কমদামী বাজার : জিয়া হকের দুইটি কবিতা


প্রথম
প্রয়োজন না হলে জাতির জন্যে লেখা গান কে আর সময় ব্যয় ক'রে শোনে

তার সুর আরোপিত, মনে হয় কেউ বলে, দেশের বিভিন্ন চার কোণে

আমাদের দলের ভেতরে

লৌকিকতার থেকে লোক মুছে গেছে

যাদের ভাসার ঢং
        ঘৃণা করেছিল

বীরখালি গ্রামে শুধু তাহাদের ছায়া পড়ে আছে

দ্বিতীয়
আমি, মনে হয়, গতিপ্রকৃতির নীচে নেমে গেছি
নীচে শুধু আমি ব'লে আমার মতন গতিপ্রকৃতির
কিছুজন থাকে।
যার যৌবন আসে, কাছে, দূরে, ছেড়ে চলে যায়
বালিশে মাথা দিয়ে না শুলে বালিশ ঠাণ্ডা হয়ে থাকে
পুকুর কাটার জন্যে পুকুরে নেমেছি। সেটা নীচে নামার
মতো ভীতি। আমি পেয়েছি। মানুষদের কাজে আসে ব'লে
মাছেদের, মাছিদের, কোনও কাজেই লাগে না এই জল। মাছেরা
অমূলক কথা কম বলে, ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও তারা জেগে থাকে
মানুষের চেয়ে বেশিক্ষণ তাদের চোখ খোলা আছে। আমি বলি--
ওই ঘাটে বসা ঘষে রাখা রাত্রির ডিশখোলাদের
ব্যবহৃত হয় আর ব্যবহার করা মিলে সমাজের গতিপ্রকৃতির
নীচে নেমে বহু দেখি ওপর ব'লে কিছু নেই; সেখানে রাতের গায়ে
মানুষের কমদামী বাজার বসেছে;
জড়ুলের ঘষামাজা দেখে দেখে মাছের মতন চোখ
যাদের অসংখ্য খুলে গেছে,
আমি যাদবপুরে অনেককে দেখেছি, সার্কাসে কেউ কেউ ছিল
প্রতিভাপূর্ণ ব'লে পাশ কেটে সাধারণতের মধ্যে গেছি
সকলের কান আমি নীচ থেকে চিনতে পেরেছি
অ-নীচু, অ-উঁচুর তলা দিয়ে নিম্ন চলে যায়, চলাচল উচ্চ ক'রে থাকে
যাকে আমি মান্যতা দিয়েছি
হয় নম্রতাকে ভালোবাসে ব'লে কখনও সে নীচ হয় 


চিত্র : উইলিয়ম ব্লেক


বন্দীশালার ছড়া : এপ্রিল ২০২০


আলো আসে বঙ্গবিদ্যা, অ-পূর্বের জাফরি পথ ধরে
আমার কল্যাণ হয় বন্ধুবৃত্তে, যদিও তা কাল্পনিক স্তরে
বিদ্যা প্রাঞ্জল তাই বিদ্যাধরী তীর
ভুল মন্ত্র, ভুল কন্যা করেছেন অস্থির—
নাটকীয় যত ফুল
তুলে তুলে দেখি, তুলে তুলে দেখি
                         কতদূর নির্ভুল
বিদ্যা অল্প ব'লে
প্রজাপতি শুধু ঘুরে যায় আর প্রস্তাব যায় চলে
কাদের প্রস্তাবনা?
চিঠিতে জানাব, দুধ ফুটে ওঠে, আপাতত ভাববো না
জানো কি পত্র-রীতি?
প্রিয় বন্ধুতে শুরু আর জেনো শেষে আমাদের প্রীতি
যায় না এভাবে সুর?
যন্ত্র, বাদ্য, ব্যাকরণ ছাড়া যাবে যে অন্তঃপুর—
জাল বিজ্ঞান মতে
ভালোবাসা এক অপরাধ যার সমাপ্তি নাক ক্ষতে

