সিরিজ কবিতা : স্বেচ্ছামৃত্যু অথবা নির্বাসন : অভিজিৎ মণ্ডল


 

উৎসর্গঃ 'নির্জনতা, আরও নিবিড় হয়ে ওঠো... '

 

গানের ভিতর নেমে একজন সমানে খুঁজে চলেছে ভৈরব, অন্যজন পূরবী। একজন রাগ, অন্যজন রাগিণী। অদূরে দিগন্ত জুড়ে ঘন মেঘের ঘনঘটা, হয়ত বৃষ্টি আসবে খানিক পরেই, ভিজিয়ে দিয়ে যাবে মেয়েটির শিউলি গন্ধ মাখা করতল আর ছেলেটির ক্ষয়িষ্ণু ফুসফুস। ফাঁকা মাঠ, ধু-ধু। তারও কিছুক্ষণ পর হয়ত মেয়েটি নিজেই বৃষ্টি হয়ে উঠবে, ছেলেটি গাছ। তারা জানে, তার বেশি কাছাকাছি এলে কোনও গানই আর গান হয়ে উঠবে না। ঠিক যেভাবে কোনও কোনও দিন ছেলেটি কাঙাল হলে, মেয়েটি কুহক হয়ে ওঠে। সেতারে সন্ধ্যে বাজে, একা একা...

 

 ****


ফুলের বাগান ভেবে সরে সরে, যে গেছে

খাদের কিনারে—সবুজ দৃশ্য ভরা চোখে তার

ঝরনা উপচে পড়ে, পাহাড়ের নিস্তব্ধতা...

 

এমন প্রমত্ত দিনে সেও কি নিজেকে 

প্রজাপতি ভাবে, ভাবে নিরুদ্দেশ কুয়াশার ভিতর

কোনও উন্মাদ যুবকের ভেসে ওঠা মুখ?

 

একা, সে কিশোরী—

রোদের নরম ডানায় রঙ ছিঁড়ে ছিঁড়ে

গুপ্ত ছোরায় লিখে রাখে ঋতুদোষ।

 

*****

 

হয়ত তোমারই মতন দেখায়

লেগে থাকে, আমার চোখ—

ঠিক যেভাবে অনন্ত শূন্যের দিকে 

বাঁক নেয়—পাহাড়ী খাদ—

                       খাদের পাশে দৃশ্যময় চাঁদ

              অপেক্ষার মতো স্থির।

 

হা-মুখ গালের ভিতর ঢুকে পড়ে 

সন্ধ্যের আবছায়া গলি

সেইসব অচেনা পেরিয়ে—

তবু তো রোজ তোমার কাছে ফিরি 

 

আসলে একা একা, নির্জন, অন্ধকারে

আরও স্পষ্ট হয়ে উঠি আমি—

 

নিজেকে কেমন প্রেমিক প্রেমিক মনে হয় তখন!

 

*****

 

তুমি আমার পাশে পাশে হাঁটো

আমি তোমার পাশাপাশি—

 

কে কাকে অনুসরণ করে, কে কার 

সঙ্গে থাকে—সেসব প্রশ্ন সরিয়ে রেখে

অতল জলের নীচে, নিবিড়

 

বুদবুদে ভেসে ওঠে ছায়ার শরীর... 

 

কে কাকে ছেড়ে গেছে, কে কার মুক্তি 

এসব ভাবলে এখন—শিকড়ে টান পড়ে

ঝুলন্ত হ্যাঙারে দোলে বিষণ্ণ পৃথিবী!

 

*****

 

আমাকে আততায়ী ধরে এগোতে এগোতে

 

যেভাবে আড়াল শিখে নিচ্ছে কান্না 

ভুলে যাচ্ছো কেন—গোপন হত্যারও 

সুপারিকিলার থাকে, ফেলে আসা রাতের কথা

মনে করাচ্ছে—এইসব অন্তর্বর্তী অনুযোগ—

 

যদিও, সব তদন্তই প্রমাণ সাপেক্ষ...

 

তবু কোনও কোনও সুন্দরের চোখে চোখ রেখে

নিজের প্রকৃত খুনিকে চিনে নেওয়া যায়!

 

*****

 

মুণ্ডুহীন দেহ শুধু শুয়ে আছে যোনির ভিতর

আমি তার কান্না শুনি, রক্ত-দ্বেষ-ঘৃণাময়

জীবনের পাশে জেগে থাকেন—একা—

                               নির্বিকার জননী—

তাঁর ভ্রাম্যমাণ ডানায় ওড়ে বোধের চেতনা। 

 

প্রলুব্ধ জিভের ডগায় বসে থাকেন

তিনি মা অন্নপূর্ণা, আরাধ্যা দেবী আমার 

ধান্যদুগ্ধে ধুয়ে দেন ধরিত্রীর বুক

আমি তাঁকে পূজা দিই মাংসের থালায়

 

এভাবে অন্ধকার মুছে মুছে ক্রমশ

আলোর দিকে যাই—

পাপ কুষ্ঠে খসে পড়ে তৃতীয় আঙুল।

 

*****

 

আমি নিজের দেহে বৈষ্ণব হয়ে ঘুরে বেড়াই

স্রোতের মুখে নৌকা বাঁধি, সরে সরে 

যায় মাটি; সরে যায় ছায়া

রঙিন স্বপ্নে পড়ে থাকে সবুজ বীজতলা 

 

অদূরে নদীর ঘাটে কে যেন বাজায় বাঁশি—

ভিক্ষা শেষে ফিরে আসি নিজের শরীরে।

 

যেভাবে শূন্যতা সাঁতরে আসে ব্যাধ ও শিকার

লক্ষ-কোটি চোখ এসে গিঁথে থাকে জন্মের দাগে—

তারা কেউ আমার চেনা বন্ধু নয়, শত্রু নয় কেউ

 

অনর্থক শরীরে বাজে তীরের ঝঙ্কার! 

