ডারউইনের ধর্ম ও বিশ্বাস। জিয়া হক

ডারউইনের ধর্ম ও বিশ্বাস — বিষয়টি কৌতূকপ্রদ মনে হতে পারে কারো কোরো কাছে। কেননা ধর্ম নামক বিশ্বাসমালা ও আপাতভাবে 'অযৌক্তিকতা'র বিপরীত স্বর হলেন এই বিশ্ববন্দিত বা 'বিশ্বনিন্দিত' জীববিজ্ঞানী । তিনি মসিহা, তবে 'সকল'-এর নন। মুক্তমনা, বস্তুবাদী, নিরীশ্বরবাদীদের মুখ্য আশ্রয় তিনি। তাঁর 'বাণী'র মতো এত উদ্ধৃত 'সমাচার' কতিপয়ই রয়েছে। প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার নামে 'লোক' যা বলে বা করে থাকে তার আদি গুরু প্রকৃত অর্থে সংঘবিরোধিতায় মুখর কেননা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের চেয়ে বড় ও সুসংগঠিত সংস্থা আর কী আছে? ঈশায়ী ধর্মের প্রাবল্যের পর্বে, 'অপৌরুষেয়' ওল্ড টেস্টামেন্টের অমোঘ নির্দেশনার যুগে, ঈশ্বর-স্বর্গ-নরকের প্রকল্পনার ভিত-ভূমিতে দাঁড়িয়ে, পারিবারিকভাবে একটি বিশেষ ধর্মীয় প্রতিনিধি হয়ে সেই ধর্মের মৌল তত্ত্ব ও ব্যাখ্যার পাশে ভিন্ন মত ও দর্শনের নির্মাণ সহ তার প্রচারণাই তো এক নিসঃঙ্কোচ অন্তর্ঘাত। যদিও তাঁর পরিবার ঈশ্বরবাদী ছিল না কখনও। যদিও তাঁর বাবা তাঁকে সতর্ক করেছিলেন যে প্রকৃতিই কেবল জড় নয়, মানুষ-প্রকৃতিও অ-চল, অ-নড় —অজ্ঞাতসারেই জড় । প্রত্যাঘাত আসতে পারে। ডারউইন কর্ণপাত করেননি সে-সাবধানী রক্ষণশীলতায়। কেননা তাঁর অকৃত্রিম প্রশ্নই এই সার্বিক রক্ষণশীল সংঘবদ্ধতার কাছে যে কে গড়ে তুলল এই 'যাবতীয়-যা'কে। কেন সৃষ্টি হল 'যন্ত্রণা'র? ওল্ড টেস্টামেন্ট উদ্ধৃত করে সমাধান খুঁজতে চাওয়াকে তিনি মনে করেন, ধর্মগ্রন্থ থেকে সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কিত পংক্তি উদ্ধার করে কার্যত আলোচক নিজের অ-চিন্তাকে বা চিন্তা-দৌর্বল্যকেই সুনিশ্চিত করছেন। শুধু তাই নয়, আদি টেস্টামেন্টের উল্লেখ খানিক ভরিক্কি আনে আলোচনায়। তাঁর সহজ মত ছিল এমন যে, একজন বর্ণান্ধকে লাল রঙের লালত্ব যখন বোঝাতে সক্ষম নয় 'সুস্থ'জনটি তখন সেটা কার অক্ষমতা —রঙের? সুস্থতার? নাকি ঈশ্বরের? তাঁর মনে হয়েছে,'সাফারিংস' বা কষ্টভোগকে মানুষ সুখ বা 'প্লেজা়র'-এর চাইতে বেশি মূল্য দেয়। আর এই মূল্যায়নে সক্রিয় থাকে পারলৌকিক মঙ্গলচিন্তা। কিন্তু ডারউইনের দুটি প্রশ্ন —প্রথমত : অনবরত যাতনাভোগ একটি জাতিকে অনুর্বর, অনগ্রসর ও অ-প্রজননশীল বানিয়ে তুলবে না কি? দ্বিতীয়ত : ধরা যাক মানুষের