খুব দরকার।
ঘুঘু দম্পতি পুনরায় মহা ফাঁপরে পড়িল। অনেক অনুরোধ করিল তাদের শামুক কন্যাকে। কিন্তু সে শুনিল না। সে চলিয়া গেল।
এইভাবে কয়েক সপ্তাহ কাটিয়া গেল।
এক রাত্রে ঘুঘুজায়া বলিল, সি, অল অফ মাই চিলড্রেন, নট ওনলি মাই চিলড্রেন, অল অফ দেম ওয়ান্টেড টু গো অ্যাব্রড অর সাম ফরেন ল্যাণ্ডস। উই নেভার স্টপড দেম ফ্রম গোয়িং। বাট ইন দিস ওল্ড এজ, উই আর অ্যালোন। ইয়েস্টারডে আই ওয়াজ থিঙ্কিং সামথিং।
ঘুঘুকর্তা বলিল, হোয়াট ওয়াজ দ্যাট?
ঘুঘুজায়া আর্দ্র স্বরে বলিল, হোয়াই ডোন্ট উই গো অ্যান্ড ডিসকভার নিউ ল্যাণ্ডস, অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ আওয়ারসেলভস?
ঘুঘুকর্তা বলিল, ওয়েল, দেন লেটস ফ্লাই।
তাহার উড়িয়া চলিল। উড়িতে লাগিল। উড়িতে লাগিল। মেঘের মধ্য দিয়া, আকাশের কিনারা ঘেঁষিয়া উড়িয়া চলিল।
তারপর আসিল আশ্চর্য হইবার পালা।
ঘুঘু দম্পতি একে একে খুঁজিয়া পাইল তাহাদের সন্তানদের। ঘুঘু, কচ্ছপ ও শামুক--সকলেই খুব ভালো রহিয়াছে। তাহারা পিতামাতাকে ফিরিয়া পাইয়া আহ্লাদিত হইল, যারপরন্যায় আপ্যায়ন করিল। সন্তানেরা এখন পিতামাতা হইয়াছে। কিন্তু বাড়িতে নাতি-নাতনিদের দেখিতে পাওয়া গেল না।
ঘুঘুজায়া জিজ্ঞাসা করিল, হোয়্যার আর দে?
তাহারা বলিল, দে হ্যাভ গন টু ফুলফিল দেয়ার ড্রিমস ।


উপদেশ : লেট দেম গো। ডোন্ট হোল্ড এনিওয়ান ব্যাক। দেয়ার মাস্ট বি আ রিইউনিয়ন।
……………………………………………………………………………………………




রণজিৎ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা—পাঠ-প্রতিক্রিয়া : দেবায়ন চৌধুরী


‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় কবি রণজিৎ দাশ লিখেছিলেন- “ যদিও লিখছি দীর্ঘকাল ধরে, কিন্তু বেশি পরিমাণ কবিতা লিখতে পারিনি কখনও। ফলে, এতাবৎ প্রকাশিত আমার পাঁচটি কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতাই ঠাঁই পেয়ে গেল এই সংকলনে। এতে সুবিধের হল এই যে, কার্যত শ্রেষ্ঠ কবিতার বিপজ্জনক দাবি রইল না এই সংকলনটির, শুধু ঐতিহ্যবাহী নামকরণের গৌরবটুকু রয়ে গেল। আর, অদৃশ্য বিচারকের মতো, রয়ে গেলেন পাঠক। কবিতার পাঠক—এক শুদ্ধ, নির্জন, অলৌকিক মানুষ। তাঁকে নমস্কার।”— ২০০১ সালের জুলাই মাসে এই কথাগুলি বলার পর পেরিয়েছে অনেকটা সময়। দ্বিতীয় সংস্করণে যুক্ত হয়েছে আরো কিছু নতুন কবিতা, আর ভূমিকায় উঠে এসেছে মানব চৈতন্যের অভিমুখ ও তাঁর কবিতার অঙ্গাঙ্গী সম্পর্কের আন্তরিক পরিচয়। ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ শুরু হয়েছে যে কবিতাটি দিয়ে, কবির নন্দনতত্ত্ব বোঝার ক্ষেত্রে তা বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠতে পারে-
 “ আমাদের লাজুক কবিতা, তুমি ফুটপাতে শুয়ে থাকো কিছুকাল
  তোমার লাজুক পেটে লাথি মেরে হেঁটে যাক বাজারের থলে- হাতে
                                                  বিষণ্ণ মানুষ
  শুদ্ধ প্রণয়ভুক তোমার শরীরে কেউ ছ্যাঁকা দিক বিড়ি জ্বেলে—
                                                   নিতান্ত ঠাট্টায়
  তুমি স্থির শুয়ে থাকো, কষ্ট সয়ে, মানুষের দীর্ঘতম ফুটপাত জুড়ে
  শুধু লক্ষ্য রেখো, অন্ধে না হোঁচট খায়, কোনো ভিক্ষাপাত্র ভুল করে
       তোমার কাছে না চলে আসে
  ধীরে ধীরে রোদ- ঝড়-শীতের কামড়ে তোমার সোনার অঙ্গ কালি হবে
  ওই পোড়ামুখে তবে ফুটবে তামাটে আভা পৃথিবীর, তাই দেখে
  ফুটপাতশিশুরা ভারি ঝলমলে হাততালি দেবে
   তাদেরকে দিও ছন্দজ্ঞান, লজেন্স দিও না। ’’ বলে দেবার অপেক্ষা রাখে না কবিতা ও কাব্যগ্রন্থের নাম – ‘আমাদের লাজুক কবিতা’। ১৯৬৮- ১৯৭৭ সময়সীমায় লেখা এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে। রণজিৎ দাশকে সত্তরের কবি হিসেবেই জানি আমরা। উত্তাল সত্তর দশক বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে বড়ো বাঁক নিয়ে এসেছে। সত্তরের কবিদের মধ্যে রাজনৈতিক বিশ্বাস আলাদা ছিল, ছিল আপাত নির্লিপ্তি উদাসীনতা, কিন্তু সময়ের ছোঁয়াচ এড়িয়ে যেতে পারেননি কেউ। সময়ের ভেতরের আগুনের মধ্য দিয়ে হেঁটে এসেছিলেন প্রত্যেকেই, নিজস্ব প্রবণতা অনুযায়ী ‘অ্যাসিড বিক্রিয়া’ ঘটেছিল কবিদের মনে ও মননে। সত্তরের কবিদের মধ্যে স্বভাবত স্বতন্ত্র রণজিৎ দাশের সপ্রতিভ সময়নিরীক্ষণে, মৌলিকতায়, মেধাবী শব্দব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছেন বিশিষ্ট সমালোচকেরা। কবিকে বুঝতে চেয়ে এবারে তাঁর জীবনের দিকে চোখ রাখা যেতে পারে। ঢাকা বিক্রমপুরে পৈতৃক নিবাস, কবির জন্ম শিলচরে, ১৯৪৯ সালে। কবিতা লেখার প্রথম জীবনে ‘অতন্দ্র’ পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কলকাতা চলে আসেন ৭১ সালে। ৭৬-এ চাকরি জীবন শুরু। ৭৭- এ প্রথম কবিতার বই। কবির একটি সাক্ষাৎকারে সূত্র ধরে আমরা জানতে পারি-  তিনি গর্ভস্থ হয়েছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানে আর ভূমিষ্ঠ হয়েছেন ভারতে। বাংলা সাহিত্যের তিনটি ভুবন জুড়েই তাঁর অস্তিত্ব। সারা জীবন জুড়ে ব্যাপক স্থানান্তর, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির স্পর্শে জারিত হয়ে তিনি কি নিজের মত গড়ে তুলতে চেয়েছেন ‘এক কবির অহং এর উপনিবেশ’? যে রাজ্যে তিনি একক অধীশ্বর। ফিরে আসি আবার ‘লাজুক কবিতা’র প্রসঙ্গেই। রণজিৎ দাশের মত অনুযায়ী কবি ও কবিতা- দুয়েরই লাজুক হওয়া উচিত। তবে ‘লাজুক’ শব্দটি এখানে ‘আইরনিকাল’ কেননা নাম কবিতাতেই স্পষ্ট তিনি কবিতাকে লাজুকতা ছেড়ে সমাজসচেতন হয়ে উঠতে বলেছেন। আর তাই কবিতাটি শেষ হচ্ছে এইভাবে- “ ফুটপাত শিশুরা ভারি ঝলমলে হাততালি দেবে/ তাদেরকে দিও তুমি ছন্দজ্ঞান, লজেন্স দিও না।” এর পরের কবিতাই ‘প্রকৃতির দিকে’, যে কবিতার শেষে কবি বলছেন- “ শুধু মনে হয়, এই অভ্যস্ত ফেস্টুন কাঁধে দিগ্বিদিকে ছোটাছুটি/ ঠিক নয়, ঠিক নয়/ যেন মনে হয়, বোধিপরবাস থেকে একদিন প্রত্যেকেই/ ফিরে যাবে প্রকৃতির দিকে”। ঠিক নয় ঠিক নয় কথাগুলি যেন নিজেকেই বলা হচ্ছে। আত্মগত মনে হওয়া কীভাবে আমাদের সকলের ‘বোধিপরবাস’ নিয়ে ভাবায়। মায়াভবনের পথে দেখা হয়ে যায়...

