ডারউইনের ধর্ম ও বিশ্বাস। জিয়া হক
তারপর যা হওয়া উচিত । জিয়া হক
রেন্ট : জিয়া হক
জিয়া হকের লেখা
এখানে গানের দেশ
এখানে লোকাদেশ চমৎকারা
এখানে মাতৃমুক্তি লোকবল চায়
এখানে রাত্রি মূত্রহীন
এখানে গামছা যায় গ্রীবা ও মৈথুনে
এখানে এখন ক্ষণজন্মা
ভিড় ভিড় ভিড় ভিড়াক্রান্ত
কমল সিরিজ
কমল ১
বলেছিল, গাছের সন্ধান করে তোমাকে পাইলাম
বলেছিল, আমার এ পাতা পুষ্পগুলি গহনা তোমার
বলেছিল, যতদূর আমার অর্জন, ততদূর তোমারও উপায়
বলেছিল, যদি না আমাকে নাও, আমি কিন্তু তোমাকে নিলাম
বলেছিল, পথে পথে ঘাস আর ঘাসে ঘাসে কাঁটা
বলেছিল, সাবধানে পথ বেছে নিও
বুঝেছি কি? বুঝিনি কি?
মায়ের সেবায় সে তো ঋণ নেয়, কাউকে পায় না
জিয়া হক-এর কবিতা
এই, এই দিকে
ছায়াছবি দেখি। 'সুস্থ' ও 'স্বাভাবিক' জীবনের বিবরণ দেখি। মিলিয়ে বুঝি, কতদূর এলাম (অধিকাংশত অনিচ্ছায়, না—শতভাগ) পূর্বাশ্রম থেকে। অনভিপ্রেত, কিন্তু এলাম। নিজেকে পূর্বাপর দেখলাম আর বুঝলাম এই যে প্রাত্যহিক মানুষী চলচ্ছবি, আমি তার অংশভাগী নই। নিজেকে বরফ ভেবেছি, উত্তাপ ভেবেছি নিজেকে। ফলত উদ্বায়ী হয়ে আকাশপথের যাত্রী হয়েছি ক্রমশ আর ভাবনার সঙ্গে ভাবনার মালিন্য রয়ে গেল।
বাদ্যযন্ত্রের সসীম চিৎকার নয়, বলি, প্রকৃতির আওয়াজ শোন। দূরের সুপুরি বাগানের শুকনো পাতা খসার শব্দ শোনাও পৃথিবীর সঙ্গে এক প্রকারে যুক্ত হওয়া। আর কত, কত কত ছিন্নতার পরে ওষধি বনের সমীপে যাওয়া সম্ভব হবে? উচ্চারণ রুগ্ন, তাই মর্মও তা উপেক্ষা করে। রুগ্ন কবির জন্য মুগ্ধতা ও মায়া, কিংবা মায়া-মুগ্ধতা। একটা পাথরকেও উপেক্ষা করতে করতে নিজেকে অসংবেদনশীল ও হিংস্র মনে হয় একদিন। তুলে আনি, যত্ন করি, প্রণাম জানাই। এ সবই প্রায়শ্চিত্তের অংশ। এমন 'পাপ'-এর স্খালন-চেষ্টা যা কার্যত পুণ্যের বিরোধী নয়। যে-কোনও দিক ও দর্শন থেকে যারা 'অপর' ও 'ভিন্ন' তারা ওই পাথর।
তেমনই এক নুড়ি ছায়াছবি দেখে পরিপার্শ্বের সঙ্গে তার মিল-অমিল খোঁজে। অনুরূপ লক্ষ্যে খবররের কাগজ নেয়।
ওই, ওই দিকে
