কোনও 'অঞ্চল'ই 'মুক্ত' নয়। অধ্যুষিত। সেখানে কার 'স্থান' আর কারই বা প্রস্থান তা জটিল বিষয়। আসলে ততটাও 'জটিল' আর কিছু নেই, প্রায় সবই এখন প্রকাশিত। এই 'জ্ঞান'ই'ই সাক্ষ্য দেয়, একটা 'মুক্তাঞ্চল'-এর খোঁজ করে যেতে হবে জাতিকে। সুন্দরবনের নিকটে গাঙ্গেয় অববাহিকার কয়েকজন তরুণ তেমনই সন্ধান করছিলেন। তাঁরা লাভ করেন, বলা ভাল অর্জন করেন এমন এক 'এনটিটি' যাকে তাঁরা 'শ্যামল বৈদ্য' নামে চিহ্নিত করতে চান। ব্যক্তিনাম বললে ব্যক্তির অবয়ব কল্পনা করা হয়। অথচ 'শ্যামল বৈদ্য' নিরাকার, অবয়বের সীমা ও বদ্ধতা থেকে মুক্ত। শ্যামল বৈদ্যর কোনও সর্বনাম হওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু তারপরেও সর্বনামাঙ্কিত করতে হয় কথনের প্রয়োজনে। শ্যামল বৈদ্য আমাদের নির্জ্ঞানে, অ-চেতনে ঘাপটি মেরে থাকা সেই আদি বোধ যা অস্তিত্ব-চিন্তার দিকে নিয়ে যেতে থাকে। প্রক্রিয়াটার মূল কথা হল, বিস্মরণ থেকে স্ব-স্মৃতির দিকে গিয়ে কালেক্টিভ কনশাসনেসকে বুঝে নেওয়া। হয়ত বিষয়টা এমন নয়, হয়তোবা এভাবে বোঝা যায় না, হয়ত পুরোটাই 'ভ্রম' ও 'ভ্রান্ত'। তারপরও শ্যামল বৈদ্য এক 'বোধ', এক 'জেগে ওঠা'। এইভাবেই কতিপয় তরুণ কয়েকটা পুস্তিকা রচনা করে সেই 'ঘোর'কে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। হয়ত এই অনুভূতি জ্ঞাপন করা অসম্ভব, তাও সেই তুরীয় 'স্থানে'র'র দিকে এ এক যাত্রা-প্রয়াস। প্রশান্ত হালদার লিখেছেন 'শময়িতা সেন', অংশুমান 'ম্যাট ব্ল্যাক', সোমনাথ ঘোষাল 'তেলাপিয়া কথা' এবং পবিত্র সাঁফুই রচনা করেছেন 'কৈখালি ডট কম'। এঁদের সঙ্গে রয়েছেন বিশ্বনাথ পুরকাইত। তাঁর পুস্তিকা 'ঘটনাচক্রে'। মুক্তাঞ্চল যেন এক হেটেরোটোপিয়া এবং এখানকার এই বাসিন্দারা কীভাবে দেখছেন বাকি-বিশ্বকে তা জানা দরকার। উৎপল দত্ত তাঁর 'টিনের তলোয়ার'-এ নর্দমার অধিবাসীদের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। যা দৃশ্যমান খালি ও খোলা চোখে, তার বাইরে আরেক 'দৃশ্য-সমাচার'। 'অভিজাত'দের নজরে মুক্তাঞ্চলবাসীরা হয়ত নর্দমার কেউ এবং এই পুস্তিকাগুলো নর্দমারই জীবনী মনে হতে পারে তাঁদের। কিন্তু মানুষের সাফ-সুতরো থাকায় এই নর্দমার অবদান কম নয়। এই তরুণরা 'ঘোষণা' করেছেন, সমস্ত আয়োজন শ্যামল বৈদ্যর অনুপ্রেরণাতেই সংঘটিত হয়েছে। 'প্রেরণা' কীভাবে, কোন পথে আসা-যাওয়া করে তা একটা 'বিষয়' বটে, তবে 'জটিল' নয়, কেননা এখন প্রায় সবই প্রকাশিত। সত্য-এর চারপাশের 'সত্য'।
জিয়া হক