 

 *****

 

গোধূলি ডুবছে ওই দূরে, শ্যামলা পুকুরে 

 

ফড়িংয়ের ডানা ঘেঁষে চিকন হাসির মতো

ঝিলমিল লেগে থাকে লাজুক মেয়েটির চোখে—

অন্ন ও অবস্থান পাশাপাশি বসে

চাল ধোয়া হাতে যেন আলপনা আঁকে

                                  আকাশের গা'য়

 

নির্জনতা, আরও নিবিড় হয়ে ওঠে...

 

সন্ধ্যের মলিনতা মুছে—

বাড়ন্ত সংসারে উপচে পড়ে চাঁদ।

 

*****


সারাটা শরীর এখন স্তব্ধ দিঘি মনে হয় 

আর তুমি ঘাই মেরে চলে যাও, খাবি খাও দূরে

হিঞ্চে কলমি শাপলা শালুকের দাম ঘিরে

গোল হয়ে শুয়ে থাকে—

                ব্যর্থ দিনগুলি রাতগুলি।

 

ঘাট নেই বলে কেউ আর 

নাইতে নামে না জলে, একা একা

আমাদের ফেলে আসা পুনর্জন্মের মতো 

নিবিড় আলোয় ফেরে ছদ্মডাকনামগুলো

 

ছোট ছোট স্রোত ভেঙে ভেসে আসে—

মরা-পচা ঘাসপাতা ঘেঁড়ি গুগলি; জানালা 

                                     আঁকা চোখ— 

 

অগত্যা উদাসীন ডানায় ওড়ে মেঘের পালক।



ফেসবুকে কবিকে পেতে : https://www.facebook.com/avijit.mondal.5836

 


সিরিজ কবিতা : কালের কদম্ব-কাঁটা : শোভন ভট্টাচার্য


 

 

কালের কদম্ব-কাঁটা

সন্তানই ধর্ষক হলে নাভীশ্বাস ওঠে প্রকৃতির;
বিষে বিষে ছটফটায় ক্ষিতি অপ তেজ মরুত ব্যোম।
সেদিকে দ্যাখে না ফিরে সভ্যতার উদ্ধত অহম;
মানুষই নিয়ন্তা যেন বিশ্বময় গতি ও স্থিতির।

 

ভুলে যায় তার জন্ম এই প্রকৃতিরই ছায়াতলে।
সেই শান্তি, সে-আশ্রয়, কী নিবিড় মাতৃস্নেহবৎ
ভুলে গিয়ে ভাবে মূর্খ মহাবিশ্বে মানুষই মহৎ;
লুন্ঠনের থাবা তার পড়ে জলেস্থলে ফুলেফলে।

 

স্বপ্ন বোমাবিশ্বরূপ, ধ্বংসরূপে ন্যস্ত পরমাণু;

মাটি-আকাশের কান্না আস্ফালনে চাপা পড়ে যায়;

সেই অশ্রু সুনামির ঢেউ হয়ে জগৎ ভাসায়;

কালের কদম্ব-কাঁটা হয়ে অশ্রু ছড়ায় জীবাণু।

 

ঘরমুখী দুনিয়া, মৃত্ প্রতিদিন হাজারে হাজার...
সভ্যতা উজাড় করে পথ খোঁজে প্রকৃতি বাঁচার।

 

 

যুদ্ধবাজ ‘প্রথম’ বিশ্বকে 

তোমার ধ্বংসের বার্তা তোমারই বিজয়-ব্যভিচারে;

মানুষকে মানুষ নয়, ভেবেছ গ্ল্যাডিয়েটর তুমি;

শিকল-গোঙানি যত শুনেছে তোমার মাতৃভূমি;

যত মৃত্যু, নিষ্ঠুরতা, উদযাপিত অ্যাম্ফিথিয়েটারে…

 

মানুষের মুণ্ডু কেটে তোমরাই তো খেলেছ ফুটবল;

হিরোশিমা নাগাশাকিতে ছুড়েছ পরমাণু বোমা;

কোথাও খইয়ের মতো ছড়িয়েছ মিসাইল তোমার;

জ্বলন্ত ক্ষুধার মুখ বন্ধ করতে গুঁজেছ পিস্তল।

 

তোমার দুর্দশা দেখে, প্রকৃতিও যেন তাই হাসে! 

মাটিতে লুটোয় আকাশের হাসি— হাসে কালপুরুষ—

তিনিও হাসেন, ঘরে ঘরে যার টাঙিয়েছ ক্রুশ।

তুমি কিনা কাঁপছ পারমাণবিক সামান্য ভাইরাসে?

 

তোমরাই তো চেয়েছিলে অস্ত্র হোক ‘জীবাণু-সন্ত্রাস’;

এখন কে কাকে মারবে? কে কবর দেবে কার লাশ?