মৃত্যু-উত্তরকালিক জীবন রয়েছে, ধরা যাক রয়েছে বিচারদিবস, স্বর্গ ও নরকের ফয়সালা, তাহলে মনুষ্যেতরদের কী হবে? তারা অনন্তকাল অ-বল জাগতিক কষ্ট কেন ভোগ করে যাবে? তাদের অপরাধ কী? এমন প্রকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ডারউইন প্রকৃতির নিজস্ব 'স্বেচ্ছাচার', নির্বাচন, প্রক্রিয়া বা 'সিলেকশন'-এর কথা ভাবেন। মহাজগতে যা-ই ঘটে তার এক বা একাধিক নিয়ম, সূত্রাবলী, শৃঙ্খলা মেনে ঘটে, আর নিয়মতন্ত্র কোনো অ-জর অ-মর ঈশ্বর-নির্দিষ্ট নয় ; এই নিয়মাবলী প্রকৃতির। নিজস্ব। সবটাই প্রাকৃতিক 'সিদ্ধান্ত'। 'গ্র্যান্ড' বা 'আলটিমেট' সিদ্ধান্ত-উপসংহার বলে কিছু হয় না, অথচ ধর্মগ্রন্থগুলি তা-ই দিতে চায়। ওল্ড টেস্টামেন্টের বিবেচনাগুলি নিয়ে তাঁর তখনই সন্দেহ জাগে যখন তিনি আবিষ্কার করেন যে, গসপেলের 'কথাকাহিনি'র সঙ্গে প্রায় সম্পূর্ণত মিলে যায় পম্পেই প্রদেশে আবিষ্কৃত কথাকাহিনি। তাহলে বাইবেল কি অপৌরুষেয় নাকি মানুষ-রচিত? তিনি মনে করেন, অন্যান্য প্রাণীদের মতোই মানব-মস্তিষ্কের 'উচ্চ' উন্নয়নও একটা যেহেতু প্রক্রিয়া সেহেতু যে বা যারা পম্পেইয়ের ডকট্রিনের রচয়িতা তেমনই কোনো মস্তিষ্ক-সমাহার নেই তো গসপেল রচনার ক্ষেত্রে? বাইবেল যে কোনো ঐশ্বরিক নির্মাণ বা লিখন তা মেনে নিতে অসুবিধা হয় তাঁর। আরেকটি বিষয় তাঁর অসমাধেয় সমস্যা বলে বোধ হয় —সেটি হল ধর্মগ্রন্থের সংহিতার অংশগুলি, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণগুলি। এই 'মহাগ্রন্থ'গুলিতে এত বিপুল রূপক, উপমা ও ভাষিক রহস্য-জটিলতা যে এর যে-কোনো ব্যাখ্যাই হতে পারে। ফলত 'সব বেদে আছে' ধরনের এক প্রহেলিকারও জন্ম হয়। অর্থাৎ স্বনামধন্য ঈশ্বর মানুষের মেধার উপর স্বয়ং নির্ভরশীল। এখন প্রশ্ন হল, এই 'মেধা'র নির্মাতা বা নিয়ন্ত্রক কে? ডারউইন আগেভাগেই বলে রাখেন, নিম্ন-মস্তিষ্ক ব্যবস্থা থেকে উচ্চতর পর্যায়ে মস্তিষ্কের উত্থান একটি প্রাকৃতিক ধারাবাহিক ও নিরন্তর প্রক্রিয়া বৈ আর কিছু নয়। সেহেতু মানুষের মেধা-ই কার্যত ঈশ্বর নামক একটি সর্বৈব বিশ্বাস গড়ে তোলার মূলে। 