(২)
বাংলাদেশের ‘প্রথম আলো’ পত্রিকাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে কবি রণজিৎ দাশ তাঁর কবিতাভাবনাকে খুব সুন্দর ও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন- “আমি খুব সচেতনভাবেই বলছি, যে কবিরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, শুধু আমি নই, প্রত্যেকে, সেই আদিকাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত, প্রত্যেকের কবিতা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবার্থসম্পন্ন। সেই ভাবার্থটাই বিষয়। যে কল্পনাটি আসছে সেটি বিষয়, যে চিত্রকল্পটি আসছে সেটি বিষয়।” কবিতায় দুর্বোধ্যতা কিংবা বিষয়হীনতা তাঁর অভিপ্রেত নয়। নিজেকে আধুনিক কবি বলে অভিহিত করতে তিনি নারাজ কেননা তাঁর মতে আধুনিকতা নাস্তিক্যবাদী অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল। সুধীন্দ্রনাথের বিরূপ বিশ্বে মানুষের একাকী থাকার চেয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’ – বেশি প্রিয় উচ্চারণ হয়ে ওঠে তাঁর। অসীম রহস্যময় জগতের আনন্দ-বেদনাপ্রবাহকে, মানুষের বেঁচে থাকাকে আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করতে চান তিনি। বামপন্থায় বিশ্বাসী কবি শ্লোগাননির্ভর কবিতা পছন্দ করেন না। সমাজের কাছে কবির দায়বদ্ধতা ভালো কবিতা লেখা। আর ভালো কবিতায় সময়ের ক্ষতচিহ্ন মুদ্রিত হবেই। আলাদাভাবে সময়কে ধরে রাখার আরোপিত চেতনা কবির কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি। কবির মতে, কবিতার মূল রহস্য যদি থাকে জীবন রহস্যের উদ্‌ঘাটনের মধ্যে, তবে ‘সময়ের ভাষ্যকার’ কথাটির আলাদা গুরুত্ব থাকে না। কবিতা কাকে বলা হবে এর উত্তরে কবি রণজিৎ দাশ বলেছিলেন কবিতার লাইনে ক্লাসিক গুণাবলীর কথা- “ ক্লাসিক গুণাবলী সংক্ষেপে বলা যায় কাব্যভাষার সৌন্দর্য কল্পনার চমৎকারিত্ব, গভীর হৃদয়বত্তা এবং কবির জীবনদৃষ্টির মৌলিকতা।’’ কথারা অনিবার্যভাবেই প্রস্তাব করছে কবিতা- পড়ার। কবিতার নাম- ‘ইতিহাস’--
ছাতে বসে দেখছি রাত্রির আকাশ। একটানা দুঃসহ বৈশাখ। শুকিয়ে- যাওয়া টবের
ফুলগাছটি দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকার কোণে, শেয়ালদা স্টেশনের পকেটমার ছেলেটির
মতো। বৃষ্টির প্রতীক্ষা করছে সমস্ত শহর। রাত্রির ঘননীল আকাশপথে অবিশ্রান্ত
গতিতে উড়ে যাচ্ছে খন্ড খন্ড সাদা মেঘ। যেন অতিকায় ম্যাজিক লন্ঠনের ছবি।
বিরামহীন, গত দু’রাত ধরেই চলেছে এই মেঘের দল। যেন ৪৭ সালের
সীমান্ত- পেরিয়ে- আসা উদ্বাস্তুদের মিছিল। ঐ লম্বাটে মেঘটি আমার ঠাকুর্দা, ঐ
দ্রুতগামী মেঘটি আমার বাবা, ঐ পিছিয়ে- পড়া ক্লান্ত মেঘটি আমার মা।