 

 

‘পরিযায়ী’ প্রশাসনকে

অসুখ উড়িয়ে আনলে, সব সুখের পায়রা এল দেশে;

যতদিন না জান-জাহান ছেয়ে গেল পর্যাপ্ত জীবাণু।

কে তুমি সরকার আর এ তোমার কী ‘কালাকানুন’

পরিযায়ী শ্রমিকেরা দেশেরই ভেতরে গেল ফেঁসে।

 

ভিনরাজ্যে, কর্মহীন, অনাহারে, অনিশ্চয়তায়;

লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি, লক্ষ-কোটি ক্ষুধাক্লিষ্ট প্রাণ

পড়ে থাকল, পচতে থাকল একা— অসহ্য পেটের টান

সামলাতে না পেরে কেউ, বাড়ির আলেয়া-পথ পা’য়

 

হাঁটা শুরু করল— পথে ঝরল কত মেহনতী লোক;

তারাই দেশের চাকা ঘোরাত লকডাউনের আগে;

তাদেরও বাড়ি-ফেরার জন্য যে কয়েকটা চাকা লাগে

কে চায় সে-কথা ভাবতে? তাদের মরণে কার শোক?

 

ত্রাণের প্লাস্টিকে ছাপা মন্ত্রীর প্রধান-মুখ্য মুখ

দেখায়— মহামারির চেয়ে কত গভীরে অসুখ।    

 


কালাজাদু

আফ্রিকা নামে যে একটা মহাদেশ ছিল পৃথিবীর

সেই ছায়াচরাচর মহামারিকালে আজও আছে?

খররোদ তুচ্ছ করা কালো মানুষের বোবা নাচে

এখনো কি জেগে আছে সীমাহীন দুর্ভিক্ষ শিবির?

 

যখন ছেয়েছে বিশ্ব শ্বাসরোধী মারণ ভাইরাস;

ঘোর মৃত্যুভয়ে কাঁপছে আমেরিকা, এশিয়া, ইউরোপ;

প্রতিদিনই বেড়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর রোগের প্রকোপ;

হাঁপাচ্ছে বিজ্ঞানী আর ডাক্তারেরা লড়ছে রুদ্ধশ্বাস।

 

সুসভ্য মিডিয়া সেই কাঁপনের তালে থরহরি;

এমনকী মাস্ক পরে বাকরুদ্ধ সংবাদপাঠিকা;

সংবাদ সমূহে তবু দুনিয়ার কোথায় আফ্রিকা !

পৃথিবীর গল্পে তার স্থান শুধু কালাজাদুকরি ? 

 

বাকি পৃথিবী কি জানে সে-ভূখণ্ড কোথায় বেখোঁজ ?

'ওদের বাঁচামরায় কী ভেদ, ওরা তো মরে রোজ'...

 


শূন্য থেকে শুরু

প্রকৃতি, আত্মরক্ষার্থে, জন্ম দেয় যতেক ভাইরাস;

করোনা ইবোলা নিপা— নাম শুধু বদলে বদলে যায়;

আসে নবমৃত্যুদূত সভ্যতার স্বীয় কালবেলায়;

নাচে মৃত্যু নিঃশ্বাসের আসন্ন বাতাসে— তাই মাস্ক—

 

অন্যের প্রশ্বাস থেকে পালিয়ে বাঁচার বর্ম তাই;

পালিয়ে বাঁচার পথ পেতে যে চালিয়েছিল ‘এসি’

সেও আজ জেনে গেছে সে-পথে বিপদ আরো বেশি;

কখনো বৃক্ষের চেয়ে সুরক্ষিত হয় কি বনসাই?

 

তাই তারা সহজেই উপড়ে আসে, মূলে নেই মাটি;

শহরে শহরে তাই ঝড় এলে বড় গাছ পড়ে;

শহরে শহরে তাই করোনায় বড় লোক মরে;

যেখানে আকাশ নেই, আছে দালানের দাঁতকপাটি।

 

শূন্য খনি শূন্য বন শূন্য জমি শূন্য জলাধার;

শূন্য থেকে শুরু হোক মানুষের প্রস্তুতি আবার।   

 

 

হিরণ্যকশিপু

তোমার সংহারমূর্তি আমাকে সংযত হতে বলে;

দেখায় আমার মৃত্যু স্বরোপিত খেতের ফসল;

দেখায় আমারই বিষে নীলাভ আকাশমাটিজল;

আমারই গরল দুধে, ওষুধে, ঘাতক স্নেহতলে।

 

দেখায় আমার থাবা খাবলা করে দিচ্ছে বনস্থলী;

দেখায় আমার থাবা ফুটো করে দিচ্ছে বায়ুস্তর;

দেখায় আমার থাবা শ্বাপদের চেয়ে ভয়ঙ্কর;

আমারই সহস্তে লেখা সভ্যতার এই অন্তর্জলী।

 

করোনা কারণ মাত্র— এ আমার স্বীয় আত্মঘাত;

নৃসিংহের মতো জাগে আমার প্রতিটি স্তম্ভ, রিপু;

ক্ষুদ্রতার আস্ফালনে আমি মস্ত হিরণ্যকশিপু;

মরে যেন বাঁচি, যাতে বাঁচে কিছু প্রকৃত প্রহ্লাদ।

 

মানুষ বাঁচার মন্ত্র খুঁজে পাবে হয়তো বা তখন;

নম্র-সগৌরবে যদি বুনে তুলতে শেখে তপোবন।    

 






নভেম্বর ২৫


 

দুঃখ করিব পান
যেমন বিস্ময়
বয়ে যায় বনের ওদিকে
ছাই হওয়া দিন আছে ঝরোঝরো মুখে
মুক্তো ঝুটা হ'ল
দিনভর রাত্রি-জাগরণ
দিনভর রাস্তা রাস্তা খেলা
পের হয় দুক্ষী আর দুঃখ বসে থাকে
পানপাত্র রচিবে সঙ্গিনী
এটাই কি সেই দোকান
যারা দুঃখ ব্যবসা করে