প্রয়োজনাতীতকে চেয়েছি। আধার ততটাই নেয় যতটা তার ক্ষেত্র। আমার ইচ্ছা কি আধারের পরিমাপ জেনে প্রকাশিত হয়? কী কী দেখব বলে চোখ অপলক ছিল বনে? ময়ূরপুচ্ছ বৃষ্টিতে সুন্দর। শুধু কি বিশেষ পাখির পুচ্ছ? দেখতে চাইনি নাচ? নিরাপদ দূরত্বে বসে পশুর পাশবিক ভাষা—চাইনি কি? জনৈক কাঠুরের গাছ-প্রীতি ও বৃক্ষ-ঘৃণার করুণাচিহ্নিত সংলাপ—চেয়েছি তো। প্রয়াত আত্মীয়ের মুখ দেখব কোনও এক অপরিচিত শিরীষের তলে। ভাবনা যে-দিকে যায়, মানুষ তার ভক্ত-অনুসারী। মাছের উদরে বসে মাছকেই খাদ্য ভাবা—কাঠিন্য আছে।
মহাকাশ থেকে সুন্দর এই নীলগ্রহ—তিন ভাগ জল—এক ভাগ নারী
সিরিজ কবিতা : স্বেচ্ছামৃত্যু অথবা নির্বাসন : অভিজিৎ মণ্ডল
উৎসর্গঃ 'নির্জনতা, আরও নিবিড় হয়ে ওঠো... '
গানের ভিতর নেমে একজন সমানে খুঁজে চলেছে ভৈরব, অন্যজন পূরবী। একজন রাগ, অন্যজন রাগিণী। অদূরে দিগন্ত জুড়ে ঘন মেঘের ঘনঘটা, হয়ত বৃষ্টি আসবে খানিক পরেই, ভিজিয়ে দিয়ে যাবে মেয়েটির শিউলি গন্ধ মাখা করতল আর ছেলেটির ক্ষয়িষ্ণু ফুসফুস। ফাঁকা মাঠ, ধু-ধু। তারও কিছুক্ষণ পর হয়ত মেয়েটি নিজেই বৃষ্টি হয়ে উঠবে, ছেলেটি গাছ। তারা জানে, তার বেশি কাছাকাছি এলে কোনও গানই আর গান হয়ে উঠবে না। ঠিক যেভাবে কোনও কোনও দিন ছেলেটি কাঙাল হলে, মেয়েটি কুহক হয়ে ওঠে। সেতারে সন্ধ্যে বাজে, একা একা...
ফুলের বাগান ভেবে সরে সরে, যে গেছে
খাদের কিনারে—সবুজ দৃশ্য ভরা চোখে তার
ঝরনা উপচে পড়ে, পাহাড়ের নিস্তব্ধতা...
এমন প্রমত্ত দিনে সেও কি নিজেকে
প্রজাপতি ভাবে, ভাবে নিরুদ্দেশ কুয়াশার ভিতর
কোনও উন্মাদ যুবকের ভেসে ওঠা মুখ?
একা, সে কিশোরী—
রোদের নরম ডানায় রঙ ছিঁড়ে ছিঁড়ে
গুপ্ত ছোরায় লিখে রাখে ঋতুদোষ।
*****
হয়ত তোমারই মতন দেখায়
লেগে থাকে, আমার চোখ—
ঠিক যেভাবে অনন্ত শূন্যের দিকে
বাঁক নেয়—পাহাড়ী খাদ—
খাদের পাশে দৃশ্যময় চাঁদ
অপেক্ষার মতো স্থির।
হা-মুখ গালের ভিতর ঢুকে পড়ে
সন্ধ্যের আবছায়া গলি
সেইসব অচেনা পেরিয়ে—
তবু তো রোজ তোমার কাছে ফিরি
আসলে একা একা, নির্জন, অন্ধকারে
আরও স্পষ্ট হয়ে উঠি আমি—
নিজেকে কেমন প্রেমিক প্রেমিক মনে হয় তখন!
*****
তুমি আমার পাশে পাশে হাঁটো
আমি তোমার পাশাপাশি—
কে কাকে অনুসরণ করে, কে কার
সঙ্গে থাকে—সেসব প্রশ্ন সরিয়ে রেখে
অতল জলের নীচে, নিবিড়
বুদবুদে ভেসে ওঠে ছায়ার শরীর...
কে কাকে ছেড়ে গেছে, কে কার মুক্তি
এসব ভাবলে এখন—শিকড়ে টান পড়ে
ঝুলন্ত হ্যাঙারে দোলে বিষণ্ণ পৃথিবী!
