কুকুরটার মাথায় বুদ্ধি, পেটে বুদ্ধি, পায়ে বুদ্ধি, লেজে বুদ্ধি। সে গেরস্ত জীবনে আছে, আবার শহরের ঝাউঢাকায় চরা খেতে যায়। কচিবেলায় মুখে বল্লম খেয়েছিল। বাম চোখের পাশে দাগটা এখন তার সৌন্দর্য। জম্পেশ যুবতীর চ্যাপ্টা তিলের মতো মানানসই। কুকুরবস্তি তাকে যম ভাবে। ওর নাম লেলো। মনে রাখার মতো নাম—লেলো।
পতাকাটা পড়েই ছিল ঠোঁঙার মতো আলুথালু। হরদিন তো মানুষের পতাকা লাগে না। তবে, পতাকা যে একটা হেলাফেলা করার মতো ব্যাপার নয়, সেটা নিশ্চয়ই সবাই মানবে। পতাকা আছে, তাই আমরা আছি। কিন্তু কেঁচিয়ে দিলো লেলো। সব ঝক্কিহীন শান্তিভর্তি ব্যাপার কেঁচিয়ে দেওয়ার চওড়া ইতিহাস আছে। পতাকায় ডান পা তুলে ইয়ে করে দিয়ে লেলো তার ইতিহাসকে আরেকবার বাঁচিয়ে দিলেও সে বাঁচিল না। শীর্ষ কুকুর আদালতে তার ফাঁসির রায় ঘোষণা হয়ে গেল। ৭ দিন পর দড়ি।
লেলোর দল পথে নামল। 'লেলো আমাদের নায়ক, তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি চাই'। গান গাইতে গাইতে চলল মিছিল 'লেলো/আকাশেই লেজ মেলো'। লেলোর দলের বলিয়ে কইয়েরা প্রশ্ন তুলল :
এক) পতাকা ওভাবে ফেলে রাখা হল কেন? সেটা কি অন্যায় নয়?
দুই) পতাকার সংজ্ঞা কী?
তিন) দেশ কি পতাকার চেয়ে বড় নয়? দেশের নাগরিক কি পতাকার চেয়ে বড় নয়? নাগরিকের জীবন কি পতাকার চেয়ে বড় নয়? জীবনের প্রয়োজনে ইয়ে পতাকার চেয়ে বড় নয়?
লেলোর খাল খিঁচে নিতে চাওয়া দল মিডিয়া দুর্গ দখল করে দেশ-জাতি-ধর্ম ও পতাকার স্বরূপ নিয়ে বোমার ঢঙে কালীপটকা বাজিয়ে আসর গরম করে তুললো। দাবি উঠলো, মহাজগতের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর পতাকা তৈরি করে ওখানেই পুঁতে দিতে হবে। মাপ নিয়ে কোনও গোল বাঁধলো না, নন্দনতাত্ত্বিকদের মধ্যে সৌন্দর্যের যথার্থ সংজ্ঞা নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেলো। দরজি কে হবে, তাই নিয়ে তর্ক দেখা গেল দিকে দিকে। অন্তত সতেরো বছর পতাকা বানানোর জ্ঞানগম্যি আছে এমন কাউকে নিয়োগ করা দরকার কেননা এই সেই পতাকা যা দেশের ইতিহাস নতুন করে লিখবে।
লেলো চুপচাপ। সে হাজতে বসে ডেগি মুরগির উরু চুষতে চুষতে শুধু বলেছে, ''রাষ্ট্রপতির কাছে যাব।''
এই কথা শুনে রাষ্ট্রপতি বিদেশ সফরে যাওয়ার তারিখ দেখে। রাষ্ট্রপ্রভুর বৌ নায়াগ্রার হাওয়া সেবন করার জন্য তেতে উঠেছেন ইত্যবসরে। তাঁরা কানাডায় একটা পশ্যাধিকার সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন।
দড়ি হয়ে যাবে লেলোর। তার চেলারা কবিতা পড়ছে যেখানে দুর্বৃত্তের টুঁটি টিপে ধরার কথা লেখা আছে। তার বিরোধীরাও ওই একই কবিতা পড়ে যাচ্ছে। চারদিকে যখন ধুলোর ঝড় বইছে তরতর তিরতির করে তখন শীর্ষ আদালত রায় ফিরিয়ে নিয়ে জানালো, বিশেষ তদন্ত সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, লেলো যাতে প্রাকৃতিক করে দিয়েছিল সেটা এ-দেশের পতাকাই নয়, পাশের শত্রু দেশের। অর্থাৎ পতাকা নয়, মূর্তি হবে। লেলোর। সে জাতীয় বীর। মহাজগতের বৃহত্তম মূর্তি হবে তার। জনমত হল, এত টাকার স্ট্যাচুর মুখে পেল্লাই একটা কাঁটাতারের মতো দাগ মানাবে না, ওটা বরং মসৃণ রাখা হোক। কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো অন্য জায়গায়। লেজ অর্ধনমিত না রাখলে অণ্ডকোষ বেরিয়ে পড়ছে।
জিয়া হক