জিয়া হক
চিত্রঋণ : হরিশ মণ্ডল

আর্কাইভ । শ্রুতি আন্দোলন । সংগ্রাহক অর্পণ পাল । ডাউনলোড করতে পোস্টে যান।

সৌখিন লোকেরাও পড়ে দেখতে পারেন : প্রশান্ত হালদারের পাঁচটি কবিতা




ফ্যান চালিয়ে যে কোনো ভাবনার কাছে যেতে ভয় পাই
স্থিরতায় বিশ্বাস করিনি বলে ভর্ৎসিত ঘরে-বাইরে
শুভকামনার নামে নোংরামির শিকার হচ্ছি রোজ
ক্রমশ পরিবার ও রাষ্ট্রের মঙ্গলকর বারান্দায় ঝুঁকে পড়ছি
হয়ে উঠছি বিবৃতিদানের মাস্টার
যথারীতি অসুখ-বিষয়ক চর্চা চলতেই থাকে
আমিও অনুপ্রাসের ফাঁদে আটকে যুগ পার করে দিলাম
কিন্তু এসব কথায় তোমার কোনো ক্লান্তি নেই
তুমি তো রাষ্ট্রদূত


দেখে গিয়েছিলে
বিশাল বাড়ির ছোট্ট একটা ঘরের
লাগোয়া বাথরুমে বসে থাকতে, সিগারেট ধরিয়ে
তাও সমুদ্রে গিয়েছ
কাউকে বলোনি

তোমার খুনের নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে—
এই স্বপ্নের কথা যেন পাঁচ-কান না হয়

তবু এত এত সাবধানতা
দুঁদে গোয়েন্দার আতস কাচের নিচে ধরা পড়ে যাবে

তবে কি রহস্য বলে কিছু নেই

পাড়াতুতো ভ্যানস্ট্যান্ড জ্বলছে

খাঁ-খাঁ করছে গোটা ছাদ
রাস্তায় বিশাল ছায়ারা ওঁৎ পেতে আছে

আমরা হাঁটছি, ধরা পড়ছি
বেরিয়ে যাচ্ছি
আগামী ছায়ার পাহাড়ে চাপা পড়তে চেয়ে

বাঁদিকে কালীঘাট ব্রিজে সস্তা বেশ্যা আর
ডাইনে জেলখানা। আছি অটোর ভিতর
নজরে সারা-বাংলা কারা-কর্মীদের সংগঠন অফিস
দু-দুখানা-প্যান্টে বন্দী মিইয়ে যাওয়া মাংসল ছোরা নিয়ে
এগুচ্ছি অটোতে
সামনে আদালত। জানি, এর কোনো বিচার হবে না।


সুতপা চক্রবর্তীর দুইটি কবিতা


 আকন্দরজনী

নিয়মমাফিক 
তুমিও খেল সন্তাপ

প্রহর, অচেনা লাগলে তার দুহাতে
তুলে দাও বাঁধানো অভ্যাস
বসে আছ কুঠুরি ; পায়ে মল
হ্যাজাক,লণ্ঠন সারসার...

আদ্রিস্নানের ঘট আমপাতায়
মাখা।

আহ্, মরি অবিশ্বাসে; যুগলকিশোর। 

মায়াপুষ্প!
মনে পড়ে তার সাথে...একদা...ভগ্ন
তীব্র...রাজকীয় বেশে 
হেঁটেছিলাম পথভাগ, সীমিত যৌবন

হ্রেষাকালে, আকন্দরজনীতে



 অশ্বখুর

অন্দরে এসেছে, তাকে ধরে রাখ

মতিভ্রমে,বাহ্যে ; প্রিয়মুখ

জানে না সঞ্চয়, ইরশাদ্
তোমারি মতো সেও চলে যাবে

হেঁটে।

রজোগুণে,প্রপাতে জলসিন্ধু!

ইশারায় চলেছে প্রৌঢ়া
হাতে তীর, বুকেতে পাথর ফলক
পায়ে তার গুহাহিত

প্রেমিক,অজগর!
যেভাবে  জড়িয়ে ধরে তেমনি বিরহে
ছোটে অশ্বখুর, গৃহহীন শামুকেরা