অনেক রাতে ভেসে গেল সুঠাম, অভিজাত দুটি মেঘ পাশাপাশি- মনে হল নেহরু
আর এডুইনা মাউন্টব্যাটেন।

কবিতাটি আমাদের স্তব্ধ করে দেয় কবি কথিত ক্ল্যাসিক গুণাবলীতে। মেঘ ভেসে যাচ্ছে। কবি তার মধ্যে ইতিহাসকে প্রত্যক্ষ করছেন। শুকিয়ে যাওয়া টবের ফুলগাছ আর শেয়ালদা স্টেশনের পকেটমার—দুজনের জন্যই অন্ধকার কোণ। উদ্বাস্তুদের মিছিলের ছবি অব্যর্থ। কবি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই লেখেন কিন্তু সে একটি মাত্র ব্যক্তির অভিজ্ঞতা নয়। অমিয়ভূষণ মজুমদার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- “ আমার তো মনে হয়, প্রতিভা অন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে সেই ক্ষমতাও, যা বহুর অভিজ্ঞতাকে আত্মসাৎ করে একজন মানুষকে পরিপূর্ণভাবে অভিজ্ঞ করে তুলতে পারে।’’ এবং  “ ... যেহেতু কবির অভিজ্ঞতা বর্তমানের এবং অতীতের অন্য অনেকের অভিজ্ঞতার এবং তার নিজের অভিজ্ঞতার যোগফল, তেমনি কবির শব্দচয়নে তার সৃষ্ট ভ্যালুজের মধ্যে অন্য অনেকের অভিজ্ঞতার, ভ্যালুজের পুনর্জন্ম দেখতে পাই। ’’—এই পুনর্জন্ম শব্দটির মধ্য দিয়েই ইতিহাস পাঠের ক্ষেত্রে নেহরু আর এডুইনা-র পাশাপাশি অবস্থান হয়ত কারণ হয়ে দাঁড়ায় উদ্বাস্তু মিছিলের। কাব্য মূলত ইতিহাস- কবি এক অর্থে ঐতিহাসিক। ছাতের দূরত্ব থেকে তিনি রাতের আকাশ যেভাবে দেখেন, ১৯৮৭- ১৯৯২ সময়পর্বে লেখা ‘বন্দরে কথ্যভাষা’ কবিতা-বইয়ের ‘ইতিহাস’ কবিতাটি সেভাবেই হয়তো সময়ের দূরত্বে লেখা হয়। যে দূরত্ব হয়ে ওঠে অমোঘ,গভীর। আমরা জানি কবি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। মেঘের সূত্রে ইতিহাস- দর্শন আমাদের নিয়ে যেতে পারে কবির ‘ইশ্বরের চোখ’ কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতার শেষ অংশে- “ সবকিছুর মীমাংসা রণরক্তে, আমি ভাবি। ভাবি সেই কোয়ান্টাম বিজ্ঞানীদের কথা, যাঁরা মনে করতেন, ‘ গভীরতর বাস্তবতা’ বলে কিছু নেই...’’ পৃথিবীর সমস্ত জল ছেড়ে এক নতুন জলের কল্পনা করেছিলেন জীবনানন্দ, সমস্ত দীপ ছেড়ে এক নতুন প্রদীপ, নতুন এক ব্যবহারের কল্পনাও ; জীবনের সঙ্গে যার ‘গোপনীয় সুড়ঙ্গলালিত’ সম্বন্ধ। সুড়ঙ্গের কথা ভাবলেই অন্তর্ঘাত শব্দটি হানা দেয় মনে। সময় ও পৃথিবীর অভিজ্ঞতায় কবি যে বাস্তবকে নির্মাণ করেন, তার অনুষঙ্গে উদ্ধৃত করতে ইচ্ছে করছে দেবর্ষি সারগীর ‘ভ্রমণসঙ্গী ঈশ্বর’ উপন্যাসের দুটি বাক্য- “ শব্দ শুধু বাস্তবতা বহন করে না, বহন করে প্রজ্ঞাও, যা নিছক বাস্তবতার দিকে তাকিয়ে আমরা নাও লাভ করতে পারি। বাস্তবতা যা আমাদের শেখাতে ব্যর্থ হয়, শব্দ তা শেখায়।” এবারে পড়ে নেব আরেকটি কবিতা।