'চতুরঙ্গ'-এর জ্যাঠামশাই বলেছিলেন যেভাবে, যে-ঈশ্বর আমার বুদ্ধি দিয়েছেন সেই বুদ্ধিবৃত্তিই বলছে তিনি নেই, অর্থাৎ ঈশ্বরই বলছেন ঈশ্বর নেই। এটি একটি ধাঁধার মতো। তবে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত ঈশ্বরের ধারনাকেও বহু আগে নাকচ করেছেন ডারউইন। তাঁর মনে একটি জিজ্ঞাসার কোনো মীমাংসা হয় না, আর সেটি হল, যদি হিন্দুদের ঈশ্বরের ইচ্ছা জাগে কোনো প্রত্যাদেশ দেওয়ার, তাহলে তিনি কি বিষ্ণু বা শিবের মতো কারও দ্বারস্থ হবেন বা তাদের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে 'কাজ' - এ লাগাবেন? একই প্রশ্ন ওল্ড টেস্টামেন্ট সম্পর্কেও। এ ও ভেবেছেন যে পৃথিবীতে এতগুলো ঈশ্বর কেন? প্রতিটি ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন ঈশ্বর। সৃষ্টি যেমন সত্য, স্রষ্টাও তেমনই সত্য হলে তিনি তো একক হবেন। সকলের জন্য অভিন্ন —তা সে যদি সৃজনাত্মক দলীয় তন্ত্র বা সমষ্টিগত কোনো 'টিম' থাকে তাহলেও। খ্রিস্টান ধর্মের ত্রি-স্তরীয় ঈশ্বরবাদ, ইসলামের একেশ্বরবাদ, বৌদ্ধধর্মের না-ঈশ্বরবাদ —সবার জন্যই তার এই প্রশ্ন। এমনকি সেই উপজাতিদের জন্যও যারা 'আচার'কেই নিয়ম ও নিয়মকেই ঈশ্বর বানিয়ে তুলেছে, তাঁর অভিন্ন জিজ্ঞাসা। কেননা 'মিরাকল' বা অলৌকিকতা কখনও কোনো ধর্মতত্ত্বের ভিত-মূল হতে পারে না যেটা ওল্ড টেস্টামেন্টে অহরহ আছে। অপর ধর্মেও তা অপ্রতুল নয়। তাহলে তো বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এমন —যা অব্যাখ্যেয় তা ঐশী আর যার জগৎ-যুক্তিসম্মত মীমাংসা রয়েছে তা খুদগর্জ, ঈশ্বর-শূন্য। আত্মা ও আত্মার নশ্বরতার ধারনাও এমন এক বিষম বস্তু। এই প্রতর্কে এসে মানুষ থতমত খেয়ে যায় যেহেতু তা লৌকিক চেতনার কাছে অজ্ঞেয়। যেভাবে 'প্রাণ' ঠিক কী বস্তু —এই কৌতূহলের সদুত্তর নেই। তাই এগুলিকে 'মিরাকল'-এর আওতাভুক্ত করে ঈশ্বরকে দার্ঢ্যতা দেওয়া হয়। প্রখ্যাত চিন্তক প্যালে প্রকৃতির বিপুল ডিজাইনের কল্প-ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ডারউইন সেই বিশ্লেষণকেই জীবনের একটা পর্ব অবধি আলটিমেট মনে করতেন। কিন্তু অব্যবহিত পরেই তাঁর সেই তত্ত্বাদর্শকে ভ্রান্ত মনে হয়। ন্যাচারাল সিলেকশন-এর ভাবনাই তাকে প্যালে-এর মতামত থেকে মুক্ত করে। তিনি তখন আর মনে করেন না যে, যেভাবে একটি দরজা বানিয়ে তোলে একজন মানুষ, সেভাবে একটি কোষ, এমনকি একটি প্রাণও বানিয়ে তুলবে কেউ। জৈব জগতের ক্ষেত্রে এমন 'ডিজাইন'-এর অস্তিত্ব নেই, যেমনটা আছে জড়-বিশ্বে। ডারউইনের প্রশ্নটি খুবই সরল। তিনি জানতে চান, এত নিখুঁত পার্থিব আয়োজনের প্রয়োজন কোথায়? কে, কেন, কীভাবে বানালেন এমন নিশ্ছিদ্র নক্সা? তার উদ্দেশ্য কী?