আজ আকাশ হ'ল ছোট
যেন গর্তে পড়া মাছি
যেন ছড়ানো আছে মাদুর
বড় ঘুম পেলো কি আজ

জিয়া হক

মহল্লার নাম আরশ : জিয়া হক

 গত বছর শীতে কী ঘটেছিল আমার জীবনে, মনে নেই। কার সঙ্গে হাতাহাতি করতে গিয়ে মাড়ি কেটে রক্তক্ষরণ হয়েছিল, মনে নেই। রেস্তোরাঁয় কি আদৌ ঢুঁ মেরেছিলাম বন্ধু জুটিয়ে? মনে নেই। টিকিট কেটেও মহিলা কামরায় ওঠার জন্য ৪০০ টাকা জরিমানা হয়েছিল কিনা মনে নেই। শুধু মনে আছে, তোমার সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছিল আমার। একবারও তোমার দরজার সামনে দিয়ে হেঁটে যাইনি। তাকাইওনি। 


একদিন সূর্য ডুবে যাচ্ছিল আর পাখিরা মেঘের ভেতর দিয়ে ভাসছিল আর আমার কোথাও ফেরার ছিল না বলে উলু ভর্তি মাঠে একা বসে বসে ট্রেনের যাতায়াত লক্ষ করছিলাম। ঘন্টায় দুটো ট্রেন। ট্রেনের ভেতরে লোক, গায়ে লোক, মাথায় লোক, দুই বগির মাঝখানে লোক। গোটা গ্রাম যেন শেকড় উপড়ে শহরে চলে গিয়েছিল। আমাদের শহর। দূর থেকে দেখতে প্রাসাদের মতো মনে হয়, অন্তরটা ফোঁপরা। 


ভেবেছিলাম, তোমার বাড়ি না গিয়ে এখানে কেন অপরাধীর মতো নিজেকে আড়াল করে ঘাপটি মেরে বসে আছি। ভেবেছিলাম। অন্তত হাতমুখ ধোয়ার লোটাভর্তি জলটুকু তো মিলত। সঙ্গে সেই লাল গামছা। আমি, তুমি, অনেকেই ওই লাল গামছাটার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি, জানো? ভাদ্রে স্থলভাগে হাওয়া ক্ষীণ হয়। ফলে জামা ভিজে উঠছিল ঘামে। কেউ যেন এসে তালপাতার পাখার বাতাস করতে করতে জীবনের মানে ব্যাখ্যা করে শুধোবে, তাহলে তুমি কোন পথটা বেছে নিলে? 


এত হুটোপাটির মধ্যে পথ বেছে নিয়ে পদব্রজে বেরিয়ে পড়া কি সম্ভব, বলো? ছিঁচকাঁদুনে বাচ্চার মতো কখনও বলেছি, আমার সঙ্গে মিলবে এমন একটা পথ আমায় এনে দাও যেখান থেকে পারো? সূর্য অস্ত গেল। যারা পানিফল চাষ করে তারা দূরের দীঘির পাড়ে বসে ধূমপান করতে করতে ফলনের অঙ্ক কষছিল বলে মনে হয়েছিল। হয়ত তা নয়। কে কোথায় কী ভাব ধরে বসে আছে তা জানবার উপায় জানা নেই। আকাশে তারা ফুটল। দিনের দেবতা আর রাতের দেবতারা এখন জায়গা অদলবদল করবে। যখনই তারাভরা আকাশের দিকে নজর গেল তখনই মনে হল, কত পুরু অন্ধকার ছিঁড়ে ওই আলো বসানো জাজিমে পৌঁছালো চোখ! কিন্তু শেষ অব্দি গেল তো সে! এইসব কথা তোমাকে বলতে পারি না পাছে তুমি ভাবুক ভাবো আমায় আর এরপর থেকে সবার সব ভাবনার ভার চাপিয়ে দাও আমার ছোট্ট মাথার ওপরে। আমার অকল্যাণ হোক সেটা তুমি চাও না কিন্তু আমার কিসে কল্যাণ তা তুমি আমাকেই ভেবে দেখতে বলো। খুব রাগ হয়। মনে হয়, আর কখ্খনো যাবো না তোমার দরজায়। মুখ দেখাব না। দেখা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে সরু গলি বেয়ে বড় রাস্তায় উঠে ভিড়ের মধ্যে মিশে হারিয়ে যাব। রাত বাড়ছে। 


একদিন নৌকোয় যাচ্ছিলাম। তুমিও পাশেই কোনও এক নৌকোয় ছিলে। ভুতুড়ে এক হাওয়া দিচ্ছিল দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে। নাকি উত্তর-পূর্ব! আমার গা ছমছম করছিল না, শুধু ভাবছিলাম তোমার গা ছমছম করে উঠছে না তো! জলের তোড়ে দুলে দুলে চলল আমাদের দুই নৌকো। তোমার নৌকোর মাঝির গান আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। দরদ ছিল। আমার মাঝি সুরেলা নয়। গানও জানে না। দায়ে পড়ে মাঝি হয়েছে। তারা চোদ্দ পুরুষ চাষী। চাষী মাঠের গান, মাটির গান জানে। মাঝি জানে জলের গান। 'আমায় ডুবাইলি রে, আমায় ভাসাইলি রে, অকুল দরিয়ার বুঝি কুল নাই রে'। এই কথা দরিয়ায় এলেই আমার মনে পড়ে। আর মনে পড়ে তোমার কথা। তুমিই যেন দরিয়া হয়ে আগাপাশতলা বয়ে চলেছো। গা ভেজে, মন ভেজে না, কারণ তোমার যাত্রাপথ অজানা, যেখানে নামি সেখানে অতটুকু পাই, সবটুকু মেলে না। তারপরও তুমি পাশের নৌকোয় ছিলে। 