বংশী সামন্ত
সেদিন আর নেই যখন নকশালদের ভয়ে ডাক্তারেরা নামমাত্র ফিজ দিয়ে রোগী
দেখত। রিক্সাচালক বংশী সামন্ত সেই ভাগ্যবান রোগীদের একজন। কঠিন অসুখ
হয়েছিল তার, হৃদপিন্ডের, স্রেফ অচিকিৎসায় মারা যেত, যদি না নকশাল
ছেলে তাকে এক বিলেতফেরত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত। মাত্র পাঁচ টাকা
এবং অদৃশ্য পাইপগানের বিনিময়ে। পরে পুলিশের গুলিতে সেই ছেলেটি মারা
গেছে। কিন্তু সুস্থদেহে বেঁচে আছে বংশী। বেঁচে আছেন সেই ডাক্তারটি-ও, তাঁর
ফিজ এখন দুশো টাকা, বংশী শুনেছে। ক্বচিৎ- কখনো গাড়িতে ওঠার মুখে বংশীর
সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে তিনি এখনো হেসে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ভালো আছো তো?’
বংশী কৃতার্থ হয়ে যায়। তার মনে হয় যেন সেই ছেলেটির স্মৃতি এখনো ডাক্তারকে
সম্পূর্ণ ছেড়ে যায়নি, না হলে ওর মতো নগণ্য লোককে তিনি এতদিন মনে
রাখবেন কেন। রাজনীতি বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ বংশী, এখনো, প্রায়ই সেই ছেলেটির
কথা চিন্তা করে।

সত্তরের দশক মুক্তির দশক। বংশী সামন্ত নামটি বেশ ভাবায়। নকশাল ছেলেটি আজ নেই কিন্তু রোগী আর ডাক্তার তাকে মনে রেখেছে। কবিতাটিকে নকশাল আন্দোলনের মূল্যায়ন হিসেবে পড়া যেতে পারে কি? গল্পের গঠনের মধ্যে অদ্ভুত এক আকর্ষণ আছে। রাজনীতি বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ বংশীর সেই ছেলেটির কথা চিন্তা করাকে কীভাবে দেখতে পারি আমরা? স্মৃতি এখানে সত্তার কথা বলে। চিন্তা অস্তিত্ববাচক। বিশেষ থেকে নির্বিশেষে পৌঁছুনোর প্রবণতা বারবার ধরা পড়ে কবির কবিতায়। তিনি ভালো- মন্দের মধ্যে দোলাচলতা দেখাতে চান। তাঁর কবিতার দর্শনে থাকে উত্তরণের কথা। সে উত্তরণ অবশ্যই মানবিক। ভাষার সংযোগের সঙ্গে নীরবতা মিশে নতুন এক ভাষা তৈরি করে। যার মধ্য দিয়ে হয়তো সম্ভব হয়ে ওঠে কবিতার বোঝাপড়া।


(৩) 