*****
আমাকে আততায়ী ধরে এগোতে এগোতে
যেভাবে আড়াল শিখে নিচ্ছে কান্না
ভুলে যাচ্ছো কেন—গোপন হত্যারও
সুপারিকিলার থাকে, ফেলে আসা রাতের কথা
মনে করাচ্ছে—এইসব অন্তর্বর্তী অনুযোগ—
যদিও, সব তদন্তই প্রমাণ সাপেক্ষ...
তবু কোনও কোনও সুন্দরের চোখে চোখ রেখে
নিজের প্রকৃত খুনিকে চিনে নেওয়া যায়!
*****
মুণ্ডুহীন দেহ শুধু শুয়ে আছে যোনির ভিতর
আমি তার কান্না শুনি, রক্ত-দ্বেষ-ঘৃণাময়
জীবনের পাশে জেগে থাকেন—একা—
নির্বিকার জননী—
তাঁর ভ্রাম্যমাণ ডানায় ওড়ে বোধের চেতনা।
প্রলুব্ধ জিভের ডগায় বসে থাকেন
তিনি মা অন্নপূর্ণা, আরাধ্যা দেবী আমার
ধান্যদুগ্ধে ধুয়ে দেন ধরিত্রীর বুক
আমি তাঁকে পূজা দিই মাংসের থালায়
এভাবে অন্ধকার মুছে মুছে ক্রমশ
আলোর দিকে যাই—
পাপ কুষ্ঠে খসে পড়ে তৃতীয় আঙুল।
*****
আমি নিজের দেহে বৈষ্ণব হয়ে ঘুরে বেড়াই
স্রোতের মুখে নৌকা বাঁধি, সরে সরে
যায় মাটি; সরে যায় ছায়া
রঙিন স্বপ্নে পড়ে থাকে সবুজ বীজতলা
অদূরে নদীর ঘাটে কে যেন বাজায় বাঁশি—
ভিক্ষা শেষে ফিরে আসি নিজের শরীরে।
যেভাবে শূন্যতা সাঁতরে আসে ব্যাধ ও শিকার
লক্ষ-কোটি চোখ এসে গিঁথে থাকে জন্মের দাগে—
তারা কেউ আমার চেনা বন্ধু নয়, শত্রু নয় কেউ
অনর্থক শরীরে বাজে তীরের ঝঙ্কার!
গোধূলি ডুবছে ওই দূরে, শ্যামলা পুকুরে
ফড়িংয়ের ডানা ঘেঁষে চিকন হাসির মতো
ঝিলমিল লেগে থাকে লাজুক মেয়েটির চোখে—
অন্ন ও অবস্থান পাশাপাশি বসে
চাল ধোয়া হাতে যেন আলপনা আঁকে
আকাশের গা'য়
নির্জনতা, আরও নিবিড় হয়ে ওঠে...
সন্ধ্যের মলিনতা মুছে—
বাড়ন্ত সংসারে উপচে পড়ে চাঁদ।
*****
সারাটা শরীর এখন স্তব্ধ দিঘি মনে হয়
আর তুমি ঘাই মেরে চলে যাও, খাবি খাও দূরে
হিঞ্চে কলমি শাপলা শালুকের দাম ঘিরে
গোল হয়ে শুয়ে থাকে—
ব্যর্থ দিনগুলি রাতগুলি।
ঘাট নেই বলে কেউ আর
নাইতে নামে না জলে, একা একা
আমাদের ফেলে আসা পুনর্জন্মের মতো
নিবিড় আলোয় ফেরে ছদ্মডাকনামগুলো
ছোট ছোট স্রোত ভেঙে ভেসে আসে—
মরা-পচা ঘাসপাতা ঘেঁড়ি গুগলি; জানালা
আঁকা চোখ—
অগত্যা উদাসীন ডানায় ওড়ে মেঘের পালক।
ফেসবুকে কবিকে পেতে : https://www.facebook.com/avijit.mondal.5836
সিরিজ কবিতা : কালের কদম্ব-কাঁটা : শোভন ভট্টাচার্য
কালের কদম্ব-কাঁটা
সন্তানই ধর্ষক হলে নাভীশ্বাস ওঠে
প্রকৃতির;
বিষে বিষে ছটফটায় ক্ষিতি অপ তেজ মরুত ব্যোম।
সেদিকে দ্যাখে না ফিরে সভ্যতার উদ্ধত অহম;
মানুষই নিয়ন্তা যেন বিশ্বময় গতি ও স্থিতির।
ভুলে যায় তার জন্ম এই প্রকৃতিরই ছায়াতলে।
সেই শান্তি, সে-আশ্রয়, কী নিবিড় মাতৃস্নেহবৎ
ভুলে গিয়ে ভাবে মূর্খ মহাবিশ্বে মানুষই মহৎ;
লুন্ঠনের থাবা তার পড়ে জলেস্থলে ফুলেফলে।
স্বপ্ন বোমাবিশ্বরূপ, ধ্বংসরূপে
ন্যস্ত পরমাণু;
মাটি-আকাশের কান্না আস্ফালনে চাপা
পড়ে যায়;
সেই অশ্রু সুনামির ঢেউ হয়ে জগৎ ভাসায়;
কালের কদম্ব-কাঁটা হয়ে অশ্রু ছড়ায়
জীবাণু।
ঘরমুখী দুনিয়া, মৃত্ প্রতিদিন হাজারে
হাজার...
