শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে


লোকচক্ষু
............
শুবি আয় ফুলমণি, শুবি আয়
এ খাটের তলা
খানাখন্দ, ভ্রান্তি তবু
এখানেই তোর শিল্পকলা
দেখা হবে অমাবস্যা দেখে
আমি যদি লিপি হই
তুই তোর বর্ণমালা রেখে
এসে দেখ
টুনি বাল্ব চাঁদ লাগে কিনা
তুই যদি দিকভ্রষ্ট
          আমি হব বায়ুর দখিনা
লোক আসে? 
কতগুলো লোক?
তারা তো কর্পূর আর
ঘৃণার ঘোষক

জিয়া হক 

দেশ পরিচয়

দস্যু আর নাবিকের ভেদ আমি করতে পারি আর পারি
অতিথিকে ভালোবাসা দিতে
আমি জানি, কে অতিথি, কার ব্যাগে কী কী রাখা আছে
অথচ এ আবাসন—অতিথিশালাই বলা যায় একে
গাভী চরে, দুগ্ধজাত প্রেম প্যাকেটে যায় দূরে
এখানে জানালা থেকে মৃত্যু দেখা যায় তবু আমরা
বড় আর নকশা করা জানালা বসাই
সিঁড়ি ওঠে দোতলায়, সিঁড়ি ওঠে আকাশের সদর রাস্তায়
এভাবেই পুরনোকে দেখেছি আমরা
আমাদের হিন্দুমতে মরে গেলে ঈশ্বর হয় লোকে
জাহান্নমবাসীকেও আমরা স্বর্গীয় বলে ভাবি
এটুকু উদারতা, চক্ষুলজ্জা আজও টিকে আছে

বাড়া ভাতে ছাই দেয়, সেই ছাই দন্ত সাফে লাগে
এরকমই হত নাকি আগে



সে রকম লোক
.......................................................................

লোক হবে সাধারণ, লোক হবে কিছু মাথামোটা
ঝুল ছোট জামা পরা, ঝুল ছোট স্বপ্ন অর্ধ-গোটা
দেখবে কি দেখবে না—নিজে তার নির্বাচনে এসে
বৃদ্ধ আর শিশু আর মহিলা সভায় গিয়ে মেশে

সে কি তার প্রয়াত মায়ের কথাগুলি
বলে দেবে গর্ধবের কানে বা সমাজে?
বিদেহী আত্মার যদি শান্তি থেকে থাকে
এই তথ্য তার কোনো লাগবে কি কাজে?

লোক হবে অলৌকিক, লোক হবে সাদা ফুলগাছ
ঝরে যাবে সান্ধ্যকালে, ঝরে যাবে অপ্রাকৃত সাজ
দুপুরে সে ছোট হবে, এত ছোট পাদুকার নিচে
রাত্রি গড়িয়ে খাবে
                  প্রাচীন পন্থা মেনে
                                         মাটির পিরিচে


জিয়া হক 

সংসার যাত্রা

সংসারে বড় সুখ, রমণী রয়েছে, তার গুণ
সংসারে কী জানি অসুখ
পুরুষ রয়েছে
                 তার ঘুন

কে দীর্ঘ, —কে সেই পিরামিডখানা
শ্রমিকেরা নেই তবু
               জাদু কারখানা
বানিয়ে তুলেছে তার তার
রোগের মাথার পাশে
তুমি এসে
           বসো সংসার

ছিল ভালোবাসা—টেবিলে সাজানো
টেবিলটি ছিল দুই
তলায় সাজানো

এসেছে তন্দ্রাকাল, এসে গেছে ঘুন
ভালোবাসা বিশেষত জ্বালায় উনুন


রাত্রিকানা লোক
......................
এই রাত্রি বরং শান্ত, শুধু উড়োজাহাজ যায়
লোক পারাপার, যন্ত্রের পাখি সেজে ওঠা আর
তা ব্যতিরেকে শান্ত এই জীবনসুন্দর, গোঙানি
কলকাতা সুন্দর, নর্দমা সুন্দর, রঙিন ত্বক —সে সুন্দর
ভাড়াবাড়ি অ্যাকোরিয়ামের মতো বাষ্পে বাষ্পে জ্বলে
দূরগামী লোক দূরগামী ট্রেনে উঠে গেল
চুম্বন সুন্দর, চপেটাঘাত সুন্দর, জীবনীকাব্য— সে সুন্দর
এই রাত্রি তস্করের, এই রাত্রি ঘুমের বাসনা যার তার
আগ্নেয় উড়োজাহাজের শব্দ ব্যতিরেকে
শান্ত —সুমুখশ্রী —নিখরুচে ত্বকের

জিয়া হক 


ওহে বোর্হেস


গরমের দিনগুলিতে সে নিজেই বাগানের চারাগাছে জল দেয়। সে এটাকে প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ হিসেবে ধরে নেয়। এভাবেই সে পৌত্তলিকতাকে ব্যাখ্যা করে। ঘন সবুজ বনই আসলে দেবতার মূর্তি। পরিচর্যাই কার্যত পূজা —উপাসনা। ঘটনা খুবই সামান্য। একদিন তাকে এই বাগানেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার নিজের হাতে লেখা একটি কাগজের টুকরোও পাওয়া গেছে। তাতে লেখা — আমি এই মৃত্যুর তদন্ত চাই না। ভাগ্য বিপর্যয়! একে ভাগ্য বিপর্যয় বলা যায় না। মৃত্যু নামের ঘটনাকে মৃত্যুর সঙ্গেই সমাধিস্থ করা হল, এইভাবে বলা যায় একে। সে দেশ-ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে চাইল কিনা বলা মুশকিল। তবে তার গায়ের রং নীল ছিল না আর সে বাজার বলতে বুঝত নোংরা জায়গা যার শুধু দেহ নয়, আত্মাও বিক্রি হয় সুলভ মূল্যে।
তার পরিবার যখন সেই কাগজের টুকরোর ভাষাকে অস্বীকার পুলিশ ডাকল তদন্তের জন্য তখন সে ওই বাগানেই শুয়ে শুয়ে বুঝতে পারল পৃথিবীটা কোনোমতেই গণতান্ত্রিক নয়। এখানে উলঙ্গ লোকেরাই উলঙ্গের নগ্নতা নিয়ে চর্চা করে।
সে চুপচাপ শুয়ে রইল যেভাবে সে পরিবারে এতদিন সময় কাটিয়েছে।

জিয়া হক