     বাবাকে
   
     ভাতকাপড়ের দুশ্চিন্তা করেই
     সমস্ত জীবন কাটলো আপনার।

     কোনো শিল্প, কোনো সম্ভোগ, কোনো উদাসীনতা
     আপনাকে স্পর্শ করলো না।

     আপনার কথা লেখা আমার পক্ষে অসম্ভব।
     আপনি আমার লেখার জগৎ থেকে একটু দূরে রয়েছেন,
     যেমন শহর থেকে একটু দূরে থাকে পাওয়ার স্টেশন।

‘মাত্রাচেতনা’ প্রবন্ধে জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন- “ শ্রেষ্ঠ কবিতা- অন্য যে কোনো শ্রেষ্ঠ শিল্পের মতো কবিমানসের আপন অভিজ্ঞতাকে যতদূর সম্ভব অক্ষুণ্ণ রেখে-নিঃস্বার্থ জিনিস।” - কথাটি এই কবিতা সম্বন্ধেও প্রযোজ্য। সম্ভ্রমজনিত দূরত্বের আঁচ আমরা পেয়েছি ছেলের বাবাকে আপনি সম্বোধনের মধ্যেই। ভাতকাপড়ের দুশ্চিন্তার জীবনে যে শিল্প, সম্ভোগ, উদাসীনতা স্পর্শ করতে পারল না, এর দায় বাবার একার নয়। ছেলের লেখার জগৎ থেকে বাবা দূরে থাকেন অনুপ্রেরণা হয়ে। পাওয়ার স্টেশন আলোর কথা বলে। আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে বাবা যে আলো তুলে দিয়েছেন ছেলেকে। এই কবিতাটি পড়লে অদ্ভুত কষ্ট হয়। মনে হয় এ কথা আমার, আমাদের। মনে হয় বাবাদের কথা সেভাবে লেখা হল না বাংলা কবিতায়।  গরম ভাতের গন্ধে কত কিছু যে মিশে থাকে, সে কথা ভাবতে ভাবতে চোখ চলে যায় পরের পাতায়। পড়ে ফেলি ‘কলকাতা’ কবিতাটি—

এ শহরে মাটি বিক্রি হয়।

বেতের ঝুড়িতে করে চাপ চাপ অন্ধকার মাটি
ক্লান্ত মাথায় নিয়ে ফেরি করে উদোম বালক

চোখে পড়ামাত্র, শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে।

‘ইতিহাসচেতনা’ আর ‘কালজ্ঞান’কে সম্যকভাবে আত্মস্থ করেছেন বলেই এমন দৃশ্যকে কবি তুলে আনতে পারেন শব্দে। রণজিৎ দাশের কবিতার মিতায়তন তাঁর মনের বিশেষ প্রবণতাকে চিনিয়ে দিতে পারে। ‘পাঠকই কবিতা’ শীর্ষক লেখায় জয় গোস্বামী এই কবিতা সম্বন্ধে বলেছিলেন- “ সত্যি সত্যি এটি একটি শ্বাসরোধী কবিতা। অত্যন্ত স্বল্প কয়েকটি শব্দ এবং স্পেস ব্যবহারের নীরবতা এক দমচাপা ভাব ধরে রেখেছে। এবং মাটির আগে ব্যবহৃত হয়েছে চাপ চাপ অন্ধকার শব্দ দুটি। যদিও প্রথম লাইনটিতে, আপাতনিরীহ প্রথম লাইনটিতে মাটির আগে কোনো বিশেষণ নেই। একটা সামান্য স্টেটমেন্ট যেন। প্রায় কবিতার লাইনই নয়। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত চুপ করে পঙ্‌ক্তিটির দিকে তাকিয়ে থাকলে কবির স্তব্ধ হতভম্ভ ভাব, তাঁর মর্মাহত বিস্ময় ধরা পড়ে। অর্থাৎ-- এমনকি, এই শহরে মাটি পর্যন্ত বিক্রি হয়।” এই কবিতাটি পড়তে পড়তে সত্তর দশকের অন্যতম কবি নির্মল হালদারের ‘অনাথপিন্ডদ’ কবিতার কথা মনে পড়ে- “মাটি বিক্রি করতে গেলে মনে হয়/ মাকে বিক্রি করছি/ মায়ের চোখ নেই মুখ নেই হাত পা নেই/ মা কেবল বুক পেতে দিয়েছে/ এক ঝুড়ি মাটির দাম আট আনা।” মাটির কথা এল, এল মায়ের কথাও। ‘শ্মশানছবি’ কবিতার শেষ পঙক্তিদুটি মনে হলেই সমস্ত দেহমনে শিহরণ ওঠে- “ ... সৌরশ্মশানের বুকে শীলমোহরের মতো জেগে থাকে সেই দৃশ্য:
                             মায়ের মুখাগ্নি করে সন্তানের অকৃতজ্ঞ হাত!”
শব্দের পবিত্র শিখা ছুঁয়ে থাকে আমাদের। পুড়ে যায় নিঃস্বতার আত্মঅহংকার।