যন্ত্রণাপ্রবাহ । জিয়া হক


 

তারপর যা হওয়া উচিত । জিয়া হক

ব্যাঘ্রশাবক অরণ্য পরিদর্শনে বাহির হইয়া দেখিল এক রুগ্ন, শীর্ণ ও প্রৌঢ় কাঠুরে ঘামিতে ঘামিতে একটি বাবলা গাছের মোটা শিকড় কাটিবার চেষ্টা করিতেছে। তাহার লাল গামছা মাটিতে লুটাইয়া পড়িয়া রহিয়াছে। ব্যঘ্রশাবকের বড় করুণা হইল। কাঠুরেটির কাছে গিয়া সে দাঁড়াইল। একটি জলজ্যান্ত ব্যাঘ্র দেখিয়া ভয় পাইয়া দুই পা পিছাইয়া গেল কাঠুরে। পালাইবার পথ খুঁজিতে সে এদিক ওদিক চাহিয়া দেখিতে লাগিল। কিন্তু সে তো জানিত না, সকল ব্যাঘ্র অনুরূপ হয় না। ব্যাঘ্রশাবক বিনীত ভাবে করজোড়ে বলিল, আমাকে ভয় পাবেন না। আমি এখনও মানুষ খাওয়া শিখিনি। নররক্তের স্বাদ কী তা আমার অজানা। কাঠুরে কাঁপিতে কাঁপিতে বলিল, আমি কি তোমার প্রথম খাদ্য হব? দুঃখমিশ্রিত হাসিতে সেই শিশু ব্যাঘ্রের মুখখানি মলিন হইয়া গেল। সে বলিল, আপনি কাঁপা বন্ধ করুন। একটা জরুরি কথা আপনাকে এখন বলতে চাই, মন দিয়ে শুনুন। আমি যখন বড় হয়ে যাব, তখন আপনার কাঠ আমিই কেটে দেব। আপনি শুধু সেগুলো বেঁধে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেবেন। এমন আশ্বাস ও অভয়বাণী শুনিয়া কাঠুরে শান্ত হইল। তাহার চোখে জল আসিল। মাটি হইতে গামছা তুলিয়া চোখ মুছিয়া সে বলিল, তুমি নিশ্চয়ই বনেদি বংশের। তোমার শরীরে এক বিন্দু হলেও প্রকৃত মানুষের রক্ত বইছে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব, তিনি যেন পরের জন্মে নয়, এই জন্মেই তোমাকে মানুষ করে দেন। আজ আমি চলি। এই বলিয়া কাঠুরে তাহার ছোট কাঠের বোঝাটি মাথায় চাপাইয়া চলিয়া গেল বাজারের দিকে। শিশু ব্যাঘ্রটি আবার চলিতে আরম্ভ করিল। চলিতে চলিতে সে দেখিল, প্রখর রৌদ্রে এক কৃষক কাদা-জলে দাঁড়িয়ে ধানের চারা পুঁতিয়া দিতেছে। তাহার শরীর অনাহারে অর্ধাহারে পাকাটির মতো হইয়া গিয়াছে। দর দর করিয়া ঘামিতেছে অথচ কাজে বিরাম নাই। এই দেখিয়া ব্যাঘ্রশাবকটির বড় মায়া জন্মিল। গুটি গুটি পায়ে সে কৃষকটির পিছনে গিয়া দাঁড়াইল। কত দূর ধানের চারা পোঁতা হইল তা দেখিবার জন্য পিছনে ফিরিয়া কৃষকের চক্ষু চড়ক গাছে উঠিল। সে উল্টাইয়া কাদাজলে পড়িয়া গেল। সেই দৃশ্য দেখিয়া ব্যাঘ্রশাবকটি মুচকি হাসিল। তারপর বলিল, আমাকে অনুগ্রহ করে ভয় পাবেন না। আমি এখনও মানুষের মাংস খাই না। নররক্তের স্বাদ কেমন তা আজও আমার জানা হয়নি। কৃষকটি বলিল, তাহলে আমাকে দিয়েই কি শুরু করবে, বাবা? শিশু ব্যাঘ্রটি বলিল, আমাকে বাবা বলেছেন মানে আমি আপনার সন্তান হলাম। বাবার প্রতি সন্তানের একটা দায়িত্ব থাকে না? কৃষক জানাইল, আমার তো তিন ছেলে। কেউই তাদের দায়িত্ব পালন করল না। আমাকে খেয়ে তুমিই সেই দায়িত্বটা পালন করে দাও, বাবা। আপনি অযথা ভয় করছেন। আমি এখন একটা কথা বলছি, মন দিয়ে শুনুন। যখন