জিয়া হক 

সচরাচরিত : জিয়া হক

 কুতুহলে লক্ষ করি সব। 

জগৎ ফুটিয়া আছে আনাচে কানাচে। 

ফুল রচে মাটির দেবতা। 

পতঙ্গ সম্মান বয়ে নিয়ে যায় পুষ্প-পল্লীতে। 

বুঝিলাম, এ জীবন অন্যায্য নয়। 

হারাবে হারাবে করে থেকে যায় প্রতিষ্ঠা যেখানে। 

মরিতে মরিতে তারা পরিবার রচে। 

গোরস্থানের পাশে শ্মশান, সমাধি তবু বিস্তীর্ণ 

ক্ষেত্র জুড়ে পেকে ওঠে ধান্যজীবন। 

স্নেহময়ী রাত্রির বুকে দিবসের সকরুণ 

মুখ দুগ্ধ পান করে। 

মরিবে মরিবে করে ঔষধ কেনে। 

শ্রোতারাই যেখানে গায়ক 

সেইখানে গান নয়, গায়কী প্রধান। 

বিমান সচল হলে দেখব বিমান—সেবিকা সন্ধ্যার। 

রচিতে রচিতে তারা নষ্ট করে ছবি। 

তবু ছবি। থেকে যায়। 

ময়লা আকাশে। 

র‍্যান্ডম রাহাত

 




সরকারের ভিখিরিপনায় করুণা আসে যে গরিবের ঘামের উপার্জনের অংশ চায়।

 শহরে বারুদের মরশুম। গ্রামে চলো এখন পেয়ারার মরশুম।

আমার নিশ্বাস-প্রশ্বাসে ছেয়ে আছে অনেকটা মনে হচ্ছে আর ওই লোককে পরও মনে হয়।

ওর সঙ্গে দেখার করার ইচ্ছাও অনেক কিন্তু যাতায়াতের খরচও মেটাতে হয় যে।

মুখ খোল, চোখে চোখ রাখ, জবাব তো দে, আমি কতবার লুঠ হয়েছি তার হিসাব তো দে।

তোর শরীরের লেখায় চড়াই-উতরাই রয়েছে, আমি তোকে কীভাবে পড়ব, আমাকে বই তো দে। ফয়সালা যা কিছু হোক, মেনে নিতে হবে। যুদ্ধ হোক, বা প্রেম হোক, ভরপুর হতে হবে।

আর বয়স যাদের পাথর ভাঙতে ভাঙতে কেটে গেছে এখন তো তাদের হাতে কোহিনূর হওয়া উচিত। আমি আমার প্রাণের শত্রুকে প্রাণ বলি আর ভালবাসার এই মাটিকে হিন্দুস্তান বলি।

দেওয়ালের এই যে ঘুলঘুলি তা ষড়যন্ত্রের অংশ কিন্তু একে আমি ঘরের আলোকবর্তিকা বলি।

যা দুনিয়ায় শোনা যায় তাকে বলে নীরবতা আর যা চোখে দেখা যায় তাকে তুফান বলে।

আমার মন থেকে এক এক করে সব কিছু বিদায় নিয়েছে কিন্তু একটা জিনিস বাকি আছে তাকে ইমান বলে।

শুধু ছুরিতে নয়, চোখেও জল চাই।

ও খুদা, শত্রুও আমার বনেদি চাই।

আমি আমার শুকনো চোখ থেকে রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছি আর এক সমুদ্র বলে, আমার জল চাই। অন্ধকার চারদিকে সাঁইসাঁই করতে শুরু করেছে।

প্রদীপ হাত তুলে দুয়া করতে শুরু করেছে। নিয়ম শিখিয়েছিলাম যাকে চলার, সেই লোক এখন আমাকে হেনস্থা করছে।


রাহাত ইন্দোরি

মহানগরে কবি : কেদারনাথ সিং

 

 


এই এত বড় শহরে

কোথাও থাকে এক কবি

কুঁয়োয় যেমন কলসি থাকে সেভাবে থাকে

কলসিতে যেমন শব্দ থাকে

যেমন শব্দে থাকে ডানার ঝাপটানি

এত বড় শহরে ও থাকে

আর কখনও কিছু বলে না

 

শুধু মাঝে মাঝে

অকারণে

সে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে

তারপর উঠে পড়ে

বাইরে বেরিয়ে আসে

খুঁজে খুঁজে খড়ি নিয়ে আসে কোথা থেকে

আর সামনের পরিচ্ছন্ন চকচকে দেওয়ালে

লেখে 'ক'

 

এক ছোটো

সাদামাটা 'ক'

উঁচু শহরে বহুক্ষণ ধরে 

তার আওয়াজ শোনা যায়

 

'ক' মানে কী

সেপাইকে এক বুড়ি প্রশ্ন করে

সেপাই প্রশ্ন করে অধ্যাপককে

অধ্যাপক প্রশ্ন করে ক্লাসের

সবচেয়ে চুপচাপ পড়ুয়াকে

'ক' মানে কী

সারা শহর প্রশ্ন করে

 

আর এই এত বড় শহরে

কেউ জানে না যে

ওই যে একজন কবি

প্রতিবার এমনি হাত তোলে

এমনিই ওই পরিচ্ছন্ন চকচকে দেওয়ালে

লেখে 'ক'

আর সবাইকে খুন করে দিয়ে যায়!