(৪)

আমাদের শহরে
প্রত্যেক ধর্মের মানুষদের জন্য
ভিন্ন ভিন্ন দেবালয়;
কিন্তু সকল ধর্মের মানুষদের জন্য
একটিই বেশ্যালয়—

কোনো সমস্যা নেই। (আমাদের শহরে)  
কবি আমাদের চেনা পৃথিবীকেই হাজির করেন এমন গভীর তাৎপর্যে, চমক লাগে যেন। প্রত্যেক মানুষের ধর্মাচরণের জন্য আলাদা স্থান, কিন্তু যৌনতার পীঠস্থান একটি— ‘কোনো সমস্যা নেই’ শব্দবন্ধ ধর্ম নিয়ে মানুষের পারস্পরিক হানাহানির দিকেই দৃষ্টি আরোপ করে। আবার ‘খাটাল’ কবিতায় আমরা দেখি, একটি খড়ে ঠাসা মৃত বাছুরের মাথা মোষের সামনে এগিয়ে দিয়ে কীভাবে ‘অনর্গল ফেনা-ভর্তি দুধে ভরে ওঠে শহরের বালতি’। মা জানে না সন্তান মৃত, অপ্রাকৃত স্নেহের নিঃসরণ হয়েই চলে। শহরের খন্ড খন্ড অংশগুলো যেভাবে সিনেমাপোস্টারে সেঁটে থাকে, তাকে জড়ো করে গুছিয়ে রাখতে থাকেন স্রষ্টা। ‘সোডিয়াম আলোয় বি.টি রোড ঘোড়ার লিঙ্গের মতো লাল’, ‘তামাম চৌরঙ্গী তখন নিয়ন আলোর বাবলগাম’—অসাধারণ চিত্রকল্প ফুটে ওঠে লেখায়। ওনিডা টিভির শয়তানের কথা যখন বলেন ‘ টেলি- খুশি’ কবিতায়, ‘ সুপার মার্কেটের কবিতা’–য় লেখেন—“নতুন মানুষ এক বেরিয়েছে নতুন মার্কেটে/ ড্রেস্‌ড্‌ চিকেন- এর মতো/ নিজেকে বিক্রয় করে—স্বপ্ন ও কবিতার ডানাদুটি ছেঁটে” তখন বিশ্বায়িত সময়ের নিখুঁত আয়না হিসেবে কবিতাগুলিকে পড়তে অসুবিধা হয় না। আধুনিকতার নীরব সন্ত্রাসকেও প্রত্যক্ষ করতে পারি তাঁর কবিতায়। যৌনতার নতুন ভাষ্য তৈরি হতে থাকে মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে। ‘মানুষের জীবন হচ্ছে ঈশ্বরের অসুখ’ লিখেছিলেন কবি ‘মিশেল ফুকো’ কবিতায়। ‘ঈশ্বরের চোখ’ কাব্যগ্রন্থে ‘সুড়ঙ্গ’ কবিতায় জানিয়েছিলেন- “প্রকৃত নিজের কাছে যাওয়া এক অকল্পনীয় অন্তর্ঘাত”। এক সন্ধ্যার পাগল বসে থাকে ফুটপাতে, গির্জার মাঠের গোলপোস্টে ঢুকে যায় চাঁদ, ‘নিঃসঙ্গ বৃদ্ধের কথা’ কবিতাটি মনে পড়ে। মাছ ও জলের সংসারে তিনি এত একা কেন, এর উত্তরে যা বলেছিলেন তা উদ্ধৃত করতে ইচ্ছে করছে--
“এখানে আমার কোনো নিকট- আত্মীয় নেই, শুধু
 এক দূরসম্পর্কের ঈশ্বর আছেন।”