আমি বড় হয়ে যাব, তখন আমিই আপনার ধানের চারা পুঁতে দেব। ধান বড় হলে কেটে, বেঁধে, ঝেড়ে, বস্তা বোঝাই করে ধান আপনার গোলায় তুলে দিয়ে আসব। আপনি শুধু বাজারে গিয়ে বিক্রি করে আসবেন। কৃষক বলিল, তুমি কোন বাড়ির ছেলে বাছা? তোমার মনে এত মায়া কোথা থেকে এলো বাছা? তুমি নিশ্চয়ই বাঘবেশী কোনও দেবতা। যদি দেবতা না-ও হও, তাহলেও প্রকৃত মানুষের রক্ত এক ফোঁটা হলেও তোমার শরীরে বইছে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, পরের জন্মে নয়, এই জন্মেই যেন তোমাকে মানুষ করে দেন। এই বলিয়া কৃষক বাড়ির পথ ধরিল। ব্যাঘ্রশাবকটিও চলিয়া গেল। গুহায় ফিরিয়া বাবা-মা'কে যা যা দেখিয়াছিল সব কথা বিস্তারিত বলিতে লাগিল ব্যাঘ্রশাবকটি। শুনিয়া তাহার অভিভাবকরা চমকাইয়া উঠিল। সন্তানের এমত মতিগতি তাহাদের ভাল ঠেকিল না। তাহারা বুঝিল বিপদ আসন্ন। মনুষ্যপ্রজাতির হাতেই তাহাদের সন্তানের অনিষ্ট হইবে। পুত্র যাহাতে বুঝিতে না পারে সেইভাবে তাহারা ভিন্ন ভাষায় আলাপ করিতে লাগিল। ব্যাঘ্রপিতা বলিল, ইয়ে জাগা ইসকে লিয়ে ঠিক নেহি। ব্যাঘ্রমাতা বলিল, কিসি দুসরে জাগা পর ইসকো লে জানা চাহিয়ে। -তুমহারি শ্বশুরাল জিস জঙ্গল মে হ্যায়, ওঁহা পর জানা সব সে সেফ হ্যায়। -ঠিক কাহা আপনে। চলো, কাল হি নিকাল পড়তে হ্যায়। ব্যাঘ্রশিশুটি পিতামাতার কোনও কথা বুজিতে না পারিয়া আকাশ দেখিতে লাগিল। অরণ্যানির মর্মরধ্বনি, দূরের ঝর্নার কলকল শব্দ, পাখির বিচিত্র গুঞ্জন, শুষ্ক পত্র ঝরিবার খসখস আওয়াজ শুনিতে লাগিল। অতঃপর সে জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা কী বলছ গো? ব্যাঘ্রমাতা বলিল, অনেক দিন এই বনে আছি। কাল আমরা তোর মামার বাড়ি যাব। সেখানে কয়েকদিন থেকে আবার ফিরে আসব। তোর মামা খবর পাঠিয়েছে। পরের দিন তাহারা বাহির হইয়া পড়িল। সকাল হইয়াছে। চারিদিকে কেবলই আলো। রাস্তা নির্জন বলিয়া ঘাসেদের তখন ঘুম ভাঙে নাই। ব্যাঘ্র-পরিবার সন্তর্পণে লোকালয়ের পাশ দিয়া চলিতে লাগিল। ব্যাঘ্রশিশুটি পুনঃ পুনঃ পিছন ফিরিয়া চাহিয়া তাহাদের পুরাতন অরণ্যখানি দেখিতে লাগিল। তাহার মুখে খানিক দুঃখ লাগিয়া রহিয়াছে। অকস্মাৎ এক কাণ্ড ঘটিল। তাহারা দেখিল, পথের পাশে এক কাঠুরে তাহার পরিবারসহ দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। তাহার হাতে গুড়-মুড়ি-বাতাসা-চিঁড়ে। তাহার চোখে জল। ব্যাঘ্রপিতা বলিল, ইনি কে? ব্যাঘ্রশিশুটি বলিল, প্রকৃত মানুষ। তাহারা আবার চলিতে লাগিল। আরও একটি লোকালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দূর থেকে দেখিল কেউ যেন কিছু হাতে লইয়া কারও জন্য অপেক্ষা করিতেছে। কাছে যাইতে তাহারা দেখিল--এক কৃষক। তাহার হাতে রুটি-তরকারি। তাহার চোখে জল। ব্যাঘ্রমাতা বলিল, ইনি কে খোকা? ব্যাঘ্রখোকা বলিল, প্রকৃত মানুষ।