 

শুধু এতটুকু সত্যি

বাকি সবটা ধ্বনি'

অলংকার

রসভেদ

দুঃখের বিষয় হল

আমি এর বেশি ওর

সম্বন্ধে আর কিছু জানি না।

 

১৯৮৪


তর্জমা ঃ জিয়া হক 



 

উদ্ভটরস ও গোঁজামিল


 

কুকুরটার মাথায় বুদ্ধি, পেটে বুদ্ধি, পায়ে বুদ্ধি, লেজে বুদ্ধি। সে গেরস্ত জীবনে আছে, আবার শহরের ঝাউঢাকায় চরা খেতে যায়। কচিবেলায় মুখে বল্লম খেয়েছিল। বাম চোখের পাশে দাগটা এখন তার সৌন্দর্য। জম্পেশ যুবতীর চ্যাপ্টা তিলের মতো মানানসই। কুকুরবস্তি তাকে যম ভাবে। ওর নাম লেলো। মনে রাখার মতো নাম—লেলো। 


পতাকাটা পড়েই ছিল ঠোঁঙার মতো আলুথালু। হরদিন তো মানুষের পতাকা লাগে না। তবে, পতাকা যে একটা হেলাফেলা করার মতো ব্যাপার নয়, সেটা নিশ্চয়ই সবাই মানবে। পতাকা আছে, তাই আমরা আছি। কিন্তু কেঁচিয়ে দিলো লেলো। সব ঝক্কিহীন শান্তিভর্তি ব্যাপার কেঁচিয়ে দেওয়ার চওড়া ইতিহাস আছে। পতাকায় ডান পা তুলে ইয়ে করে দিয়ে লেলো তার ইতিহাসকে আরেকবার বাঁচিয়ে দিলেও সে বাঁচিল না। শীর্ষ কুকুর আদালতে তার ফাঁসির রায় ঘোষণা হয়ে গেল। ৭ দিন পর দড়ি। 


লেলোর দল পথে নামল। 'লেলো আমাদের নায়ক, তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি চাই'। গান গাইতে গাইতে চলল মিছিল 'লেলো/আকাশেই লেজ মেলো'। লেলোর দলের বলিয়ে কইয়েরা প্রশ্ন তুলল :

এক) পতাকা ওভাবে ফেলে রাখা হল কেন? সেটা কি অন্যায় নয়? 

দুই) পতাকার সংজ্ঞা কী? 

তিন) দেশ কি পতাকার চেয়ে বড় নয়? দেশের নাগরিক কি পতাকার চেয়ে বড় নয়? নাগরিকের জীবন কি পতাকার চেয়ে বড় নয়? জীবনের প্রয়োজনে ইয়ে পতাকার চেয়ে বড় নয়? 


লেলোর খাল খিঁচে নিতে চাওয়া দল মিডিয়া দুর্গ দখল করে দেশ-জাতি-ধর্ম ও পতাকার স্বরূপ নিয়ে বোমার ঢঙে কালীপটকা বাজিয়ে আসর গরম করে তুললো। দাবি উঠলো, মহাজগতের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর পতাকা তৈরি করে ওখানেই পুঁতে দিতে হবে। মাপ নিয়ে কোনও গোল বাঁধলো না, নন্দনতাত্ত্বিকদের মধ্যে সৌন্দর্যের যথার্থ সংজ্ঞা নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেলো। দরজি কে হবে, তাই নিয়ে তর্ক দেখা গেল দিকে দিকে। অন্তত সতেরো বছর পতাকা বানানোর জ্ঞানগম্যি আছে এমন কাউকে নিয়োগ করা দরকার কেননা এই সেই পতাকা যা দেশের ইতিহাস নতুন করে লিখবে। 


লেলো চুপচাপ। সে হাজতে বসে ডেগি মুরগির উরু চুষতে চুষতে শুধু বলেছে, ''রাষ্ট্রপতির কাছে যাব।''


এই কথা শুনে রাষ্ট্রপতি বিদেশ সফরে যাওয়ার তারিখ দেখে। রাষ্ট্রপ্রভুর বৌ নায়াগ্রার হাওয়া সেবন করার জন্য তেতে উঠেছেন ইত্যবসরে। তাঁরা কানাডায় একটা পশ্যাধিকার সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন। 


দড়ি হয়ে যাবে লেলোর। তার চেলারা কবিতা পড়ছে যেখানে দুর্বৃত্তের টুঁটি টিপে ধরার কথা লেখা আছে। তার বিরোধীরাও ওই একই কবিতা পড়ে যাচ্ছে। চারদিকে যখন ধুলোর ঝড় বইছে তরতর তিরতির করে তখন শীর্ষ আদালত রায় ফিরিয়ে নিয়ে জানালো, বিশেষ তদন্ত সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, লেলো যাতে প্রাকৃতিক করে দিয়েছিল সেটা এ-দেশের পতাকাই নয়, পাশের শত্রু দেশের। অর্থাৎ পতাকা নয়, মূর্তি হবে। লেলোর। সে জাতীয় বীর। মহাজগতের বৃহত্তম মূর্তি হবে তার। জনমত হল, এত টাকার স্ট্যাচুর মুখে পেল্লাই একটা কাঁটাতারের মতো দাগ মানাবে না, ওটা বরং মসৃণ রাখা হোক। কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো অন্য জায়গায়। লেজ অর্ধনমিত না রাখলে অণ্ডকোষ বেরিয়ে পড়ছে। 


জিয়া হক 

চিরাচরিতমালা : নিজেকে সমবেদনা : জিয়া হক



 