(৫)

প্রেমের কবিতার আলোচনা ছাড়া ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’-র পাঠ সম্পূর্ণ হয় না। ‘একটি প্রেমের কবিতা’র পর কীভাবে গ্রন্থিত হয় ‘প্রত্যাখ্যান’- এর পংক্তিমালা – “ সকল বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কের অভিজ্ঞতা থেকে/ জেনেছি যে, প্রত্যাখ্যান অনিবার্য।” প্রত্যাখ্যানের অতীত এক সম্পর্ক রচনাই কবির কাম্য হয়ে ওঠে। ‘দৃষ্টিবিনিময় একটি সম্পূর্ণ বিবাহ’ কথাটি ভাবতে থাকি। সমস্ত জীবন জুড়ে কৃষ্ণচূড়া ফুটে থাকার স্বপ্নে বিভোর মন, আপনজনকে দেওয়া ‘প্রথম লিরিক’--
“ আজ আবিষ্কার করি—
 পথের ধুলো ও ঘাস, ছায়া, প্রেম, কৃষ্ণচূড়া—এত বাস্তবিক।

দ্রুত হাতে লিখে রাখি কালো মেয়েটির জন্য প্রথম লিরিক।” স্মরণযোগ্যতা যদি কবিতার অন্যতম মাপকাঠি হয়, তবে এই লাইনগুলি আলাদা মাত্রা রাখতে পারে। ‘বন্দরে কথ্যভাষা’ কাব্যগ্রন্থের এই কবিতাটির সূত্রে পড়া যেতে পারে ‘সমুদ্র সংলাপ’ বইয়ের ‘একটি জেন- কবিতা’কে। কবিতার বিষয় আর প্রকরণ মিলে প্রেমের দর্শনকে যেভাবে তুলে ধরেছে, তার তুলনা নেই—
  তুমি আমার বাড়িতে এলে।
  টেবিলে-রাখা আমার কবিতার বইটা
  ছুঁয়েও দেখলে না।
  
  গল্প করলে জঙ্গলের এবং জিপগাড়ির।
  আমি একটা সুদৃশ্য জাপানি পেয়ালায়
  তোমাকে চা দিলাম।

  তুমি বললে, ‘বাঃ পেয়ালাটা কী সুন্দর!’
  সেই পেয়ালায় চা খেয়ে তুমি
  উঠে চলে গেলে।

  আমার সব ক’টি কবিতা তুমি
  পড়ে চলে গেলে।

সৎ কবিতার স্পর্শে এসে আমাদের নিহিত অভিজ্ঞতার পুনরুত্থান ঘটে বলে জীবনানন্দের মনে হয়েছিল। সার্থক শিল্প আমাদের নিজের কাছে ফিরতে শেখায়। স্মৃতির বসত জুড়ে কত মুখের আদল ভেসে ওঠে। মানুষ যেভাবে বাঁচে, যেভাবে বাঁচতে চায় কিংবা বাঁচতে পারে—এই সবটুকু মিলে মানবিক অস্তিত্বকেই চিনতে শিখি আমরা। শ্রেষ্ঠ কবিতা সব অসঙ্গতির জট কাটিয়ে নিয়ে যায় অসীম আনন্দের দিকে।
বুঝি বৃষ্টি নেমে আসে। ঝাপসা হয়ে আসে চারপাশ। টাটকা মেঘের জলে ভাসতে থাকে আমাদের মনকেমনের নৌকোরা… শুদ্ধ, নির্জন, অলৌকিক হয়ে উঠতে থাকে পাঠক কিংবা রণজিৎ দাশের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’।.

.......................................................………
রণজিৎ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
দে’জ পাবলিশিং
কলকাতা
প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ২০০২
প্রচ্ছদশিল্পী- মিলন বন্দ্যোপাধ্যায়