সভ্যতা উজাড় করে পথ খোঁজে প্রকৃতি বাঁচার।
যুদ্ধবাজ ‘প্রথম’ বিশ্বকে
তোমার ধ্বংসের
বার্তা তোমারই বিজয়-ব্যভিচারে;
মানুষকে
মানুষ নয়, ভেবেছ গ্ল্যাডিয়েটর তুমি;
শিকল-গোঙানি
যত শুনেছে তোমার মাতৃভূমি;
যত মৃত্যু,
নিষ্ঠুরতা, উদযাপিত অ্যাম্ফিথিয়েটারে…
মানুষের
মুণ্ডু কেটে তোমরাই তো খেলেছ ফুটবল;
হিরোশিমা
নাগাশাকিতে ছুড়েছ পরমাণু বোমা;
কোথাও খইয়ের
মতো ছড়িয়েছ মিসাইল তোমার;
জ্বলন্ত
ক্ষুধার মুখ বন্ধ করতে গুঁজেছ পিস্তল।
তোমার দুর্দশা
দেখে, প্রকৃতিও যেন তাই হাসে!
মাটিতে লুটোয়
আকাশের হাসি— হাসে কালপুরুষ—
তিনিও হাসেন,
ঘরে ঘরে যার টাঙিয়েছ ক্রুশ।
তুমি কিনা
কাঁপছ পারমাণবিক সামান্য ভাইরাসে?
তোমরাই তো
চেয়েছিলে অস্ত্র হোক ‘জীবাণু-সন্ত্রাস’;
এখন কে কাকে
মারবে? কে কবর দেবে কার লাশ?
‘পরিযায়ী’ প্রশাসনকে
অসুখ উড়িয়ে
আনলে, সব সুখের পায়রা এল দেশে;
যতদিন না
জান-জাহান ছেয়ে গেল পর্যাপ্ত জীবাণু।
কে তুমি
সরকার আর এ তোমার কী ‘কালাকানুন’
পরিযায়ী
শ্রমিকেরা দেশেরই ভেতরে গেল ফেঁসে।
ভিনরাজ্যে,
কর্মহীন, অনাহারে, অনিশ্চয়তায়;
লক্ষ-লক্ষ,
কোটি-কোটি, লক্ষ-কোটি ক্ষুধাক্লিষ্ট প্রাণ
পড়ে থাকল,
পচতে থাকল একা— অসহ্য পেটের টান
সামলাতে
না পেরে কেউ, বাড়ির আলেয়া-পথ পা’য়
হাঁটা শুরু
করল— পথে ঝরল কত মেহনতী লোক;
তারাই দেশের
চাকা ঘোরাত লকডাউনের আগে;
তাদেরও বাড়ি-ফেরার
জন্য যে কয়েকটা চাকা লাগে
কে চায় সে-কথা
ভাবতে? তাদের মরণে কার শোক?