মাথার ভিতরে কারা হেঁটে বেড়াচ্ছে শব্দ করে। 

সেই শব্দে শব্দে আমি জেগে রয়েছি। 

রাত্রির কাছে আমি দেহী পাখার বিস্তার নয়, দাবি করি ঘুম। 

অনুরোধ শুনতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ কখনও দাবি শুনতে চায় না। 

কষ্ট হতে থাকে। 

কষ্টের কথা ডাক্তার ছাড়া কাউকে বলতে নেই। 

তিনি কষ্ট শোনার দাম নেন, চেষ্টা করেন উপশম করে দেওয়ার। 

মনে মনে খুঁজি সেই লোকটাকে 

যাকে সব কথা খুলে বলা যায় 

এবং যিনি হেফাজত করবেন সেই অসহায় কথামালা। 

কান থেকে কানে, মুখ থেকে মুখে কথারা ভেসে ভেসে সাত সাগর সতেরো নদী পেরিয়ে যায়। 

দশদিক চঞ্চল হয়ে ওঠে, বসে বিচারসভা, এখানে সকলেই জাজ।

লক্ষাধিক রায় বেরোয়। 

আসামির লক্ষবার সাজা হয়। 

সংবিধান চুপ করে থাকে যেন সে  কাজ থেকে অবসরপ্রাপ্ত বুড়ো পিতা, 

সন্তানদের কলহ উদাসীন দেখে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় অবশিষ্ট নেই।

কল্যাণপুরে কল্যাণ থাকে না, 

যেভাবে সংসদে শংসাপত্র হাতে বিষধর মানুষচূর্ণ। 

শক্তি দাও। স্মৃতির শক্তি। 

যদি অতীত ভুলে যাই, আমি যে আমিই তা প্রমাণ করব কীভাবে? 

নিজেকে নিজের কাছে কখনও-সখনও প্রমাণ করতে হয়। 

আত্মপক্ষ সমর্থনের করতে গিয়ে 'আত্ম'বিস্মৃত বোধ করলে মামলা খারিজ হয়ে যায়। 

এই মামলায় হারা মানে শূন্যে গিয়ে দাঁড়ানো। 

সেখানে দাঁড়ানো যায়? ভেসে বেড়ানো যায়। 

যা ওড়ে তা যেমন পাখি নয়, যে ভাসে সে-ই মেঘমালা নয়। 

তার বারিধারা হয়ে ঝরে পড়বার সৌভাগ্য নেই। 

সে সাড়ে তিন হাত ঘুমোতে চায়। 

জায়গা পায়, সহমর্মী গাঁদার আপ্যায়ন পায় না বলে 

রাত্রির কাছে দুপুর আর দুপুরের কাছে রাতের প্রার্থী হয়ে 

হাত তুলে থাকে। 

বিদ্যুতের অসীম জেওরে সাজিয়ে রেখেছে আধা-বৃষ্টির প্রায়ান্ধকার রাত্রির আকাশ। 

দর্শক-শূন্য এই বায়বীয় মাঠের খেলাধুলা। 

প্রতিটি মানুষ নিজস্ব গোয়াল ও খোঁয়াড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে পৃথিবী শীতলতর হয়েছে ভেবে। 

তার কথা ভাবি যে সুষম তর্কের পুষ্টি পেতে চেয়ে অাগলবিহীনভাবে কথা বলে যায়। 

প্রতিটি কথায় সে বিস্ময়সূচক চিহ্ন বসায় আর বিস্মিত হতে হতে অবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। 

সে বেঁচে আছে। বাঁচবার প্রণোদনা দেয়। 

সবাইকে সে বর্জন করেছে বলে দাবি করে, তবে জ্ঞাতার্থে জানাই, তার শুভ বিবাহে অন্তত এক হাজার অতিথি দেখেছি। 

রস আছে তাই রসিকতা আছে। 

সন্ন্যাসী রাজা হয়, রাজাও সন্ন্যাসী। 

গানটুকু রয়ে যায়। কে গায় ঐ? 

উচ্চবংশীয় প্রলাপ মধুর। 

বংশ মানে বাঁশ। তার যাত্রা সভ্যতার পায়ুপথ ধরে। 

সিদ্ধান্ত শোনাবে বলে প্রাচীনা আলমারি থেকে বের করো নৈয়ায়িক ধুতি। 

শ্রাবণের দিনগুলো আষাঢ়ের স্মৃতি নিয়ে গর্ববোধ করে কেননা আকাশে নেই বৃষ্টি-উদ্রেককারী মেঘ, 

গত মাসে ছিল। 

Where The Truth Lies

 

..................................................................

I started from a point where no one ever intruded. It is an ultimate nowhere. It is true that people imagined about this point long before but did not entirely or even partially step towards it. This is the point, as elders say, where the very idea of truth lies. It is always moving or shivering as if it will right now explode towards eternity, negate its centre and spread like flame of all grabbing fire. Having a little knowledge about its nature, we incessantly question the fire, 'Where have you come from and to which extent do you want to go or to which direction?' The fire turns into ashes but no answer sprouts out of it. We start looking for the person who first saw this fiery ball. There is no one to accept the fact that he/she has come across this warm, yellow mystery. Truth thus burns in solitude. What happens? We can feel its warmth but cannot see or touch it because we have lost the path to truth or there was never any path to reach the coveted truth. The quest for truth is true and it is also true that a life has not all the answers that can explain or define it unanimously. 


রাখাল ছেলের গল্প : জিয়া হক



রাক্ষসবাড়ি পাহারা দেবার ছলে
ঘুমিয়ে পড়েছে রাখালের কচি খোকা
স্বপ্নে দেখছে মায়ের অট্টালিকায়
স্নেহ ধরে আছে সোনামন থোকা থোকা

পাহাড়ের নিচে শাঁপলা দেশের খুকি
ফুল তোলে আর তাড়া করে প্রজাপতি
পরনে ময়লা ছেঁড়া ছেঁড়া নীল শাড়ি
চোখে জল তার, কে এই দুঃখমতী?

রাখালবালক বাজাবে কি যাদুবাঁশি?
যাবে নাকি ওই নীল মেয়েটির পাশে?
চোখের জল তো হীরের চাইতে দামি
ঝরে যেতে দেওয়া ঠিক নয় বৃথা ঘাসে

হয়ত মেয়ের নাকের গয়নাখানি
হারিয়ে গিয়েছে ঝর্নার বুনো জলে
ফুটে গেছে পায়ে লতাগুল্মের কাঁটা
বালক আসছে একাই সদলবলে

একাকী বালক রাক্ষসপুর দেখে
সে পারবে না বালিকার কাছে যেতে?
গান্ডীবে তার অস্ত্র বলতে বাঁশি
ব্যথা পারবে না ব্যথাকে উদ্ধারিতে?

পুষ্প হাতে আকাশের দেবতারা
ঢেলে দেবে বলে উন্মুখ সারিসারি
নাকফুল তুমি লুকিয়ে কোথায় আছো
পৃথিবীর কাছে তুমি খুব দরকারি

ঘুম ভেঙে যায় খড়ের গাদার নিচে
কোথায় কন্যা, রাক্ষসপুর, বাঁশি
রাখালের গাভী গেছে খাদ্যের খোঁজে
সেও কি হবে না সঙ্গীতে সন্ন্যাসী?

দূরে দেখে তার গাভী নিয়ে এক মেয়ে
ময়লা শাড়ির ছেঁড়া নীল পাড় দাঁতে
এগিয়ে আসছে, এগিয়ে আসছে ধীরে
খুব মিল তার দুঃখমতীর সাথে

কাছে এসে বলে, এই নাও প্রিয় পশু
বারবার বলো খুঁজে দেওয়া সম্ভব?
রাখাল বলল, ভালবাসো মেয়ে গাধা?
আমাকে রাখো না, আমি সেই গর্দভ

 


বাংলায় একটি 'শের' লিখতে চেয়েছিলাম



একটি নক্ষত্র আছে আরও এক নক্ষত্রের পাশে
দেখতে যদি চাও
একটি নক্ষত্র আছে আরও এক নক্ষত্রের পাশে
দেখতে চাও যদি

আমার চোখের দিকে দেখো

যদি বলো, এ তো শুধু চোখ; নেই সেই আলো
যদি বলো, এ তো শুধু চোখ; নেই সেই আলো
তাহলে জানাই

বহুদূর থেকে তারা তোমাকে দেখবে বলে পথে নেমে
ক্রমাগত নিষ্প্রভ হয়েছে--তাই
চোখে নয়, সুর্মা পরাই আমি মুখে,--যেহেতু

শব্দ আলো দেয়

শব্দের আলোয় আমি
তোমার মুখের পত্রখানি খুলে খুলে পড়ি
শুনতে চাও যদি
তোমার মুখের পত্রখানি খুলে খুলে পড়ি
শুনতে চাও যদি

আমার নামের ধ্বনি শোনো

জিয়া হক
চিত্র : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত


সঙ্গে সঙ্গে সাথে : জিয়া হক



…………………...............................................
পানার পুকুরে এই সবই ঝুঁকে পড়েছে।
ঝুঁকে পড়েছে কেননা বড়ো ভার।
ভার বইবার দেহখানি পুষ্টি পায়নি তাই
রাষ্ট্র করে দেয়, এখানে খাদ্য আছে আর আছে
কল্যাণকামী ছায়াভর্তি জল।
এখানে মানুষের দুইখানি পা, কৃষিকাজ করে বলে
এদেরকে কেউ মেধাবী বলে গণ্য করে না,
এইখানে চোখগুলি এত নুন ভরা, সামান্যতমতেই ঝরে পড়ে।  
ইঁটের বাড়িগুলি শ্রাদ্ধে বামুনের শ্রদ্ধার্ঘের গামছার মতো
আলো রাখলেই বেরিয়ে পড়ে
সেই আলো চাঁদের আলোর সাথে দেখা করতে চায়
তারা চায় স্থল ও শূন্যের মধ্যে যে মালপত্র আছে তার
গায়ে গাভীর দুধের মতো পুষ্টি রেখে যেতে


চিত্র : মনেঁ

দিন যায় বর্ষকালাধিক : জিয়া হক


আমার চিন্তা জটপাকানো উলের মতো গড়াতে গড়াতে নিম্নগগনের দিকে শূন্য-ঝাঁকা মনোহারি দ্রব্য বিক্রেতা হল।
৩ দিন পৃথিবীর মতো আর গ্রহ নেই, ৪ দিন এ আমি কোথায় এলাম। ৭ দিন আকাশে কুসুম, বাকি সাতে কুসুম আসে না।
মাসে মাসে জন্মদিন হয়, প্রতি মাসে বৃদ্ধ হয়ে যাই।
দেখে রাখি কোথায় সমাধি, সেখানেই বাড়ি বসে যায়।
১ সাল রাত্রি প্রেমোদ্ভব, ১ সাল ভানু দিবাকর।
ছেড়ে গেল দশকের অটো, ধরে থাকি হাজার হাতল