ত্রাণের
প্লাস্টিকে ছাপা মন্ত্রীর প্রধান-মুখ্য মুখ
দেখায়— মহামারির
চেয়ে কত গভীরে অসুখ।
কালাজাদু
আফ্রিকা নামে
যে একটা মহাদেশ ছিল পৃথিবীর
সেই
ছায়াচরাচর মহামারিকালে আজও আছে?
খররোদ তুচ্ছ
করা কালো মানুষের বোবা নাচে
এখনো কি জেগে
আছে সীমাহীন দুর্ভিক্ষ শিবির?
যখন ছেয়েছে
বিশ্ব শ্বাসরোধী মারণ ভাইরাস;
ঘোর
মৃত্যুভয়ে কাঁপছে আমেরিকা, এশিয়া, ইউরোপ;
প্রতিদিনই
বেড়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর রোগের প্রকোপ;
হাঁপাচ্ছে
বিজ্ঞানী আর ডাক্তারেরা লড়ছে রুদ্ধশ্বাস।
সুসভ্য
মিডিয়া সেই কাঁপনের তালে থরহরি;
এমনকী মাস্ক
পরে বাকরুদ্ধ সংবাদপাঠিকা;
সংবাদ সমূহে
তবু দুনিয়ার কোথায় আফ্রিকা !
পৃথিবীর
গল্পে তার স্থান শুধু কালাজাদুকরি ?
বাকি পৃথিবী
কি জানে সে-ভূখণ্ড কোথায় বেখোঁজ ?
'ওদের
বাঁচামরায় কী ভেদ, ওরা তো মরে রোজ'...
শূন্য থেকে শুরু
প্রকৃতি,
আত্মরক্ষার্থে, জন্ম দেয় যতেক ভাইরাস;
করোনা ইবোলা
নিপা— নাম শুধু বদলে বদলে যায়;
আসে নবমৃত্যুদূত
সভ্যতার স্বীয় কালবেলায়;
নাচে মৃত্যু
নিঃশ্বাসের আসন্ন বাতাসে— তাই মাস্ক—
অন্যের প্রশ্বাস
থেকে পালিয়ে বাঁচার বর্ম তাই;
পালিয়ে বাঁচার
পথ পেতে যে চালিয়েছিল ‘এসি’
সেও আজ জেনে
গেছে সে-পথে বিপদ আরো বেশি;
কখনো বৃক্ষের
চেয়ে সুরক্ষিত হয় কি বনসাই?
তাই তারা
সহজেই উপড়ে আসে, মূলে নেই মাটি;
শহরে শহরে
তাই ঝড় এলে বড় গাছ পড়ে;
শহরে শহরে
তাই করোনায় বড় লোক মরে;
যেখানে আকাশ
নেই, আছে দালানের দাঁতকপাটি।
শূন্য খনি
শূন্য বন শূন্য জমি শূন্য জলাধার;
শূন্য থেকে
শুরু হোক মানুষের প্রস্তুতি আবার।
হিরণ্যকশিপু
তোমার সংহারমূর্তি
আমাকে সংযত হতে বলে;
দেখায় আমার
মৃত্যু স্বরোপিত খেতের ফসল;
দেখায় আমারই
বিষে নীলাভ আকাশমাটিজল;
আমারই গরল
দুধে, ওষুধে, ঘাতক স্নেহতলে।
দেখায় আমার
থাবা খাবলা করে দিচ্ছে বনস্থলী;
দেখায় আমার
থাবা ফুটো করে দিচ্ছে বায়ুস্তর;
দেখায় আমার
থাবা শ্বাপদের চেয়ে ভয়ঙ্কর;
আমারই সহস্তে
লেখা সভ্যতার এই অন্তর্জলী।
করোনা কারণ
মাত্র— এ আমার স্বীয় আত্মঘাত;
নৃসিংহের
মতো জাগে আমার প্রতিটি স্তম্ভ, রিপু;
ক্ষুদ্রতার
আস্ফালনে আমি মস্ত হিরণ্যকশিপু;
মরে যেন
বাঁচি, যাতে বাঁচে কিছু প্রকৃত প্রহ্লাদ।
মানুষ বাঁচার
মন্ত্র খুঁজে পাবে হয়তো বা তখন;
নম্র-সগৌরবে
যদি বুনে তুলতে শেখে তপোবন।